নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরীহ বালক

নিরীহ বালক০০৮

নিরীহ বালক০০৮ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধা আর ভালোবাসার গল্প

২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪৪

ক্ষুধার কষ্ট চাইলে সবাই ভোগ করতে পারে কিন্তু করবে না,চাইবে না।সীমা ছাড়া কষ্ট।পাথর বানিয়ে দে;ক্ষীণ শক্তি টুকু কেড়ে নে সে।চরম সে ভাব;চরম সে কষ্ট। নষ্ট করে দে সব।সাদা-কালো হয়ে যা পৃথিবী।কোনো সপ্ন মাখা তাকে না শুধু হা করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে দুনিয়ার সব খাদ্য।



পৃথিবী সব চেয়ে পখর একটি হলো পেটের টান আর অন্যটি যৌনতা।এই দুটির জন্যে যতো সব হিংস্রতা য কার‍্য। তবে পেটের ক্ষুধার কাছে যৌন ক্ষুধা হার মানে।



ফাতেমার এখন সে চরম ক্ষুদা অনুভব করছে;পেটের ক্ষুদা।আজ তিন মাস গত হল ফাতেমার স্বামী কাজের খোজে শহরে গেছে।প্রথম একটি মাস খবর নিতো ফাতেমার আর তাদের ভবিষ্যতের আশা,স্বপ্ন,ভালোবাসা গুলোর। তিনটি সন্তান আর ফাতেমা কে ফেলে কাজের সন্ধানে যখন কাশেম শহরে যাচ্ছিলো তখন বলেছিলো"বৌ রে মোর ছাওয়ার গুলা মোর ভালোবাসা এগুলারে দেখে রাখিস।মুই তাড়াতাড়ি ফিরমু নে।কাঁদিস না;মুই ফোন দি তোর লগে কথা কমু।



সে ফিরে আসবে;কিন্তু তার ভালোবাসা গুলো কি বেঁচে থাকবে।ঘরে একটা খাবার কিছু নেই।আজ গতর খাতিয়ে কোনো টাকা পায় নি ফাতেমা।কাজ নেই;টাকা নেই;ক্ষুধা আছে!



বড় দুটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু ছোটো মেয়েটা এখন কাঁদছে।দুধ পাচ্ছে না।



দুপুরে কিছু খায়নি ফাতেমা বড় মেয়ে আমেনা আর মতি কিছু ভাত ছিলো খেয়েছে।কিন্তু রাতে ক্ষুধার জালায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে।



নিশ্চুপ ফাতেমা;মুর্তি প্রায়।কি করবে ছোটো মেয়ে দুলিরে কি আজ বাঁচাতে পারবে!বুকের দুধ পাচ্ছে না।শুধু কাঁদছে।হঠাৎ চোখ পড়লো তার দুলির বুকের দিকে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে শ্বাস নিচ্ছে মেয়েটি।বুকের মাঝে ধুক করে উঠলো।



দুলির মুখে একটু পানি দিলো ফাতেমা।অবস্থা খারাপ বুঝতে পারলো ফাতেমা।



-এই আমেনা,আমেনা!



-হুম!



-উঠ মা!তোর বইন কেমন করে রে,উঠ!



-কি হৈচে (ঘুম থেকে উঠে বিছানাই পা ফাক করে বসে পড়লো)



-অ্যাই তো নিতাই দাদুর দোকানে যাই রে।দুলি রে দেখ তুই!অ্যাই কিছু চাইল লৈ আই।



-নিতাই দাদু তো বাকী দিবো না কৈলো মা!



-না দিলে ডাকাতি করমু নে,না খাইয়া মরবো নি।(বলতে বলতে কান্না করে দিলো ফাতেমা)



-সরে আইসো মা!চাদ্দড় লৈয়া যাও নে।



-হ



ফাতেমা দৌড়াতে লাগলো।কুয়াশা ভেদ করে দৌড়াতে দৌড়াতে নিতাই কাকার দোকানে যাচ্ছে।ঠান্ডা তাকে কাবু করতে পারছে না।কাশেম আর তার ভালোবাসার ফসল মরে যাচ্ছে। তাকে তো বাঁচাতে হবে ফাতেমার। না হয় কি জবাব দিবে সে ফিরে এলে।



-নিতিন কা,ও নিতিন কা,নিতিন কা!



-ক্যাডা!



