নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরীহ বালক

নিরীহ বালক০০৮

নিরীহ বালক০০৮ › বিস্তারিত পোস্টঃ

(ছোটগল্প) অপ্রত্যাশিত ক্ষমতায় মৃত্যু

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

-এটা কি?

-কাফনের কাপড়।

-ও। আর কিছু দিয়েছে আপনাকে?এই
যেমন আতর,সাবান,ধুপ এমন কিছু।

-না।একটা চিঠি দিলো।

-পেরকের নাম আছে?

-তোমার কি মনে হয়
চিঠিতে পেরকের নাম থাকবে।

-না।তারপরও বললাম।

মিজান সাহেব বেশ চিন্তিত।তবে মনে হয় না জীবন নিয়ে তার চিন্তা।তার চিন্তা অন্য কিছুতে।ইজি চেয়ারে বসে তিনি মাথাটা উপর করে আছেন।গলার মধ্যেখানে চামড়ার ভাজের দাগ।মোটা মানুষগুলোর এমনি হয়।


-আপনার নামটা যেনো কি?

-হিমাদ্রী।

-হুম;যাওয়ার সময় নিতুর কাছ থেকে মনে করে চিঠিটা নিবেন।

-চিঠিতে কি আপনার কাছ থেকে কোনো টাকা দাবি করেছে
?

-না তা করে নি?

-আপনার কি মনে হয় যে এটা কেউ
ফাজলামো করে করেছে।

-না।

-আপনার কি কোনো শত্রু আছে।মানে আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন।

-না সেটাও করি না।

-আমার মনে হয় আপনার
কোনো শুভাকাংখী আপনাকে
কাফনের কাপড় উপহার দিয়েছে।


মিজানুর সাহেব এইবার মাথাটা নিচু করলেন।গোল গাল মুখ।ক্লিন সেভ এর দাপটে গালের চামড়ার মলিনতা হারিয়ে গেছে।ধনী লোকদের গাল এমনটাই হয়।খুব
বেশি তাদের সেইভ করতে হয়।গলা আর গালের চামড়ার ভাজ হয়ে এক হয়ে গেছে।


-নিতু বলেছিলো আপনি অনেক বুদ্ধিমান। আর তাই এই
ব্যাপারটা নিয়ে আপনার সাথে কথা বলছিলাম।কিন্তু আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার মেয়ে এখনো মানুষ চিনতে ভুল করে।

-কি যে বলেন।মানুষ
কি মানুষকে কাফনের কাপড় গিফট
দিতে পারে না?

-পারে।তবে তা সরাসরি দেয় নি।
আর পরিচয় গোপন
রেখে দিয়েছে তার মানে বুঝুন।

-হুম।

-হুম হুম করবেন না।এখন নিতুর
কাছে যান।


হিমাদ্রী উঠে নিতুর রুমে গেলো।নিতু দু হাতে মেহেদী লাগিয়ে টেবিলের উপর বসে বাইরে তাকিয়ে আছে।
হিমাদ্রীকে দেখে সে সজাগ
হলো।


-কি অবস্থা?

-হুম ভালোই আছি।

-আমি তোর কথা বলছি না;বাবার কথা বলছি।

-ও;উনি আমাকে নিয়ে বিব্রত বোধ করছেন।তাই চলে এলাম।

-কি বুঝলি?

-আমার মনে হয় তোর বাবা খারাপ কিছু করে তাই অন্য পক্ষের লোক তাকে কাফনের কাপড় দিয়েছে হুমকি স্বরুপ।

-তোর ধরনা কি?

-আমার মনে হয় কোনো মেয়ের
সাথে তোর বাবার প্রেম আছে।

-পাগল হইচোস।এই বয়সে?

-হতে পারে।

-ফালতু পেচাল পারিস না তো।

-আচ্ছা আমি তাহলে যাই।বেশি চিন্তা করিস না।দেখ কি হয়।খবরাখবর দিস যদি তোর বাবার কিছু হয়।

-কিরে তুই এসব কি বলছিস!

-ও সরি দোস্ত কি বলতে কি বলে ফেললাম;যাই
রে।


যাই রে বলার সাথে সাথে হিমাদ্রী হাত ধরে হ্যান্ডসেক করলো,আর সাথে সাথেই নিতু চেচিয়ে উঠলো…

-হারামজাদা এটা কি করলি;দেখিসনি হাতে মেহেদী দিলাম।

-ও ইয়ে আমার দোস্ত খেয়াল ছিলো না।

-যা তো এখন যা;কত কষ্ট করে করলাম।
যা তো যা।


হিমাদ্র নিতুদের বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো।
সে ইচ্ছা করেই নিতুর হাতের মেহেদী নষ্ট করেছে।
কোনো বিশেষ কারণে কেউ যদি চিন্তিত হয় ও মন খারাপ
করে থাকে তো তাকে সেই অবস্থা হতে ফিরিয়ে আনতে
অন্যকোনো ভাবে অন্য কিছুতে তার মন খারাপ করাতে হয়।নিতু এতোক্ষণ তার বাবার ব্যপারে আপসেট ছিলো কিন্তু এখন আপসেট থাকার মত অন্য একটা ব্যপার তার মাথায় ঢুকে গেছে।তার বাবার ব্যপারে সে চিন্তিত ছিলো কিন্তু এখন মন খারাপের জন্যে দু'টা বিষয় থাকায় তার ঐ চিন্তাটা একটু হলেও কমবে।


