নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১. এবার ধরা দাও (২০০০) ২. উচ্ছ্বাস(২০০১) ৩. পরিত্যক্ত পদাবলি(২০০২) ৪. এক বিকেলে(২০০৪) ৫. নিঃসঙ্গ নির্জন(২০০৫) ৬. ভাঙনের শব্দ(২০১১) ৭. আমার সন্তান যেন দুধেভাতে(২০১২) ৮. চারিদিকে জীবনে সমুদ্র-সফেন(২০১২) গবেষণা গ্রন্থ : ১. শওকত

অনুপম অনুষঙ্গ

আমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১. এবার ধরা দাও (২০০০) ২. উচ্ছ্বাস(২০০১) ৩. পরিত্যক্ত পদাবলি(২০০২) ৪. এক বিকেলে(২০০৪) ৫. নিঃসঙ্গ নির্জন(২০০৫) ৬. ভাঙনের শব্দ(২০১১) ৭. আমার সন্তান যেন দুধেভাতে(২০১২) ৮. চারিদিকে জীবনে সমুদ্র-সফেন(২০১২) গবেষণা গ্রন্থ : ১. শওকত আলীর উপন্যাস : কলাকৌশল ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য( প্রকাশের অপেক্ষায়) ২. বাংলাদেশের উপন্যাস : নারীর স্বাধিকার চেতনা

অনুপম অনুষঙ্গ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক অলৌকিক/২০১৩

২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩৩

এক অলৌকিক যাদুকর

শাফিক আফতাব-------



স্পষ্ট দেখতে পেতাম, যাদুকর ডিম থেকে নিমিষেই হাতে ছানা ফুটালো, ছানা থেকে নিমিষেই কড়কড়া দশ টাকার নোট, আরেক যাদুকরের পেটে শানিত ছুরি ঢুকে দিয়ে উপস্থিত দর্শককে বাগিয়ে টাকা তুললো। বস্তুত সেই যাদুকর আমি আজ নিজে, যেখানেই হাত দেই, সেটারই আকার পরিবর্তন হয়। যদি বস্তুটির রঙ থাকে সাদা, আমার হস্তষ্পর্শ লেগেই সেটা লাল কিংবা কালো হয়ে যায়, যদি ফুটন্ত ফুলের গাছে হাত দেই ফুলগুলো সব ঝরে পড়ে যায়, যদি কোনো বৃক্ষে ঝুলে থাকা কোনো ফলে হাত দেই, সেটা বোটা থেকে আলগা হয়ে ভূপৃষ্ঠে পড়ে, যদি ভালো উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে কোথায় হাজির হই, কর্তৃপক্ষ বলেন বড় দেরি করে ফেলেছেন, যদি কাউকে বিশ্বাস করে কাছে যাই, গচ্ছিত ধন রাখি, ধরুণ কিছু টাকা, তবে সেই রাতারাতি বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যদি কাউকে ভালোবেসে বুকে টানি, সে দুর্বলতা ভেবে কষ্ট দিতে শুরু করে। যদি অমায়িক মানবতাবাদী ভেবে সালাম ঢুকি, পরদিন দেখি গণধর্ষণের এক নং আসামী সে, প্রতারক আর শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় সে স্থায়ী কমিটির সদস্যের মধ্যে আছেন।

আমি এমন এক যাদুকর, আমার স্পর্শে বস্তুর আকার আকৃতি রঙ, ঢং সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। অফিস শেষে বাসায় এসে সফেদ বিছানায় গা এলালে দেখি প্রিয়তমাও রঙ বদল করেছে, আমাকে মেকি মিথ্যে আর অলিক ভালোবাসার গুচ্ছ গুচ্ছ শব্দে কামাতুর করে তুলছে !



আয়নায় নিজের মুখ দেখি, বলি : তুমি তাহলে অলৌকিক যাদুকর হয়ে উঠলে!!

১২.০৫.২০১৩



































উত্তম কে ? চোর না ঘুষখোর

শাফিক আফতাব---------



হে ঘুষখোর ; উৎকোচ গ্রহণকারী, তোমাদের স্থান হবে চোরের নিকৃষ্টতম স্থানের নিচে ;

কারণ তোমরা চোরের চেয়ে গর্হিত।

চোর পেটের দায়ে চুরি করে, আর তোমরা করো বিলাস আর আরামের দায়ে।



তোমরা ডাইনিং টেবিলে যাবার আগে হাত ধুবার সময় ভাববে :

যে হাত টি দিয়ে খাবার মুখে তুলে দেবে, সেটি পবিত্র হাত কিনা ?

যা খেয়ে উদর পুর্তি করছো, সেটা তোমার কায়িক শ্রমের না পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত,

না কারো সর্বস্ব বিক্রির।



হারাম খেয়ে নাপাক হইও না মানব সন্তান

আর দুষিত বীজে জন্মাও না হিংস্রজীব,



তারচে রবং নুনভাত খেয়ে জ্বালাও মাটির প্রদীপ।



নিসর্গ : ঢাকা

১২.০৫.২০১৩













































আমার মিথ্যাবাদী মা

শাফিক আফতাব---------



অজ্ঞ, অশিক্ষিত, পাগলি মা আমার

আমি তো স্কুলে যাবোই না,

তুমি বললে : ‘এই দেখো রাস্তা দিয়ে বর কনে যায়,

স্কুল গেলে ওমন কনে পাওয়া যায়’

আর পাওয়া যায় কনের বাপের কাছে দামি দামি খেলনা, টেপ।



পরদিন থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু হয় আমার।



স্কুলে যাই। কনে তো পাইনা। স্যারেরা শুধু পড়ায়।

বাড়ি এসে মাকে মা তুমি মিথ্যে বলেছো। মা বললেন :

‘কনের বাবা তোমার জন্য ছোট্ট একটা ফনিক্স সাইকেল কিনতে গেছেন দুরের শহরে

তারপর তোমার গানের জন্য একটি ক্যাসেট’



আমার স্কুলে যাওয়া শুরু হয় কনে পাবার আশায়

কনে পাইনি

পেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বচ্চো ডিগ্রি।

মা দিবসে সেই ডিগ্রির সবটুকু গর্ব মাকে দিলাম।



নিসর্গ : ঢাকা

১২.০৫.২০১৩





























আমি আর কার কাছে যাবো, কাকে দেখাবো আমার অন্তর্গত সৌন্দর্য ?

শাফিক আফতাব----------------------------------------------



আমি আর কার কাছে যাবো, কাকে দেখাবো আমার অন্তর্গত সৌন্দর্য ?

আমার গোয়েন্দা ঘরের শার্শিতে এক ভূত থাকে, সেই ভূতের কাহিনী আমি আর কাকে শোনাবো ?

কার কাছে নিবেদীত হবো আমি, শিশুর মতোন মায়ের কাছে খুলে দেখানোর মতোন

লজ্জাবতী মানব দেহের অঙ্গাবলী কাকে দেখাবো ?

তুমিই জানতে আমার পছন্দগুলোর ফিরিস্তি, আমার কাম ক্রোধ বোধ আর সিন্ধুকের খবর।



যাযাবরের জীবন আমি চাইনি, অজস্র নদীর এই দেশে ভবঘুরে আদিবাসী মানুষ হতে চাইনি !

আমি একটি স্থিতি চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম একটি ঘর, ঘরের মানুষ ;

তোমাকে, তোমাকে

সব বলেছিলাম, বলেছিলাম চৈত্র আমার প্রিয় মাস, আর প্রিয় তারাভরা রাত্রির আকাশ,

অবোধ শিশুর মতোন ফ্যাল ফ্যাল করে যেন মায়ের কাছে মেলায় দেখা কাহিনী বলেছিলাম।



কত কাছের মানুষ ছিলে তুমি, আজ তোমাকে বিশ্বাস হয় না

তোমার কাছে যেতে ভয় হয়!

অথচ আমি আর কার কাছে যাবো, কাকে দেখাবো আমার অন্তর্গত সৌন্দর্য।



নিসর্গ : ঢাকা

১২.০৫.২০১৩





































কুফামানুষ

শাফিক আফতাব----------



যদি পারো এসো কেউ, পারো কিনা ? যদি পারো !

মনের গহীনে যে বেদনা এতগুলো বছর পুড়ে ছারখার করলো শুভ্রসত্যসত্তা,

দিয়েছিলো বিনিদ্র রাত,

একটা ভরঘুরে জীবন আর ব্যর্থ প্রেমিকের অভিধা।



শুধু প্রেমে ব্যর্থ না, জীবনেও ব্যর্থ আমি

সার্থকতার একটিমাত্র শিশির ভেজা শব্দ বর্ষার বৃষ্টির মতো ছোয়ায়নি আমার

এলোচুল ভর্তি মাথা।

কিংবা ইতিম শিশুর মাথায় দরদীমানুষ যে ভাবে বুলায় হাত।



মূলত আমি একজন মানুষ,

আমাকে দেখে শুভ কাজে যাবেন, দেখবেন ; কাজটি ফলপ্র“শু হয়নি,

কেনোনা আমার জীবনে সার্থকতা বলে কিছু নেই



আমি একজন কুফামানুষ ; আমা দর্শনে অকল্যাণ হয় !!

নববধুঁর ভালোবাসা খসে খসে পড়ে।



নিসর্গ : ঢাকা

১৩.০৫.২০১৩



































আমি তো বেশি কিছু চাইনি

শাফিক আফতাব-----------



আমি তো বেশী কিছু চাইনি

শুধু একটি ঘর চেয়েছিলাম, দোচালা বাংলা ঘর কিংবা অরণ্যবাংলো

বাংলোর দক্ষিণে ছোট্ট একটি বারান্দা, তার সামনে কয়েকটি ফুলের একটি বাগান ;

তার ধারে একটি শানবাঁধা পুকুর, পুকুরের স্বচ্ছ জল, জলের ধারে কিছু ফুলদাম ;

আমি তো বেশি কিছু চাইনি,

শুধু দুবিঘা জমি চেয়েছিলাম, অবশ্য রবিশস্যের জন্য আরও একবিঘা

নাল জমিতে ফলবো কিছু ধান, তাতে পাবো আমার ছ’মাসের খোরাকী

আর রবিশস্যের ক্ষেতে হরেক সবজি,বাংলোর চালে লাউ কিংবা পুঁই

এই দিয়ে বেশ যাপিত জীবন,

আমি তো বেশি কিছু চাইনি মোটা চালের মতো দুটো মোটা কাপড় চেয়েছিলাম ;

আমার লজ্জা নিবারণের জন্য এক খণ্ড বস্ত্র

একটি বলদ, দুটো দুধেল গাই, একটি লাঙল, আর একটি জোয়াল ;

আর আমার ঘরটাকে আলোকিত করার জন্য একজন আবহমান বধুঁ,

বধুঁর কপালে লালটিপ, ঘটিহাতা ব্লাউজ, লালপেড়ে শাড়ির খরখরে গন্ধ,

আর তার নিপুণ বুননের দেহ থেকে বিচ্ছূরিত হওয়া মৃত্তিকার ঘ্রাণ,

আমি তো বেশী কিছ ুচাইনি

শুধু দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পবিত্র সঙ্গমে একটি বিশুদ্ধ মানব সন্তান জন্ম দিতে

চেয়েছিলাম।



নিসর্গ : ঢাকা

১৩.০৫.২০১৩































হে ধর্ষক হে ইতরপুত্র

শাফিক আফতাব---------



হে ধর্ষক হে ইতরপুত্র



ছায়াপথে কেনো খুঁজো পবিত্র যোনিপথ,

শুঁকুরের বিষ্টা খুঁজো

আর নষ্ট করোনা এই পবিত্র জগত।

































































এ জীবন এমনই গেলো

শাফিক আফতাব----------



এ জীবন এভাবেই গেলো, একটি দিন তোমাকে নিয়ে ভাসতে পারলামনা ঝর্ণার জলে

বালুকাবেলায় হারাতে পারলাম না গহীন উত্তাপে

আমার ঝরঝরে কবিতাগুলোর সুবাসে তোমার মনে কোনো স্পন্দন জাগলো না

এজীবন এভাবেই গেলো, কোনো অরণ্যবাংলোয় আমরা একটি দিন কাটাতে পারলামনা

পাতার মর্মরিত ব্যঞ্জনায় তুমি কোনো আবেদন নিয়ে আসলে না

কিংবা লতাগুল্মের ঝোপে অরণ্যপ্রাণীর মতোন আমাদের একটিবার সহবাস হলো না

এজীবন এভাবেই গেলো সমুদ্র তীরে সুর্যাস্ত দেখার লগ্ন একটিবারও আসলো না

তুমি একটি বারের জন্য মনের হুক দিলেনা খুলে

দেখালে না তোমার অন্তর্গত সৌন্দর্যের লীলাভূমি

একটিবার ফুলের মতোন তোমাকে শুঁকে শুঁকে পুলকের বিন্দু বিন্দু জল জমলোনা মনের গহীনে



এজীবন এভাবেই গেলো,

একটি জ্যোস্নামাখা তারাভরা রাত আসলোনা আমাদের জীবনে

যে রাতে পরির সাদা পাখায় ভরে করে আমাকে নিয়ে যাবে আফ্রিকার জঙ্গলে ;

যেখানে বিবিধ বৃক্ষের আর পাখীর কলকাকলিতে গুঞ্জরিত ঘ্রাণে নামে এক আবেশমাখা রাত,

এ জীবন এমনই গেলো

তুমি প্রোষিতভর্তৃকারিণীর ব্যথার বিলাপে ঝরঝর বারিধারায় ভারি করে তুলনেনা লেপানো উঠোন ;

আমার টাইয়ের নটটি বাঁধলেনা

ঘুমন্ত এই আমাকে ডাকলেনা, ‘এ্যাই অফিসের সময় হয়েছে ’, ওঠো..ওঠো .........!!



এজীবন এমনই গেলো তুমি একটি গোলাপ দিলেনা, একটি গোলাপ নিলেনা !!!