-কা মুই,কাসেম এর বৌ;দোকানডা খুলেন কা।আমাগো দুলি কেমন করে রে,কিছু চাইল দাওনি তোমাগ কাশেম আইলে দিয়া দিবো।



-ধ্যাত!হেতে আর আইবো না যাই দেখ কোন মাইয়ার লগে ঘর বাধছে। ট্যাকা ছাড়া কিছু দিবার পারুম না।



-কা ঐ কথা কৈয় না,দিলু কেমন করে।দোকানডা খুলো কা।



-পারুমা না যা।ঘুমাইতে দে মোরে।গতর খাইটা কাম করি আর কত দিন যাইবো।যা ইজ্জত বেইচা ট্যাকা লৈ আয়।বাকী দিবার পারুম না।



এই কথা শোনার পর ফাতেমা আর কিছু বলল না।বাপের এর বয়সী একজন যদি এই কথা বলে তোবে কি আর বলা যায়।ফাতেমা ইজ্জত দিবে না;না খেয়ে মরবে তবু ইজ্জত দিবে না সে।"থ" হয়ে গেলো সে।শীত অনুভব হচ্ছে তার।বাড়ীর দিকে ফিরছে সে।সব পুরুষ বাবা আর ভাই হতে পারে না;অনেক পুরুষ সারা জীবন পুরুষ থেকে যায়।



হঠাৎ থমকে দাড়ালো বাড়ীর কাছে।সে কি করবে। তার ভালোবাসা কি মরে যাবে। তার চোখের সামনে মরে যাবে তাদের ভালোবাসা। না!



আবার ফেরে দৌড়াতে লাগলো ফাতেমা নিতাই কাকার দোকানের দিকে...



-নিতাই কা,নিতাই কা!



-ক্যান আবার আইছোস;কৈলাম না ট্যেকা ছাড়া না আইতে।



-টাকা লৈয়া আইছি,দোকানডা খুইল্লা বাইরে আহেন কা!



নিতাই চেরাগ জালালো,দোকানের দরজা খুলে ফাতেমার দিকে ঘুম জড়িত ভাবে তাকিয়ে বলল -কি লবি ক!ট্যেকা দে।



-ট্যেকা নাই,ইজ্জত বেচমু!কিনবা নি ক্‌ও!



-কি কস!



-হ দশ কেজি চাইল দাও মোরে আর ইজ্জত পাল্টা!ইজ্জত ল্‌ও!



-দশ না পাঁচ কেজি ল।



-দিমু না দশ কেজি!



-যা সাত কেজি দিমু।



ঘুমের ভাব কাইটা গেলো নিতাই এর।চেরাগের ক্ষীণ আলোতে পশুর মতো জ্বল জ্বল করে উঠলো নিতাই এর চোখ।



-খাড়া,ভিত্রে আয়।



ফাতেমা দোকানে ভেতরে ধুকলো।চেরাগ এর বাতি নিভে গেলো।



-পুরা খুইল্লা দে।



-এগিন ধৈরো না,মোর দুধের বাচ্চা আছে কা।



-মত্ত করিনি কাম!হাত সড়া।



ফাতেমা শুয়ে রৈলো।চোখের পানি গড়িয়ে কান দিয়ে পড়ছে। তার শরীরের উপর বয়স্ক মানুষটি তৃপ্ত হচ্ছে।ক্ষুধা মেটাচ্ছে আর ফাতেমা ক্ষুধার জন্যে ক্ষুধা মেটাচ্ছে!

-কা,তাড়াতাড়ি করো।মোর দেরী হৈ যাই কা।



অতপরঃ



মারে তগো লাই ভাত আনছি।ল বিস্কুট ল!



-মারে নিতাই দাদু চাইল দিলো ক্যানে!



-তোর নিতাই কা বহুত ভালা মানুষ রে।দুলি কথা হুনি চাইল দিলো।



আয় খাইয়া লো।ভালোবাসা বেঁচে মুই ক্ষুধা মিটামু তগো,আয়!



আরো উনিশ দিন পর ফাতেমার উনি আইলো।বৌ রে বহুত কষ্টো দিলাম রে তোগো।ফোন নম্বর হারাইয়া ফেলাই ছিলাম রে।মোরে মাফ কৈরা দে রে।



-ঐ কথা কৈয়ো না রে।



-না তুই মোর ভালোবাসা বাচাইয়া রাখছস।



ফাতেমা কিছু বলল না।স্বামীর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলো।



শুধুই ভালোবাসাবাসি ক্ষুধা হীন....

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৩৬

শোয়াইব আহামাদ বলেছেন: ভালো লাগল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.