![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাহিদ বিছানায় শুয়ে শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,জীবনটা কি সরল রেখা নাকি চক্রকার।জীবনটা যদি সোজা হয় তার মানে জন্ম এর'পর মৃত্যু আর যদি চক্রকার হয় তবে জন্মের পর মৃতুয় এর'পর আবার জন্ম।কি হতে পারে?মৃত্যুর সময় যদি কোনো মানুষ লিখে যেতে পারত যে আজরাইল কি তাকে দেখা দিয়েছে নাকি;এমন কিছু যদি থাকত যে মৃত্যুর সময় কি হয়।ক্ষণটা কি,তবে হয়তো পাল্টে যেতো কিছু।মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ভালোবাসার মানুষটিকে কি মনে করা যায়?ইচ্ছা করলে কি মনে করা যায় সব কিছু তখন?যদি ইচ্ছা ক'রে মনে করতে পারবো শালিক পাখি,রুক্ষ টোকাই,জোঁনাকী;যদি পারা যায় তো আমি মনে করতে চেষ্টা করবো মেঘলার হাসি মাখা মুখ।মেঘলা হাসলে গালের এক'পাশে টোল পরতো,টোল পরার গভীরতায় অন্ধকার হয়ে যেতো একটুখানি জায়গা।বা'পাশে টোলে মনে হতো কেউ যেনো এঁকে দিয়েছে;ইচ্ছা করে এঁকে দিয়েছে;যেনো নজর না পড়ে,কিন্তু ঐ টোলখানি তো নজর কেঁড়ে নিতো জাহিদের।
ঐদিনের কথা খুব মনে পরতে লাগলো;সে'দিন মেঘলা বলেছিলো-আচ্ছা জাহিদ জোঁনাকীরা কি রাতে চোখে দেখে না?
-জানি না তো!কেনো?
-না!দেখ কি সুন্দর জোঁনাকী।আমার মনে হয় ওরা চোখে কম দেখে তাই হয়তো পাছার মধ্যে খোদা লাইট লাগিয়ে দিয়েছে।
-আ'দূর কি যে বলনা।এই রাতের জোঁনাকী দেখতে এসেছো নাকি আবোল-তাবোল কথা বলতে এসেছো।
-হি হি!আচ্ছা আমরা যদি জোঁনাকী হতাম কেমন হতো।
-যেমন হত তেমন হত!
-আমরা যদি জোঁনাকী হতাম ঐ গুলা করার সময় সবাই দেখে ফেলতো,কারণ আমাদের পাছার মধ্যে লাইট সেটিং করা তাই না,হি হি!কি বিচ্ছিরি লাগলো।ভালো ক'রে জড়িয়ে ধরতে পারতাম না।
-তুমি কি মেঘলা এমন আবোল-তাবোল কথা বলছো পাবনা যাওয়ার জন্যে?
-ওমা আমার কথা শুনে তুমি কেনো পাবনা যাবে!
-আমি যাবো না কেনো?তোমাকে পাবনা ভর্তি করাতে।
-হি হি!আমি তো ভাবলাম আমার কথা শুনে তুমি পাগল হয়ে যাবে।
-হুম;আরো কিছু মনে ক'রে বসে থাকো।
-এই আচ্ছা পাগলাগারে কি নারী রোগী আছে?
-কেনো নারীরা কি পাগল হয় না!
-না নারীরা কখনো পাগল হয় না।
-মানে!
-পাগল হয় না কারণ নারীরা পাগলী হয় আর পাবনাতে যে পাগলাগার আছে এটা শুধু পাগলদের জন্যে পাগলীদের জন্যে না।যদি পাগলীদের জন্যে হতো তবে তা হতো পাগলীগার।
-দূর!