নিসর্গ : ঢাকা

১৩.০৫.২০১৩























আমি চিরকাল একটি পবিত্র হাতের ছোঁয়া পেতে দাঁড়কাক হয়ে বসে থাকি।

শাফিক আফতাব--------



তুমি সঙ্গী হতে চাও, পারবেনা, পুড়ে যাবে,

মনের গহনের বেদনা বুঝতে চাও, এসো, ডুবে যাবে,



আমি তো জন্মদুখী এক, আমার কড়া ঝাঁঝে আর উৎকট গায়ের গন্ধে কোনো

পেলব মেয়ে মানুষ কাছাকাছি ভেড়েনি

চোখ তুলে হালকা বাংলাভাষায় বলেনি একটি সরল বাক্য,

ছোট্ট একটি গোলাপও কিনেনি শাহবাগের দোকানিদের নিকট

কত উৎসব যায়,

একটা লুঙ্গি বা গামছা, কিংবা কমদামী একটি খদ্দরের পাঞ্জাবী কেউ দেয়নি আমাকে,

অথছ কতকাল আমি দুটো শিশির ভেজা শব্দের জন্য বসে আছি

একটা সাদামাটা বাক্যের জন্য বসে আছি

একগ্লাস শরবত কিংবা এককাপ গরম কফির জন্য বসে আছি ;



খাম ধরে বসে থাকা এই আমার কাছে কেউ আসলো না,

মুখে তুলে দিলোনা নব্বানের দুমুঠো ভাত,

বৈশাখের নতুন জলের গভবর্তী মাছের ডিমের ভূণা আর চিকণ চালের একপ্লেট ভাত

কেউ খাওয়ালো না আমাকে।



আমি চিরকাল বসে থাকি, দুফোটা শিশিরের জন্য

আমি চিরকাল কেঁেদ মরি এক চুমুক ভালোবাসার জন্য

আমি চিরকাল একটি পবিত্র হাতের ছোঁয়া পেতে দাঁড়কাক হয়ে বসে থাকি।



তবু কেউ আসলো না, কেউ আসলো না...........



নিসর্গ : ঢাকা

১৪.০৫.২০১৩



























॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥





তোমার অন্তর্গত সৌন্দর্য কাঠামো ভেদ করে উপচে পড়েছে বর্ষার দুকূল প্লাবিত নদীর মতো

শাফিক আফতাব----------



পবিত্র একটি শব্দের জন্য সেই কতকাল অপেক্ষায় আছি

পবিত্র একটি সম্ভাষণের জন্য বসে আছি

পবিত্র একটি চুম্বনের জন্য আছি।



বলেছিলে, অপেক্ষা করো,..........

অপেক্ষার প্রতিটি বর্ণ বুকে আকঁড়ে ধরে সেই থেকে

প্রার্থনার মতোন তোমাকে ধ্যান করেছি

সদ্য বর্ষার জলে মতোন স্বচ্ছতা নিয়ে গর্তে লুকোনো মাছ ;

রাত্রিদিন কাবার করেছি নতুন জলের গন্ধে,



আজ কাছে এলে, দেখি ; সময়ের সংঘাতে দুষ্ট নখের আচঁড়

তোমার ব্যবহার্য শব্দে বাংলা মদের গন্ধ

তোমার অন্তর্গত সৌন্দর্য কাঠামো ভেদ করে উপচে পড়েছে বর্ষার দুকূল প্লাবিত নদীর মতো

তোমার চঞ্চুতে ব্যবহৃত স্যান্ডেলের ঘষা

তোমার চোখের তারায় শিক্ষতার অভিজ্ঞতার সনদপত্র।



তুমি আজ ঘ্রাত ফুলের পাঁপড়ি

ব্যবহৃত হুঁকোর সোনালী জল

তুমি ব্যবহৃত বিছানার সফেদ চাদর



তোমাকে স্পর্শে আর কোনো কামনা কিংবা আবেগের জল ঝরে না

আমার ভরপুর মেঘের শরীর থেকে।



নিসর্গ : ঢাকা

১৪.০৫.২০১৩















যদি ফিরে পাই সাদাজলে ধোয়া তোমার পবিত্র হাত ;

শাফিক আফতাব-------



আমার সর্বস্ব তোমাকে দিলাম

শেষবিন্দ রক্ত, তাও ;

যদি তোমাকে ফিরে পাই,

যদি ফিরে পাই সাদাজলে ধোয়া তোমার পবিত্র হাত ;

যদি ফিরে পাই বাগানের প্রথম গোলাপের ঘ্রাণ,

যদি ক্লান্তশ্রান্ত দেহের একচমক ঘুমের শেষে সফেদ লেপের নিচে

খোলা দেহে গুচ্ছ গুচ্ছ সুবাসের গন্ধে তোমাকে পাই।



রক্তশূন্যতায় জীর্ণতা বাসা বেঁধেছে এই বিক্ষত দেহের কানাগুলি জুড়ে

তবু তুমি ফিরলে না

ফিরলে না..........



নিসর্গ : ঢাকা

১৪.০৫.২০১৩









































আমার কাছে কে যেন শুয়েছিলো !

শাফিক আফতাব-----------



গতরাত, সারারাত ঘুম আসেনি চোখে,

কেমন এক যন্ত্রণা কিট কিট করেছে মাথার ভেতরে,

পাশ ফিরতেই বার বার পেয়েছি পুরনো প্রেমিকা পেলব দেহের বাস্না,

বিদেশী স্নোর ঘ্রাণ,

আর তার অন্তর্বাস থেকে, উত্তাপে, ফুটছিলো ঝুরঝুরে গেঁদা ফুল,

আমি তাকে জড়াতেই হাতের মুঠো থেকে গভীর জলে মাছ যেন পিছলে গিয়েছিলো ;

ওপাশ হতেই আবার একি কাণ্ড !

আবার তাকে জড়ানোর প্রাণপণ প্রয়াস :

ঘুমের ঘোর যেন বানরের মতোন তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে পিছলে নেমে পড়ি,

ঘুমের আবেশ আমাকে শাল চাদরের ভেতর জড়াতে চায়,

অথচ আমার সাথে কে যেনো কানামাছি খেলে,

সারারাত এভাবে কাটে গতরাত,

দুচোখে একফোটা আসেনি চোখে, অথচ আমার কাছে কে যেন শুয়েছিলো ;

তাকে আমি (হয়তো আমার পুরনো প্রেমিক)

আমার মনের কথা সব খুলে বলেছি,

নিবেদন করেছি নিজকে, সে সব বুঝেছে ; অথচ নিজেকে মেলাতে চেয়ে

মেলেনি,

গতরাত আমার ব্যর্থ শিকারে কেটে গেছে।



নিসর্গ : ঢাকা

১৫.০৫.২০১৩



































কবি নজরুল : একটি পরাবাস্তব সনেট

শাফিক আফতাব

(উৎসর্গ : কবি শোয়াইব জিবরান)



কবির পড়নে লুঙ্গি, গায়ে সফেদ পাঞ্জাবী ঢোলা ;

অতিধীরে হাঁটছেন, আসছেন, আমাদের বাড়ির অতিথি,

সমুদ্রের মতোন অজস্র কথার জলোাধি তাঁর মুখে তোলা :

একটি কথাও তিনি বলছেন না, অথচ তাঁর কত গান গীতি।



যৌবনে তিনি ধীরোদাত্ত এক মহানায়ক সাইক্লোন টনের্ডো ;

বিদ্রোহ, সাম্য আর প্রেমের অভূতপূর্ব এক আচমকা প্রতিভা,

মানুষের জীবন, রাজনীতি, মুক্তি, অর্থনীতি, কাম, ক্রোধ লিবিডো,

সবই চিত্রিত বিশ্বস্ততায়, অগ্নিস্ফ’লিঙ্গে, যেন আগ্নেয়গিরি ; জাভা।



তাঁর মহা হুঙ্কারে স্পন্দিত হলো মহাবিশ্ব ; ছায়াপথ ;

নতুন পৃথিবী বিনির্মাণের সূত্রাবলি বাঙালি পেলো তাঁর সূত্রে,

রবীন্দ্রবলয় থেকে তিনি নির্মাণ করলেন এক নতুন জগত :

আমরা উদ্দীপনা পেলাম সাতচল্লিশে, উনসত্তরে ; একাত্তরে।



শেষরাতে কবি আজ এলো আমাদের বাড়ির অতিথি

পান-বাটা ধরতেই, ঝন্নাৎ, ঘুম ভাঙলো,আহা! বোধের গতি ?



নিসর্গ : ঢাকা

১৫.০৫.২০১৩





























মহাসেন ধেয়ে আসে,

শাফিক আফতাব--------



মহাসেন মহাসমারোহে ধেয়ে আসে

উপকূলবতী মানুষ উপদ্রুত এলাকা ছেড়ে ছুটে

আসন্ন মরণের কাছে

সবাই কাদে বুঝি আজ মাথা কুঁটে।



আসন্ন তাণ্ডবে প্রাণ বাঁচাতে সর্বস্তরের মানুষ

ভালো মন্দ ক্রিমিনাল প্রতারক কালোবাজারী

সবাই একনামে প্রভুর গুণকীর্তণে হারাইছে হুশ

আহা প্রতিটি মানুষ যদি হতো এমন সত্যের কাণ্ডারী।



বিপদ কেটে গেলে আবার কিছু মানুষ পুরোনো খোলস

খুলে ফেলে পূর্বতন বানিজ্যে করে মনোনিবেশ

আল্লাহ রসুলের নাম নেই, খায় আবার উৎকোচ ঘুষ

আবার উপদ্রুত হয় সুদে ঘুষে প্রতারণার প্রিয় স্বদেশ।



বিপদের মুখে মানুষের সত্যশুদ্ধ বুলির মতোন যদি

মানুষ হতো, কত সুন্দর হতো জীবন ! কালনিরবধি।



নিসর্গ : ঢাকা

১৬.০৫.২০১৩



































জামাইবাবু মহাসেন খুঁজছে নার্গিসকে

শাফিক আফতাব------



ক’দিন থেকে মহাসেন নার্গিসকে খুঁজছে ;

(মহাসেন কি কবি নজরুল ?)

মহাতাণ্ডবে হুঙ্কার তুলছে সাগরে

ওদিকে নার্গিস সাগরের গভীর থেকে মিটিমিটি হাসছে

বলছে : ‘যদি আমার প্রজাদের বিধ্বস্ত করো, লণ্ডভণ্ড করো,

জানমাল নষ্ট করো’,

তাহলে আমাকে পাবেনা।

মহাসেন তাই একটু নমনীয় আর দুর্বল হলো

প্রেমিকার রাখলো, তার কাছে নিবেদীত হলো।



মহাসেনের ভয়ঙ্কর রুদ্ধরূপ ক্রমে ফিকে হয়ে আসছে।



ধন্যবাদ জামাই বাবু মহাসেন তোমাকে !

১৬.০৫.২০১৩









































বিকেলের ভাতঘুমে বধুঁ আজ নিবিড় হলো মত্ততায় ;

শাফিক আফতাব--------



বৈশাখের বর্ষার জলে ডুবে গেছে নালা ডোবা বিল ;

বৃষ্টির ঝাপটায় বধুঁর দেহে নেমেছে খল্সে মাছের উচ্ছলতা ;

নুতন জলে ধুয়ে মুছে সে আজ আহা কেমন অনাবিল !

মেঘলা দিনে সে ভাঙতে চায় নির্জন কামরার নিরবতা।



কচুপাতায় মুক্তাবিন্দুর ফোটা ফোটা জল ঝরছে তার

অমূল্য রতনের নরম দেহের শরীর ছুঁয়ে ;

চোখে তার দেখি মিটি মিটি ; যেন অজস্র কোটি তারার ;

ভোগা চেলেছে নতুন অঙ্কুর ; তার নরম স্নিগ্ধ ভূঁইয়ে।



বিকেলের ভাতঘুমে বধুঁ আজ নিবিড় হলো মত্ততায় ;

ময়ূরের মতোন পেখন মেলে বুঝালো হৃদয়ের খবর,

ওদিকে গুন গুন কে গায় হায় বৃষ্টির ঝাপটায় !

তাই দেখে যে নেচে মরে, আকাশের পাড়ে ; নটবর।



নতুন জলের মাছের মতোন বধুঁ আমার আজ কেমন উচ্ছল ;

নতুন জলের দেহের গন্ধে আহা কী আনন্দ আর সুধা প্রবল!



নিসর্গ : ঢাকা

১৬.০৫.২০১৩(সন্ধ্যা)





































ভালোবাসা : একবিন্দু শিশিরের জল ;

শাফিক আফতাব------



বলা যায় তোমাকে বন্দি রেখেছিলাম, পাঁজরকারাবাসে ;

যেখানে হৃদয় থাকে। বস্তুত বাহিরের পৃথিবীর ধুলো আর

দুষিত জীবাণুর প্রকোপ থেকে বাঁচাতে। আবার ঝড়োবাতাসে

যাতে তোমার কাণ্ডগুল্ম পাতাফুল ভেঙে না পড়ে ; কাবার !



