![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেঘের সমস্ত মাথায় ব্যান্ডেজ করা । সাদা ব্যান্ডেজও রক্তে ভিজে লাল হয়ে যাচ্ছে । নাকের মধ্য দিয়ে পাইপ জাতীয় কিছু একটা দেওয়া হয়েছে; অক্সিজেন অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে । তবে বুকটা বেশ জোরেই ওঠানামা করছে; প্রানের চিহ্ন বলতে এটুকুই !
.
বাইরে সবাই কাঁদছে; মেঘের জন্য কাঁদছে । মা, ছোট ভাই, ক্লোজ ফ্রেন্ডগুলো আর বাসার কাজের ছেলেটা ।
.
বাবা এখনও আসেনি । ফোন করে জানানো হয়েছে আব্দুর রহমান সাহেবকে (মেঘের বাবা) ; উনি জলদিই আসবেন হয়ত । উনার কাজের অনেক চাপ; জীবনের চাইতেও সময়ের দাম উনার কাছে বেশি । তাই হয়ত উনি মেঘের এক্সিডেন্টের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেননি ।
.
আরও একজন কাঁদছে ! যার নাম সাবিহা । সেই সাবিহা যে মেঘকে বলেছিল;
.
-তুমি আমার মেঘ হবে ? তোমার সাথেই বৃষ্টি হয়ে ঝরব আমি !' ।
মেঘ বলেছিল,
.
-আমি তো তোমারই মেঘ ! তোমার ঐ কালো চুল; কালো চোখে আমি মিশে থাকব আজীবন ! '
* * *
ক্লাসের সবচেয়ে ক্ষেত ছেল মেঘ । সবাই যখন দু-একটা মেয়ে পটিয়ে প্রেম করতে ব্যাস্ত; তখন সে বসে বসে ক্লাসের পড়া শেষে ফেসবুকের আনন্দ নিতে উৎসাহী । এসব সস্তা প্রেমের জন্য সময় কোথায় মেঘের !
.
ছোটবেলা থেকেই এভাবেই তৈরি হয়েছে মেঘ । খুব কম সময়ই বাবা-মা'র সাহচর্য পেয়েছে । বাবা তো বিরাট ব্যবসায়ী; সারাদিন টাকারপিছনে দৌড় । আর মা; সমাজ সেবীকা । সমাজের সেবায় মন থাকলেও নিজের ছেলের সেবায় মন খুব কমই বসেছে । তাই ছোটবেলা থেকেই বেশ চুপচাপ মেঘ !
.
মেঘের এই নিরব জীবনেও লেগেছিল বসন্তের ছোয়া । ওর চুপচাপ মনোভাব আকৃষ্ট করেছিল সাবিহা নামের ঐ মেয়েটিকে । সাবিহা যখন প্রথম কথা বলল মেঘের সাথে; তখন-
.
-আপনার নামটা যেন কী
-মেঘ
-আপনি এত চুপচাপ কেনো ?
-আমি এমনই । আপনার কোনো সমস্যা আছে ?
-না; আপনার বন্ধু হতে পারি ?
-মেয়েরা বান্ধবী হতে পারে; বন্ধু না !
-মেয়েরা সব হতে পারে ।
-আচ্ছা হতে পারেন । সমস্যা নেই কোনো ।
.
সেখান থেকেই পথচলা শুরু । বন্ধুত্ব; শেয়ারিং; কেয়ারিং এবং আরও অনেক কিছু । কিন্তু মেঘ ছেলেটা আসলেই ক্ষেত ! সাবিহা'কে ভালোবেসেই ফেলেছিল কিন্তু কেন যেন বলতেই পারত না ।
.
তাই সাবিহা একদিন রেগে গিয়ে বলল-
.
-তুমি এত বোকা কেনো !
-কী করলাম !
-তুমি আমার মেঘ হবে ? তোমার সাথেই বৃষ্টি হয়ে ঝরব আমি ।
-আমি তো তোমারই মেঘ ! তোমার ঐ কালো চুল; কালো চোখে আমি মিশে থাকব আজীবন ।
.
এরপর আর কিছু বলতে হয়নি কাউকেই । শুধু সাবিহা আস্তে করে মেঘের কাঁধে মাথাটা রেখেছিল ।
* * *
সব কিছু ভালোই চলছিল । কিন্তু মেঘ অনেক আগে থেকেই ড্রাগ এডিক্টেড ছিলো । ছোট বেলা থেকেই একলা থাকতে থাকতে খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে এমন হয়ে গিয়েছিল মেঘ । সাবিহার সাথে এ নিয়ে মাঝেমাঝেই ঝগড়া হত ।
.
সাবিহা অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু ফেরাতে পারেনি ওকে এই খারাপ পথ থেকে । আজকেউ এ নিয়ে অনেক ঝগড়া হল সাবিহা আর মেঘের । কিন্তু হয়ত একটু বেশিই হয়ে গেল-
.
-মেঘ; তুমি প্লিজ এসব ছেড়ে দাও ।
-পারব না ।
-তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও ।
-যেতে পারো ! বাধা তো দেইনি !
-তোমায় একটা থাপ্পড় মারা উচিৎ
-কি ! আরে যার বাপ-মা কোনোদিন এসব নিয়ে ভাবেনি; তুই সেখানে ভাবার কে ! গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার !
.
সাবিহা কাঁদতে কাঁদতে চলে এলো সেখান থেকে । আর মেঘ ? প্রচন্ড রাগ হলে নাকি নেশা করলে ভালো লাগে । তাই ও ড্রাগ নিতে যাচ্ছিল । প্রচন্ড গতিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে একটি ট্রাকের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়-ই ঘটল দূর্ঘটনা । সামনে থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের সাথে সংঘর্ষ এবং মেঘ গুরুতর আহত ।
* * *
-মা; আব্বু এসেছেন ?
-হু; অনেক আগেই এসেছেন বাবা । তুই একটু ঘুমা ।
.
...একটু সুস্থ হওয়ার পর যখন মেঘ কথা বলল- প্রথমেই এই কথাটা জিজ্ঞেস করেছিল । আর মেঘের বাবা বাইরে দাড়িয়ে কথাগুলো শুনে চোখ মুছল ।
.
মেঘের আম্মু যখন বের হলেন মেঘের কাছ থেকে; সাবিহা গেল মেঘের কাছে । মেঘের মা কোনো বাধা দিলনা । কারন সাবিহা মেঘের বন্ধু এটা অনেক আগে থেকেই জানেন উনি ।
.
সাবিহা মেঘের পাশে বসলে মেঘ বলল-
.
-চোখ ফুলিয়েছ কেন লক্ষীটা
-সরি বাবু; আমি আর কখনও ঝগড়া করব নাহ্ । গড প্রমিস !
-তুমি না করলে কে ঝগড়া করবে পাগলী ।
.
সাবিহা আর কিছু বলতে পারেনি । ওর কান্না পাচ্ছে । ও আবারও চোখের বৃষ্টি ঝরাবে । মেঘের কষ্ট মুছে যাবে সেই বৃষ্টিতে । মেঘ তখন আলতো করে ওর মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে বলবে-
.
'খুব ভালোবাসি তোমাকে লক্ষী সোনা !'
.
আর সাবিহার চোখ থেকে হয়ত তখন গড়িয়ে পড়বে কয়েক ফোটা মনি-মুক্তো
©somewhere in net ltd.