![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১. এবার ধরা দাও (২০০০) ২. উচ্ছ্বাস(২০০১) ৩. পরিত্যক্ত পদাবলি(২০০২) ৪. এক বিকেলে(২০০৪) ৫. নিঃসঙ্গ নির্জন(২০০৫) ৬. ভাঙনের শব্দ(২০১১) ৭. আমার সন্তান যেন দুধেভাতে(২০১২) ৮. চারিদিকে জীবনে সমুদ্র-সফেন(২০১২) গবেষণা গ্রন্থ : ১. শওকত আলীর উপন্যাস : কলাকৌশল ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য( প্রকাশের অপেক্ষায়) ২. বাংলাদেশের উপন্যাস : নারীর স্বাধিকার চেতনা
বাংলা অভিধান মতে, ঐতিহ্য শব্দের অর্থ পরম্পরা ; পরম্পরাগত উপদেশ বাক্য; ইতিহাসে যা বরাবর চলে এসেছে এমন কাহিনী। ঐতিহ্যের নির্দিষ্ট কোন বক্তা নেই। কোন জাতির অতীত জীবনালেখ্য সময়ের ব্যবধানে ঐতিহ্যে গুর“ত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঐতিহ্য কোনো জাতির আত্মমুকুর বলে জাতীর দিকনির্দেশনায় প্রভূত ভূমিকা রাখে। বাংলা উপন্যাসে ঐতিহ্য এসেছে জাতিসত্তার অঙ্কুরোদ্গমে, আত্মনুসন্ধানে, পরিচয়ে, গৌরবের অনুষঙ্গে এবং রাজনৈতিক চেতনায়। ’৪৭ পরবর্তী কথাসাহিত্যে ঐতিহ্যচেতনার উপন্যাসের মধ্যে আবু জাফর শামসুদ্দিন, সত্যেন সেন, সরদার জয়েনউদ্দিন এবং ’৭১-উত্তর বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে রিজিয়া রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আখতার“জ্জামান ইলিয়াস ও সেলিনা হোসেন পারমাঙ্গতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন । এ ধারার উপন্যাস রচনায় ঐতিহ্যসন্ধানী লেখক শওকত আলীর অবদানও অনস্বীকার্য। শওকত আলীর ঐতিহ্যপ্রীতি তাঁর সাহিত্যকর্মে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও প্রদোষে প্রাকৃতজন তাঁর ঐতিহ্যপ্রীতির সফলতম নির্মাণ। ওয়ারিশ পূর্ব পুর“ষের জীবনাখ্যান হলেও একশতাব্দীকাল পরিসরের বাঙালি জীবন চিত্রিত হওয়ায় রাজনীতি চেতনার সাথে ঐতিহ্যপ্রীতি আংশিক রূপায়ন ঘটেছে শুধু। মাদারডাঙ্গার কথা-য় তে-ভাগা আন্দোলনের বিষয় ও আধুনিক প্রযুক্তির অভিঘাত ব্যবহারের প্রাবাল্য থাকলেও মিথস্কিয়ায় ঐতিহ্যপ্রীতির সন্ধান মেলে। এ দুটো উপন্যাসে ভৌতিক কাহিনী ও অলৌকিক ঘটনা বর্ণনের মধ্যে ঐতিহ্যানুষঙ্গ চিত্রায়িত। প্রদোষে প্রাকৃতজন-এর বিষয়ানুঙ্গে কলাকৌশলগত পদ্ধতিসাদৃশ্যে রচিত হয়েছে রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা, রাহুল সাংকৃত্যায়নের ভোল্গা থেকে গঙ্গ,া সত্যেন সেনের অভিশপ্ত নগরী, বিদ্রোহী কৈবতর্, সেলিনা হোসেনের নীল ময়ূরের যৌবন প্রভৃতি উপন্যাস। শওকত আলী স্বাতন্ত্র্য অনুসন্ধানে উপরিউক্ত উপন্যাসগুলোর সাথে তাঁর উপন্যাসের তুলনামূলক আলোচনা করা যায়।