তুমি বাহিরে উড়তে চাও, অবাধ স্বাধীনতার সাধ পেতে চাও,

আমি সমূহবিপদাশাঙ্কার স্বৈরাচারী শাসকের মতোন তোমাকে

কঠোরকঠিন নির্দেশে বন্দি রেখেছি, যাতে কোনো শৃগাল পাকড়াও

করে তোমাকে লেহনে পঙ্কিল করে ছুঁড়ে না মারে কলঙ্কে।



তুমি আধুনিকতার নামে নারী অধিকারের শ্লোগাণে,

ভুলে গেলে সম্ভ্রম, নারীত্ব, লিঙ্গভেদ আর মানবতাবাদ ;

কথিত উদারতার নামে মঞ্চ গরম করলে নগ্ন নাচে আর গানে,

ঘরহীন বসবাস এখন তোমার, টকশোতে ছড়াচ্ছো তাজা প্রবাদ।



ভালোবাসা প্রেম সে তো শ্লোগান নয়, হৃদয়ে গহীন তরল ;

সেতো যুক্তিতর্ক নয়, উচু নিচু ভেদ নয়, একবিন্দু শিশিরের জল।



নিসর্গ : ঢাকা

১৬.০৫.২০১৩































যুগ অনুপোযুক্ত একজন প্রেমিকের ক্ষেদোক্তি

শাফিক আফতাব



কপালে নেই, বিলাস আনন্দ আর সুখের দুফোটা জল ;

ভাগ্যহত সৈনেকের করুণ পরিণতির ট্র্যাজেডি,

আমার আঙিনায় বাজবেনা আবহমান বধুঁর ঝুমঝুম মল ;

আমার ঘরে মিটিমিটি জ্বলবে না ভালোবাসার দেউটি।



ভালোবেসে কাছে এসে কেউ দেয়নি একটি গোলাপফুল,

মুখে তুলে দেয়নি কেউ খাঁিট গাইয়ের এক গ্লাস দুধ ;

আমি তো নই ভাই পাথরের মুর্তির প্রাণহীন পুতুল,

আমারও তো ভেতরে আছে বোধ-চেতনা একটুও মুরুদ।



আমিও তো মানুষ, ভালোবাসার সাধ আমারও জাগে,

আমারও জীবনে বসন্ত নামে চৈত্রে নয়তো মাঘে,

অথচ দেখো জীবনে আমার আজ এই করুণ পরাজয়

অর্থ নেই বিত্ত নেই, ভালোবাসা,প্রেম দূরে পালায়।



আজকের এই নগ্নতা ভালোবাসা নয়, যেন পশুদের কাম

এ যুগে এই ভালোবাসার কাছে আমি যে হেরে গেলাম।



নিসর্গ : ঢাকা

১৭.০৫.২০১৩ (সকাল)































অরণ্যমানবী

শাফিক আফতাব--------



প্রথম যৌবনে চুরুটের পিছন টেনে যে নেশা হয়েছিলো,

এখন যুগল চুরুটের শীর্ষ টেনে বেশী নেশা হয়

নেশার ভাঁপে ফুলে ওঠে শীতের তেলপিঠা ;

ভেতরে এক রাজপুত্র গোপণ কথা হয়।



এই অরণ্যে কিশোরীর শরীরের সুবাস ভাসে,

এক মোহন মদির আবেশে কী এক সুন্দর, নির্জনতায় ;

বৃক্ষের পাতায় লতাগুল্মে কাণ্ডে অরণ্যপক্ষীরা বসে,

আহা ! এক আবহমান কলম পাগল হয় কবিতা লেখায়।



এই অরণ্যে কেউ নেই, তুমি আমি নগ্নমধুর ;

বৃক্ষের মতোন খোলা দেহে ফুটে আছি পালক মেলে,

আমরা দুজন আজ আদিম আবহমান আর সেকেলে।

অকস্মাৎ পুলকের পুকুরে ক্রমাগত ওঠে ভুর ভুর।



আমরা পাখী ফুল আর বৃক্ষের মতোন নগ্নফুল ;

আমাদের সুবাসে ফুলেরা ঘ্রাণ পায়, নদী চলে কুলকুল।



নিসর্গ : ঢাকা

১৮.০৫.২০১৩

































প্রেম! ? সেতো আগুন, সাত রাজার ধন ;

শাফিক আফতাব---------



কত করে তোমাকে বলেছিলাম, ওখানে যাবেনা

আগুনে দেবেনা হাত,

তবু তুমি আগুন নিয়ে খেলতে ভালোবাসলে।



আগুন ! সে ভয়ঙ্কর এক প্রতাপ,

আগুন, সে তো ভস্ম করে মাটি, নদী, নক্ষত্র, জল ;

পৃথিবীর তাবৎ বস্তু,

এমনকি বাতাসকে পুড়ে সে ছারখার করে।



মানবী !

সেতো আগুন !!

তাকে নিয়ে খেলতে কেনো গেলে যুবক ?

জানোনা ? আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনা হয় !

আগুনে পুড়ো এখন, খাটি সোনা হও !

তবে দুঃখে কেনো ভাসাও, কষ্টে কেনো কাঁদো, আর যন্ত্রণায় হাপাও !

আগুনের কুণ্ডে মুখ ডুবে উত্তাপ নাও, দেখবে ঝিনুকের প্রদাহের মতো

তুমি মুক্তা জন্ম দিয়েছো, ভালোবাসার মুক্তা !



আর ওটাই সাত রাজার ধন !

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আনন্দ একমাত্র।



নিসর্গ : ঢাকা

১৮.০৫.২০১৩





























সেইদিন খালি মুখে তোমাকে দিয়েছি বিদায়

শাফিক আফতাব--------



নীলা, সেইদিন এইরকম জৈষ্ঠের সাদা রঙ সকাল ছিলো ;

উচ্ছল ফড়িংমন তোমার উঠেছিলো নেচে,

মধুমাসে মানবমনে কী এক উত্তেজনা ঢেউ খেলছিলো ;

তুমি এসেছিলো আমাদের নির্জন কামরার মেচে।



সেইদিন বাসায় কেউ ছিলোনা, আমি একা এক গবেষক,

ফাইনাল পরীক্ষার থিসিস প্রস্তুতে নিমগ্ন টেবিলে মাথা ঢুকে ;

হঠাৎ যেন মেয়ে মানুষের কণ্ঠের নরম খকখক !

তুমি সংগোপনে ভেতরে গিয়েছিলে ঢুকে।



তোমাকে আচমকা পেয়ে কোথায় রাখিবো আমি ?

আকাশে পাতালে না সমুদ্রে না কোল্ড স্টোরেজে ?

হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিলো দুষ্ট পাগলামী,

বিয়ে তো নির্ঘাত যদি দেখে ফেলে সমাজে।



সেইদিন খালি মুখে তোমাকে দিয়েছি বিদায়

আজ তাই গুমড়ে কেঁদে মরি গভীর বেদনায়।



নিসর্গ : ঢাকা

১৯.০৫.২০১৩































মিশুর চেয়ে মিশুর মাই আমাকে বেশি ভালোবেসেছিলো,

শাফিক আফতাব------



মিশুর চেয়ে মিশুর মাই আমাকে বেশি ভালোবেসেছিলো,

কাঁটা বেছে পাতে দিয়েছিলো মাছ ;

মাতৃত্বের সবটুকু নির্যাস দিয়ে আপন করেছিলো ;

জীবনে দেখিনি এমন মাতৃত্বের প্রকাশ।



পাশে বসে মুখে তুলে দিয়েছিলো ভাতের লোকমা,

তখন সাতাশ বছরের যুবক আমি অবিকল শিশু ;

তিনি আবহমান এক জননীর শাশ্বত প্রতিমা ;

খুব পাশাপাশি নিবিড় বসে আমি আর মিশু।



আমাদের দুজনকে দেখে তিনি চোখে ঝরান দুফোটা জল,

ব্যাংকার স্বামীর অকাল প্রয়ান মনে পড়ে তার ;

বেঁচে থাকলে, দেখে ; হতেন হয়তো ; উৎফুল্ল উতল ;

কী সুন্দর হতো আমাদের নাগরিক সংসার !



সেই সাতাশ বছরের যুবক আমি আজ সাঁইত্রিশ বছের মানুষ ;

কোথায় চলে গেছে মিশু আর মিশুর মা নেই কোনো হুশ !



নিসর্গ : ঢাকা

১৯.০৫.২০১৩







































আমি একটি পরিবার চেয়েছিলাম, বোদি হবেন মা

আর মা হবেন সাদারঙ শাড়ি পড়া নতুন বউ

ভাইয়ের হাতে থাকবে যত লেনাদেনা

আমার বউ হবে ছোট বোন তার ঘুরবে পিউপিউ



বৈদশিক মূদ্রা অর্জনে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমিই হবো একমাত্র

বাবা অবসর যাপনে শুধু ঘুরবেন আর তসবিতে থাকবে হাতে

মাস শেষে মাহিনা যাহা পাবো তুলে ভরাবো বৌদির পাত্র

তিনিই রাজা হবেন আমরা শুধু খেয়ে ঘুরবো দিনে আর রাতে।



কিছু দরকার হলে হাত পাতবো মায়ের অবিকল বৌদির হাতে

দুষ্টমীতে কান মলে সোজা করবেন আমি এক স্কুল বালক

তার ধমকে আদবে দুফোটা জল জমবে চোখের পাতে

আমার আর বউয়ের মধ্যে ভালোবাসার ঘাটতির প্রভাবক।



আধুনিক যুগে বৌদারা মা হয় না হয় এক ডাইনির ভয়ঙ্কর রূপ

আমাদের সংসার জ্বলে পুড়ে ছারখার, উড়ছে আজ পোড়া ধূপ।















































নটীপুত্র

শাফিক আফতাব------------



রাতের বেলা তিনি একপেট পেট পুরে খান, নাক ডেকে দিব্যি এক ঘুম,

বাংলামদের সাথে ষোলবছরের এক বালিকার গালে নরম এক চুম ;

আমাকে বিদেশ পাঠানোর টাকা দিয়ে তিনি কিনেন বেশ্যার পায়জামা ;

সিঙ্গাপুর বিমান বন্দর থেকে দুদিন জলে খেটে এসে দেখি, উধাও মামা।



আইনে অধ্যায়নে চুরির সজ্ঞায় পড়েছি কারো কিছু না বলে নেয়া চুরি,

আর কাউকে কোনো কাজ করিয়ে দেয়ার নাম প্রতারক চিটার বাটপার ;

অথচ আমরা অন্যের হক কেড়ে, অধিকার ছিনিয়ে কিনি প্রেয়সীর চুড়ি ;

অথচ তারাই সমাজে ধর্তাকর্তা, সাহেব আর নামের শেষে পদবী সরকার।



হালাল আর হারাম শব্দ দুটি বর্তমানে হারামের ঠেলায় হালাল বড় কাবু,

দেখুন সুদঘুষ, টেন্ডার বাগানো, নিয়োগ ও বদলীবাণিজ্য ব্যয় কত,

তারা বিদেশে পিকনিকে যায়, খোলা মাঠে চুড়–ইভাতি, টাঙিয়ে বিশাল তাবু ;

আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, পুর্বপুরুষের পাপ, আমাদের ভাগ্যহত।



এক নটীপুত্র আমার বউয়ের বদলী করাতে নিয়েছে ঘামের একগুচ্ছ টাকা

একলক্ষ বার তার কাছে গিয়ে খেয়ে এসেছি চরম অপমান আর গলাধাক্কা।



১৯.০৫.২০১৩





























বিবাহিত পুরুষের জন্য একটি সনেট

শাফিক আফতাব---------



তোমাকে ফেরাবার জন্য একলক্ষ বার নত হয়েছি অর্ধস্তন কর্মচারীর মতোন ;

তবু তুমি নারী অধিকারের কথা বলো, নারী চেতনার কথা বলো,

আমি বললাম : চেতনা আর অধিকার এক জিনিস নয়, প্রেম অমূল্য রতন ;

এই ভালোবাসা আর প্রেম ছাড়া আধুনিক সমাজেও সংসার অগোছালো।



তুমি কতিপয় কিছু শিক্ষিত ভদ্রইতরের কথা শুনে রাজপথে নামলে,

লিঙ্গভেদ ভুলে গিয়ে উচ্ছৃঙখলতাকে বললে আধুনিকতা ;

আবহমান বাঙালির সুখী পরিবারের অটুট বন্ধনে বিষ ঢাললে,

কফি হাউজ, নাইট ক্লাব, আর অপসংস্কৃতির স্রোতে লিখলে অশ্লীল কবিতা।



ধর্ম সমাজ রাষ্ট্র যাই বলো সবটাতে একটা শৃঙ্খলা তোমাকে মানতেই হবে ;

কোনো নিয়ম বা শৃঙ্খলা না মেনে অবাধ চলাকে বলে পাশবিক আচরণ,

সত্য সুন্দর সততা আর ঈশ্বরের অস্তিত্ব এগুলো তোমাকে পথ বাতলাবে,

যাচ্ছেতাই চলাটাই আধুনিকতা নয়, স্মার্টনেস নয়, এগুলো সমাজের পয়জন।



আধুনিক দম্পত্তির মধ্যে বলতে শুনি, বাকবিতণ্ডা আর কথিত অধিকার কথা ;

কথায় কথায় ঝগড়াঝাঁটি, নিযার্তন, মারপিট আর দেকি ছেঁড়া কাবিনের পাতা।

নিসর্গ : ঢাকা

১৯.০৫.২০১৩



































লোকান্তরিত বাবার উদ্দেশ্যে

শাফিক আফতাব----------



কোনো অঙ্কের উত্তর মিললোনা আর, বাবা, আপনার প্রস্থানে,

ছাদহীন আকাশের নিচে তাই বসবাস এখন আমাদের ;

ব্যাঙে চ্যাইট মারে, নপুংশক বকা দ্যায় ; বেঁচে থাকি ধুরপুর প্রাণে,

সবকিছু ভুল হয়ে গেলো, বেকার পড়ে আছে, খাতা হিসেবের।



নিসর্গ ভ্রমনে, ভোজন আয়োজনে আর সুসংবাদের কোনো বার্তায় ;

চোখে জল ঝরে, আপনি নেই বলে ; উপভোগগুলো আমার যন্ত্রণার বিষ ;

আর কোনো কিছু হারাবার ভয় নেই আর, এই শূন্য ধরায়,

আপনিহীন আমাদের গ্রামে তেলাপোকা এখন তুখোর নকলবীশ।



দেখেছি শত্র“ দমনে আপনি একাই একটিমাত্র লাঠিতে সমরাঙ্গনে ;

আগপিছু ডর নেই, সামনে চলছেনই, শুধু সত্য আপনার সাথি,

সারাটি জীবন সংগ্রামে প্রেমে ঘামে কী ঐশ্বর্য অর্জন মনের গহনে ;

মিথ্যের সাথে আপোষ নয়, জীবে দয়া ; এই ছিলো আপনার প্রতীতি।



আপনিহীন ছাদহীন খোলা আকাশের পাড়ে ঝড়ের তাণ্ডবে কাঁপে প্রাণ,

বেঁচে আছি তবু ; যেটুকু দিয়েছিলেন পাঠ ; আর সত্য সুন্দরের গান।



নিসর্গ : ঢাকা

১৯.০৫.২০১৩



































নারী

শাফিক আফতাব



নারী, তুমি অন্যন্যা, তবে কেনো হও পণ্য ?

শিল্পের কাছে তোমার কত কদর তা তুমি জানো ?

তুমি সামান্য কয়টি পয়সায় শিল্পপতির কাছে কেনো হও নগণ্য ?

কেনো দোলাও, কেনো ভোলাও, যত্রতত্র শুইয়ে পড়ো কেনো?



নিপুণ অভিনয় দিযে জীবনের কথাই বলো,

সৌন্দর্য আর জীবনের গভীরতর বেদনার কথা,

পরিহিত বস্ত্র কেনো হবে তোমার অগোছালো

সাত রাজার ধন কেনো খুলে প্রদর্শন, কেনো খুলে পড়বে ফুলের পাপঁড়ি পাতা?



