নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিশিথীনি নিশি

কলংক আমি কাজলের ঘরে থাকি --- কাজল আমাকে বলে সমস্ত কথা ---

নিশিথীনি নিশি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু কমন স্ল্যাং, বাঙালীয়ানা আর একটি ক্যাঙ্গারু(হলেও হতে পারে ১৮+)

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৬

আমি এক আধা বাঙালীর খপ্পরে পড়েছি । যে বাংলা বলতে পারে ঠিকই, কিন্তু সব বাংলার অর্থ বোঝেনা । তাই আমি যখন কারো সাথে কোন সিরিয়াস কথা বলি,সে তার মাঝেই হুট করে জিজ্ঞেস করে বসে," এর মানে কি??"



এই আজব ক্যারেক্টারটি কে তার পরিচয় নাই বা দিলাম । কারণ, দিলে চিনে ফেলার সম্ভাবনা আছে । বাট তাকে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারু বলা চলে । খুব ছোট বেলায় সে ওখানে চলে যায় । তাই আধা বাঙালি আর আধা পাকিস্তানী হয়েও সে, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারু হয়ে বেড়ে ওঠে । তার বয়স ২৪/২৫ হলেও মাঝে মাঝে মনে হয় তার জ্ঞান বুদ্ধি ৫ বছরের বাচ্চাদের মত ।

এখন সমস্যা হল, সে আমার মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বুঝতে চায়, আমি যা যা বলি তা সে মাথায় রেকর্ড করে রাখে । পরে তা আ্যাপ্লাই করে!!!!!!! আরে ভাই, আমি হলাম একটা সাধারন মানুষ। যে অবলীলায় আইছি খাইছি গেছি বলি। রেগে গেলে হয়তো দুই একটা স্ল্যাং ও উচ্চারণ করি। এখন আমাকে অনুসরণ করলে তো.....!!!!



যাক, যেটা হল একটা সময় ছিল, যখন শালা শব্দটা খুব খারাপ গালি হিসেবে ধরা হত । আর মেয়েরা তো বলার প্রশ্নই আসে না । কিন্তু এখন?

শালা সমুন্ধি কথার কথা হয়ে গেছে । আর আমরা এমন মানুষ খুব কমই আছেন, যারা রেগে গেলে চুলের হিন্দি ভার্সন টা ইউজ করি না । এটাও এখন অনেকটা কমন গালি হয়ে গেছে ।মুরব্বিদের সামনে বললেও এখন আর তার অত মাইন্ড করে না ।



আমিও মাঝে সাঝে বলি । তবে একটু ভিন্ন ভাবে, মানে অনেক মানুষের সামনে তো জোরে বলা যায় না, তাই মনে মনে উচ্চারণ করি। নয়তো ইংরেজি তে বানান করে বলি, বি এ ডাবল এল । তো আমার এই কথাটা ওই ক্যাঙ্গারু মন দিয়ে শুনেছে । তার পর আমার এক ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করেছে," আচ্ছা, বি এ ডাবল এল মানে তো বল হয়। ও রেগে গেলে বল কেন বলে?" আমার ভাইটির আর বুঝতে বাকি নেই এর অর্থ জানলে পরবর্তী ঘটনাগুলো কি ঘটবে!!! তাই সে বলেছে, ভাই আমি জানি না ।



কারণ, সে অতীতে হারামজাদা শব্দটার মানে জেনে জনসম্মুখে হারামজাদা ছেলে বা হারামজাদা মেয়ে বলে গালাগালি করার রের্কড আছে । এমনকি আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, আচ্ছা জাউরা মানে কি? আমি খুব ভদ্রভাবে কি বলা যায় অনেক ভেবে বললাম, জারজ শব্দটা থেকে এই জাউরা গালি টা এসছে । তাও বলল, জারজ মানে কি?? এখন তো আমি বিপাকে পড়ে গেলাম!!! পড়ে বুদ্ধি করে বললাম, এর যথার্থ ইংরেজি হয়তো বার্স্টাড । বুঝলাম তার অনুবাদটা মনপুত হয়েছে ।



কিন্তু এর ফলাফল টের পেলাম বেশ কিছু দিন পর । সে রেগে গেলে আমাকেই জাউরা মেয়ে বলছে!!!!!!! ঠিক জাউরা না ঝাউরা বলে । আর কেলেংকারীর চুড়ান্ত করলো পিলখানা দরবার হলে এক পার্টিতে গিয়ে । সবার সামনে একটা ছেলে কে সে চিৎকার করে ঝাউরা ছেলে বলে গালি দিয়েছে ।



ঘটনা শুনে তো আমার মাথায় হাত । তার বাসায় আর কারো বুঝতে বাকী থাকবে না এইসব গালাগালি সে কোত্থেকে শিখেছে!!! যাক এই রিস্ক আর নিতে চাইনি বলে সে যখন আবার আমাকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বি এ ডাবল এল মানে তো বল হয়। তুমি রেগে গেলে বল বলো কেন???