প্রদোষে প্রাকৃতজন শওকত আলীর অনবদ্য সৃষ্টি। ইতিহাস ও রাজনীতির আবহে সামন্তশ্রেণির শোষণ ও নিপীড়নস্পৃষ্ট নিম্নবিত্তের মানুষের জীবনাঙ্কন সূত্রে বাঙালির ঐতিহ্য সন্ধান করেছেন লেখক। উপন্যাস পঠনে কখনো ইতিহাস, কখনো রাজনীতি, কখনো নিম্নবিত্তের নিরন্তর সংগ্রাম, পলায়নপরতা আবার কখনো ঐতিহ্য প্রধান হয়ে ওঠে। উপন্যাসের বিষয় অনুপুঙ্খ বিশে¬ষণে প্রদোষে প্রাকৃতজন কোন জাতের উপন্যাস তা বিশ্লেষণ সাপেক্ষ্য। আপাতদৃষ্টিতে এ উপন্যাসের বিষয় যাই মনে হোক না কেনÑএর বিষয় বাঙালির ঐতিহ্য ও জাতিসত্তার উৎসমুখ সন্ধান । যুগে যুগে সামন্ত শ্রেণির শোষণ ও নিপীড়ন প্রাকৃতজনকে নিষ্পেষিত করেছে, দাবিয়ে রেখেছে, মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ করেছে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ঐতিহ্যকে পদদলিত করেছে। এই সবের চিত্রায়নের পাশাপাশি লেখক এ উপন্যাসে দেখান যে শোষণ অত্যেচার যতই প্রবল আর প্রখর হোক রক্তধারার চেতনা ও বোধকে নিশ্চিহ্ন করা যায না। বংশ পরম্পরায় তা চলে কালে, কালান্তরে। উপন্যাসে বিস্তৃত ভূমি থেকে বেরিয়ে এসে লেখক নিজেই যখন গবেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং বলেন :
তবে হ্যাঁ , প্রশ্ন উঠতে পারে শ্যামাঙ্গ নিয়ে Ñ তার মৃত্যু কি অনিবার্য ছিলো ? ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি রেখে আমাদের বলতে হয়, হ্যাঁ, অনিবার্যই ছিলো তার মৃত্যু। তার মতো মৃৎশিল্পীকে জীবিত থাকার অধিকার দেয় নি ঐ সময়ের সমাজ-ইতিহাস।
(আলী শওকত ১৯৮৪ : ১৯৭)
এরপরক্ষণে লেখক যখন আমাদের অনুরোধ করেন, মৃৎপুত্তলিতে শ্যামাঙ্গ আছে কিনা তা সন্ধান করতে তখন আমরা অনায়াসেই লেখকের বার্তাটি নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিতে পেয়ে যাই:
‘যদি কোনো পল¬¬¬ী বালিকার হাতে কখনো মৃৎপুত্তলি দেখতে পান, তাহলে লেখকের অনুরোধ, লক্ষ্য করে দেখবেন, ঐ পুত্তলিতে লীলাবতীকে পাওয়া যায় কি নাÑআর যদি যায়, তাহলে বুঝবেন, ওটি শুধু মৃৎপুত্তলিকা নয়, বহু শতাব্দী পূর্বের শ্যামাঙ্গ নামক এক হতভাগ্য মৃৎশিল্পীর ভালোবাসাও।’ (শওকত ১৯৮৪ : ১৯৭)
প্রসঙ্গত বলতে হয়, লেখকের বলবার বিষয় মৃৎশিল্পর ঐতিহ্য ধ্বংসোম্মুখ প্রাক্কালে প্রাকৃতজনের অস্তিত্ব ও ঐতিহ্য-সংকট। অস্তিত্ব ও ঐতিহ্য ধ্বংসের বৈরি পরিবেশের চালচিত্র অঙ্কনের পাশাপাশি তিনি বলেন জাতিসত্তার গভীরে প্রোথিত চেতনা ও বোধ রক্তপ্রবাহের ধারায় উত্তরাধিকার বহন করে চলে। ফলত আমরা দেখি তা না হলে বসুদেবের গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়ে শ্যামাঙ্গ পরবর্তী পর্যায়ে কুসুম্বিগ্রামে মনোহরদাসের বাড়িতে পুত্তলিকা নির্মাণ কালে অবচেতনে সে লীলাবতীর প্রতিকৃতিই নির্মাণ করে ফেলে। আধুনিক যুগের পাদমূলে এসেও মৃৎপুত্তলি ধ্বংস হয়ে যায় নি। কেননা :
‘কখন লীলাবতী এমনভাবে তার মানস লোকে ¯’ান করে নিয়েছে, সে জানতেও পারেনি। শোণিত ধারার প্রবাহ কি মানুষ জানতে পারে ? লীলাবতী কি তাহলে তার শোণিত ধারার মধ্যে মিশে গিয়েছে? সে কি মিশেছে তার শ্বাসে-নিশ্বাসে ? তার স্বপ্নে ? কল্পনায় ? (শওকত ১৯৮৪ : ৬৪)
কেন না ‘শিল্পের উপাদান এবং শিল্পের বিষয় চিরন্তন ? ব¯‘ ভেদে, ব্যক্তি ভেদে, কাল ভেদেÑ মূলগতভাবে তার কোনোই ব্যতায় হয় না ? (পূর্বোক্ত,১৯৪)