জীবাণুর হাত থেকে মুক্ত হতে বরং ঢেকে রাখো রাজভোগ,

সংগোপণে তা থেকে মুক্তার দানার মতোন ফুটুক সাপের মনি,

চড়া দামে নিলামে উঠুক, দেখে পস্তাক, লুইচ্চা আর পেশাদার ধর্ষক,

জ্যোৎস্নার রাতে পুলকের দোকান দাও, হে প্রিয়ভাষিণী।



নারী তুমি পণ্য নও, তুমি মাটি, ফলাও কালের সন্তান ;

সম্ভ্রম কেনো তুমি খুঁইয়ে দেবে তুমি, কেনো বির্সজন দেবে মান-সম্মান।



নিসর্গ : ঢাকা

২০.০৫.২০১৩





























মানবতার ফুল

শাফিক আফতাব---------



আমি কতবার মানবতা নামক একটি ফুলের জন্য

মানুষের পায়ের কাছে মাথা কুঁটে মরেছি,

চোখের জলে বোঝাতে চেয়েছি মানবতার ফুলটি খুবই দরকার আমার,

আমি কতবার মানুষের দ্বারে বাধ্যানুগত পোষা কুকুরের মতোন

মানবতা নামক একলোকমা খাবারের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা করেছি,

তবু এই মাটির পৃথিবীর মানুষ ফিরে তাকায় নি ;

তাঁরা দীর্ঘ প্রতিবেদনে পত্রিকার পাতা ভরে ফেলে

তাঁরা সবুজ খাসময় খোলা ময়দান গরম করে কথিত মানবতা বুলিতে ;

তাঁরা নিরন্ন মানুষের অধিকারের কথা বলে

তাঁরা প্রান্তিক আর তৃণমূলের পুনর্বাসনের কথা বলে

অথচ দেখুন আমন্ত্রিত জলসায় সম্মানীর একটু ঘাটতিতে

পেঁচামুখ তার, মেঘময় বর্ষার গোমড়াবদন।



সমাজ গড়াবার দরকার নেই তাঁদের

সে নিজকেই গড়াক,

আমি যাদের পায়ের কাছে মানবতার ফুুলের জন্য মাথা কুটে মরেছিলাম,

এখন লাথি মারি

কেনো না আমি শ্লোগানে মুখরিত করিনা রাজপথ,

আমি সমাজ গড়াবার নামে ময়দান উত্তপ্ত করিনা,

আমি ছোট্ট একটি ক্ষুদেজীব ; আমি নিজকেই গড়াতে নিমগ্ন ;



এভাবে প্রতিটি ব্যক্তি যদি নিজকেই গড়ায়

আর সেই গড়ানো লোকসকলে যদি গড়ে ওঠে সমাজ

তাহলে আামাদের সমাজে মানবতা ফুল ঠিকই ফুটবে।



নিসর্গ : ঢাকা

২০.০৫.২০১৩





















খেটে খাওয়া মানুষের গান

শাফিক আফতাব--------------



ওরা কাজ করে মাঠে, কলে, কারখানায় ;

শহরের অনিরাপদ দালানের বদ্ধ কামরায়,

ওরা রোদে পোড়ে, জলে ভেজে, শীতে কাঁপে, গ্রীষ্মে গলে ;

ওরা সোনা ফলায়, মৃত্তিকায় গভীর থেকে তুলে আনে শস্যের বীজ ;

ওরা পাট জন্ময়, ইলিশ ধরে, চিংড়ি চাষে, চামড়া গুদামজাত করে

বন্ত্র বুনে ;

আমরা তা বিদেশী রপ্তানী করে বৈদশিকমুদ্রা অর্জনে মাথাপিছু আয় বাড়াই,

জীবিকা নির্বাহ করি,

আমাদের আহ্লাদের যাবতীয় ইন্সট্রুমেন্ট শিশুর খেলনার মতো হাতের মুঠোয় আসে,

আমরা সাহেব হয়ে ঘুরে বেড়াই,

অফিস খরচের নামে বাগাই মোটা অঙ্কের টাকা,

আমরা সরকারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করি যৎসামান্য,

আমরা আয়েশী মধ্যবিত্ত, উঠতি উচ্চবিত্ত ;

আমরা রাষ্ট্রকে ফাঁকি দেই, পবিত্র সংবিধানকে সমুন্নত করিনা ;

অথচ হাভাতে আর ছিচকে চোরকে শাস্তি দিতে বদ্ধ পরিকর হই ;

অথচ আমরা বড় অফিসের বড় কর্মকতা,

ভাউচারে সরকারের তহবিল থেকে যে টাকা মারি, সেটা চুরির মধ্যে পড়েনা ;

পড়ে বিবিধ খরচের মধ্যে ।



এই আমরা শিক্ষিতজন,

দুশো টাকা নেয়ার অপরাধে অফিসের পিওনকে চোর বানিয়ে উত্তম মধ্যমদিতে

আমাদের বাঁধেনা ;

আর একই অফিসের ভাইচার, আর বিবিধ খরচ দেখিয়ে টাকা বাগিয়ে নিয়ে বানাই

বিদেশী কাপড়ের মেরুণ ব্লেজার, প্লট কিনি, আলিশান ফ্ল্যাট নির্মাণ করি।



ঐ দুশো টাকার চোরের চেয়ে আমাদের চরিত কতটুকু উন্নত ?

একটু ভেবে দেখিনা !



হে মাটির মানুষ, মাঠের আর কারখানার মানুষ, উৎপাদনশীল মানুষ,

হে পুরুষোত্তম পুরুষ, হে মৃত্তিকার মেয়ে আমাদের,

তোমরাই প্রাকৃতিক সম্পদ এই স্বদেশের, তোমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা, অজস্র স্যালুট............



নিসর্গ : ঢাকা

২০.০৫.২০১৩



একজন রাজামিয়ার কাহিনী

শাফিক আফতাব--------------



তার বাবা সাহেবের বাড়িতে থালা মাজতেন, মাও করতেন বুয়ার কাজ ;

সাহেবের বড় দয়া হলো তার বাবাকে দেখে, বাবার পূণ্যের ফলে

তার শিক্ষা বিভাগে পিওনের চাকরি জোটে যায়। ভুতড়ে বাড়িতে ইমেজ

আসলো আনন্দের, তাদের দিন এখন ভালো যায়, চাল ছাটেন যন্ত্রকলে।



পিওনের বেতন ভাই আপনারা জানেন, যাই থাক পাঁচটি সদস্যকে নিয়ে

দিন যাওয়া কত কষ্টের ? দিন যাক, বছর না যাইতেই তার বাড়িতে দালান ;

বছর বছর জমি কেনেন, বাজাজ মোটর সাইকেল হাঁকেন। কী দিয়ে

কোথা থেকে টাকা আসে, চেরাগ আলীর না জ্বিন পরির? অথচ তিনি শুধু ঘুমান।



চাকুরির বয়স তার দশ বছর, জোতজমি মোটে বিশবিঘা এখন ;

বাড়ির চারদিকে ইটের প্রাচীর, আর দো’চালা দালান এলপেটানের দুটি,

ঘরে সুন্দরী বউ আর চারটি দেশের ভবিষ্যত ; নোদনোদা লিকলিকে সন্তান,

ঘুরতে বেরুন, তাস পেটেন আড্ডায়, পাওনাদার চাহিলে ধরেন চিপে টুটি।



রাজার মতোন চলেন, গ্রামের লোকসকল ভদ্রবাবার সন্তানকে বলেন রাজামিয়া ;

সবাই মাথা কুঁটে মরেন, নদী ভাঙা মানুষ ; এইসব করলেন কী দিয়া ?



নিসর্গ : ঢাকা

২০.০৫.২০১৩

































কমেডি-কবিতা

শাফিক আফতাব----------



আমি কালের ছোবলে তাড়া খাওয়া পাখির মতোন তোমার কোলে মাথা রেখে ভেবেছি মায়ের কোল ;

আর ভালোবাসাহীন এই উষর দেশের মাটিতে তোমাকে ভালোবেসে ভেবেছি এতো অবিকল অমরাবতী ;

আমি তোমার শুশ্রƒষা পেয়ে ভুলে গেছি আমার জন্ম দাত্রী জননীর শাশ্বত সুন্দর সফেদ হাত-কোমল ;

তোমাকে পেয়ে আমি, এই মৃত্তিকার ধুলোমাখা, কাদাজলের মাটির কুঁড়েঘরে পেয়েছি আবহমান প্রীতি।



তুমি যেদিন এই বাড়িতে আসলে, আমি ভুলে যেতে থাকলাম আমার অতীত পরাজিত জীবনে আখ্যান ;

তুমি আলো করে কোটি তারার প্রোজ্জ্বলতা নিয়ে এলে মাত্র তিনবিঘা বৃক্ষঘেরা বাড়ির প্রাচীরের ভেতর ;

রোজরাতে তোমার পরিহিত বসন গোলাপ আর রজনীগন্ধার পাপঁড়ি হয়ে ফুটতে থাকলো অজস্র অফুরান ;

ভোরের নির্জন নদীর ভেতর তোমার আমার আবহমান সাঁতার, আর অপার আনন্দ আসতো যেন স্বর্গের।



একদিন বুকে মাথা রেখে লজ্জায় মরে গিয়ে বললে : পেয়েছো নাকি একটি ফুটফুটে ফুলশিশুপুত্র ;

সে নাকি আবার নামকরা ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে তোমার তাপমাত্রা মেপে চেয়েছে ডাক্তারী ভিজিট ;

তুমি তাকে ভিজিটের টাকা দিতেই, আচমকা তোমার ঘুম ভেঙে গিয়ে খুলে যায় আবেশের দুটি নেত্র ;

পরদিন জেলা সদরের আসল ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখা গেলো, পেটের ভেতর তোমার মানবের কীট।



দশমাস তিনদিন পর ঘর আলো করে এলো এক মহারাজা, নগ্ন অথচ ফুল অথচ সবটুকু সোনার টুকরো ;

আমাদের সম্বল নেই, আবাস,পুঁিজ নেই, তবু স্বর্গে বেঁেচে আছি ; যদিও বাঁচি খেয়ে নিরামিশ, খুদ-কুঁড়ো।



নিসর্গ : ঢাকা

২০.০৫.২০১৩



































বিষন্ন সকালে, যতিহীন

শাফিক আফতাব---------



এই বিষন্ন সকালে নিথর রাতের মতোন নিস্তব্ধতা এসে ভর করলো

বৃক্ষে স্বর্ণলতা ছেয়ে যাওয়ার মতোন

বাতাসহীন বৃক্ষের পত্রগণ গোমড়া মুখে বসে যেন গরমভাতের সম্মুখে

পোষা বিড়াল

আর আামর মনের শার্শিতে তুমি ধ্যানমগ্ন



মনে হয় সেই কবেকার কান্দজির মন্দির আর রামসাগর ভ্রমণ

মনে হয় ভিন্নজগতের সেই মধ্যযুগের ঘোড়সওয়ার সেজে রাজারাণীর মতোন

রাজপ্রাসারের চতর্দিক প্রদর্শন

গুটি আম্রের মতোন তোমার অনাঘ্রাত কচিক্ষেতের ঘ্রাণ

চোখের তারা থেকে বিচ্ছূরিত নাবালক প্রেমের আভা

সব মিলে আজকের এই বিষন্ন সকাল বড় ভরপুর হলো প্রিয়তমা



প্রায়শ উচ্চমাধ্যমিক ছেলেমেয়েদের মতোন আমিও আবেগের পাল ছিঁড়ে ছুটি

ঘাঘটের পাড়ে

ভিএইড রোডের সরকারী আবাসিক এলাকায়

তুহিন ভাইয়ের সরকারি ড্রেস পড়া বোনের কথা আজও মনে হয়

মনে হয় সেই এক সকাল দশটায় স্কুল যাবার বেলায় নির্জন ফ্লাটের ভেতর

একা পাওয়া,

অথচ কোনো বিস্ফোরণ ছাড়াই বৃষ্টির দীর্ঘমুর্হুত তার সাথে কেটে দেওয়া।



আরো কত কিছু মনে হলো আজ এই বিষন্ন সকালে



আসলে বিষন্নতা আমার সহোদর বিষন্নতা আমার ছেলেবেলার বন্ধু

অথচ এই বিষন্নতাই আমার জীবনটা কুুঁড়ে কুঁড়ে খেলো।



নিসর্গ : ঢাকা

২১.০৫.২০১৩





















কৃষি-কলোনীর কবিতা

শাফিক আফতাব-------



তুহিন ভাই, মফস্বলের সাহিত্য প্রবাহ মাসিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন আপনি ;

আপনার পত্রিকাতেই আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ;

সেই সূত্রে যেতাম আপনার বাবার কৃষিকলোনীর সরকারী কোয়াটারে,

আপনার সদ্য উঠেছেন ;

আর আপনারাই সদ্য চুনকাম করা ফ্ল্যাটের প্রথম অতিথি,

ভেতরে টুকতেই কেমন যেন ইট-চুন-পাথরের গন্ধ নাকে লাগলো,

পুবের দিকে চোখ ফেরাতেই দেখি উত্তরবঙ্গের বৃহৎ কৃষি কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস,

গবাদী পশুরা দুর্দান্ত, স্বাধীন প্রতাপে লকলকে ঘাস গিলছে,

বিবিধ ধানগাছের খামার, ফুল, লতা আর নতুন চাকুরের বধুঁর নতুন শাড়ীর পত পত শব্দ,

ইত্যবসরে গার্লস স্কুলে পড়া আপনার ছোটবোন ;

আকাশী রঙ কামিজের সাথে সাদা বেল্ড, আর সাদা কেটস পড়ে স্কুল যাবার প্রস্তুতি ;

সকাল দশটার সাদা রোদ, আর দুপুরের লাঞ্চের জন্য বলকানো মসুর ডালের ঘ্রাণ।

সবমিলে কী এক মোহন মনে হলো আপনাদের সরকারি কোয়াটার সেদিন।



আপনার ছোটবোনটি ছোট্ট একটি সালাম ঠুকলো, সেই সালামের ভেতর ভর্তি ছিলো শ্রদ্ধা

আর শ্রদ্ধার ভেতর দুরবীন চোখে দেখতে পেয়েছিলাম

কিশোরীর গহন মনের ভালোবাসা...........দুফোটা শিশির,



তুহিন ভাই, আপনার পত্রিকা লুপ্ত হয়েছে,

আপনিও লেখেন না আর, শুনেছি সংসারী হয়েছেন, ব্যবসা করেন,

আমারও যাওয়া আসা কমে গিয়েছিলো সরকারি কোয়াটারে,



এক সময় নাম কামাতে আসি মেগাসিটিতে, তারপর কতকাল যোগাযোগ নেই

আজও যখন সেই কৃষিকলোনীতে যাই, বাতাসে ভেসে বলকানো মসুর ডালের ঘ্রাণ,

আকাশ রঙ স্কুল পড়া বালিকার সাদা বেল্ড, ওড়না, আর ওড়নার ভেতর দুলুনির স্পন্দন।

সদ্য বিবাহিত বধুঁর রাতের ব্যবহার্য ধৌত বস্ত্রের পত পত শব্দ।



নিসর্গ : ঢাকা

২১.০৫.২০১৩











আধুুনিক শিক্ষিত প্রেম

শাফিক আফতাব



‘দোস্ত, আমার বোন তোকে ভালোবাসে

আর তোর বোন আমাকে,

তবে আর দেরি কেনো, চল ; দু’জন দু’দিকে যাই

ডেটিং করি, মজা লই,’



