![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব কঠিন করে অধিক ভাব রসে পূর্ণ কোন লিখা লিখতে চাই না, লিখতে পারিও না বটে। শুধু ছাত্র কিংবা ইউনিভার্সিটি জীবন শেষ হওয়ার ছোট্ট একটা উপাখ্যান ডকুমেন্ট হিসেবে রাখতে চাই, এই আর কি। লিখা শুরু...
এক শিক্ষাজীবনে আমরা অনেক প্রতিষ্ঠান পার করে এসেছি। প্রতিটা ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের সময় নতুন উদ্দম আর প্রেরণা ছিলো। মনেই হয়নি পেছনে একটা কিছু ফেলে যাচ্ছি, বরং সামনে যা ছিলো তা নিয়েই এক্সসাইটেড ছিলাম। কিন্তু এবার যা পেছনে ফেলে যাচ্ছি তা মনে অনেক দাগ কেটে যায়। একটা জীবন আমরা ফেলে গেলাম এখানে। কয়েকদিন আগেও আমাদের অনেকের মনে হয়তো এমন কোন ভাবনা ছিলো না। বরং এই শেষের জন্যেই আমরা বাস্তবে অনেক ব্যাকুল হয়ে ছিলাম। কবে শেষ হবে? কবে শেষ হবে? আর পারি না! আর পারি না! কিন্তু আজই যেমন সব শেষ করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামলাম এবং এক কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট ছেড়ে বাইরে দাঁড়ালাম, মনে হলো সব একেবারে শেষ। বুকে গোঁজা ভারি পাথর আর মাথায় বিশাল বোঝা ছাড়া আমার আর কিছুই থাকলো না। ৪/৫ বছর আগে হৈ হৈ করে এক দল বালক বালিকা প্রবেশ করেছিলাম এই পথ দিয়ে, এই দীর্ঘ সময়ে বড় বড় বই পুস্তকের চাপায় নড়েবড়ে জ্ঞানপাপী হয়ে প্রস্থান করলাম এই পথ দিয়েই। মাঝে কী যে সময় কেটে গেলো আমাদের। কী সময় যে গেছে।
বাসায় ফিরলাম। কয়েক দিন ধরে অঞ্জন দত্তের গাওয়া আমার একটা প্রিয় গান খুব শুনছিলাম। গানের কথাগুলোর সাথে আমি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষটার অনেক মিল পাই। আজও অনেকবার শুনলাম...
সেই মন প্রাণ খুলে গল্প করার দিন শেষ
শুধু তাড়াহুড়ো করে যদি কিছু কথা বলে ফেলা যায়
সময় যা ছিলো হাতে সবটাই শেষ
পড়ে আছে শুধু অজস্র অসময়
তাই হলদে পাখিরা এই শহরে আর ফিরে আসে না
শুধু বেড়ে চলে ডিজেলের ধোঁয়া রাস্তায়
সেই ল্যাংটা ছেলের দল ফুটপাত ঘিরে আর হাসে না
বেড়ে গেছে রাতারাতি বয়স অসময়
তাই বৃষ্টি নামলে পরে মন আর জুড়িয়ে যায় না
তাই চাপ চাপ কাদা, প্যাঁচপ্যাঁচে সংশয়
কারো মুখে আর কোন মিষ্টি হাসি মানায় না
তেঁতো হয়ে গেছে সব হঠাৎ অসময়
তাই কোন দিন যদি একা একা জানলার পাশে
কোন খয়েরী বিকেল বেলা কান্না পেয়ে যায়
নিয়ে কথার ছলে এ শেওলায় ভেজা গানটা আমার
ফিরে আসবো তোমার কাছে হঠাৎ অসময়
কেউ আর মন প্রাণ খুলে গল্প করতে চায় না। সবার যেনো কিসের এতো তাঁড়া। বয়সটাও মনে হয় রাতারাতি বেড়ে গেছে। মধুর সময়টা পেরুলাম, সামনে অজস্র অসময়। তবে দুঃসময়েও মনে পড়বে এই সুসময়ের কথা। তখন হয়তো গলার ভেতর কান্না চাপতে হবে।
থাক সে কথা.........। এবার অন্য কিছু বলি...
কয়েকদিন আগে আমি এক অপরিচিত নাম্বারে ফোন রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে বলতে লাগলো...
- বিপুল দোস্ত, ভালো আছিস?
আমি: হ্যা, ভালো আছি। কে?
:আমি দোস্ত, আধ্যাপক পিগু।
আমি : আরে অধ্যাপক পিগু ! এতদিন পর! কী খবর?
আধ্যাপক পিগু : খবর ভালো। অনেকদিন খোজ খবর ছিলো না। আজ তোর নাম্বারটা পাইলাম। এইতো।
আমি : কার কাছে নাম্বার পাইলি?