প্রদোষে প্রাকৃতজন-এর কাহিনী ও বিষয়ের মধ্যে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের যে সংমিশ্রণ তার সাথে সত্যেন সেনের অভিশপ্ত নগরী ও বিদ্রোহী কৈবর্ত উপন্যাসের মিল পাওয়া যায়। শওকত আলীর ইতিহাস পঠন ও ঐতিহ্যপ্রীতির দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সত্যেন সেনের শিল্প-অভিপ্রায়ের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত। আমরা দেখেছি প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ যেমন প্রদোষকালের প্রাকৃতজনের জীবনচিত্র উন্মোচন সূত্রে একটি জাতির পতন, অপর একটি জাতির অভ্যূত্থান এবং একটি নগরী লক্ষ্মণাবতী (নদীয়া) বহির্জাতীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণে করায়ত্ত এবং সমান্তরালে শোষিত অন্ত্যজশ্রেণির মানবিক অধিকার আকাক্সক্ষা মূর্ত হয়েছে তেমনি সত্যেন সেনের অভিশপ্ত নগরী-তে অনুরূপ ঘটনার অনুবর্তন ঘটেছে। এ উপন্যাসে ইহুদি জাতি পতনের সাথে সাথে তৎকালীন সমাজবাস্তবতা রাজতন্ত্র ও পুরোহিততন্ত্রের বিরোধ, অভিশপ্ত নগরী জের“সালেমের পতন ঘটনা পরিবেশিত হয়েছে ।
অভিশপ্ত নগরী-র নায়ক যেরেমিয়া কল্পিত হলেও লেখক তাকে মিথিক কাহিনীর মাধ্যমে উপন্যাসে আমদানি করেছেন। কিš‘ শওকত আলী প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ মিথিক কাহিনীর সঙ্কতসূত্রে শ্যামাঙ্গকে আনয়ন করেন নিÑ করেছেন সমকালীন বাস্তবতার আলোকে। সত্যেন সেন অভিশপ্ত নগরী-এর পটভূমি নির্মাণ করতে ফিরে গেছেন খ্রিস্টপূর্ব ৬২৫-৫৮৬ সময়কাল পর্বে। কিš‘ শওকত আলী তার প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ বাংলায় তুর্কি আগমনের প্রারম্ভিক পর্বকে (১২০০৪ খ্রীঃ) বেছে নিয়েছেন। তবে সময়ের বিস্তর পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দুই শিল্পীর বলবার বিষয় এক ও অভিন্ন । সত্যেন সেন যেমন দেখাতে চান, রাজশোষণ ও সামন্তশোষণ, জাতিসত্তার পুনর“ত্থান ও পতন, অবর“দ্ধ সময়ের বৃত্ত ভেঙ্গে মানবিক বৈশিষ্ট্যের উৎসারণÑশওকত আলীও একই বিষয় অঙ্গিভূত করে বাঙালির প্রদোষকালে গমন করেন। তবে উলি¬¬খিত বিষয়ানুষঙ্গ অঙ্গিভূত হলেও অন্ত্যজশ্রেণির মৃত্তিকামূল সংলগ্ন মানুষের বেদনাবোধের কথাচিত্রই অভিষ্ঠ লক্ষ্য বলে আমাদের মনে হয়। মানবিকতা যেখানে সত্যেন সেনের শে¬¬¬াগান, সেখানে ব্রাত্য জীবনগাঁথাই শওকত আলীর অভিজ্ঞান। প্রদোষে প্রাকৃতজন-এর নায়ক শ্যামাঙ্গ যেমন ঔপন্যাসিকের সৃজ্যমান এবং বিশেষ সময়ে ব্রাত্যজনজীবনের প্রতিনিধি তেমনি যেরেমিয়া সমষ্টি অস্তিত্বের আকক্সক্ষার রূপকার।
এই দুই উপন্যাসের মধ্যে আরেকটি দিকে এক ও অভিন্ন পথ অনুসৃত হয়েছে। শওকত আলী প্রদোষে রাজা লক্ষ্মণসেনের শাসনকৌশলের দুর্বলতার কারণে সামন্ত মহাসামন্তদের মাথা চাড়া দেয়া, রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার কারণে বহির্শত্র“কে প্রতিহত করা সম্ভব হয়ে না ওঠাÑতেমনি অভিশপ্ত নগরী-তে জের“সালেমের রাজা যেদেকিয়ার দুর্বলতার সুযোগে অধ্যক্ষ পশহুরের চক্রান্তে হাযানিয়া শক্তির উদ্ভব ঘটে। সত্যেন সেন মিথ ব্যবহারে অদৃশ্য শক্তির উপ¯ি’তির মাধ্যমে যেরেমিয়াকে বিজয়গৌরবে অভিসিক্ত করেছেন। কিš‘ শওকত আলী শ্যামাঙ্গকে দৃশ্যত বিজয়ী করেন নি Ñ করেছেন কালান্তরের ঐতিহ্যে, চেতনায়। অভিশপ্ত নগরী-তে যেরেমিয়ার বিজয়গাঁথা উপন্যাসেই সমাপ্ত, কিন্তু শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ শ্যামাঙ্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে চেতনার প্রসারণ বহমান জাতিসত্তার রক্তধারায়।