-হি হি!আচ্ছা আমরা তো হানিমুন করতে এলাম।বিয়ের আগে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দূরে বের হলে হানিমুন ব'লে না কিন্তু বিয়ের পর কেনো হানিমুন ব'লে।
-স্বামী আর স্ত্রী বৈধ ভাবে একান্তে সময় কাটাই তাকে হানিমুন ব'লে।প্রেমিক-প্রেমিকার ক্ষেত্রে হানিমুন বলা হয় না।
-ও আচ্ছা।এটা এতো নাম থাকতে হানিমুন হলো কেনো?
-হানিমুন এর বাংলা কি?
-মধুচন্দ্রীমা!
-হানি অর্থ মধু আর মুন অর্থ চাঁদ মানে সুন্দর ক'রে বা রোমান্টিক ক'রে বললে চন্দ্রীমা।
-মধুচন্দ্রীমা কেনো ব'লে?
-হা হা হা!দাড়াও বলছি;কোনো এক হালায় এই মধুচন্দ্রীমা শব্দ উদ্ভব করছে।ঐ লোকে তার বৌকে নিয়ে বিয়ের পর চাঁদনী রাতে দূরে কথা বের হয়েছে।আর তারপর তারা হয়তো চাঁদনী রাতে মধু বিনিময় করেছিলো।আর ঐ দিন থেকে এই শব্দের উদ্ভব হয়।
-হা হা হা।মধু আবার কি?চাঁদনী রাতে কি কেউ মধু খেতে বের হয় নাকি।
-এই মধু সে মধু না;এটা দু'জনের মিলন;মধুরমিলন।
-বাহ!কি পন্ডিত তুমি।
-তাই এসো মেঘলা মধুরমিলন করি।এসো!
-এই যা!তুমি না!
মেঘলা আর জাহিদ মধুর মিলন করলো ঐ দিন,দু'জন মিলে মিলে এক;একাকার।জাহিদ ভাবছে সে'দিনের কথা।আহা কতো রঙ্গিন ছিলো।এখন ভাবলে সব সাদা-কালো।স্বপ্ন আর ভাবনা সব সময় সাদা-কালো হয়।
"বাবা!বাবা!বাবা!"
হটহ্যাৎ মিতার চিৎকারে যাহিদের ভাবনার জগৎ উড়ে গেলো।যাহিদ সজাগ হয়ে উঠলো।দৌড়ে গেলো তার একমাত্র মেয়ের ডাকে।
-কি হয়েছে?
-বাবা দেখ বাইরে বৃষ্টি!
-তো!
-চলো না বাবা একটু ভিজি।
-না!অসুখ করবে।
-প্লিজ বাবা চলো না।
-বললাম না অসুখ করবে।
-একবার বাবা।বছরের প্রথম বৃষ্টি,প্লিজ বাবা।
এই এক দায়-সাড়া।যাহিদ কখনো মিতার কথা ফেলতে পারে না।আর মেয়েটাও হয়েছে মার মতো;খুব বেশি জেদি। না যেয়ে পারলো না জাহিদ।
বাবা-মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে,খুব নাচতে লাগলো মেয়েটি।মাত্র পাঁচ বছরের মেয়ে কিন্তু তার কাছে হেরে যায় সব সময় জাহিদ;তার কথা না মেনে পারে না জাহিদ।খুব মনে পরছে মেঘলার কথা।
জাহিদ মনে মনে ভাবছে তোমার মেয়ের কথার কাছে সব সময় হেরে যাই,সব সময়;তুমি হয়তো হারতে না।মিতাকে এক বকা দিয়ে চুপ ক'রে দিতে।কেনো!কেনো চ'লে গেলে না ফেরার দেশে?কেনো আমাকে আর মিতাকে ফেলে গেলে।
জাহিদের চোখের জল মিতা দেখছে না,জাহিদ হাসার ভান করে আছে,তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে।চোখে জল বুঝতে পারছেনা মিতা মেয়েটি কারণ বৃষ্টর জল আর চোখের জল যে এক হয়ে আছে,একাকার হয়ে আছে,মিশে আছে।
©somewhere in net ltd.