নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উদ্বাস্তু নিশাচর

উদ্বাস্তু নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনন্ত পথের যাত্রী.......লেখাঃ অভ্রমেঘ

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৫

-তুমি তো এমন ছিলেনা ইরা; তালে কেন এমন করছ আমার সাথে ?



-আমি আবার কি করলাম নীল ! তুমি সব সময় আমায় ভূল বুঝো । ধ্যাত, আর ভাল্লাগে নাহ্ !



-তুমি আমাকে বেশ কিছুদিন থেকেই এড়িয়ে যাচ্ছ কেন ?



-ওহ ! আমিই এড়িয়ে যাচ্ছি । ওয়েল; তাহলে তুমি আর কখনও আমার সাথে যোগাযোগ করবে না । বাই

.

টুট টুট টুট । ওপাশ থেকে লাইনটা কেটে দিয়েছ ইরা । আর এখানে নীলের চোখ থেকে অশ্রুধারা বইছে ।

.

নীল এখন ভাবছে, এই কী তার ইরা যে একদিন কথা না হলে থাকতে পারত না ! যে সারাদিন ফোন দিয়ে ব্যাস্ত রাখত নীলকে ! হ্যা; এই সেই ইরা । সে একই আছে শুধু সময়টা বদলেছে ।



* * *



নীল; বাবা মার একমাত্র সন্তান । তারা চেয়েছিলেন সে ডক্টর হবে । কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে । একমাত্র সন্তান হওয়াই সেই দাবি মেনে নিয়েছিলেন বাবা মা ।

.

কিন্তু নীলের সেই সপ্নের পথে চলে আসে ইরা নামের মেয়েটি । ক্যাম্পাসে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছিল নীলের । এরপর বন্ধুত্ব; ও শেষ পর্যন্ত নীল-ই ইরাকে প্রপোজ করে । আর ইরাও ওকে এড়িয়ে যেতে পারেনি । তাই ভালোবাসা ।

.

কিন্তু ভালোবাসা নিয়ে নীল একটু বেশিই ব্যাস্ত হয়ে পড়ল । সারাদিন ক্লাস ফাকি দিয়ে ঘোরাঘুরি; শপিং ইত্যাদিতে বেশি সময় দিতে লাগল নীল । যদিও ওর বাবা মা এসবের কিছুই জানত না; কারন নীল হোস্টেলে থাকত ।

.

নীল অবশ্য ওর মা'কে বলেছিল ইরার কথা । আর মা'ও ইরাকে দেখতে চেয়েছিল । কিন্তু ইরা কখনই নীলের বাড়িতে যেতে চাইত না ।



* * *



শেষের কয়েকদিন নীল কোনো কারন ছাড়া প্রায়ই অসুস্থ থাকে । তাই বেশ কিছুদিন থেকেও বাড়িতে থাকে । ইরা প্রথমে একটু কেয়ার করত; কিন্তু এখন সেটা আর নেই । নীল হয়ত এই কেয়ারিংটা মিস করছিল; তাই বলেছিল কথাগুলো । ইরা এভাবে রিএক্ট করবে ভাবেনি ও !

.

সন্ধ্যার কিছু আগে থেকেই ওর মনের অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করল । নীল কখনও সিগারেট খায়নি । কিন্তু কেউ একজন বলেছিল যে সিগারেট খেলে সব ভূলে থাকা যায় । তাই সে একটি পরিচিত দোকানে গিয়ে বলল-

.

-আঙ্কেল দু প্যাকেট বেনসন সিগারেট দিন তো ।



-নীল বাবা তুমি সিগারেট নিতে এসেছ ! কিছু হয়েছে ?



-জী না আঙ্কেল; এমনিই । দিন তো ।



-হু

.

নীল কে সিগারেট কিনতে দেখে দোকানীও অবাক হয়ে গিয়েছিল । নীল দু প্যাক বেনসন নিয়ে তাদের পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসল । পুকুরের পানিতে পা-ডুবিয়ে প্রথম সিগারেট জ্বাললো ।

.

হ্যা; সত্যিই নীল সবকিছু ভূলে গেছে । তার লাইফ; তার এইম সবকিছু । একটার পর একটা সিগারেট শেষ করল নীল ।

.

এতগুলো সিগারেট খাওয়ার পর একটু অসুস্থ বোধ করতে লাগল নীল । কিন্তু তখনও তার চোখে ইরার জন্য জল ছলছল করতেই থাকল । তাই সে শেষ সিগারেটটা জ্বালিয়ে রুমে চলে আসল ।

.

পিছনের দরজা দিয়ে রুমে ঢুকে আলো জ্বালতেই প্রচন্ড মাথাব্যাথা শুরু হল নীলের । তখনই ও পাচ-ছয়টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল; অনেক প্রশান্তির ঘুম । যে ঘুমের সপ্নে ইরা নেই; আছে বিষাক্ত নিকোটিন !



* * *



পরদিন যখন ঘুম ভাঙল নীলের; ও দেখল সে হাসপাতালের বিছানায় । পাশে মা বসে আছে । ও মাকে জিজ্ঞেস করল-

.

-কি হয়েছে আম্মু



-কাল কি হয়েছিল বাবা ? [কান্না করছেন মা]



-কই; কিছুই তো না !



-তাহলে....

.

হঠাৎই নীলের বাবা মাকে ডাকল ডক্টরের চেম্বারে । যখন চেম্বারে প্রবেশ করলেন উনারা; ডক্টরের কালো মুখ দেখেই বুঝলেন নীলের বড় কিছু হয়েছে-

.

-কি হয়েছে !



-দেখুন প্লিজ আমার কথা শুনে আপনার ভেঙ্গে পড়বেন না । আপনাদের শক্ত থাকতে হবে ।



-কি হয়েছে সেটা তো বলুন !



-নীলের ব্লাড ক্যান্সার ।

.

অতঃপর একটা চিৎকার শোনা গেল । নীলের বাবা-মার আত্মচিৎকার !



* * *



নীলের বাবা-মা যখন বেরিয়ে গেল; নীল তখন ফেসবুকে লগিন করল; ইরার সাথে কথা বলতে । কিন্তু ওর নামটা যে কালো হয়ে আছে ! মানে নীলকে ব্লক করেছে ইরা ! প্রচন্ড রাগে ফোনটা ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে । এরপর একটু কান্না লুকানোর ব্যার্থ চেষ্টা ।

.

এরপর কিছুদিন হাসপাতালে নীলের চিকিৎসা করা হল । নীলকে জানানও হলনা সে কিভাবে ও মেঘের ওপরের বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । অতঃপর নীলকে বাড়িতে আনা হল ।

.

বাড়িতে এসেও নীল সেই আগের মতই মনমরা ! কোনো মতে সবার সামনে কান্না লুকিয়ে বাঁচা আরকি । কিন্তু বাড়িতে এসে আবারও অনিয়ম শুরু করল নীল । আর খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ল ।

.

আজ অনেকদিন হয়ে গেল নীল হাসপাতালে । ও আজও জানেনা কেন সে এখানে পড়ে আছে । আর ঐ যে ইরা ! সে একবারও আসেনি নীলের খোজে । হয়ত আসবেও না ।

.

কিন্তু তবুও ইরার পথ চেয়ে বসে আছে নীল । বসে আছে একজন অনন্ত পথের সম্ভাব্য যাত্রী !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.