অথচ অবশেষে দোস্তের বোনদের বিয়ে হয়না দোস্তদের সাথে,

তবে তাদের দোস্তগিরি এখনো টিকে আছে ;

টিকতো না ; যদি এক দোস্তের বোন ভালো না বাসতো।



নিসর্গ : ঢাকা

২১.০৫.২০১৩





















































একদিন ঘাঘটের ঘাটে

শাফিক আফতাব------------





একদিন ঘাঘটের ঘাটে, তুমি দীর্ঘ প্রতীক্ষায় ঘামে গলে নোনা হয়েছিলে

সফেদ অন্তর্বাস ভিজে ভিজে ঘাঘটের জল হয়েছিলো

তোমার নীলসাদা চোখ পলাসের পালক হয়েছিলো

ঘাঘটের জল তোমাকে দেখে কেঁদে কেঁদে বইছিলো।



তোমার বাবার বাড়িটা নামে লিখে দিয়ে ঘরজামাই করার বড় সাধ ছিলো তোমার মায়ের

আর আমাকে তুমি মনিবভক্ত কুকুর বানাতে চেয়েছিলে

অলিক আভিজাত্যের আভাসে বোঝাতে চেয়েছিলে উঁচু তলার মানুষ তোমরা আর তোমাদের পুর্বপুরুষ

ভালোবাসার অন্তরালে বাড়ির কাজের চাকর বানাতে চেয়েছিলে তুমি আমাকে।



বুঝিতাম আমি ভালো করে, বর্ষণমুখর সেইরাত তাই গিয়েছিলো

অফডে অফিসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরহীন,

সকালের স্নান তাই প্রয়োজন হয়নি,

তাই সম্মুখেই রাজভোগ পেয়ে দীর্ঘ ক্ষুধাতুর ভিখেরি হাত তুলে মাগেনি করুণা।



ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াতে গিয়ে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসে প্রায়শ আসে

ঘরজামাই আর মৌমাছি শব্দ দুটি, মনে মনে বলি কি বাঁচানোইনা বেঁচে গেছি!



নিসর্গ : ঢাকা

২১.০৫.২০১৩



























কয়েকটি ক্ষোভ-সংক্ষুদ্ধ বাক্য

শাফিক আফতাব----



আমার ভাগ্য বড় বেশি ভালো

ঘনিষ্ঠতা বাড়ে মেধাবী মানুষের সাথে

সর্বকালের সেরা ভিলেনদের সাথেও বাড় হৃদ্যতা



তাদের থেকে শিখে নিই জীবনের পাঠ।



মেধাবীরা জানেন, পৃথিবীর উত্তরের শেষতম বিন্দুর যে জলাশয়টি আছে ;

তার মধ্যে কত কেজি মাছ পাওয়া যাবে,

সৌরজগতের পথ ইটপাথরের বাঁধাই না রাবারের ?

সাইবেরিয়ায় কতগুলো শীতের পাখি বাংলাদেশে আসে ?

যেমন এক মেধাবী ক্রিকেটবিদের সাথে সেদিন পরিচয় হয়,

তিনি ক্রিকেট খেলোয়াড়দের পৃর্বপরুষের কার কত বিঘা জমি ছিলো ?

কে কাকে ধর্ষণ করে কোথায় গর্ভপাত ঘটায় ?

খেলোয়াড়দর জন্ম তারিখ শুধু না মিনিট সেকেন্ড পর্যন্ত জানা

সেই ভদ্রবাবার মেধাবী পুত্রের।



ভিলেনের কথা যদি বলি,

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার সেক্সপিয়ারের সৃজ্য চরিত্ররা পরাজিত

তাদের নিপুণ অভিনয়শৈলিতে

তারা এমন সুক্ষè পর্যবেক্ষণে অভিনয় করে

মনে হয আরেক ঈশ্বরের সৃষ্টি এই বান্দা।

ইয়াগোর দাদা সেই জারজের পূত্র।



নিসর্গ : ঢাকা

২২.০৫.২০১৩

























দেখতে মনে হয় ধোয়া তুলশিপাতা

শাফিক আফতাব--------------------------------



দেখতে মনে হয় ধোয়া তুলশিপাতা

বিশুদ্ধ গাইয়ের দুধ খেয়ে মানুষ, আর সতী মায়ের সোনার সন্তান ;

অথচ রাতের অন্ধকারে চোরের মাল ভাঙেন,

নগ্ন হন যত্রতত্র, দুষিত বীজে সয়লাব করেন উরুপথের গলি ;





তিনি আমাদের মান্যবর,

কাণ্ডারী,

তাকে স্যালুট করি, করতে হয় ;

ব্যবহার যে বংশের পরিচয় !!



নিসর্গ : ঢাকা

২২.০৫.২০১৩

















































ভোজনের প্রাকমুহূর্ত

শাফিক আফতাব----------



খাবার আগে কেবলই মনে হয়, আমি কী খেলাম, কার খেলাম

নিজের কায়িকের বা বাবার ?

না শ্বশুরের দেওয়া যৌতুকের, না আপনা ব্যবসার না অন্য কারো ?

না কারো পাকাধানে মই দিয়ে, না ইতিমের হক মেরে ?

টেন্ডার বাগালাম না ? ভাউচার সৃজন করলাম ? না চোরের মাল ভাঙলাম ?

না খাদ্যে ভেজাল দিলাম ? না বিদেশে লোক পাঠিয়ে বখসিস পেলাম ?

ঘুষ খেয়েছি ? না বউয়ের হার চুরি করেছি ?

জমির দালালি ? না খেটে খাওয়া মানুষের মতো মাঠে জলে ময়দানে অফিসের কামরায়

বুথ হয়ে কাজ করেছি ?

না খোলানে ভেঙেছি ইট ?

আমি মাস শেষে যে বেতন পেলাম বা বাবার বা আমার জমির যে শষ্য হলো ?

তাই খেলাম কি আমি ? না আজকে কারো অতিথি ছিলাম ?



খাবার আগে কেবলই মনে হয়

এশা মাছি পড়েছে কি এতে, হালাল নামক যে শব্দটি ধর্ম বইয়ের অপরিহার্য অঙ্গ

তার ছোয়া কি প্রতিটি ভাতে আছে ?



এই হিসাব কেউ করেছি একদিন ? করে দেখিনা, দেখি, আমাদের স্বাভাবিক জীবন

নদীর মতো চলে ? না থেমে যায়, না হারাম খাওয়ার অপরাধে পঙ্গু হয় ? অথর্ব পড়ে থাকে ?



নিসর্গ : ঢাকা

২২.০৫.২০১৩



























দালাল

শাফিক আফতাব-------------



পথ খোলা নেই, বদ্ধ পুকুরের জলের মতোন স্থবির পড়ে আছি ;

স্বপ্নরা পাংচার বাসের মতোন পড়ে আছে নিথর পথের ধারে,

প্রতারক আর দালাল চক্রের সক্রিয় সদস্যরা খেলে যায় কানামাছি ;

আদম ব্যবসায়ী আর দস্যূরা চোরের মতো ঘোরে রাতের আঁধারে।



দামী শার্ট আর ছায়াছবির ভিলেনের দামী চশমা লাগানো, চোখে ;

বুকের বোতাম খুলে দিয়েছে কৃত্রিম স্বর্ণের মোটা লকেট-চেইন,

দেশের বাড়িতে গেলে, মসজিদ মন্দিরে দান,সম্মান করে লোকে ;

লোকজন হায় হায় করে ! বলে, ভালো ছেলে, ভালো মাথার ব্রেইন।



থানা পুলিশ তার হাতের মুঠোয়, রাজনৈতিক নেতারা তো বড়ভাই ;

মন্ত্রিএমপিরা তার মামা, নয় তো মামা শ্বশুর ; নয়তো বন্ধুর ঘনিষ্ঠজন,

সরকারি চাকরিটা তো এবার সে দেবেই, একদম চিন্তা নাই ;

এভাবে টাকা বাগিয়ে ক’দিনেই বড়লোক, অমায়িক রাজা মহাজন।



চতুর মানুষের দেশে, আজ চোর ডাকাতের সংখ্যা কমে গেছে ঠিক ;

বেড়েছে ঘুষখোর, গাঁজাখোর, দালাল দস্যু আর মিথ্যে অলিক।



নিসর্গ : ঢাকা

২২.০৫.২০১৩

































তাজমহল হোক, এই কুঁড়েঘর ;

শাফিক আফতাব-----------



এত ভালোবাসা কে বাসিয়াছে, কে সহ্য করিয়াছে এত যন্ত্রণা ;

কার সাধ্য আছে, কার এতো বুকের পাঠা, সম্রাট শাহজাহান ?

বাইশ হাজার শ্রেমিক বিশ বছরে নির্মাণ করিয়াছে স্বর্ণ প্রতীমা ;

কালে কালে বিশ্ব এসে দেখুক, কে কেড়েছিলো মমতাজের মন।



আমি তো সম্রাট শাহজাহান নই, ঈশা খাঁ নই, নই ক্ষুদে নবাব ;

সপ্তামার্যের একটি নিমার্ণ করো যাবো রাজকোষাগারের অর্থে,

আমি লিখতে পারি কয়েক পক্তি কবিতা। আর কমদামী কাবাব

খাওয়াতে পারি একদিন, তবু তা কিছু কিছু বিধি-নিষেধ শর্তে।



মেয়ে তুমি অধিক ভালোবাসা পেয়ে ন্যাং পেতেছো গর্ব-গরিমায় ;

ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হয়েছে, অমূল্য রতন আর পেলব দেহের ;

নগরীর পথ হেটে যাও, মাটি, পিচ কেঁপে যাও, কত রঙ্গভঙ্গিমায় ;

শাহজাহানের যুগ নেই, অত পাগলও কেউ নয়, শাশ্বত প্রেমের।



সময় থাকতে ফিরে এসো , গুছগাছ করো, নিম্নবিত্তের এই ঘর ;

সংসার করো, একটি সন্তান দাও, তাজমহল হোক এই কুঁড়েঘর।



নিসর্গ : ঢাকা

২২.০৫.২০১৩



































রক্তের বাঁধন ছিঁড়ে না কখনো, ছিঁড়লে ছিঁড়ে হৃদয়ের তার

শাফিক আফতাব-------



আমি তো রক্তের বাঁধন ছিঁড়তে তোমাকে ভালোবাসি নাই,

বেসেছি হৃদয়ের উত্তেজনায়, প্রদাহে, আর সময়ের প্রয়োজনে ;

আমি তো তোমার সরকারি স্থায়ী চাকরির মতো কিছু নই,

আমি তোমাকে আপন করতে এসেছি কিছু কবিতায় আর গানে।



রক্তের বাঁধন ছিঁড়ে না কখনো, ছিঁড়লে ছিঁড়ে হৃদয়ের তার ;

ভালোবাসা সে তো আপেক্ষিক একটা বিষয়, সময়ে বদলায় ;

হৃদয়ের খেলা শেষে বলো কে কাছে থাকে, কে আর কাহার,

চাবিতে কোনো কাজ হয় কি? হয়েছে মরিচা ধরা তালায়।



তুমি একান্তই আমার সময়ের দাবি, রক্তের উচ্ছ্বাস ; ফেনা,

অথচ রক্তের বাঁধনের চেয়ে যেন ক্ষণকালের বালির বাঁধ ;

এতো কিছু চুক্তি, কিছু শর্ত, যেন কিছু জায়গা জমি কেনা ;

রক্ত অন্তগুঢ়, কালনিরবধি চলমান, অথচ ভালোবাসা প্রমাদ।



রক্তের বাঁধন ছিঁড়তে তোমাকে ভালোবাসি নাই ;হে প্রিয়তমা ;

সময়ে চলে গেলে ভালোবাসা আহা !শুধুই কঙ্কালের প্রতিমা।



নিসর্গ : ঢাকা

২২.০৫.২০১৩



































গবেষকের রাত্রি

শাফিক আফতাব----------



অন্এুষণায় রাতের আধাঁর গাঢ় হয়ে আসে, চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে ;

তোমাকে ছায়াবাজির মতোন অষ্পষ্ট মনে হয় ;

মনে হয়, কেউ একজন, তুমি ছিলে আমার জীবনে, হৃদয়ের পাশে ;

ছিলো কিছু সম্পর্ক, ফুলের দোকানীর মতোন, ছিলো কিছু অন্বয়।



গাদা গাদা বইয়ের কালো অক্ষর হতে জোনাকীরা সোল্লাসে বেরিয়ে আসে ;

ঘুমের ঘোরে তারা হয়, রাতজাগা ঝিঁঝিঁ পোকা ;

শীতের সাথে যেমন হৃদ্যতা হয়, নতুন বধুঁর সাথে ভালোবেসে ;

অন্ধকারে ভালোবাসা হাতড়ে মরি, নিজকে ঠেকে আস্ত বোকা।



ভালো না বেসে বেসে পতিত জমির মতোন হৃদয় আমার আজ ভীষণ উষর ;

প্রিয়তমার চোখের দিকে তাকানো ভুলে গেছি আজ ;

তাকাতে আজ কেমন যেন লজ্জা করে ভর,

অনুএষণায় হয়েছি অসামাজিক জীব, পুথক হয়েছে আমার সমাজ।



বুথ হয়ে পড়ে থাকি, আবিষ্কার করি নতুন তথ্য, উপাত্ত ;

