![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গলাকাটা লাশটা পড়ে আছে ডোবায় আধা-আধি ভাবে,শরীরের অর্ধেক তার ডোবায় আর অর্ধেক তার পাড়ে।উৎসুক জনতা ভিড় ক'রে আছে।আসলাম ভিড়ের মাঝে থেকে কৌতুহল মিটাচ্ছে।গলাকাটা লাশটা বেওয়ারিশ।মানুষের যখন নিখোজ হয় তখন সে হয়ে যায় বেওয়ারিশ;আর যখন লাশের কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না তখন তা হয়ে যায় বেওয়ারিশ লাশ।রাস্তার কুকুর মালিক হীন তাই তাদের বলা হয় বেওয়ারিশ কুকুর।
গলাকাটা এই লাশের কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না তাই এই লাশটি বেওয়ারিশ লাশ।বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে পুলিশের ধান্দা কম তাই এখনো কোনো পুলিশ এসে উপস্থিত হয় নি।লাশ হলে পুলিশের ধান্দা কিন্তু বেওয়ারিশ লাশে কোনো ধান্দা থাকে না,অবহেলিত।
আসলাম দেখছে লাশের চারপাশে সবাই নাক বন্ধ ক'রে লাশ দেখছে,এই লাশ দেখে কোনো লাভ নেই তবুও দেখছে।মানুষ হুজুগী রাস্তায় সবার সামনে একজনকে পিটিয়ে লাশ বানানো হলে তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসে না;কিন্তু লাশ হবার পর সবাই আফসোস ক'রে।বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে লীগের ছেলেরা যখন হত্যা করছে তখন কেউ এগিয়ে আসে না কিন্তু লাশ হবার পর সবাই প্রতিবাদী,প্রতিবাদী তাও আবার আড়াল থেকে সম্মুখে নয়।
নাকে কাপড় দিয়ে সবাই লাশ দেখছে।কানাকানি শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।ওফ হোয়াট ফতুয়াটা লাল-কালচে হয়ে গেছে,রক্তের লাল আর কাদার কালো।গলার যে অংশটুকু আধা-আধি ভাবে কাটা তাতে মাছিরা বাজার বসিয়েছে,খাদ্যের বাজার,পিঁপড়ের দল খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত লাশটি থেকে।
মানুষ যখন মরে যায় তখন সে পোকামাকড়ের খাদ্য হয়ে যায়।
ঊৎসুক জনতার মাঝে একজন বলে উঠলো-ভাই লাশটা কার জানেন কেউ?
কেউ কোনো কথা বলছে না।আসলাম ভাবছে লোকটা এটা কি বললো!লাশটা কার মানে!এটা হবে লাশটা কি কারো পরিচিত বা লাশটা কি কেউ চিনেন।
একযুবক বলে উঠলো-মনে হয় পলিটিক্সের ব্যাপার।আজকাল যে হারে খুন খারাপি হয় বেশি ভাগ পলিটিক্সের জন্যে।কিছু মানুষকে দেখলাম যুবকটির দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ভাবে তারা মাথা নাড়লো যেনো কথাটা তাদের মনের মতো।
এক মাঝবয়সী-মনে তো হয় শিবিরের পোলারা করছে।হাত-পায়ের রগ কাটা এদের স্টাইল।আর জবাই করাটাও তাদের সাজে।
এক যুবক-নারে ভাই এখন লীগের পোলারাও রগ কাটে;জবাই করা তাদের ও স্টাইল।যুবকের কথাটা অনেকের মন মতো হয়েছে মনে হলো।
এক বৃদ্ধা-শিবির নাকি ইসলামের জন্যে কাজ করে।হেতারা এমন কাজ করবার পারে না ভাউ।
মাঝ বয়সী-আরে ধূর কাকা!কিসের ইসলামের কাজ করে ইসলামের নামে নোংরা রাজনীতি ক'রে এরা।যত শিবির সব তো ধর্ম নিয়ে নোংরামী ক'রে।
যুবক-নোংরা রাজনীতির মনে হয় লীগের পোলারা ক'রে না।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেখি সব তাদের মাঝে।মুজিব কি এক নেতা তাদের হের ডাকে নাকি সব যুদ্ধে গেছে।
মাঝ বয়সী-তো কার ডাকে গেছে?জিয়ার ডাকে?