আধ্যাপক পিগু : আসলে আজ আমরা কয়েকজন একসাথে ময়ময়নসিংহ-এ জড়ো হইছি।
চাপরি আরিফ আছে, বকশী মামুন আছে, সক্রেটিস আছে, র্যাবের পুলা তুহিন আছে
আর লিডার বাবু আছে। নে, বকশী মামুনের সাথে কথা ক...
আমি : দে...
বকশী মামুন : কী রে বিপুইল্লা, ভালো আছস? বকশী মামুনের কথা মনে আছে নাকি?
আমি : আরে, কী যে কছ, মনে থাকবো না ক্যান। কী খবর তোর?...............
..............................................................................
...............................................................................
................................... ..........................................
..............................................................................।
সেদিন এমন করেই ফোনে অনেক কথা হলো তাদের সাথে। অধ্যাপক পিগু সহ বাকি যাদের নাম এখানে আছে তারা সবাই আমার কলেজ লাইফের বন্ধু। অধ্যাপক পিগুর আসল নাম হচ্ছে পিযূষ। কাজের বৈশিষ্ট্য বা এলাকার নাম অনুসারে প্রত্যেকের নাম বিকৃত হয়ে এমন হয়েছে। আমাকে সবাই ডাকতো মাঝির পোলা বিপুল বা বিপুইল্লা বলে। অনেক দিন তাদের সাথে দেখা হয় না। আজ ভাবি, পড়াশোনা শেষ হলো, আর কিছুদিনের মধ্যেই সবাই চলে যাব যার যার ঠিকানায়। কতো বছর পর না জানি এমন করেই দীর্ঘদিনে জড়ো হউয়া কোন আড্ডার আসর থেকে ফোন চলে আসবে কারো কাছে। দোস্ত, কী খবর বল, কতো দিন দেখা নাই। !!!!
মনে পড়লো শরিফ বোর্ডিং-এর কথা। ৩/৪ বছর আগে বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গল। সারাদিন ঘুরাঘুরি শেষে রাতে থেকেছিলাম ৫০ টাকা ভাড়ার শরিফ বোর্ডিং-এ, আমরা সাতজন। সেই হোটেল রোমে বসেই প্রত্যেকের বিকল্প নামকরণ করেছিলাম আমরা। ভ্রান্তি, ক্রোজ, বেইজ, মার্টিন, স্যাম, নান............ কতো বৈচিত্রপুর্ণ নাম। আমার নাম হয়েছিলো নিকোলাস। সবাই সেদিন যার যার ফোনে এই পরিবর্তিত নামগোলো এন্ট্রিও করেছিলাম। আহ। কী দিন যে গেছে। হয়তো ৩/৫/১০/১৫ বছর পরে এদের মাঝ থেকেই বেনামি ফোন চলে আসবে কোনভাবে। নিজের পরিচিত নাম গোপন করে বিকল্প নাম বললেও চিনতে বিন্দুমাত্র দেরি হবে না।
আমি আমার নাম নিয়ে ভাবলাম সেদিন। মেটাসোল বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুমহলে আমার নাম 'নিকোলাস'। কিন্তু এই একটি নামেই আমার সীমাবদ্ধতা ছিলো না। ১/১ পড়ার সময়, যখন আমি দিলারা হান্নান হলে থাকি, আমার হয়েছিলো 'আলেকজান্ডার বিপুল'। তখন সবেমাত্র ক্লাসে আলেকজান্ডার পোপের কবিতা পড়া শুরু করেছি। এরপর হলো 'ভাইরাস বিপুল'। এটি আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেহেদি'র দেয়া। তখন আমার নতুন কেনা কম্পিউটারে প্রচুর ভাইরাস ছিলো বলেই এই নাম। এরপর কোন একদিন কোথাও কোনভাবে ব্যাথিত হয়ে বিরহী জীবন কাটিয়েছিলাম কিছুদিন। তখন আমার চারিদিকে শুধু বিরহ আর বিরহ। তারপর আমার নাম হয়ে গেলো 'বিরহী বিপুল'। হা হা হা। ২য় বর্ষে পড়ার সময় স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। যথারীতি নাম হয়েছিলো 'ব্লাড ডোনার বিপুল'। ৩য় বা ৪র্থ বর্ষে পড়ার সময় আমার নাম 'bipul' থেকে কিছুটা ছোট ও আধুনিক হয়ে হয়ে গেলো 'bips'। এই নামটি আমার পছন্দের। এখনো সবাই আমাকে এই নামেই ডাকছে। 'bips ভাই' কিংবা 'bips' বলে। তবে এক জলকুমারীর কাছে আমি পরিচিত 'Alaska Bips' নামে।
এখন প্রশ্ন হলো, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এতো বিচিত্র নাম কী কারণে? আমি সেদিন চিন্তা করে বের করলাম বেপারটা। আমি সবসময় নিজের মধ্যে পরিবর্তন চেয়েছি। চেয়েছি নিজের সকল জরাজীর্ণতা কিংবা আড়ষ্ঠতা থেকে বেরিয়ে নতুন ভাবে আবির্ভূত হতে। এই চাওয়াটা বোধ হয় আমার ইউনিভার্সিটি লাইফের বিগত সকল বছর ব্যাপীই ছিলো। কিন্তু আজ, প্রায় বিদায় বেলায় বুঝতে পারছি। আসলে কোন পরিবর্তনই আমার হয়নি। আজ পরিস্কার বুঝতে পারছি। মনের মধ্যে যতো কুটিলতা, জটিলতা বাসা বেধেছিলো, তা আজও সরে নি। মনে মনে আমি এখনো গোড়া, হিনমন্ন, সংকীর্ণ। আজ আমি হিসেব করতে বসেছি। কী লাভ তাহলে আমার এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ! ? !