বেচারীর মা নেই।এই সময় যদি তার বাবা মারা যায়
সে বিপদে না পড়লেও ভীষণ একা হয়ে যাবে।কাফনের
কাপড়টা কোথা থেকে এলো ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।সত্যি যদি উনি মারা যায় তো খুব খারাপ হবে।


মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো…

হ্যালো বলার আগেই ঐপাশ থেকে নিতুর হাউমাউ করে কান্নার শব্দ ভেসে আসলো।এভাবে কিছুটা সময় কান্নার পর নিতু বললো- হিমাদ্রী আব্বু আর নেই।

-নেই মানে এই মাত্র তোদের বাসা থেকে না এলাম।

-হ্যা আব্বু নেই।আব্বু কথা বলছেনা…


এইভাবে যে তিনি মারা যাবেন তা হিমাদ্রী কল্পনাও
করতে পারেনি।তার মৃত্যুবরণ স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে।
কারো হাত নেই এতে।ঘরময় শোকের ছায়া বিরাজ করছে।মরা বাড়ি সব কিছুই মরা মরা টাইপের্।আর এই
মরা মরা পরিবেশটা হিমাদ্রীর মোটেই ভালো লাগে না।
মরা বাড়ি যেই আসুক না কেনো সবাইকে একটা মন
মরা মুখোশ পড়ে থাকতে হয়।দশ টাকা লটারি কিনে যে মানুষটি আজ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন তাকেও
মরা বাড়িতে আসলে চেহরা মলিন করতে হয়।হিমাদ্রী আবার বাসার দিকে পথ বাড়ালো।


বাসার কাছাকাছি এসে সে পকেটে হাত বাড়িয়ে দেখে সিগারেটের প্যাকেটে একটা মাত্র সিগারেট।এলাকার টং দোকানে গিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট নিল আর চা খেতে লাগলো।টং দোকানে মিন্টু ভাই বসে ছিলেন তার সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে।এলাকায় মাদক সম্রাট বলে খুব নাম ডাক আছে তার্।

-এই যে হিমাদী দা কি খবর?

-ভালো মিন্টু ভাই।

-ভালো হলেই ভালো ভাই।আমিও চাই এলাকায় সবাই ভালো থাকুক।

-জী ভাই।

হিমাদ্রী চায়ের আর সিগারেটের বিল দিয়ে বাসার দিকে হাটছে।আর মনে মনে ভাবছেন -শালার বাটপার,মাদকের রাজ বানিয়ে এখন বলছে সে সবার ভালো চাই।এই মানুষটা মারা গেলে কতোই না তরুণের জীবন বাচতো।
রুমের ভেতরে ঢুকে মোবাইল থেকে অললাইনের
পত্রিকা পড়ছিলো।এমন সময় উপর তলার মজিদ ভাই দরজার পাশে এসে দাড়ালো।

-হিমাদ্রী দা শুনছো খবর্।

-না বললে কিভাবে শুনবো।

-হালার কি এক মাল তুমি। পুরো পাড়া খবর হয়ে গেলো আর তুমি কি কিছুই জানো না?

-পুরুষ মানুষ মাল হয় না মজিদ ভাই,নারীদের মাল বলে।

-হা হা হা।

-হাসি থামান ভাই।জর্দার গন্ধে মাথা কেমন জানি করে।

-মিন্টু ভাই তো এই মাত্র মারা গেল
জানো।

হিমাদ্রী হকচকিয়ে গেলো।
-কি বলো তুমি,আমি তো এই মাত্র দেখে এলাম কুত্তার বাচ্চাটারে।

-হুম।এই মাত্র রোডে একসিডেন্ট করছে।জায়গায় ফিনিস হয়ে গেলো।গালি দিও না।মৃত মানুষকে গালি দিতে নেই।
হিমাদ্রীর কেমন যেনো লাগলো।এই মাত্র সে মিন্টুর মারা যাওয়া নিয়ে মনে মনে ভাবলো আর তখনই সে ছিলো জীবিত।আর কিছু সময় মাঝে রেখে মিন্টু মারা গেলো।
নিতুর বাবার মৃত্যুর আগেও হিমাদ্রী তার বাবার মৃত্যু
নিয়ে ভাবছিলো।নিতুর বাবা মৃত্যু হলে নিতুর কি হবে তাই
ভাবছিলো আর সাথে সাথেই নিতুর কাছ থেকে সংবাদ শুনলো।একটু কেমন যেনো লাগছে হিমাদ্রীর্।খটকা লাগার কারণ দুই জন মানুষ মারা গেলো আর তাদের মৃত্যুর আগে হিমাদ্রী তাদের মৃত্যু নিয়ে ভাবছিলো।কেনো এমন হলো?


