নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্নের ফেরারী

প্রতিদিন অন্তত একটা ভালো কাজ করার ইচ্ছা পূষণ করি কারো উপকার করতে না পারলে ও যেন কারো ক্ষতি না হয় সেটাই ভাবি

Neeljosona

সবকিছু পজেটিভলি দেখলে কোন সমস্যাই থাকে না।

Neeljosona › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাগল-প্রজার পাগল রাজা!

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৫২

এক দেশে ছিল এক ন্যায়পরায়ন শাসক। তার ছিল অসংখ্য অগণিত লোক-লস্কর, আমীর উমরা, উজির নাজির। তার দরবার আলোকিত করে রাখতো বিপুল সংখ্যক জ্ঞানীগুণী, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, গায়ক-বাদক। আর ছিল কয়েক জন মহাজ্ঞানী জ্যোতিষী। এদের একজন ছিল সবার সেরা এবং শ্রদ্ধার পাত্র। তাকে উজির নাজির এমনকি রাজা পর্যন্ত সমীহ করে চলতো। আশেপাশের সকল জ্যোতিষীর চাইতে খুবই অভিজ্ঞ ও দক্ষ সে। তার তুলনার জ্যোতিষী পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সেই প্রধান রাজ-জ্যোতিষী।



এক দিন এই রাজ-জ্যোতিষী গুণতে গুণতে জানতে পারলো, আগামী বছর সমগ্র দেশে এক বন্যা হবে। পানিতে তলিয়ে যাবে সারাদেশ। দেশ পতিত হবে এক মহা-সংকটে। একে পাশ কাটানোর কোনই পথই যে নেই। নেই কোন পরিত্রাণেরও উপায়। চিন্তায় চিন্তায় জ্যোতিষীর কপালে ভাজ পড়লো। কারণ, এই পানি যে সাধারণ বন্যার পানি নয়? এ হচ্ছে পাগলা-পানি!! এই পানি যারাই পান করবে সাথে সাথে পাগল হয়ে যাবে! এরকম চলতে থাকবে এক বছর পর্যন্ত। তারপর আসবে ভাল-পানি। ভাল-পানি খাওয়ার পর সুস্থ হবে সবাই। এর আগে সবাই থাকবে পাগল। করতে থাকবে শুধুই পাগলামী। ব্যস্ত থাকবে নিজেদের পাগলামী নিয়ে। বেখবর থাকবে দ্বীন-দুনিয়া থেকে।



রাজাকে কানে-কানে এই দুঃসুংবাদ জানাল প্রধান জ্যোতিষী। রাজা পড়ল মহা-চিন্তায়। খাওয়া-দাওয়া সব ছেড়ে দিয়ে ভাবনার সাগরে ডুব দিল রাজা। আর কিছুই ভাল লাগে না তার। কী যে করবে ভেবেও কোন কূল-কিনারা পায় না সে। অবশেষে ঘনিষ্ঠ উজির-নাজিরদের ডাকল বিশেষ রাজসভায়। আলোচনা চলল তো চললই। একে এড়ানোর কোন পথই নেই? মোকাবেলা করতেই হবে? সবাই একমত হল, প্রাসাদে গোপনে ভাল-পানির স্টক গড়ে তোলার। প্রাসাদাভ্যন্তরে গড়ে তোলা হল ভাল-পানির বিশাল ভান্ডার। সারা বছর ধরে এ থেকে পান করবে কেবল রাজা আর তার ঘনিষ্ঠ উজিরা। বাকী প্রজারা কেউই জানল না এই খবর। তাই প্রস্তুতিও নিল না কেউ।



যথা সময়ে বন্যা এল। ঠিক ঠিকই পাগলা-পানিতে চেয়ে গেল দেশ। যারাই পানি পান করে পাগল হয়ে যায়!! যারাই পান করে পাগল হয়ে যায়!!! কেউই বুঝতেও পারল না পাগল হওয়ার কারণ। (পাগলেরা আবার বুঝবেই কি?) যা ঘটার তাই ঘটতে লাগল। রাজ্যময় দেখা দিল বিশৃঙ্খলা। রাজা ও তার ঘনিষ্ঠ কজন উজির ছাড়া সবাই পাগল। পাগলে পাগলে পাগলময় হয়ে গেল দেশ। এ এক নতুন দুনিয়া। এ যেন পৃথিবীর কোন রাজ্য নয়; কল্পলোকের ভুতের আবাস যেন। কে শুনে কার কথা। কে আর মানে কাকে? সমগ্র দেশ যায় রসাতলে। রাজা আর উজিরদের কেবল চেয়ে চেয় দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। কেটে গেল প্রায় তিন মাস।



এবার শুরু হল এক নতুন উপদ্রব। পাগল প্রজারা কখনো রাজাকে কখনো জ্যোতিষীকে, আবার কখনো উজিরদেরকে টেনে-হিঁচরে রাস্তায় নিয়ে আনন্দ উল্লাস করেতে লাগল। রাজার হল মরণ-দশা। উজিরদের প্রাণ যায় যায়! নিরুপায় জ্যোতিষী ভাবতে লাগল বাঁচার উপায় নিয়ে! পথ একটা বের করা চাইই চাই। নতুবা পাগলের হাতেই যে মরণ লেখা??