সমাজ সংসার ভুলে, পৃথিবীর গভীর থেকে বের করে আনি জীবনের তত্ত্ব।



নিসর্গ : ঢাকা

২২.০৫.২০১৩





























বহুদিন সঙ্গমহীন

শাফিক আফতাব--------





রাতের আধাঁর বর্ষার জলে ভিজে গেলো, পুরোনো দিনের বাংলা গানের সুরের ঘ্রাণে

বহুদিন সঙ্গমহীন হৃদয়ে নিয়ে এলো কামনার প্রদাহ

পাঁজরের ভেতর কোথায় যেন ফুল ফুটেছে, যেন ঘিরে দেয়া নাসার্রীর কোণে

এই নিঝুম রাতে আমারে সাজানো ফুলের ডালায় ডাকছে যেন কেহ।



আজ রাতে প্রেয়সী যদি আসে, সঙ্গমে আপনা আসিবে স্বর্গের শেষতম পুলক

তার আবেশে রাতের আধাঁর ঝুরঝুর ফুলের মতো রেণু ঝরাবে মদনবাবু

তার আতিথেয়তায় নেচে উঠবে ভুলোকদ্যুলোক

নিসর্গের নিজর্নে সে আজ ফেলাবে সফেদ স্বচ্ছ আবহমান তাঁবু।



প্রিয়তমা দেহের কানায় কানায় তুলে দাও রজনীগন্ধা আর গোলাপের দল

আতর আর চন্দন মাখো, আর দাও নরম লোশনের তরল

নগ্ন অথচ শিল্পের নান্দনিক শৈলিতে লজ্জাহীন প্রতিমায় তুমি

ভরে দাও বহুদিনের সঙ্গমহীন ক্ষুধাতুর হাভাতের এই মানুষের নিঃস্ব অবনী।



বহুদিন সঙ্গমহীন আমি আজ ক্যাডেট অফিসারের ট্রেনিংত্তোর কঙ্কালসার দেহ

তোমার জন্য নিথর রাতে বসে আছি,্ এসো, খুলে ধরো, দূরে পালাক মেহ।



নিসর্গ : ঢাকা

২২.০৫.২০১৩































অতিবর্ষণের সকালে/

(আমি আজ তোমার সাহেব নই, স্বামী নই, আমি আজ আবহমান এক ভৃত্য)

শাফিক আফতাব--------



অতিবর্ষণের সকালে আজ কোনো অফিস নয়, কলেজ নয়, নয় বিশ্ববিদ্যালয় ;

ভূনা খিচুড়ির ভাঁপে, আর ইলিশ ভূনার ঘ্রাণে মাত করে তুলো মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাট,

সকালের নাস্তা সেরে এই ঈষৎ হিমে পাতলা নক্সীকাঁথা মুড়িয়ে ঘুমের ভেলায়,

উষ্ণ শ্বাসে, বৃষ্টির ঝাঁপটা মিলনে এসো, আপসোস করুক দেখে পোষা ক্যাট।



বৃষ্টির দিনে মিলনে যদি আসে ঠাণ্ডা মাথার এক সোনার প্রতিমা সন্তান ;

আমরা তাকে এই দেশের এক বাধ্যানুগত আমলা বানাবো হে প্রিয়তমা,

মিলনের আগে, পরে আর অন্তবর্তীকালীন সময়ে তুমি করবে শুধু শুদ্ধস্নান,

আমিও আজ ঘুষহীন, আর অন্যের অর্থে খাবো না একমুঠো ভাতের লোকমা।



অতিবর্ষণের সকালে এসো, আমরা রচনা করি মধ্যযুগের বৈষ্ণব্য পদাবলী ;

চণ্ডিদাসের মতোন এসো মিলনেও আমরা কাঁদি বিচ্ছেদ ভাবিয়া,

আজকের মোহন আবেশে সবুজ কামরায় জ্বলুক গোলডিমের নীল দীপাবলি

শপথ করি, এসো, পরপারেও আমরা দুজন মিলিত হবো, যাই যদি মরিয়া।



অতিবর্ষণের সকালে এসো, পেখম মেলো ময়ূরের মতোন নাচো ফঙিংনৃত্য ;

আমি আজ তোমার সাহেব নই, স্বামী নই, আমি আজ আবহমান এক ভৃত্য।

নিসর্গ: ঢাকা

২৩.০৫.২০১৩









































বর্ষণদিনে

শাফিক আফতাব=========



বর্ষণদিনে আজ কোথাও যাবোনা, আজ সারাদিন তোমাকে নিয়ে মথুরা যাবো

চণ্ডিদাসের রাধা হবে তুমি আর আমি পাগল কানু

হৃদয়ের উত্তাপে বহুদিনের সঞ্চিত প্রেম আর ভালোবাসা বর্ষাবো

আমরা লুকোবো গহন পুলকিত রাজ্যে আজ ; মেঘের আড়ালে যেমন ভানু।



পুষ্প ঘ্রাণে প্রাণে ভাসবে বৈষ্ণব্য কবিদের প্রিয়বিহনের বেদনা

বেদনার পুলকে তুমি আমি বহুদিন উপোস থাকা আবেগে আজ ;

মিটাবো পুরোনো জীবনের যত কামক্রোধ আকাক্সক্ষা আর লেনাদেনা,

আমরা আজ মাটির গহনে ডুবে যাবো, ব্যর্থ আজ আমাদের দেশ আর সমাজ।



আজ এই টাইলস ফ্ল্যাটের কামারায় কেউ নেই আমরা দুজন নব-দম্পতি

আর আছে আমাদের কল্পনার ফুটফুটে একটি কচি সতেজ সন্তান ;

যে এইমাত্র মিলনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ঈশ্বরের সভায়, আসবে সম্প্রতি ;

আমরা দুজন খোলা দেহে, পাতলা নক্সীকাথার ভেতর ভাসায়েছি সাম্পান।



আজকের মিলনে সুসন্তান আসিবে, মেধাবী ; আর অন্তত ঘুষখোর হবেনা ;

আজ কোনো কাজ নেই এই বর্ষণদিনে, এসো, মন খুলে হে আমার প্রিয়তমা।

নিসর্গ : ঢাকা

২৩.০৫.২০১৩



























কাদাজলময় ভূমি চষে ফলাই ধান আর সন্তান।

শাফিক আফতাব------------



অরণী জানি তুমি ফিরবেনা, এই আজকের অতিশিক্ষিত যুগে শর্ট কাপড়ে আবৃত হয়ে

তুমি মাত করে ঘুরেফিরবে বাণিজ্যিক শহর,

তোমার দম্ভ আর দাপটে নেউল কুকুরের মতো মাথা লুকোবে গ্রামের মেধাবী ছাত্র ;

তবে শহরের বখাটেরা পিছু নিবে তোমার ;

তুমি বেশ্যার বিকল্প এক ‘আধুনিকা’ নাম ধরে শীর্ষ আমলার গামলা ভরাবে রাতভর।



অরণী, কালো কমপ্লিট আর দামী টাইটের নটের নিপুণ বাঁধন থাকলেই মানুষ মানুষ হয় না,

সুরম্য প্রাসাদ থাকলেই মানুষ মানবিক হয় না,

সুন্দর সুশ্রী হলেই মানুষের মন হয় না পবিত্র জলডুমুরের মতো শুদ্ধ,

তুমি কাকে বিশ্বাস করো, কোন আধুনিকতায় আর আভিজাত্যে গা ভাসালে অরণী ?

ওরাতো উচ্ছৃংখল মধ্যবিত্ত; পরাজীবী উদ্ভিদ ; উৎপাদনে ওদের মাথা ব্যথা নেই।



ওরা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দুঃখিনী বর্ণমালা ভুলে

ভুল ইংরেজি বাক্য ছুঁড়ে মারে,

বাংলাকে উচ্চারণ করে ইংরেজির মতো,

ব্যবহার্য ইংরেজি শব্দের উচ্চারণে একশত শব্দের নব্বইটি ভুল করে কথিত আধুনিকরা,

আর বাসে ট্রেনে প্লেনে ইংরেজি বুলি !

চলনে ইংরেজি স্টাইলের ছেঁড়াফাঁড়া, ময়লা পোশাক, প্যান্টের উরুতে বর্ষিত বীর্যের দাগ,

আর ওরা আজ আধুনিক,

তুমি ফিরে আসো অরণী, না হয় ছায়াব্লাউজহীন একটিমাত্র কমদামী শাড়িতে ফিরে এসো

তাতেই অনেক সুন্দর লাগবে তোমাকে

এই ভুল উচ্চারণের আর ছেঁড়াফাঁড়া আধুনিকতা নিয়ে বাঙালি ঐতিহ্যকে হত্যা করোনা।



মৃত্তিকার গন্ধ মাখো, দেহে, স্তনে, উরু কিংবা জঙ্ঘায়, বকুলফুলের মালা গাঁথো বর্ষার রাতে ;

ছিঁড়েফাঁড়া কাঁথা বিছাও, গালভরে পান খাও, আর আমি এক আবহমান কৃষক লাঙলের মুঠি ধরি

বর্ষার রাতে। কাদাজলময় ভূমি চষে ফলাই ধান আর সন্তান।



নিসর্গ : ঢাকা

২৩.০৫.২০১৩



















উত্তর জনপদের আঞ্চলিক ভাষার কাব্য

শাফিক আফতাব-------



ও বাহে শোনেক, ক’ মুই কোনোদিন তোক মুক তুলে কথা কইছম ;

বেয়াদবি করছম কোনোদিন তোর সাথে, তোর মাইয়ার দিকে তাকাছম ?

তাইলে কিসক তোমরা হামার সাথে নাগেন, দুরনাম কন ;

ডাঙগায়া মারি ফ্যালাইনে হামার হালের বকন।



তোমার বাপোক কয়্যয়া দেখেন, কত উপকার করছে হামার বাপ ;

আকালের সময়ত দিছে ধান চাউউল, দাওয়াত দিয়া খাওয়াইছে ;

দেখেননা কত কষ্ট পায়া মারা গেলো তোমার বাপ, করছিলো কত পাপ !

তাতো তোমার হিনজ্যাড় হয়না, খালি লাগেন মাইনষ্যের পাশে।



তোর বউয়ের সাথে মানুষ খারাপ কাম করি গ্যালো, তুই কিছুই কলু না,

আর ফটফট করিস হামার সাতে ;

হামার পুকুরত তুই বিষ ঢালি দিছলু না ?

যেখানত খাইছ আর হাগিস সেই পাতে।



শোনেক শালার পুত, মাতা নিছু করি যা, পিছনে তাকাইছনা !

ভালো হয়্যা যা, নইলে তোর টেরপা চোখ করি দেইম কানা।



নিসর্গ : ঢাকা

২৩০.০৫.২০১৩





























অবশেষে আমার কিছু হলোনা

শাফিক আফতাব---------



একদিন তিস্তার প্রথম শ্রেণির চেয়ার কোচে

ঝাঁকড়া চুলভর্তি এই যুবক আমি

বিখ্যাত সাংবাদিক হ’বার এক অদম্য আশা নিয়ে পাড়ি

জমাই এই শহরে।

সংবাদপত্রগুলোতে ঘুরতে থাকি

নাবালক আর কচি বলে শ্রম আইনের ধারায় বাদ পড়ি।

বেশ ক’বার।

কবিতার থুলি নিয়ে ঘুরি বাংলাবাজারের টাকু প্রকাশকের কামরায়।

কোথাও জুত করতে পারিনা।

সিন্ধান্ত নিই : লেখাপড়া শেষ করে প্রথম শ্রেনীর ক্ষমতাশালী আমলা হতে হবে।

লেখাপড়া শেষে করে হন্য হয়ে ঘুরি, অফিস-আদালত, আর পিএসসির ভাইভা বোর্ড

কয়েকটি ভাইভা ফেস করে অবশেষে একটি স্নাতক কলেজে অধ্যাপনার চাকরি জুটে।

পত্রিকাগুলোতে এবার খোঁজ নিতে যাই, এবার ;

শুনতে পাই, ‘বড়বেশী দেরি করে ফেলেছেন, আমরা ইয়ং চাই’

ক্যাডেট কলেজের ভাইভার মতো খাই হালকা আদুরে গলাধাক্কা।



ফিরে তাকাই মেট্রোপলিটন সজ্জিত শরীরের দিকে ;

দেখি ঘুষখাওয়া চাকুরের মতোন বড় বেশি বেড়ে গেছে মেদ তিলোত্তমা এই শহরের।

ভূমি দস্যূদের দৌরাত্মে অজস্র বিষ ফুটনি উরু জঙ্ঘা আর নিটোল নরম শরীরে তার।

কত আদম হলো কোটি টাকার মালিক

কালোবাজারি হলো আলিশান ফ্ল্যাটের কুদ্দস সাহেব।

তোষামোদিরা পেলে ক্লাশ ওয়ান চেয়ারের তুলতুলে অনুভব,

অথচ আমার কিছুই হলো না

ক্লাশের ডায়াসে দাঁড়াবার আগে মাথায় চিরুনি লাাগালে দুইএকটি কাশফুললতা

ঝরে পড়ে আজ।

আমি নিজেই হতে চলেছি সেই বাংলা বাজারের টাকু প্রকাশক ;

বিলুপ্ত পত্রিকার প্রকাশক আর সম্পাদকের মতো হতাশারা গ্রাস করছে আমার তুলতুলে গাল।



অবশেষে আমার কিছু হলো না

কচি শ্রমিক বলে বয়সের অভাবে একদিন ফিরে আসি আমার সাধের চাকরি থেকে।

প্রাপ্ত বয়স নিয়ে শুনে আসি বড় বেশি দেরি করে ফেলেছি।

এ জীবন আমার এমনই গেলো

জাতীয় দৈনিকে আমার দেশ মাত করা কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো না,

বিখ্যাত কবিতাগুলো ফাইলবন্দি থাকলো দীর্ঘদিন,





এই শহরের ছিঁছকে চোরটি হলো অন্যতম শিল্পপতি,

আমি শুধু প্রেম আর মানবতার কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে থেকে রচনা করে গেলাম

অনাধুনিক কিছু সেকেলে পদাবলি।

যেগুলো সারারাত মনের আনন্দে খেয়ে যায় উঁইদম্পতি।



বিখ্যাত সাংবাদিক হবার আশা ছেড়ে দিয়ে, কবিতার ছন্দ নিয়ে গবেষণা বাদ দিয়ে

আমি এখন ল্যাপটটে লেকচার শিট বানাই,

যদি আমার কোনো ছাত্র বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে মৃত স্যারকে নিয়ে কোনো দীর্ঘ প্রতিবেদন লেখে!



