![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই গল্পটাও হাজারটা গল্পের মত। ঐ একই কাহিনী। ছেলেতে মেয়েতে ভাব। তারপর প্রেম ভালবাসা। অতঃপর পিতামাতা নাখোশ, নারাজ। তারপর বিচ্ছেদ, বিরহ। ছেলের অন্যত্র বিয়ে করণ, মেয়ের অন্যত্র বিয়ে প্রদান। দুই মন মিলে যে এক মন, তারপর ঐ এক মন ভেঙ্গে আবার দুই মন। যুগ যুগ ধরে হাজার কোটি মানুষের যেন একই ইতিহাস। তারপরও পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ যেহেতু আলাদা, তাদের জীবন, তাদের স্বত্বা যেহেতু আলাদা সেহেতু এক্ষেত্রেও কিছুটা আলাদা হবে বৈকি।
মেয়েটা লাজুক। জীবনে কখনও প্রেম করবে কি, এক জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা দেখলেই তার দুই গাল লাল। প্রকৃতির নিয়মে হলেও দুই চারটা প্রেমিক পুরুষও যে তার মনে কখনো কড়া নাড়েনি তা হলফ করে বলা যায়। আর নিজে যে উৎসাহী হবে তাতো নজিরবিহীন। তারপরেও ঘটনা ঘটে। প্রেম আসে। তারই সদ্য পরিচিত কতকজনের মধ্যে একজন আলাদা হয়ে যায়। হৃদয়ে কড়া নাড়ে। বলে ‘ভালবাসি’। সে চোখ বুজে বলে দেয় ‘না, সম্ভব না, কিছুতেই না’। কিন্তু মুখেতো বলা গেল, অন্তরের কী হবে? মনকে সে আর আটকাতে পারলোনা। মন বেরিয়ে গেল, ছুটে গেল সেই ছেলেটার কাছে। খোঁজ খবর করলো ভালমত। যা জানলো তাতে এই সিদ্ধান্তে এল যে এতে তার চলবে। প্রেম হলো। অনায়াসে।
মেয়েটা সরলমনা। প্রেম কী জিনিস তা সে জানেনা। ছেলেটা কাছে আসতে লাগলো, সেও কাছে যেতে থাকলো। লেকের ধার বেয়ে একসাথে হাটলো। সবুজ গাছের নিচে বসে সময় কাটালো। হাত ধরে বসে থাকলো। রিক্সায় চড়ে বেড়ালো। সকাল দুপুর বিকাল রাত গভীর রাতে ফোনালাপ করলো। একসাথে চাইনিজে গেলো। জন্মদিনের উপহার কিনলো। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে পলিথিন মোড়ানো হুড তোলা রিক্সায় বসে চুমু খেলো। প্রেম কী জিনিস শিখলো বটে। সময় বয়ে গেল অনেক।
মা বাবার একমাত্র মেয়ে। বয়স যখন তেইশের ঘরে মা জানান দিল ‘চব্বিশের ঘরের আগেই কিন্তু তোমার বিয়ে দেব মা’। মেয়ে নির্বাক। অতঃপর মুখ কিড়মিড় করে, কানের দুই ছিদ্র বন্ধ করে, হাতে বজ্রমুষ্ঠি এঁটে, মুখের কথা বন্ধ করে, দুই তিন বেলা আহার প্রত্যাহার করে বুঝিয়ে দিল বিয়েতে সে রাজি নয়। মা বাবা বুঝলেন। আর কিছুটা দিন যাক তাহলে। বছর না ঘুরতেই আবার একই আলাপ। মা বললেন ‘ভাল প্রস্তাব এসেছে এবার, তুমি কিন্তু আর না করতে পারবেনা মা।’ মেয়েটি এখন কি করে? ঐ আগের মতই মুখ কিড়মিড়, কানের দুই ছিদ্র বন্ধ, বজ্রমুষ্ঠি হাত, কথা বন্ধ, দুই তিন বেলা অনাহার। তবে এবার তা করতে হয় দুই গুণ করে। মা বাবা বুঝলেন ঘটনা কিন্তু স্বাভাবিক নয়, কোন কারণ আছে নিশ্চয়। মা এসে বললেন ‘কী ঘটনা? আমাকে সব খুলে বলতো মা’। তারপর মেয়েটা লজ্জা শরম বাতিল করে, বুকে কিছুটা সাহস যোগাড় করে বলেই ফেললো ‘আমি একজনকে পছন্দ করি, তাকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করবোনা’। মেয়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। পিতামাতাতে আলোচনা চলে। তারা ভাবে ‘মেয়ে যেহেতু আমাদের ঐ একটাই, তারমধ্যে আবার কত নিরীহ, নিশ্চুপ, জীবনে মুখ ফুটে কোনদিন কিছু চায় নাই। তাকে আর বাঁধা না দেই। তার নিজ পছন্দের পাত্রের সাথেই বিয়ে দেয়া যাক’। একদিন মা ডেকে বললেন ‘চিন্তা করোনা মা, তোমার পছন্দ অনুযায়ীই বিয়ে হবে’। মেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। রাতে ঘুমোতে গেলো। সেই ঘুমের মধ্যে কত যে স্বপ্ন। ঘুম শেষ হয়। স্বপ্ন শেষ হয়না। প্রথম ও প্রধান ফাঁড়াটা তো কেটে গেল। আর কোন বাঁধা নাই।
কিন্তু ছেলেটা মনে হয় একটু অস্বস্তিতে পড়লো। পড়াশোনা শেষ। চাকরি নাই। সামনে দু চার ছয় মাসের মধ্যে চাকরি পাবে তার নিশ্চয়তা নাই। কী করে? মনে অশান্তি। এদিকে বয়স বাড়ন্ত। সময় লাগাম ছাড়া। ডাক পড়লো হবু শ্বশুরালয়ে। তারা বলে দিলেন ‘চিন্তার কী আছে? বিয়ের আগে ভালো চাকরি পেতে যেটুকু সময় লাগে লাগুক। মন দিয়ে লেখাপড়া করো, কেমন।’
তাহলে আর কী বাঁধা? শুধু ঐ চাকরিটাই, কিন্তু সেটাতো সে পাবেই। তাহলে? তাহলে কী?
বাঁধ সাধে তার পিতামাতা। তারা নারাজ, নাখোশ। এবার ছেলেটার ফাঁড়া কাটানোর পালা। কিন্তু সে না পারলো মুখ কিড়মিড় করতে, না পারলো কানের দুই ছিদ্র বন্ধ করতে, না পারলো বজ্রমুষ্ঠি আঁটতে, না পারলো মুখ বন্ধ স্তব্ধ হতে, না পারলো দু একটি বেলা আহার পরিহার করতে, না পারলো আঁছাড় মেরে দু একটি জিনিস ভাঙতে। ফাঁড়া আর কাটলো না।
তারপর বিচ্ছেদ। বিরহ। মন ভেঙ্গে দুই টুকরো। স্বপ্ন বিনাশ। কষ্ট। যন্ত্রণা। অনিদ্রা। - কেবল মেয়েটিরই।
কেন এমন হল? এ প্রশ্নের উত্তর কী? মেয়েটা জানেনা। সে আকাশকে প্রশ্ন করে, খোলা বাতাসকে প্রশ্ন করে, বাগানের ফুল, প্রজাপতি, পাখিকে প্রশ্ন করে। উত্তর নেই।
সে ছেলেটাকে প্রশ্ন করে।
কিন্তু সে প্রশ্নের জবাব আর কোনদিন আসে না।
বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে। অন্যত্র বিয়ে। নিজের পছন্দের বালাই নাই, পিতামাতার পছন্দ।
তার কালো দুটি চোখ, এখন দু'চোখে যা দেখে সবই কালো। নতুন কারো সাথে ঘর বাঁধবে কিন্তু নতুন কাউকে কী ভালবাসবে তা সে জানে না।
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৮
নিকোলাস বিপ্স বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১৩
কালোপরী বলেছেন: হুম
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
নিমতিতা বলেছেন: ভালো হইছে