রাজা-উজিরের বিশেষ সভা বসল। সবারই গম্ভীর মুখ; মাথা নীচু করে বসা। ভবছে শুধু ভাবছেই। এই ভাবনার যেন শেষ নেই! কেউই দেখতে পাচ্ছেনা কোন আশার আলো। নেই কি কোন বাঁচার উপায়? মরতেই হবে সবাইকে?



এবার রাজা বলল, ভেবে আর লাভ নেই। আমাদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। প্রধান জ্যোতিষীকে ডাক। সেই দিতে পারে সমাধান। সঠিক সমাধান যে তারই জানা! ডাক পড়ল প্রধান রাজ-জ্যোতিষীর।

--রাজা বলল, জ্যোতিষী! তুমিই পাগলা-পানির আগাম খবর দিয়েছ। এবার তুমিই বল, এই বিপদ থেকে বাঁচার পথ কি? আর সহ্য হচ্ছে না, তাড়াতাড়ি বল কী এর সমাধান?

--জ্যোতিষী বলল, পাগল-প্রজার পাগল রাজা

তাতেই আছে জব্বর মজা!

এ ছাড়া আর পথ খোজা

মরার জন্য চোখ বুজা!

একথা শুনে রাজা হায় হায়! হায় হায়! করে উঠল। এটা কি কথা বলছ জ্যোতিষী? এটা কী করে সম্ভব? শেষ বয়সে এসে রাজত্ব হারাতে হবে? মরতে হবে পাগল প্রজাদের হাতে? না তা হতে পারে না!! আর কোন পথ বৎলাও জলদি!

--জ্যোতিষী বলল, না না মহারাজ! রাজত্ব হারাতে হবে না। পথ একটা আছে। ব্যাপারখানা খুবই সোজা! আপনি আপনার উজিরদের নিয়ে পাগলা-পানি পানকরে পাগল হয়ে যান। ব্যস্ কেল্লা ফতে! পাগল-প্রজার পাগল রাজা হলে আপনাকে মরতেও হবে না! রাজত্বও হারাতে হবে না। আমিওতো মরতে চাই না; বাঁচতে চাই! আমিই সবার আগে পাগলা-পানি পান করলাম। পাগলের দেশে পাগল হওয়া ছাড়া বাঁচার কোন পথও যে নেই!! আগে তো বাচাই প্রাণ,

পরে নাহয় গাইব গান!



বাঁচলে জ্যোতিষীগিরি ফলানোর অনেক সময় পাব। প্রজারা যখন ভাল হবে আমরাও ভাল হবনে তখন! আর প্রজারা পাগল থাকলে আমরাও না হয় তাই থাকলাম। এতে দোষের কিছু তো দেখছি না! পাগলের মাঝে পাগলের আবার লজ্জা কি? পাগলেরা পাগলদের বলবেই বা কি? তবুওতো একটা শান্তনা যে, বেঘোরে প্রাণটা হারাতে হবে না!



রাজার বুক থেকে যেন বিরাট পাথর নেমে গেল। রাজা জ্যোতিষীর বুদ্ধিদেখে বাহ্ বাহ! বাহ্ বাহ! করে উঠল। জ্যোতিষীকে বুকে জড়িয়ে ধরে অতি সহজই পাগলা-পানি পান করল। সাথে সাথে পান করল উজিররাও। এবার নিশ্চিন্তে ঝামেলা ছাড়া (?) পাগল-রাজা দেশ চালাতে লাগল। রাজা-প্রজা, উজির-নাজির নিজ নিজ পাগলামী নিয়েই ব্যস্ত থাকল সারাক্ষণ।



ভাল পানি আসুক আর না আসুক, পাগলের দেশের পাগলেরা সুখে-শান্তিতে বাস করতে লাগল (???)

আশে পাশের সকল দেশের মানুষ পাগলদের হাসা-হাসি, লাফা-লাফি, হুড়োহুড়ি, উড়াউড়ি, ঘুরাঘুরি, ছুড়াছুড়ি দেখে বাহবাহ! বাহবাহ! করে হাত তালি দিতে লাগল। পাগল রাজা হাত তালি পেয়ে খুশিতে আটখানা!!!



ইই একটি রম্য গল্প। গল্পের মূল লেখকঃ এ. বি. এম. আল-আমীন

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:২৩

ইশতিয়াক মাহমুদ বলেছেন: কেন জানি বাঙ্গাল দেশের সাতে মিল পাইতাসি? ঘটনা কি?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৩৪

Neeljosona বলেছেন: ইহা সম্পূর্ণই কাল্পনিক কাহারো সাথে মিল খুজে পেলে লেখক দায়ী নহে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.