আজ শেষ ক্লাসটায় আমি আর আনোয়ার পাশাপাশি বসেছিলাম। হিমাদ্রী স্যারের ক্লাসে কোন মনোযোগই ছিলো না। বার বার একই চিন্তা, কী পেলাম? শেষে, ক্লাস খাতায় একটা লাইন লিখলাম...
''So inglorious is everything, the ending or the beginning''
আনোয়ার এই লাইনটা দেখে এর নীচে কয়েকটা লাইন লিখে দিলো। ও লিখেছিলো...
"I cannot but support thee
But we should be optimistic
We should stand with the help of ourselves"
এই কথাগুলোর অনেক অন্তর্নিহীত তাৎপর্য থাকবে হয়তো। শেষে মনকে বুঝালাম এই বলে যে, কী পেলাম আর কী পেলাম না তা নিয়ে আর কিছু হবে না। জীবনের এই মূল্যবান সময়ে কিছু বন্ধু আমি পেলাম, কারো বন্ধু আমি হলাম, কারো বা হলাম না। এইতো।
আমার লিখা শেষ। যাওয়ার আগে আঞ্জন দত্তের গাওয়া আমার আরেকটি প্রিয় গান আমার সকল বন্ধুকে উৎসর্গ করলাম। সবটাই আমার মনের কথা।
আকাশটা আজ বড়ই নীল
আজ আমায় পিছু ডেকো না
যে রং তোমার চোখে শামিল
সে চোখ ভিজিয়ে দিও না
বন্ধু তোমার আমি তাই
অন্য দাবি রেখো না
রেখো না !
বন্ধুত্ত্বের হয়না পদবি
বন্ধু তুমি কেদো না
বন্ধু সবুজ চিরদিন
বন্ধুত্ত্বের বয়স বাড়ে না
বন্ধু তোমার আমি তাই
আত্মীয়তায় বেধোঁনা
কেঁদো না !
হয়তো তোমার আলনায়
থাকবে না আমার জামা
ঝুলবে না তোমার বারান্দায়
আমার পাঞ্জাবী পাজামা
তবু মনের জানালায়
অবাঁধ আনাগোনা
শুধু দু’জনা !
হঠাৎ চায়ের সুগন্ধে
হঠাৎ কোন বইয়ের পাতায়
হঠাৎ মনের আনন্দে
আপন মনে কবিতায়
হঠাৎ খুঁজে পাওয়া সুর
চার দেয়ালে বেধোঁনা
ধরে রেখোনা !
আকাশ হয়ে যাবে ফ্যাকাসে
তবু আমাদের ঘুড়ি
উড়বে মনের আকাশে
অনন্ত ছেলেমানুষি
সেই ছেলে মানুষিটাকে
অন্য নামে ডেকো না
পিছু ডেকো না !
২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৩০
জালিস মাহমুদ বলেছেন: ভাই কোন ইউনির !!!! লেখা ভালো হয়েছে
২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৫০
নিকোলাস বিপ্স বলেছেন: ইংরেজি বিভাগ। শাহজালাল ইউনিভার্সিটি।
ধন্যবাদ।
৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৪৪
মাটি বিডি বলেছেন: ভালো হয়েছে লেখা
২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৫১
নিকোলাস বিপ্স বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:০৭
আজমান আন্দালিব বলেছেন: প্রায় পনের বছর আগে ফিরে গেলাম আর নষ্টালজিয়ায় ভুগলাম।
৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:৩৪
সংবাদিকা বলেছেন: ভাইয়ের MS/MA - PhD ইচ্ছা নাই........ থাকলে আরো ২-৩ বছর ছাত্র থাকতে পারবেন
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:২৫
ভ্রমনবিলাসী বালক বলেছেন: +++++++++++++++