একটা রাজনীতির শোরগল পড়ে গেলো সবার মাঝে।এর মাঝে এলাকার নামী এক বয়স্ক লোক এলো।জনতার মাঝ থেকে সড়ে তাহাকে জায়গা ক'রে দিলো। নাক চেপে লোকটি বলে উঠলো-হায়রে কোন মায়ের বুক খালি হৈলো।কেউ কি এই লাশের পরিচয় জানেন নি?
জনতা নিশ্চুপ।
-বেডাটা কি মুসলমানের পোলা নি?মূর্দা বেশি ক্ষণ এইভাবে পরে থাকা ভালা না,আত্মা কষ্ট পায়,কি কন আপনারা?
জনতা সমস্বরে বলে উঠলো হ হ ঠিক কৈছেন আলি সাব।আসলাম বুঝতে পারলো লোকটির নাম আলি।
-ঐ হেতার বডিটা উপরে তুলি আন।ঐ কামাল্যায় যা ধর।
লাশটাকে দু'জন ধরে টেনে তুললো।গন্ধটা আরো বেপক ভাবে ছড়াতে লাগলো।মানুষ কিছু পাশের চা-দোকানে বসে ছিলো তারাও দৈড়ে এলো।
-আলি সাহাব হুনছি পাশের হিন্দু পাড়ার এক মানুষ নাকি তিন দিন ধরে নিখোজ।এইডা মনে হয় তাগো।
-না!আলি সাহাব মুই ঐ এলাকার লোক।এই মানুষ হেই মানুষ না।
-ও তুই নারায়ণের পোলা না?
-হ!
-ঐ কামাল্যায় লাশের প্যান্টটা খুলি দেখতো মুসলমানি করা নি?
আলি সাহাবের কথা মতো চেক করে দেখা হলো।প্রমানিতো হলো সে মুসলমান।বেচারা নাকেকাপড় বেঁধে লাশের প্যান্টের চেন খুলছে।
আসলাম ভিড় থেকে বেরিয়ে এলো।বের হয়ে সে সিগারেট ধরালো আর হনহন ক'রে বাজারের দিকে হাটতে লাগলো।বাজার ক'রে ফিরে আসার সময় দেখলো একটা ভ্যানে ক'রে লাশটা নিয়ে যাচ্ছে।সামনে পুলিশের গাড়ি।সাদা কাপড় দিয়ে লাশটা পেচানো হয়েছে।
আসলাম বললো ভ্যান চালককে,ভাই কই যাইবো লাশটা?
-পোশট মর্দাম হৈবো,মর্গে যাইবো।
আসলাম ভাবলো এই বেওয়ারিশ লাশের তদন্ত হবে,কিন্তু বেশি দূর তদন্ত হবে না।কারণ লাশটার লাশ হবার পর বা আগের সব আলামত নষ্ট হয়ে গেছে।আমাদের কৌতূহল আর অসাবধনতার জন্যে আলামত নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে বিচার হয়ে যায় বেওয়ারিশ,তদন্ত হয়ে যায় বেওয়ারিশ।আসলাম তাকিয়ে রইলো ভ্যান গাড়ির উপরে পড়ে থাকা লশের দিকে।
(উৎসর্গ-সাগর ও রুনি)
২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৪
নিরীহ বালক০০৮ বলেছেন: হুম আমিও চাইবো যাতে আরো ভালো লিখা উপহার দিতে পারি।ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৩৫
স্রাবনের রাত বলেছেন: থিম টা সুন্দর । তবে শেষ টা আরও একটু ভাল আশা করেছিলাম ।
আপনার জন্য শুভ কামনা