সত্যেন সেনের অপর উপন্যাস বিদ্রোহী কৈবর্ত-এর সাথে প্রদোষে প্রাকৃজন-এর কিছু মিল পাওয়া যায়। এর পটভূমি বৌদ্ধরাজা মহিপালের সময়কালের। এ সময়ের শুদ্রশ্রেণির কৈবর্ত বিদ্রোহ লেখক উপন্যাসের বিষয় করেছেন। অভিশপ্ত নগরী-র মতো কৈবর্ত প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র দিব্বোককে সংগ্রামী চরিত্র হিসেবে লেখক উপ¯’াপন করেছেন। এই দিব্বোকের সাথে শ্যামাঙ্গের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া য়ায়। সত্যেন সেন তাঁর উপন্যাসে প্রায়শ শ্রেণিশোষণকে দেখান, প্রান্তিক তৃণমূলের মানুষের জয় দেখান।
শওকত আলীও অনুরূপ অনুধ্যানে ধ্যানি। এই ধ্যানমগ্নতা তাঁকে শেকড় ও অস্তিত্বসন্ধানী করেছে। এই অস্তিত্বসংলগ্নতা বাংলা উপন্যাস শিল্পে কমসংখ্যাক ঔপন্যাসিকের শিল্পনির্মাণের কমিটমেন্ট, আর এখানেই শওকত আলীর অনন্যতা ।
প্রদোষে প্রাকৃতজন-এর সাথে কাহিনীকাঠামো, বাঙালি ঐতিহ্য, অন্ত্যজ মানুষের জীবনধারার রূপায়ণ, শ্রেণিশোষণ ও সামন্তশোষণের সাথে সেলিনা হোসেনের নীল ময়ুরের যৌবন যেন দ্বিগানুপাতিক ক্রমে চলমান। প্রদোষের ঘটনার ত্রিবাঁকের সাথে নীল ময়ুরের যৌবন-এর ঘটনার বক্রতা সাদৃশ্যমান। নীল ময়ুরের যৌবন-এর পটভূমি সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত। এ সময়কালে পাল রাজার শাসনের বিজয়গাঁথা, ব্রাক্ষ্মণ্যবাদের গণজোয়ার ও অন্ত্যজশ্রেণির সামন্তশোষণ বিধৃত। পক্ষান্তরে প্রদোষে প্রাকৃতজন’-এ ব্রাক্ষ্মণ্যবাদের সাথে বৌদ্ধদের বিরোধ এবং সেই সাথে আছে শ্রেণিশোষণে ব্রাত্যশ্রেণির অস্তিত্বসংকট। তবে পার্থক্য নীল ময়ুরের যৌবনে যেমন ব্রাক্ষ্মণদের প্রতাপ বৃদ্ধি পেলে তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, পক্ষান্তরে প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ তুর্কি আক্রমণে সবাই মিত্রতা অবলম্বন করে। উপন্যাস দ’ুটির পটভূমির পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও লেখকদের বিষয়গত ভাবনা এক ও অভিন্ন। শ্রেণিশোষণ ও রাজশোষণ নীল ময়ূরের যৌবন-এর মূল বিষয় যাতে দেখা যায় রাজশক্তি অন্ত্যজশ্রেণির শিল্পীসত্তা হত্যায় বদ্ধপরিকর । প্রদোষেও একই শক্তি আবহমান বাঙালির ঐতিহ্য মৃৎশিল্পের ধ্বংসসাধনে বদ্ধপরিকর। আমরা দেখেছি প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ মৃৎশিল্পী শ্যামাঙ্গ মানবিক প্রবৃত্তির বিকাশে সৃজনীশিল্পীসত্তাস্বরূপ বহিঃপ্রকাশের জন্য দেবিপীঠে তা প্রকাশ করায় মহাসামন্ত সুধামিত্রের নির্দেশে বসুদেবের গৃহ থেকে তাকে বিতাড়িত হতে হয়, পরে হরিসনের। সৈন্যের হাতে আত্মহুতি দিতে হয়। এই ঘটনার সমান্তরালে আমরা দেখি নীল ময়ূরের যৌবনে চর্যাপদের গীত রচনার জন্য মন্ত্রী দেবলভদ্রের নির্দেশে কাহ্নপাদের হস্তকর্তিত হয়। ডোমনি কুসুমের মতো ডোম্বিকে আত্মহুতি দিতে হয় স্বৈরাচারী সামন্তশোষকের হাতে। উদ্ধৃত করা যেতে পারে:
