নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উদ্বাস্তু নিশাচর

উদ্বাস্তু নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ভালোবাসার গল্প .......অভ্রমেঘ

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮

-হ্যালো অরণ্য; ফোন রিসিভ করলেনা যে !



-সাইল্যান্ট ছিলো ।



-হি... হি... ভালো । তোমার সাথে কী একবার দেখা করা যাবে ? প্লিজ



-ওকে । বলো কোথায় দেখা করতে হবে ।



-ক্যাম্পাসে; শহীদ মিনারের কাছে ।



-ওকে

.

.

ফোনটা কেটে দিয়েছে অরণ্য । পরীকে বাই' বলারও সুযোগ দেয়নি ছেলেটা । কিন্তু এ ছাড়া কিইবা করতে পারে ও ? পরী কী অনেক বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছে ? না, অরণ্য পরীর মত ভালো মেয়ে কখনও দেখেনি । তাহলে কেনো !

.

--বেশ কিছুদিন আগে--

.

ক্লাস করার উদ্দেশ্যে খুব কমই কলেজে আসা হয় অরণ্যের । সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ফেসবুকে সময় কাটানো । আজও তার ব্যাতিক্রম নেই । ঘুরতে হবে- এই উদ্দেশ্যেই কলেজে এসেছে । কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকেও ফেসবুকেই ছিল ও । তাই সামনে কে আসছে এসব দেখতে পাইনি ছেলেটা ।

.

হঠাৎ সামনে থেকে আসা কেউ একজনের সাথে ধাক্কা লাগল অরণ্যর । তখনই অরণ্য দেখল পরীকে । এমন নয় যে প্রথম দেখা; মেয়েটা অরণ্যের ডিপার্টমেন্টেরই ছাত্রী ।

.

পরীর হাতের নোটসগুলো সব পড়ে গিয়েছিল; আর অরণ্যের ফোনটা । অরণ্য নিজের ফোনটা উঠিয়ে পরীর নোটসগুলো তুলতে সহায়তা করতে করতে বলল-

.

-সরি



-ইট্স ওকে



-আপনি সম্ভবত আমাদেরই বিভাগের স্টুডেন্ট । তাইনা ?



-আপনি কোন ডিপার্টমেন্ট ?



-না মানে বাংলা বিভাগ;



-ওহ আপনাকে তো ক্লাসে খুব একটা দেখিনা !



-আসলে...

.

কথা হয়ত আরও দূর এগিয়ে নেওয়া যেত; কিন্তু তখনই অরণ্যকে ফোন দিল ওর বন্ধু তপু । তাই অরণ্য বলল-

.

-এক্সকিউজ মি । পরে কথা হবে ।



-ওকে

.

এভাবেই অরণ্যর সাথে পরিচয় হয় পরীর । এরপর ফোন নাম্বার বিনিময়, শেয়ারিং-কেয়ারিং, এবং আরও ভালো বন্ধুত্ব । আর বন্ধুত্বের পর হয়ত হুমায়ুন আহমেদের সেই উক্তি সত্য হল ।

.

"ছেলে আর মেয়ে কখনও বন্ধু হতে পারেনা । হয় ছেলেটি মেয়েটির কিংবা মেয়েটি ছেলেটির প্রেমে পরবে । কিন্তু প্রেমে তাদের পড়তেই হবে ।"

.

অরণ্য কখন যে বন্ধুত্বের চেয়ে একটু বেশিই এগিয়ে গেছে তা বুঝতেও পারেনি । সারাদিনে হাজার বার ফোন করা, একদিন দেখানাহলে মন খারাপ করে বসে থাকা এগুলো নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা ।

.

কিন্তু হঠাৎই কলেজ ছুটি হয়ে যাওয়ায় দেখা হওয়া খুব কমে গেল । সপ্তাহে দু-একদিন । এভাবে আর পারছিলনা অরণ্য । ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল যে পরীকে বলেই দিবে সে মনের কথা । তাই হঠাৎ একদিন পরীকে ফোন দিয়ে বলল-

.

-কাল একটু কলেজ ক্যাম্পাসে আসতে পারবি পরী ? শহীদ মিনারের ওখানে ।



-হুমম । কিন্তু কেন ?



-কাজ আছে



-আচ্ছা



* * *



কলেজ ক্যাম্পাসে অনেক আগে থেকেই বসে আছে অরণ্য । পরী এসেই বলল-

.

-হুমম বলুন স্যার



-তোকে কিছু কথা বলব । রাগ করবিনা তো ?