নিসর্গ : ঢাকা

২৪.০৫.২০১৩



























































॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥





ভাতারখাকি

শাফিক আফাতব-----------



মাইয়্যে তুই ক’ কী এ্যামন মোর বয়স হলো, ভাতার হারানু ;

চ্যাংড়ি কালে বুড়ি হনু মুই, মোর কপালের দোষ, মুই ভাতারখাকি ;

চারটি বাচ্চা নিয়ে এ্যালা মই কটাই যাম, না হয় বাপের বাড়িত গেনু,

বাপ মোর কত্ দিন খাবার দিবে, তারে‌্য নাই প্যাটের খোরাকি।



এ্যাই গেরামত হামাক কেটা দুমুঠো ভাত দেবে, খালি কবে দুননাম,

আইতের ব্যালা, খুপরির ভেতর দিয়্যা দ্যাখবে হামার খালি গাও,

সুজোগ পাইল্যে ঘরত ঢুকি যায়্যা ঘুমত ধরবে হামার দুধের বাথান ;

তাত্যেই দুননাম কয়, যদি খয়বর মেম্বারের সাথে করি দুটো আও।



দুননামক ভয় পায়া হামার কী হবে, হামার বাচত্যে হবেনা ?,

তোমরায় কয়, এ্যাই মাছুম বাচ্চাগুলা ফ্যালে মুই কুটি কাইন বসিম,

এ্যাই ছোটো বাছ্চাটা দেখো ক্যামন নিষ্পাপ, নুলা, পাগল আর কানা

কার কাছে মুই ছোটো হই্যম, বুজান ক’ কার নুনুত তেল মলিম।



আল্লার দুনিয়াত কত জায়গা আছে, বুজান গো আছে কত কাম,

বোচকা কাধে স্বামীর কবরত যায়া তরিপন কয় এখন এ্যালা যাম।



নিসর্গ : ঢাকা

২৪.০৫.২০১৩





























আঁধার আমাদের লজ্জা ঢেকে দিলো

শাফিক আফতাব-----------



যৌনাভিজ্ঞ মধ্য বয়সী মহিলার মতোন রাতের আঁধার

গাঢ় হয়ে এলো। শীতরাতের মাছের কষাণের ঝোলের মতো

পুলকরা খামা হয়ে এলো। ঝিঁঝিঁ পোকাড়া, তার

স্বরে গণসঙ্গীতের মতোন স্কুল মাঠ মুখরিত করলো অবিরত।



তোমার উত্তাপে আমি গলতে থাকলাম ; বরফ যেমন গলে

পানি হয়ে যায়। মোম গলে যেমন ফুরিয়ে যায়।

তোমার স্পশের্, নিবেদনে আমি তেমন গলে গলে

জোড়া ¯তনের করিডোরে মুখ গুঁজে হারালাম ঘুমের সীমায়।



এই স্তব্ধতায় মনে হলো যেন আদিম শাশ্বত নারীর

সাথে আমি মিলিত হলাম। নারী যথাক্রমে ভালোবাসা, যৌনতৃপ্তি

অতঃপর শুশ্রƒষা অবশেষে আবহমান শিশুর মতো আদরের ভীড়

দিয়ে সোনায় আর রুপোর কাঠি বুলিয়ে ঘুমালো: গভীর সম্প্রতি



নারী, আজকের আঁধার তোমার প্রশ্বাসে শ্বাসে হলো কামনাপ্রবণ ;

আমরা বস্ত্রহীন, অথচ আঁধার আমাদের লজ্জা ঢেকে করলো চুম্বন।



নিসর্গ : ঢাকা

২৬.০৫.২০১৩







































লুডু ভাই, হ্যাংগার ক’টি ?

শাফিক আফতাব---------



লুডু ভাই, কেমন আছেন আপনি ? ভালো তো ?

শুনেছি এই শহরেই থাকেন। সংসারি হয়েছেন।

তবে সেই মেয়েটি না। প্রায়শ যে মেসে আসতো,

এক সময় তার নালা ডোবা ভরাটের দায়িত্ব আপনি নিয়েছিলেন,

তার সাথে নাকি বিচ্ছেদ হয়েছে ?



শুনেছি, বাবার মৃত্যুর পর আপনি ভালো হয়ে গেছেন,

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। টুপি সর্বদা মাথায় থাকে।

চুরুট গাঁজাও ছেড়েছেন। কমদামী বিড়িও খান না।

হারাম খান না আর।



তো লুডু ভাই, যদি পারেন,

আমার হ্যাংগার ক’টি দিয়ে যাবেন,

যদি লজ্জা পান, তাহলে কুরিয়ার করুন,

কেনো না লুডু ভাই, চাষার সন্তানের জন্য বিশ বছর আগে

একশত টাকার দাম ছিলো,

মায়ের আঁচলের গিঁটে বাঁধা টাকা দিয়ে আমি ওগুলো কিনেছিলাম

আর আমার মা ঐ টাকা মুঠের চাল জমিয়ে জমিয়ে সঞ্চয় করেছিলেন ;



আমার কষ্ট হয় লুডু ভাই, হ্যাংগার ক’টির জন্য

যদি পারেন, কুরিয়ার করবেন।



হ্যাংগার ক’টির জন্য দাবি থাকলো লুডু ভাই........





ভালো থাকুন। প্রভূ আপনার মঙ্গল করুন।



নিসর্গ : ঢাকা

২৬.০৫.২০১৩





বেলা যে পড়ে গেছে সখী !

শাফিক আফতাব---------



বেলা যে পড়ে গেছে সখী !

জলকে চলে আর কী হবে বলো ?



পুরোনো সেই সুরে,

কেউ ডাকেনা বহুদূরে,

কোথায় সে প্রেম, চোখ ছলোছলো ;

জলকে চলে আর কী হবে বলো ?



সময়ের তাপে আমি ভুলে গেছি সব,

কিছু নেই আমার আর আমি যেন শব ;

আমি যে প্রাণহীন আর হয়ে গেছি নুলো Ñ

জলকে চলে আর কী হবে বলো ?



বেলা যে পড়ে গেছে সখী, বেলা পড়ে গেছে !

পথের ভিখিরি আমি আজ তোমা ভালোবেসে !

জীবনটাই আজ আমার ভীষণ অগোছালো Ñ

জলকে চলে সখী, কী হবে বলো ?



বেলা যে পড়ে গেছে সখী, বেলা পড়ে গেছে !



[সূত্র : কবিগুরুর বধুঁ কবিতা পড়ে ]



নিসর্গ: ঢাকা

২৬.০৫.২০১৩























বেশ্যার কোনো পুংলিঙ্গ নেই

শাফিক আফতাব---------



ছোটবেলায়, যাত্রাগানের নায়িকা দেখলে বেশ্যা মনে হতো ;

স্টেশনের পাশে ঘুপশি খুপরীতে যৌনকর্মীদের বেশ্যা মনে হতো ;

মেট্রোতে, ফুটপাত, ট্রেন-ট্রাক আর রিকসার গ্যারেজে Ñ

কানা গলির ফাঁকে ;

কিংবা ফ্লাইওভার রাস্তায় Ñ

কিংবা ব্রীজের রেলিং-এ ভ্রাম্যমান যৌনকর্মী দেখলে বেশ্যা মনে হতো ;

এবং মুখ দিয়ে দুফোটো থুথু আপনাই ঝরে পড়তো Ñ ঘৃণায় ;



এখন আর ঝরেনা Ñ

কেনো না বেশ্যার কোনো পুংলিঙ্গ নেই।

পতিতার যেমন নেই।.............



পুংকেশর স্ত্রী কেশরে মিলিত হয়ে জাইগোট সৃষ্টি করে।

সেই জাইগোটের ভার একার কেনো হবে মহিলার, বেশ্যার ?



নিসর্গ : ঢাকা

২৬.০৫.২০১৩





































চয়নের চর্যা

শাফিক আফতাব----------



চয়ন শেয়ার ধসে তোর ধস নেমেছিলো

অধিক বয়সে বিয়ে না করায় মানুষ বলেছিলো ; নপুংশক,

কিলিক বাজিতে তোর একটি নাম ছিলো

মানুষ বলতো তুই ওয়ান মাার্কা ঠক।



কেমন আছিস এখন ?

বিয়ে সাদি করেছিস ? খাস কী সারিবাদি সালসা ?

আগের মতোই খেলিস নিয়ে মানুষের মন ?

এখনো জমাস বাংলা মদ আর গাঁজার জলসা ?



মানুষের টাকা মারতে তোর জুড়ি ছিলোনা,

পরচর্চা ছিলো তোর অন্যতম গবেষণার কাজ,

মানুষের অর্থে খেয়েছিলি কমলা, মিষ্টি, ছানা ;

নষ্ট করছিলি আমাদের এই পবিত্র সংসার সমাজ।



চয়ন, বয়স তোর ; তাই ভাই ভালো হয়ে যা ;

একদম এক ওয়াক্ত নামাজ আর করবি না কাযা।



নিসর্গ : ঢাকা

২৭.০৫.২০১৩

































দাদি

শাফিক আফতাব-------



ও বাহে মোর যেদিন জন্ম হয়, সেদিন বিয়ায় দুটো হালের গাই,

কী সুন্দর হলপকা গাইয়ের বাছুর আর মোর দুটি কচি পা,

মোর দাদী কইছে, সোনার চান্দের মতো মোর মুখ রোশনাই ;

একদিন ব’লে আইতের মদ্যে এক জ্বীন মোক দিছে থাপা।



তারপর দাদী মোর বাড়ি বন্দ করে, মোক পানি পড়া খাওয়ায়,

পীরের দরগায় মানত করে, আর সিন্নি দ্যায় মসজিদে জুম্মায় ;

তারপরও একদিন এক জ্বীন আসি, দাদীক কয় দে মোর ছাওয়াল,

দাদী কইছে মাফ করি দে বইন মোর, খাইছনা মোর কপাল ;



এ্যাকটাই ধন মোর, মোর যাদুর ধন, মোর আন্দার ঘরের আলো ;

দাদী মোর দাদাক ভুলি গেলো মোক পায়া,

চান্দের আইতে দাদী মোর গীত গাইলো, নাচলো

স্কুলত দিয়ে আসলো মোক দাদী নিজে হাঁটি যায়া।



দাদী মোর মারা গেইছে, দাদীক মোনে হয়, বাহে চাচা খুঁড়া ;

দাদীর কোলত মুই এখনো বসি আছোম, যোদিও হইছম বুড়া।



নিসর্গ : ঢাকা

২৭.০৫.২০১৩

































পাতান

শাফিক আফতাব-----------



কুদ্দুসের মা শোন, কেনে তুই এতো চিন্তা করিস,

ঘুমা তো, আইত বাইড়তেছে, তার আগত মোর মুক কর দেহখান,

দেখোম, ক্যামন কইর‌্যা তুই লাগাইছিস মলম,

এতো গরম ক্যা তোর শরীল আজ, কেউ ভাঙি দিসে মরিষ।



গোসসা করিস না বো-উ, আগ করিস না, একটু ঠাণ্ডা হও,

এ্যাই যে ইদ আইসতেছে, তোকে দেইম বেলাউজ আর পেডিকোট ;

হামরা গরীব মাইনষ্যের পোলা, খায়া থাকি জায়ৌ

হামার ইসকুল নাই, কলেজ নাই, নাই কাচারী কোট।



ঘুষ হামরা কই পামো, মাংনা খাওয়া কই খামো, আছে উপায় বল ?

হামরা মাঠে খাটি, চষি মাটি ; ফলাই পাট আর ধান,

বিক্রি করিয়া য়াশিল হয় না আসল

আমরা সমাজের কেউ না, পলের আগুন আর ধানের পাতান।



দুখ করিস না, বিবি কুলসুম, ইগলা হামার কপালের লেখন,

হামরা না খাইয়া থাকি, সুখে থাউক, ঐ রাজার নন্দন।



নিসর্গ : ঢাকা

২৭.০৫.২০১৩

































ধর্মের কুঁড়া নদী ছিলো, নববধুঁর ভরা বুক ছিলো

[কবি সরকার আমিনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে]

শাফিক আফতাব--------



এইখানে ধর্মের কুঁড়া নদী ছিলো Ñ টলটল স্রোতে কলকল বয়ে যেতো ;

দু’তীরে ছিলো উর্বর জনবসতি, ভোলা মাঝির খরায় ঝাপঁতো পুঁটি খলিসাÑ

কই’রা গেরিলা যোদ্ধার মতো কার্তিকের ঝড়ে উজোতো ;

ভোর বেলা ভরে দিয়ে যেতো ভোলা দা আমাদের মাছের মালসা।



সকালের সাদা রোদ, ধানের ছড়া ছড়া শীষ, আর উচ্ছল মাছের ঝাঁক ;

দুটো দুধের গাইয়ের সের সের দুধ, আর নববধুঁর ভরা গোল বুক Ñ

সবমিলে ঘরগিরস্তির আহা কেমন আবহমান অমৃতের স্বাদ !

এসব দেখে ধর্মের কুঁড়া নদী দিয়ে যেতো আমাদের ভালোবাসার আস্বাদ।



শুক্র আর সোমবারে ধর্মের কুঁড়া নদীর তীরে বসতো মাঠের হাট ;

দূর দূরান্ত থেকে আসতো হাটুরে, ব্যগে ভর্তি সদাই মুখে, ভাটিয়ালি গান ;

খরার মাছ আর বাজারের নতুন খাবার খেয়ে বধু আর শাশুড়ির বাড়তো ঠাঁট Ñ

রাতের আধাঁরে তারা ভরাতো সারাদিনের কর্মক্লান্ত পরাণ।



ধর্মের কুঁড়া নদী নেই, বধুঁর ভরা বুক নেই, নেই গাইয়ের সের সের দুধ ;

মানুষের মানবতা নেই, গিরস্তি নেই, তারা রুগ্ন পঙ্গু, বাঁচে খেয়ে ওষুধ।



নিসর্গ : ঢাকা

২৭.০৫.২০১৩





































অভিভাষণ

শাফিক আফতাব-----





প্রিয়দর্শকশ্রোতা, প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমি আপনাদের কিছু অর্ন্তগত

বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবো।

এই জন্য।

যেমন আপনারা এই মহতী সভায় যারা উপস্থিত হয়েছে, তারা

সবাই, সতী নারীর পতি,

নারী গুলো কোনোদিন মুখ তুলেও তাকায়নি কারো দিকে।

অথচ আপনারা ছেলেবেলায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢের ঢের প্রেম করেছেন

আপনাদের প্রথমরাতেই রক্তপাতের চিৎকার,

অথচ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সেই প্রেমিকাদের আপনারাই বিবাহ করেছেন।



প্রিয় সুধী

আপনাারা অবশ্যই আপনাদের প্রিয়তমা স্ত্রীদের বিশ্বাস করেন,

এই উদার যুগে এস্ওে আপনারা সেই বিশ্বাস থেকে এতটুকু বিচলিত হন নাই,

এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ না দিে পারা যায় না।

অথচ পত্রিকায় যে পরকীয়ার কাহিনী আমরা পড়ি

সেগুলো কিন্তু আপনাদের জীবনেরই বয়ান।



প্রিয় দশর্ক, এই আজকের সভায় আপনাদের উপস্থিতি

এতে আমরা মুগ্ধ,

কিন্তু সভায় আসার আগে ঘরের তালা শক্ত করে লেগে এসেছেন তো ?

