নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'কসম খোদার, চিরটাকাল সঙ্গে রবো\'

নাজমুস সাকিব রহমান

আমারে তুমি অশেষ করেছো, এমনি লীলা তব— ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ, জীবন নব নব

নাজমুস সাকিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিমেন্টের জঙ্গলে নামযাত্রা

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১:১৪

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাসের গল্প বলি। স্যার যা বোঝাচ্ছেন, বোঝার ভান করছি। এক সময় ক্লাসের সময় শেষ হয়ে এলো। স্যার আমার নাম জানতে চাইলেন। খাতায় নাম তুলবেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম—
'স্যার, আমার নামটা আমি লিখি?'
'কেন'
'আমি খেয়াল করে দেখেছি, অনেকে আমার নামের বানান ভুল লিখেন। আমি সব নিতে পারি, এটা পারি না।'
খেয়াল করে দেখলাম, ক্লাসের সবাই একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার ওনার দিকে। ওঁদের কারো সাথে তখনো পরিচয় হয়নি। যা হোক, স্যার আমাকে খাতায় নিজের নাম লেখার সুযোগ দিলেন। ক্লাস শেষে জানলাম, ওই ভদ্রলোক গেস্ট টিচার এবং আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্যার'দেরও স্যার। ভদ্রলোকের নাম না বলি। তিনি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের একজন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে আমার ফ্যান্টাসি ছিল, তা পূরণ হয় নি। পূরণ না হলেও আমি কিছু চরিত্রের দেখা পেয়েছি এখানে। ইরফান তাদের একজন। কিছুদিন আগে ইরফানকেও দেখলাম, এই গল্পটি আসিফকে বলছে। নিজের নাম নিয়ে আমার অহংকার আছে। এই নামের অর্থ 'উজ্জ্বল তারকা।' এটা ফেলে দেবার মতো না। আমার আব্বা বিশাল আয়োজন করে তাঁর বড় পুত্রের আকিকা দিয়েছিলেন। সে জন্যই বোধ হয় অনেকে আমার নামের বানান ভুল করে আনন্দ পান। আবার অনেকে তিন শব্দের শেষের অংশটি বাদ দিয়ে আনন্দ পান।

এসব লেখার কারণ ব্যাখ্যা করি। এক সংকলনে আমার লেখা ছাপিয়েছে। আমি ভীষণ উত্তেজিত। কারণ আমার দুই বন্ধুর লেখাও সংকলনে আছে। অনেক বছর আগে কবিতা পত্রিকায় আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী এবং শামসুর রাহমানের কবিতা একই সাথে ছাপিয়েছিল। এটি মনে করে আরও বেশি উৎসাহ বোধ করছিলাম। বইটি হাতে নিয়ে দেখি, আমার নামের শেষ অংশটি নেই। আমি তীব্রভাবে অপমানিত হয়েছি। লেখা ছাপা হওয়ার আনন্দ, নামের এক অংশের বাদ পড়ার কাছে ম্লান হয়েছে। আচ্ছা, এসব সংকলন সম্পাদকরা কি জানেন— মানুষ নিজের নামের ভুল দেখতে পছন্দ করে না? মনে হয়, জানেন না।

লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী তার 'মূল্যবোধ ও যুক্তিবিচার' নিবন্ধে লিখেছেন— 'মুসলমান যে হিন্দুর নামগুলো যথাযথ বানান ও উচ্চারণ করতে পারে, সে মুসলমানের গুণ নয়; কেননা বাংলা মুসলমানের মাতৃভাষা, আর হিন্দুর নামকরণ সে ভাষাতেই হয়ে থাকে; আর হিন্দু যে মুসলমানের নামগুলো বিশুদ্ধভাবে বানান ও উচ্চারণ করতে পারে না, সে হিন্দুর দোষ নয়— কেননা মুসলমানের নামকরণ সাধারণত যে দুটি ভাষায় হয়ে থাকে, সেই আরবি ও ফারসি ভাষা হিন্দুর মাতৃভাষা নয়।'

২.