‘কুসুম ডোমনীকে ধরে এনে সর্বসমক্ষে দাঁড় করানো হলো এবং ঘোষণা করা হলোÑ এই স্বৈরিণী সকল বিরোধের মূল, দেহের যে অংশের কারণে এই স্বৈরিণী পুর“ষ সমাজে বিরোধ এবং লোভের বীজ বপণ করে, শরীরের যে অংশ যথার্থই নরকের দ্বার, সেই অংশটি আমরা প্রজ্বলিত করে দেবো।’ (শওকত১৯৮৪ : ৫০)
রাজা বসুমিত্রের সাথে রাজা লক্ষ্মণ সেনের তুলনা করা যেতে পারে। এরা দুজনই একসময় রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থ হয় এবং তাদের প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে প্রদোষে তুর্কী আক্রমণকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনুরূপভাবে নীল ময়ূরের যৌবনে রাজা বসুমিত্রের নিয়ন্ত্রনকৌশল না থাকায় ব্রাক্ষ্মণমন্ত্রী দেবল রাজ্য পরিচালনার এক”ছত্র ক্ষমতা পেয়ে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে এবং অন্ত্যজ শ্রেণিকে নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত হয়। দ’ুটি উপন্যাসই বৈরী পরিবেশে শিল্পচর্চার বিষয়কে ঔপন্যাসিকদ্বয় কেন্দ্রীয় আবহ করে দেখিয়েছেন যে রক্তধারায় প্রবহমান চেতনা কখনো ধ্বংস করা যায় না, পণ্ড করা যায় না। ফলত আমরা দেখি মৃৎশিল্প যেমন এখনো বাঙালি ঐতিহ্য ধারণ করে প্রবহমান, তেমনি নীল ময়ূরের যৌবন-এর কাহ্নপাদের স্বপ্ন সময় পরম্পরায় বাংলা ভাষা রাজদরবারের ভাষা হয়েছে :
তোরা কেউ দুঃখ করিস না দেশাখ। আমাদের তেমন একটা জায়গা একদিন হবে। আমরাই রাজা হব। রাজা প্রজা সমান হবে। আমাদের ভাষা রাজদরবারের ভাষা হবে। তেমন দিনের জন্য আমাদের প্র¯‘ত হতে হবে দেশাখ।
(সেলিনা ১৯৯০ : ১২৬-১২৭)
তেমনি শওকত আলী সমকাল সংক্ষুদ্ধ রাজশোষণে নিষ্পেষিত অন্ত্যজশ্রেণির জীবনকে অবলম্বন করে প্রদোষকালের মানুষের শুধু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে উপ¯’াপন করেন না, ঐতিহ্যকেও ধারণ করেন বিষয়ানুযায়ী ভাষায়, আঙ্গিক ও শৈলীতে Ñআর এখানেই শওকত আলী সমকালীনদের চেয়ে স্বতন্ত্র্য ও আলাদা ।
শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন-এর প্রাকৃতজনের সাদৃশ্য পাওয়া যায় রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা উপন্যাসের। ঔপন্যাসিক শওকত আলী অধীত ইতিহাসবোধের সাথে রিজিয়া রহমানের ইতিহাসের বোধ সমার্থক। কেন না ঔপন্যাসিকদ্বয়ের বিষয় নির্বাচনে তার প্রমাণ পাই। রিজিয়া রহমান আড়াই হাজার বছর পূর্বে দ্রাবিড় শাখা বং থেকে ১৯৭১ সাল, বিজয়কাল পর্যন্ত তার উপন্যাসের পটভূমি হিসেবে বিস্তৃত করেছেন। লেখিকা এই সুদীর্ঘকাল পরিসরের সমতট অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা, জাতিগঠনের ক্রমরূপান্তর, বহিঃশত্র“দের আক্রমনে শোষণ, উত্থান-পতন, বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে ঔপনিবেশিক কাল, পাকিস্তানী শোষণ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা সংবলিত করেছেন। পক্ষান্তরে শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা-র মতো সময়ের বিস্তৃতায়ন নেই Ñ আছে ইতিহাস ও রাজনীতির বিশেষ মুহূর্তের ত্রিস্রোতা কাহিনীর সম্মিলনসূত্রে ব্রাত্যশ্রেণির জীবনধারার রূপায়ণ। আমরা দেখেছি, শোষণ-পীড়ন উভয় উপন্যাসের বিষয় হয়েছে। কিš‘ রিজিয়া যেখানে জাতিসত্তার উৎসমুখ দেখান, সেখানে শওকত আলী দেখান প্রদোষকালের মানুষের অস্তিত্বসংকট।
শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন ও রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা পড়ে মনে হয় উভয় ঔপন্যাসিকের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। প্রকরণগত কৌশলেও অভিনবত্ব পরিলক্ষিত। তবে ভাষা ব্যবহারে শওকত আলী স্বতন্ত্র্য পš’া অবলম্বন করেছেন। এ উপন্যাসে শওকত আলী তৎসম ও সমাসবদ্ধ শব্দ ব্যবহার করে বাক্যগঠনে ধ্র“পদী রীতি অনুসরণ করেছেন। বং থেকে বাংলা-য় তা নেই । এখানে শামসুদ্দিন আবুল কালামের কাশবনের কন্যা-এর ন্যায় গীতিকা ও শে¬াকের ব্যবহার লক্ষণীয়Ñযা পল¬¬ী সাহিত্যের ঐতিহ্যকে ধারণ করে। প¬¬ট বিন্যাসে লেখকদ্বয ভিন্ন পথ অনুসরণ করেছেন। বং থেকে বাংলা-য় পরি”েছদ বিভাজন আছে। প্রদোষে পরি”েছদ বিভাজনে অংক সংখ্যা সংবলিত না হলেও বইয়ের প্র”ছদপট ব্যবহার করে ঘটনাগুলো পরি”েছদ আকারে সাজানো হয়েছে। আবার দেখা যায় বং থেকে বাংলা-য় বাঙালি জাতিসত্তার আত্মবিকাশের তিনটি ধারার সন্ধান মেলে যথা :সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদ, মুসলমান জাতীয়তাবাদ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ। শওকত আলী এই জাতীয়বাদের মধ্যে শুধুমাত্র বাঙালি জাতীয়তাবাদকে স্পর্শ করতে সচেষ্ট, সে কারণেই দেখি প্রদোষে যবন আক্রমণে লেখক উল¬¬সিত নয় বরং অনেকটা ক্ষুব্ধ। উপন্যাসের শেষপাদে প¬¬ট বহির্ভূত ¯’ানে শ্যামাঙ্গের শিল্পীসত্তার ও তার মৃত্যু নিয়ে যে উদ্ধৃতি লেখক উদ্ধৃত করেন তাতেই তা প্রমাণিত। প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ লেখক কাহিনি বর্ণনায় নির্মোহ হলেও উপন্যাসের শেষপাদে নিজস্ব বাক্য প্রযুক্ত করে নির্মোহের প্রাচীর যেমন ভেঙেছেন তেমনি রিজিয়া বহমান উপন্যাসের ভূমিকা অংশে তাঁর অভিপ্রায়ের কথা বলে তাই করেছেন ।
চরিত্র নির্মাণেও ঔপন্যাসিকদ্বয় একই প্রেক্ষণবিন্দু অর্থাৎ কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। উভয় উপন্যাসের চরিত্রগুলোর ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। আবার দেখা যায় চরিত্র নির্মাণ লেখকদ্বয়ের অভিষ্ট নয়Ñঅভিষ্ঠ জীবন ও জীবনধারা Ñযা কাল পরম্পরা প্রবাহিত হয়। বিভিন্ন জাতি ও ভাষার সংমিশ্রণে বাঙালি ও বাংলা ভাষার যে পরিণত রূপ লেখিকা তাই দেখাতে সচেষ্ট আর শওকত আলী প্রকাশ করেন ব্যক্তি ও জাতিসত্তার বোধ ও চেতনার অবিনশ্বরতা।
ভোলগা থেকে গঙ্গা মানব ইতিহাসের অনুক্রম ঘটনা পরম্পরা সাজানো এবং জাতিসত্তার মূলোৎপাটনের চেষ্টা, এতেÑ
‘বিভিন্ন গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে শ্রেণির বিকাশ ঘটলো, কীভাবে শাসকশ্রেণির স্বীয় প্রয়োজনে ধর্মকে ব্যবহার করে নিপীড়ন চালায়, কীভাবে উৎপাদনকারী শ্রমজীবী মানুষ সকল যুগেই লুণ্ঠিত ও নিপীড়িত হয়েছে। একইসঙ্গে নারী নির্যাতনের বিষয়টিও এসেছে, যা শ্রেণিশাসনের সঙ্গেই যুক্ত। (রাহুল ২০১১ : ১২)
শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ একই বিষয় বিধৃত । তবে তা একটা বিশেষ সময়কে ঘিওে Ñতুর্কী আক্রমণের সূচনাপর্বে। কিš‘ ভোলগা থেকে গঙ্গা-র পটভূমি প্রায় ছয় হাজার বছরের । চীনের ভোলগা থেকে আধুনিক যুগের গঙ্গার তীরে এসে মানবজাতিগোষ্ঠী কীভাবে পরিণত হয়েছে তার-ই বিবৃতায়ন রয়েছে এতে। চরিত্রায়নে রাহুলের সাথে শওকত আলীর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। উভয় লেখকই চরিত্র নির্বাচনে কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। রাহুল সাংকৃতায়ন যেখানে মানুষের জাতিসত্তা অন্বেষণে ইন্দো- ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী বেছে নিয়েছেন শওকত আলী সেখানে প্রদোষকালের বাংলার ব্রাত্যজনজীবনকে কাহিনির বিষয় করেছেন। শ্রেণি সংগ্রামের সাথেও উপন্যাস দু’টিতে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। রাহুল রাজা বাদশার বিলাস-ব্যসনে যে চিত্র আঁকেন শওকত আলীও একই তুলিতে তা মূর্ত করে তোলেন। যেমন ভোলগা থেকে গঙ্গা-য় চিত্রিত হয়েছে:
‘মহারাজকে স্বয়ং কঞ্চুক খুলতে দেখে তাঁর পরিধেয় বস্ত্র খুলে দিলো তর“ণীরা। তাঁর লোলচর্ম শীর্ণ চিবুক, কাঁচাপাকা গোঁফ, প্রসূতির স্তনের মতো ঝুলে পড়া বুক, মহাকুম্ভের মতো উদর এবং শীর্ণ ঢিলে চর্মাবৃত উর“ এবং জঙ্ঘা আর কর্কশ লোমশ বাহু সাধারণ তর“ণীরা ঘৃণা না করে পারে না । কিš‘ এখানে এদের দেহ প্রাণ সবই এই বৃদ্ধের হাতে । কেউ তাঁর দন্তহীন ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল, কেউ তাঁর দেহে আপণ স্তনদ্বয় পীড়িত করতে লাগল, আবার কেউ তাঁর লোমশ বাহু নিজের কাঁধে বা গালে ঝুলিয়ে দিতে লাগলো । কামোদ্দীপক গানের সঙ্গে সঙ্গে নাচ শুর“ হল, রাণী এবং পরিচারিকাদের মাঝে দাঁড়িয়ে মহারাজও তাঁর বিশাল ভুঁড়ি নাচাতে আরম্ভ করলেন।’ (রাহুল ২০১১ : ১৮২/১৮৩)
.
এই উদ্ধৃতির সাথে শওকত চিত্রিত রাজা লক্ষ্মণসেনের বিলাসব্যসনের সাদৃশ্য সহজেই অনুমেয়। তবে তা ভোলগা থেকে গঙ্গা-এর মতো অশ¬¬ীল নয়। যেমন :
গৌড়বঙ্গের রাজধানী লক্ষ্মণাবতীতে মহামহিম পরম ভট্টারক শ্রীলক্ষ্মণ সেনদের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। রাজসভায় উমাপতি, ধোয়ী এবং জয়দেবের কাব্যগীতির সুললিত মূর্ছনায় সভা¯’ল বিমুগ্ধ। জয়দেবের কৃষ্ণলীলার বর্ণনা শ্রবণে সভাসদবর্গ তুরীয়ানন্দে বিহ্বল, ধোরীয় পবনদূতের বর্ণনায় কামকলানিপুণা রমণীকুলের উলে¬¬খে শ্রোতৃবর্গ অহো অহো উল¬¬সিত স্বর উ”চারণ করে উঠছেন। স্মার্ত পন্ডিতের ভাগবত বিশে¬ষণে মূহুর্মূহু প্রতিধ্বনিত হচেছ সাধু সাধু রব।
(শওকত ১৯৮৪ : ৪৭)
ভোলগা থেকে গঙ্গা-য় উত্তর ভারতের জনগোষ্ঠী ও সমাজকে ধারণ করা হয়েছে, যারা গঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ। পক্ষান্তরে প্রদোষে প্রাকৃতজনরা পুনর্ভবা, আত্রেয়ী ও মহানন্দা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের জনগোষ্ঠী। নদীর তীরবর্তী জনজীবন ও জাতিসত্তার অনুসন্ধানের দিক থেকে উভয় উপন্যাসের মিল পরিলক্ষিত। ভোলগা থেকে গঙ্গা-র চক্রপানি অংশের ঘটনার ও সময়কালের সাথে প্রদোষে প্রাকৃতজন-এর সময়কালের মিল বিধৃত ।