-ধুর ছাই । তোর উপর রাগ করব কেন । যা বলবি বল ।



-পরী...



-হু

.

অরণ্য তখন পরীর সামনে বাটু গেড়ে বসে পড়ল; আর বলল-

.

-আমি তোকে ভালোবাসি । খুব খুব খুব ভালোবাসি ।

.

পরী কথা গুলো শুনে চুপ করেই রইল । ওর চোখ দুটো কেন যেন ছলছল করে উঠল । নিশ্চুপ নীরবতা চারদিকে । অরণ্য আবারও কিছু বলতে যাচ্ছিল । তখনই আবার ওর ফোনটা বেজে উঠল । আবারও তপুর ফোন । .

অনেক বিরক্তি ও হতাশা নিয়ে ফোন ধরে যা শুনল তাতে ও স্তব্ধ হয়ে গেল । পরী জিজ্ঞেস করল-

.

-কি হয়েছে



-তপুর ছোট ভাই এক্সিডেন্ট করেছে । অনেক রক্তপাত হয়েছে । রক্ত লাগবে । কিন্তু ও নেগেটিভ রক্ত পাওয়া যাচ্ছেনা ।



-আমার ও নেগেটিভ রক্ত ! চল যাই

.

অরণ্য আর পরী হসপিটালে চলে গেল ।



* * *

পরী এবারই প্রথম রক্ত দিতে যাচ্ছে; তাই কয়েকটা জরুরী টেস্ট করতে হবে । তবে তখন তপুর ভাইয়ের জন্য কয়েক ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ হয়েছিল ।

.

কিন্তু তখন ডক্টর বলল পরীর রক্ত নেওয়া যাবেনা । কারনটা জিজ্ঞেস করলেও বলতে ইতস্তত করল কিছুক্ষন । এরপর অরণ্য আর পরীকে একা ডেকে নিয়ে যা বলল; তাতে অরণ্যের মনে হল- পুরো পৃথিবীটা ওর মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ল !

.

" পরীর যে এইচ.আই.ভি.(HIV) পজিটিভ এসেছে !"

.

এরপর অনেক ভেঙ্গে পড়ল পরী । আর অরণ্যও কিছুদিন পর এমনভাবেই পরীকে এড়িয়ে যাওয়া শুরু করল ।



* * *

--দেখা করার দিন--

.

কলেজ ক্যাম্পাসে আজকেও অরণ্য আগেই এসেছে । বসে আছে সেই আগের জায়গায়; যেখানে কিছুদিন আগেই পরীর সাথে সারাটা জীবন বাঁধার কথা বলেছিল ।

.

পরী চলে এসেছে । ওকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে । খুব অসুস্থও দেখাচ্ছে । পরী বলল-

.

-কেমন আছো অরণ্য



-ভালো । তুমি ?



-ভালো । তোমায় বিরক্ত করার জন্য সরি ।



-ইট্স ওকে । আসতে বলেছিলে কেন ?



-তোমাকে দেখতে খুব মন চাচ্ছিল; তাই । আমার অনিশ্চিৎ জীবনের সাথে জড়াতে বলবনা তোমায় । ভালো থেকো অরণ্য । বাই...

.

আর কিছু বলতে পারেনা পরী । ওখান থেকে দৌড়ে চলে যাচ্ছিল পরী । অরণ্য স্তব্ধ ! কিন্তু এভাবে ও নিজেও শান্তি পাচ্ছিল না । পেছন থেকে পরীর হাতটা চেপে ধরল । এরপর বলল-

.

-যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি; তার সাথে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকব । আই লাভ ইউ ।



-এটা সম্ভব না অরণ্য । আবেগ দিয়ে জীবন চলে না ।



-ভালোবাসা দিয়ে চলে তো !

.

পরী কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সেই সুযোগ পেলোনা মেয়েটা ।অরণ্য নিজের বুকের মাঝে অনেক শক্ত করে ধরে রাখল পরীকে; অনেক ভালোবাসা দিয়ে ।

.

.

লেখাঃ অভ্রমেঘ

.

[HIV সমন্ধে আমার ধারনা খুব কম । তাই ভূল হলে ক্ষমা করবেন । আর সর্বশেষে বলব- প্রকৃত ভালবাসায় শারিরীক অসুস্থতা সম্ভবত কোনো সমস্যার কারন হতে পারেনা । প্রকৃত ভালবাসার জয় হবেই !"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.