মনে মনে বললাম এই সেরেছে!!! এইটা ও শুনে ফেলেছে!! আমি তখন আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম," ইয়ে......মানে ....রেগে গেলে আমার সব কিছু বলের মত ছুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে তো তাই ।"

সে আবার ও আচ্ছা বলে এইটাও রের্কড করে নিল ।



এর রেজাল্ট পেলাম আরও কদিন পর । সে তার এক বাঙালী বন্ধুকে বলে বসল," ধুর বল ।" তার বন্ধু তো বাঙালী ছেলে । সে এক কথাই বুঝে গেল সে কি বলতে চায় । সে তো রেগে মেগে অস্থির।পরে তাকেও ওই আমার দেয়া বলের মত ছুড়ে মারার ব্যাখ্যাটা দিল । সেই থেকে আমি ভয়ে অস্থির যত রাগই হোক না কেন, ওর সামনে নো মোর স্ল্যাং ।



কিন্তু হায়! আমি না হয় চেপে গেলাম । বাঙালী তো থামবে না । একদিন সে ফুচকা কিনতে গিয়ে, বাঞ্ছোত গালিটা শুনে এল । যেটা সমরেশ মজুমদার তার উপন্যাসে সবচয়ে বেশী ব্যবহার করেন ।



পরে আমার সেই ছোট ভাইটির কাছে জানতে চাইলো এর মানে কি? ও বেচারা আর কি বলবে !! কারণ, এর আসল অর্থ আমরাও জানতাম না যদি না আমাদের বাংলা ডির্পাটমেন্ট এর বন্ধু রামা এর অর্থ না বলত ।



আসলে সমরেশ এর বই পড়ে আমি আর রয়া ও খুব এই গালি টা দিতে লাগলাম বেশ কদিন । পড়ে রামা বলল, তোরা জানিস এটা কত খারাপ গালি ??? এর মিনিং কত খারাপ??



আমরা তো অবাক । গালি তো গালিই । এর আবার মিনিং কি?

রামা বলতে লাগলো আমাদের ডির্পাটমেন্টর এস এমএস স্যার ( নামটা মনে নেই। যতদুর জানি উনি বাংলা একাডেমীর সাবেক পরিচালক ছিলেন । গোফঁ ওয়ালা,খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন । আমাদের ও ক্লাস নিয়েছিলেন বেশ কদিন) তিনি নাকি বাংলা গালির মিনিং নিয়ে বেশ গবেষণা করেছেন । সর্বমোট ১৮ টা গালির অর্থ তিনি বের করেছেন । তিনি বলেছেন, বাংলায় যখন ইংরেজদের আগমন হয়, তখন তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে হিন্দি আর বাংলা শিখতে শুরু করে । তারা ভাল করে বাংলা বলতে পারতো না বলে প্রচলন করলো মাদারচোত গালি টা । তার পর তারা তো বোন কথাটা উচ্চারণ করতে পারতো না বলে বোন থেকে বেহেন আর বেহেন থেকে বান কথাটা আসে । আর বাকীটুকুর কথা নাই বা বলি ।



আমরা তো যারপরনাই বাঞ্ছোত কথাটার মিনিং শুনে বলা বন্ধ করলাম । কিন্তু এই ক্যাঙ্গারু কে কিভাবে বোঝাই ??পরে আমার ছোট ভাইটাই আমাকে বাচিঁয়ে দিল । সে ও আসল অর্থটা জানতো না । সে ক্যাঙ্গারুর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল এই ভাবে," যদি বেঁধে কারো শ্লীলতাহানি করা হয় তাকেই বাঞ্ছোত বলে।"যাক এই গালিটা সে আর ব্যবহার করেনি ।



এই তো গেল গালি বিড়ম্বনা । এরপর শুরু হল কদমবুসি নিয়ে ঝামেলা । সে জানে না পায়ে ধরে কিভাবে সালাম করতে হয় । যাক তাও তাকে শিখালাম । বললাম, আচ্ছা আমি কি তোমার মাকে আসার সময় সালাম করে আসব?? সে বলে, করো করো। আমার মা তোমাকে অনেক দোয়া করবে । আবার মা যখন তোমাকে সালাম করবে তুমি কিন্তু আমার মাকে দোয়া করো। আমার তো শুনে আক্কেল গুড়ুম!!! বলে কি গাধাটা???

ওর মা কেন আমাকে সালাম করবে?? পরে আমি বুঝিয়ে বললাম , যে মুরব্বিরা ছোটদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে না ।



তো এই অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারুর প্রথাগত বাঙালী হতে চাওয়ার এই সব গাধামার্কা কাহিনী বলে তো আর শেষ করা যাবে না । তবে এই মূর্হুতে সে অসুস্থ । স্কয়ার হসপিটালে ভর্তি । সবাই তার জন্য দোয়া করবেন ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩১

ফারজানা শিরিন বলেছেন: খাইছে !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.