প্রদোষে প্রাকৃতজন-এর কেন্দ্রে অব¯ি’ত ব্রাত্য-অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ। সে হিসেবে এটি প্রান্তিক তৃণমূল মানুষের জীবনচেতনাভিত্তিক উপন্যাসের পর্যায়ে পড়ে। কিš‘ উপন্যাসটি প্রান্তিক মানুষের অস্তিত্বসংকট চিত্রায়নের পাশাপাশি লেখক একটি জাতির ধ্বংসোন্মূখ পর্যায়ের সামগ্রিক জীবনাচার রূপায়ণ করায় এটি হয়ে উঠেছে বাঙালির এতিহ্যানুষঙ্গের সফলতম নির্মাণ। শওকত আলী ভিন্ন প্রেক্ষণবিন্দুতে অব¯’ান নিয়ে প্রদোষের মানুষদের আমাদের সাহিত্যমঞ্চে হাজির করান ধ্র“পদী ভাষায় আর স্বতন্ত্র বোধে, আর চেতনার দ্রোহেÑ আর এভাবেই তিনি কথাসাহিত্যে শুধু তাঁর আসন পোক্ত করেন না, স্বাতন্ত্র্য ও আপন শিল্পমেধার জানান দেন।
শাফিক আফতাব
সহকারী অধ্যাপক
বাংলা বিভাগ
হাজী আব্দুল লতিফ ভুইয়া ডিগ্রি কলেজ
মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা Ñ১৩৬২।
২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৫৮
অনুপম অনুষঙ্গ বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই। আমি ভোলগা থেকে গঙ্গার পুরোটা আলোচনায় আনিনি। শওকত আলীর স্যারের স্বাতন্ত্র্য আনতে যেটুকুর প্রয়োজন ততটুকুই। আপনি ধৈর্য পড়েছেন, মন্তব্য করেছেন এজন্য অনেক শুভ কামনা করি। ঢাকায় আসলে বলবেন। বইটি দেবার ব্যবস্থা করবো। নতুবা রকমারীতে কল করলে পাওয়া যাবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৫১
মামুন রশিদ বলেছেন: লেখাটি প্রত্যাশিত, বই মেলায় প্রকাশের সময় থেকেই ।
একাডেমিক গবেষণা নিয়ে মন্তব্য করার মত স্পর্ধা নাই । তবু নিতান্ত পাঠক হিসাবে কিছু কথা বলি । নদীর তীর ধরেই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা, জাতি সত্বার বিকাশও । সেই হিসেবে 'ভোলগা সে গঙ্গা'র (আমি এভাবেই লিখছি, কারণ মুল উপন্যাস হিন্দি ভাষায় এই শিরোনামে লেখা) চক্রপানী অংশের সাথে প্রদুষে পাকৃতজন'র সাদৃশ্য এবং সাযুজ্য বিদ্যমান । কিন্তু পন্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন তার উপন্যাসে নির্দিষ্ট করে কোন জন জাতির বিবর্তন তুলে ধরেন নি । মহাকাল ধরে মানব সভ্যতার যে বিবর্তন ঘটে চলেছে তার মহাকাব্যিক বর্ণনা হলো এই উপন্যাস । তার মতে, মানুষের সভ্যতার উৎকর্ষের প্রথম ধাপ শুরু হয় ভোলগার তীরে আদীম সমাজে । সেই মানুষগুলোই ক্রমশ সভ্যতাকে পুষ্ট করে এগিয়ে চলেছে ভোলগার উজান বেয়ে, মধ্য এশিয়া পেরিয়ে এই মানুষগুলোর দূরবর্তী শাখা প্রশাখাই এক সময় গঙ্গার তীরে গড়ে তুলে এক অনুপম সভ্যতা । সাংকৃত্যায়ন তার উপন্যাসে মানব সভ্যতার সামগ্রিক বিবর্তনকে একটা ক্রমসুতোয় বেঁধেছেন, সেখানে আলাদা করে কোন জাতিসত্বার উথ্থানের ইতিহাস বলেন নি । শওকত আলীর 'প্রদোষে প্রাকৃতজন' এই জায়গায় অনন্য, একটা নির্দিষ্ট জাতিসত্বার উন্মেষ তিনি স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন ।
ইচ্ছে আছে আপনার বইটি পুরো পাঠ করার । শুভকামনা ।