হিমাদ্রী মোবাইলের ডিসপ্লের আলো জ্বালালো। চোখে ভেসে আসলো এক মন্ত্রীর নাম।সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর খবর
দেয়া "সমাজকল্যাণ মন্ত্রী স্কুলের বাচ্চাদের সামনে সমাবেশে প্রকাশ্যে সিগারেট খেয়ে বিতর্কিত" হিমাদ্রী জানে এই সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সমাজের কল্যাণ নয় বরং অকল্যাণ,হিমাদ্রী মনে মনে ভাবলো যদি এই মন্ত্রী মারা যায় তো সমাজ অনেক সুন্দর হবে,সে বহু সন্ত্রাসের জনক ও রক্ষক।সরকারি দলের প্রভাবে ও অবৈধ ক্ষমতার প্রভাবে সে নিজ এলাকায় কুকাজ শুরু করে। কিছু সময় পর টিভিতে হেডলাইন আসে ""মাননীয় সমাজকল্যাণ
মন্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত্র হয়ে নিজ বাসায় মারা যান।"হিমাদ্রী বুঝতে পারে যে সে এমন কিছু অলৌকিক ক্ষমতার হয়তো অধিকারী হয়েছে যার ফলে সে চাইলেই যে কারো মৃত্যু ঘটাতে পারে।

সে একটি দেয়ালে উঠতে থাকা টিকটিকি দেখে তার মৃত্যু মনে মনে ভাবতে লাগলো আর মনে মনে বললো "মরে যা",অবশেষে টিকটিকিও মারা গেলো।অবাক হয়ে গেলো সে আরো।দৌড়ে গিয়ে সে জানালার ধারে গেলো।জানালারকাছে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছু চিল দূর আকাশে ডানা মেলে উড়ছে।উড়ন্ত
এক চিলের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো " মরে যা।"একটি চিল দিকবিদিক হয়ে সোজা মাটিতে লুটিয়ে
পড়লো।


হিমাদ্রী উচ্ছাসিত হয়ে হাসতে লাগলো। নিতুকে সে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু নিতু ভালোবাসে মিনারকে।
সে নিতুকে কখনই বলতে পারেনি ভালোবাসার কথা।
হিমাদ্রী মনে মনে ভাবতে লাগলো মিনারের মৃত্যুর কথা।
বিছানার উপর শুয়ে হিমাদ্রী ছাদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো-
আমি যদি আমার মনের ভাবনা দিয়ে যে কারো মৃত্যু
ঘটতে পারি তো আমি চাইলেই যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো।আমার কাজে যে বাধা দিবে তাকেই আমি মেরে ফেলবো।ভোগ- বিলাসের জন্যে যেই আমাকে বাধা দিবে তাকেই আমি মেরে ফেলবো। বিছানা থেকে উঠে আয়নার
সামনে দাড়িয়ে হাসতে লাগলো। চিরুনি দিয়ে আলতো করে চুল আচড়ে নিলো।অন্য সময় সে ডানদিকে লেপে চুল আঁচড়াতো,এখন সে মাঝ বরাবর চুল আঁচড়ালো।


আয়নার দিকে তাকিয়ে সে কুৎসিত হাসি দিয়ে ভাবতে লাগলো- আমি চাইলেই যা ইচ্ছা তাই করবো।
আমি যদি কারো মৃত্যু নিয়ে ভাবি সেই মারা যাবে। আমার মৃত্যু যদি খোদার উপর নির্ভর করে করুক কিন্তু খোদার
সৃষ্টি যে কারো মৃত্যুই আমার ভাবনায়।আমার মৃত্যু আগ পর্যন্ত আমি যা ইচ্ছা তাই করে যাবো।


হঠাৎ হিমাদ্রী শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে লাগলো।নিশ্বাস নিতেই তার কষ্ট হচ্ছে।ধীরে ধীরে সে অনুভব করছে সে নিশ্বাস নিতেই পারছে না আর্।চারদিক যেমন ছিলো সব ঠিক চলছে।


টিউব লাইটের আলো জ্বলছে।টিভিতে লালনের গান চলছে।জানলার সিলিংয়ে কালো একটি কাক ক্যা-
ক্যা করে ডেকেই চলছে।হিমাদীর কাকের ডাক একদম পছন্দের না।


জানালার সিলিংয়ে কাক এসে বসলেই সে "ছেই" বলে হাত নেড়ে কাক তাড়িয়ে দেয়।কিন্তু কাকটি আজ ক্যা-ক্যা করে ডেকেই যাচ্ছে।কেউ কাকটিকে আজ আর তাড়িয়ে দিচ্ছে না।হিমাদ্রী মেঝেতে নিথর হয়ে শুয়ে আছে আর কাকটি ক্যা-ক্যা করেই যাচ্ছে,কুৎসিত সেই ডাক ক্যা-ক্যা…

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.