যদি আবার ! বলা যায় না তো ?































গ্রামজ পদাবলি

শাফিক আফতাব------------



ভোরে থমথমে দিঘির জলে বধুঁ খোলা দেহে অবগাহনে ঝেঁড়ে ফেলে উচ্ছিষ্ট আবেশ ;

কৃষকের ঘুম থেকে উঠতে প্রায়শ দেরি হয়, এই ফাঁকে বধুঁ রাধে চিকন চালের ভাত,

লাউডুগি লতা দিয়ে টাকি মাছের ছানা, গরম ভাতের ভাঁপে ভরে যায় বধুঁর মনের প্রপাত Ñ

আবহমান কৃষক ঘুম থেকে ওঠে সাদা রোদে দাওয়ায় বসে খায়, মনে হয় তার বিদেশ।



কৃষক মাঠে যায়, দুপরাবধি চষে সে মাঠ, নরম মাটির তলায় সে রোপিবে গুচ্ছ গুচ্ছ ধান ;

চোখের সম্মুখে তার ধানের ছড়া ছড়া শীষ ভাসে, সেই সাথে ভাসে কচি সন্তানের মুখ,

সেই সাথে ভাসে তার গত রাতের আবছা আঁধারের ভেতরে নবীন বধুঁর সোনারং বুক Ñ

কী এক ফুরফুরে, মেজাজে, পুলকিত ইমেজে হাঁটে মেঠোপথ, চোখে দেখে সে ফুলের বাগান।



খোয়ারের দুধেল গাই তাকে দেখে হাম্বা স্বরে বুঝায় তার খুব ক্ষিদে পেয়েছে এখন ;

কচি ঘাস আর গুড়া আর ভাত ছাড়া আজ তার দুধ নামবে না জেনে দেয় চোখের ইশারায়,

নতুন যে সন্তান বিয়োবে নব বধুঁর, সেও বাচঁবেনা দুধ ছাড়া তার আপন বাছুরের মতোন ।

জমিতে ছড়া ছড়া ধান, গাভীর দুধের বাথান আর বধুঁর ভরা গোলবুক : কৃষক যেন অমরায়



এই সব মিলে। দিনে আর রাতে চষে সে কঠিন কঠোর আর কোমল হাতে ফলায় শুধু ধান ;

এই নিয়ে বাঙালি মোরা, বাংলা ভাষা আমাদের, বহু বছরের ঐতিহ্য আমাদের আবহমান।



নিসর্গ : ঢাকা

২৮.০৫.২০১৩





























বুবু বনাম আপা

শাফিক আফতাব-------



ও বাহে চাচা, শোনেক বাঁ, শহরত গেুনু মোর ভাই থাকে সেখানত

সাথত মোর বড় বইন ছিলো, তাকে মুই কনু ‘ওঁ বুবু কেমন লাগছে শহর’ ?

ওমনি ভাবি সাব আিসয়া মোক কইলো, :‘এ্যাই মিয়া চেঞ্চ করতে হবে খাসলত

বুবুকে বলতে হবে, আপা, নয়তো আপি : যত্তো এসেছে ইতর’।



মোবাইল ফোনোত কনু, ‘ও বাজান, কেমুন আছেন, কী খবর বাড়ির ?

ভাবিসাব মোরে আসিয়া চটকনা দিয়ে কইলো, ‘এ্যাই মিয়া বাজান আবার কী’?

‘আমার বলি ড্যাড,’ মুইতো কবার পাম না, বোঝোম না না কথা ভাবির,

তারপরত মুই টেবিলত বসিয়া ভাত খাওয়ার নাচ্চোম, মোর কয় ‘খান কী’ ?



কও তো চাচা, তোমরায় কয়, ছেলে মানুষক মানুষ কি খানকি কয় ?

তা হোক বেডেয়া আসার সময় মুই কনু তাহলে ভাবি ‘যাই, ;

ভাবি চোখ রাঙাইয়া কয়, ‘আরে গর্দভ যাই না আসি কয়’

মুই নব্বই কওয়াতো, ভাবি মোক কয় ;‘ এ শালা ইতরের বাচ্চাই’।



বুবুক মুই কেনে আপা কইম, কইলে মোর বুবু পর হয়্যা যাবেনা ?

বাবাকে কেনে মুই ড্যাড কইম কইলে সে মদ গাঁজা খাবেনা ?



নিসর্গ : ঢাকা

২৭.০৫.২০১৩































মফস্বল শহরের দিনগুলি

শাফিক আফতাব---------



এই যে ব্রীজ রোড, ডেভিট কোম্পানি পাড়া, ভিএইড রোড

বিসিকের বিস্তীর্ণ এলাকা, মাস্টার পাড়ার চিকোন গলি

ঘাঘটের ঘোলা জল, বিশাল পাটের গুদা, কৃষিকলোনীর খামার

জেলা পরিষদ অফিসের বৃদ্ধ আম্রবৃক্ষ কিছু

মুন্সিপাড়ার শহীদ মিনার,

আর সবুজাভ দালানের জেসিকার পেলব তনু ;

এই নিয়ে আমার মফস্বল শহরে

প্রথম যৌবনের দিনগুলি : আহা ! কী যে হাওয়ার মতোন ফুরফুরে

গোলাপ ঘ্রাণের মতো ঝরঝরে,

শীতরাতের সফেদ লেপের নিচের মিষ্টি আবেশের

প্রবলতা, কিংবা সাদারোদ মাখা কিশোরীর কাচা স্তনের সুবাস।



ফনিক্স সাইকেলের প্যাটেলে হাওয়ার দুর্দান্ত গতি,

এলো চুলে বোশেখ বাতাসের উদ্ভাস,

বর্ধিত অঙ্গে পৃথিবীর ভূমি কর্ষণের শানিত ফলা,

এই নিয়ে কেটে গেছে আমার যৌবনের কত বেলা ; অবেলা।



মাসিক ম্যাগাজিনে কবিতা প্রকাশের পর আহা সে কী যে অনুভূতি !

প্রথম প্রেমের মতোন আনন্দ যেন Ñ

যেন প্রথম প্রেমিকার নরম হাত ছোঁয়ানোর দুর্লভ মুহুর্ত।



রসায়ন স্যারের সফেদ আস্তর দালানের সে কী যে প্রাচীন গন্ধ,

স্যারের লেকচারে বহুজল মগ্ন দিঘির গভীরে থাকা মাছের সন্ধান,

সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ স্যারের কনিষ্ঠ কন্যার সেই শহর কাঁপানো প্রেম

আর তুমি জেসিকা আমার । প্লাবন ভাইয়ের রাতজাগা গানের তামিল

তার ব্যর্থ প্রেমের বিরহ প্লাবিত পদাবলি।



কত সন্তানের জননী এখন তুমি ?

তোমার পেয়ালা ভরানো ভালোবাসাগুলো আগের মতোন

সোনারং রোদে জ্বলে ?

ঘাঘটের পাড়ে একদিনও কি যাওনা আর, নানা ছলে.........



নিসর্গ : ঢাকা

২৭.০৫.২০১৩



আবহমান-৩

শাফিক আফতাব------------



পুবে বিশাল কান্দর, খোয়ারে একটি বকোন আর ষাড় মুখোমুখি জাবর কাটে,

আর চোখে চোখে কথা কয়, বকোন হাম্বা স্বরে নাচায় তার উপদ্রুত সীমানা ;

ষাড় লেজ নেড়ে শুঁকে যায় তার কামনাপ্রবণ এলাকা ; জিহ্বায় চেটে

সে এক পশলা প্রসাব করে, আর বকোনের সেই স্থানে তখন ছোটে ফেনা।



কৃষক বধু পল আর গুড়ো দিতে এসে দেখে তাদের হৃদ্যতার বহর,

তারও ব্লাউজহীন শাড়ীর নিচে নেচে ওঠে লকলকে স্তনের বাট ;

শীরশীর বাতাসেরা কৃষাণীর চুলে আঁচলে খেয়ে যায় পুলকের সর ;

আলগোছে সন্তর্পণে তারও খুলে যায় অন্তর্গত গোপণ এক্সক্লুসিভ কপাট।



আজ গরুগুলো গোয়ালে তুলে কৃষাণী ভাত রাঁধে, সাথে শিং মাছের ঝোল ;

কাস্তের মতো বাঁকা চাঁদ আকাশে ডুবে গেলে কৃষাণীও তুলে ঝড়ের তাণ্ডব,

শীতরাতের মাঝরাতে গুঁদরী কাঁথার ভেতর দুজনার ওঠে আবহমান রোল ;

নিশিরাত যায়, বাতাসে সুবাসের ঘ্রাণ, আহা পাগল যেন দু’পাণ্ডব।



শীতসকাল বকোন আর কৃষাণী যথা সময়ে প্রসব করে ফুলের জাতক ;

সোনারোদ তাদের চোখে আলো দিয়ে যায়, আহা কী খুশি শাশ্বত কৃষক!



নিসর্গ : ঢাকা

২৯.০৫.২০১৩



































সুখে নেড়ে ওঠে বধুর নাকের নোলক।

শাফিক আফতাব------------



ভোরের পুকুর খলত খলত করে, কে ছুপ ছুপ স্নান সারে ?

রাতের আবেশমাখা উচ্ছিষ্ট পুলকদের ধুয়ে মিশে দেয় পুকুরের জলে,

হংসের মতোন মিলোনোত্তর ডুবে ডুবে চুলে ঝাঁট মাওে ;

স্তনের স্পর্শ লেগে পুকুরের জল আহা আপনাই বয় ছলোছল ছলে।



আবছা আঁধারে ভেজা কাপড়ে পত পত শব্দে লজ্জাতুরা বধু,

গন্তর্পণে ঘরে ঢোকে পড়ে, পাছে কেউ দেখে ফেলে, টের পায় রাতের কাহিনী !

ভোরের আলো ফোটার আগেই তার কপালে আবার সিঁধু ;

কে বলিবে আজ রাতে তেপান্তরের মাঠ চষে গেছে তাদের নিশিরজনী।



সকালের সাদা রোদে আনন্দ আর পুলক লাগা দেহে ভাত রাঁধে সে,

উন্মূন মনে পুরিপুষ্ট বুকে বধুর আহা বেঁচে থাকার কী যে আনন্দ তার ,

পেটের সন্তান জন্মিবে আগামী শীতের শেষে পৌষ মাসে,

আনন্দে বিহবল সে, উল্লাসে আত্মা হারা, দেহ মনে আনন্দ অপার।



পুকুর, গাভি, বৃক্ষ আর মাঠে ছড়া ছড়া ধান আর ঘরে শানিত ফলার কৃষক

সব মিলে আবহমান বাংলার রূপ, সুখে নেড়ে ওঠে বধুর নাকের নোলক।



নিসর্গ : ঢাকা

৩০.০৫.২০১৩

































পল গুলো শুঁকোতে দিয়েছে জৈষ্ঠের রোদে, ভেজা ভ্যাপসা গন্ধে চারপাশে

হঠাৎ বৃষ্টিতে এলো, পলগুলো জড়ো করছে কৃষক বধু, করতেই ব্লাউজহীন দেহ তার

ভিজে ছোপ ছোপ, পাতলা শাড়ীর নিচে উঁিক দিতেছে একজোড়া পুলকের খাবার

ভেজা চুলে বৃষ্টির ফোঁটায় কী মধুর আর সুন্দর লাগছে বধুরে এই মধু মাসে।



ঘরে তুলে এবার পাচবিঘা জমির একশত মন ধান, গাভী দুটো দেয় পাচসের দুধ

একবিঘা জমির আছে একটি গভীর দিধি, তাতে আছে রুই কাতলা আর বিদেশী মাগুর

তাদেও প্রয়োজন পড়েনা কখনো ঘুষ, চুরি, টেন্ডার বাগানো কিংবা চক্রবৃদ্ধির সুদ

চালে লাউডুগি, উঠোনের পেঁপে, রবি শস্যের সবজি, সব মিলে ঘরগিরস্তি মধুর।



রাতের বেলা মিলনে কৃষানীর গা থেকে বেুরুয়, গাভীর চেনার গন্ধ

তবু তা যেন পৃথিবীর সব ফুলের থেকে ঘ্রাণময় ঠেকে ন্যাংটি পড়া কৃষকের

আকাশে বাঁকা চাঁদ দেখে, কৃষাণীর বুক ধরে কৃষক বলে, আহা কেমুন আনন্দ

চল আমরা শুতে যাই, আজ দেখিস রাখিব না গত রাতের কোনো জের।



















































এই শ্রাবণদিনে

শাফিক আফতাব.........



এই শ্রাবণদিনে আসো, ভালোবাসাবাসি গানে প্রাণে জ্বালাই লোবানÑ

সুবাসের ঢলে গা এলাই নির্জন তটিনীর মতোন স্রোতে

অফিস আদালত সব ছেড়ে আজ হারাই নীলে। আনন্দ অফুরান

ধারণ করে ঘুরে আসি পৃথিবীর সবচে পুলকিত প্রপাতে।



ঈষৎ আবেশে সুবাস মেখে চোখে চুলে স্পর্শে বয়ে আনি কামনারঢল :

মসূন অনুভবে কলরবে তোমাকে উপহার দেই একটি গাঢ় চুমো ;

তোমাকে উপহার দেই স্বর্গের আনন্দের এক বাটি সফেদ তরলÑ

তোমার সারিয়ে দেই, এতদিনে ছিলো যে প্রেমের ব্যামো।



কোনো কাজ নয় শ্রাবণদিনে আজ শুধু ভালোবাসি

আজ শুধু তুমি আমি নীল নীল আকাশের গভীরে অবগাহন খেলা

আজ শুধু তুমি আমি একান্ত নিবিড় পাশাপশি

আজ বহুদূর যাবো, সমুদ্রের অতলে, ্ ও আমার নাবিলা।



এই শ্রাবণদিনে আসো, বাহিরের সংসার তুচ্ছ করে ঘর-সংসারে

আমাকে ভরিয়ে দাও, তুমি ভরিয়ে যাও, আনন্দ পরাণের ভেতরে।

২৮.০৭.২০১৩



















































এই শ্রাবণদিনে











মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.