এবার সংকলনের লেখা নিয়ে বলি। আমার একখানা ছোটগল্প তারা ছাপিয়েছে। নিজের লেখা পড়তে কেমন লাগে— সেটা অনুভব করার জন্যই পড়ছি। দ্বিতীয় পর্বে এসে দেখি খটকা লাগছে। আরে আমি তো এ'রকম লিখিনি! গল্পের শেষ অংশটি তারা দ্বিতীয় পর্বের মাঝখানে এনে দিয়েছেন আর দ্বিতীয় পর্বের মাঝখানটা দিয়ে শেষ টেনেছেন। যারা ছোট গল্প লিখেন, তারা ভালো করেই জানেন, ছোটগল্পে এক লাইনের এদিক সেদিক গল্পের স্বাদ নষ্ট করে দেয়। এখানে প্রতিটি লাইন হিসেব করে লিখতে হয়।

ব্যক্তিগত কৌতূহল থেকে আমি সম্পাদনা পরিষদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিলাম। তারা সকলেই কবি মানুষ। আমার লেখালেখির বয়স এখন ন'বছর। খুব বেশীদিন না হলেও অতি অল্প পড়াশুনায় আমি দেখেছি, কবিরা দুর্দান্ত গদ্য লিখতে পারেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের গদ্য খুব বেশি মানুষ পড়েন নি। তিনি শক্তিশালী গদ্যকার ছিলেন। এছাড়া কবিদের পাঠ্য 'কবিতার ক্লাস' লেখা কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী'র গদ্য তো অতুলনীয়। আমার আরেক প্রিয় কবি মারজুক রাসেলের গদ্যের হাতও অসম্ভব রকম পাকা। আমি তাঁদের ঈর্ষা করি। কবিতার জন্ম অন্য পৃথিবীতে। প্রথম কিছুদিন কবিতা লেখার চেষ্টা করলেও আমি গদ্যের দিকে চলে এসেছি। কারণ জীবনানন্দ দাশ বলেছেন— সবাই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।

আমার অতিপ্রিয় কবি আবুল হাসানের একটি কবিতার নাম 'আবুল হাসান।' সেখানে তিনি নামের প্রতি বিদ্রোহ করে লিখেছেন—

'এটা তোর জন্মদাতা জনকের জীবনের রুগ্ন রুপান্তর,
একটি নামের মধ্যে নিজেরি বিস্তার ধরে রাখা
তুই যার অনিচ্ছুক দাস'

সার্টিফেকেটে আমার নামের বানান ভুল আছে। ম্যাট্রিকের সময় যে স্যারটি নিবন্ধন করাচ্ছিলেন, তিনি মোতাহের সাহেবের যুক্তির বিচারে ভুল কিছু করেন নি। কারণ ওই স্যার অন্য ধর্মের লোক ছিলেন। তবুও তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। কেন করেছি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। স্কুল জীবনের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। একদিন রাস্তায় আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ স্যারকে দেখলাম কোথা থেকে যেন আসছেন। আমি পায়ে ধরে সালাম করলাম। তিনি বললেন, 'তুমি নাজমুস সাকিব না?।' আমার এই স্যারটি ভাঙা নামে ডাকা পছন্দ করতেন না। যা হোক, ওই কবিদের সম্পাদনাও জ্ঞান(!) দেখে আমি আহত হয়েছি। লেখাটা শেষ করা যাক। জীবনানন্দের কবিতা দিয়েই শেষ করি।

একাকী তারার মতো, সব তারা আকাশের কাছে
যখন মুছিয়া গেছে — পৃথিবীতে আলো আসিয়াছে —
যে ভালোবেসেছে, তার হৃদয়ের ব্যথার মতন —
কাল যাহা থাকিবে না — আজই যাহা স্মৃতি হয়ে আছে —

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৩০

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
+++++

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮

নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। শুভেচ্ছা নেবেন বিজন ভাই।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৫

নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।

৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভাব গম্ভীর

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২৬

নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: গদ্য ভাবগম্ভীর হলেই আমার ভালো লাগে। পড়ে খটকা না লাগলেই হল!

শুভেচ্ছা নেবেন ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.