বর্তমান ২১শে ফেব্রুয়ারী এবং আমরা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

বছর ঘুরে আবার ২১শে ফেব্রুয়ারী এল। আবার মানুষ সাদা-কাল জামা-কাপড় পরে শহীদ মিনার আর বইমলায় ঘুরে বেড়াবে। অনেকে নিজের ভাষার প্রতি গভীর ভালবাসায় গালে বিভিন্ন রঙে বর্ণমালা লিখবে, কেউবা দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা ব্যান্ডেনার মত পড়বে। যদিও এদের অনেকেই হয়ত "আমার ভইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী" কার লেখা বলতে পারবে না। বইমেলায় সপরিবারে আগত অনেককেই তাদের শিশু সন্তানকে শিক্ষামূলক বই কিনে দিতে দেখা যাবে। কিন্ত এরাই আবার গর্ব করে বলবে "আমার ছেলে তো ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে বাংলা ভাল বোঝে না"। আমার বাসার পাশের বিল্ডিং এর কোন ফ্লাটে সম্ভবত বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। তারা এলাকা কাঁপিয়ে হিন্দি গান বাঁজাচ্ছে, হয়ত সারারাতই চলবে। তারাও হয়ত আগামীকাল শহীদ মিনারে যাবে। আগামীকাল সকল টিভি চ্যানেলে "অমর একুশে" নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। আবার ঠিক তার পরের দিনই ঐ সব চ্যানেলে অনেক VJ কে দেখা যাবে অর্ধেক ইংলিশ আর অর্ধেক বিকৃত বাংলা উচ্চারণে অনুষ্ঠান উপস্হাপনা করতে। নিজের ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া শিশু সন্তানের মুখে "Mommy, plz gimme a glass of water" শুনে অনেক মা-ই আবেগে গদগদ হবে, তার হয়ত মনে-ই পড়বে না যে তার সন্তান বাংলা বর্ণমালা চেনে না। তবুও আমরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ২১শে ফেব্রুযারী পালন করব। কারণ ২১শে ফেব্রুযারী এর মত বছরের কিছু বিশেষ দিনেই শুধু আমরা বাংলা ভাষা আর বাংলা সংস্কৃতিকে স্মরণ করি।



এমন বাস্তবতায়ও স্বপ্ন দেখি "মোদের গরব মোদের আশা আমরি বাংলা ভাষা" সারা বছরই আবৃত্তি করা হবে, ফেব্রুয়ারী ছাড়াও বাকি ১১ মাসেও শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে গর্বে আর শ্রদ্ধায় মানুষের মন ভরে উঠবে, FM রেডিওতে অতি আধুনিক RJ দের বিকৃত বাংলা ঊচ্চারণ শুনে মেজাজ খারাপ করতে হবে না, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া সকল ছোট্ট শিশুরা বাংলা বর্ণমালা জানবে, তারা জানবে তারা ইউরোপ-আমেরিকায় জন্ম নেয়নি, তারা জানবে এদেশের গর্ব করার মত ইতিহাস আর সংস্কৃতি আছে। একদিন হয়ত বাঙালী শিখবে যে একুশে ফেব্রুয়ারী শুধু পালন করার জিনিস নয়, একুশে ফেব্রুয়ারী অন্তরে লালন করতে হয়, আচার-অনুষ্ঠান আর কৃষ্টিতে ধারণ করতে হয়।



সূর্যগ্রহণের সময় যেমন সূর্যের আলো গ্রাস পায় তেমন এখন চলছে গ্রহণের কাল যাতে আমাদের সংস্কৃতি আর মূল্যবোধ ধ্বংস হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলদের খুব দরকার ছিল এমন সময়ে।

০ টি +২/-০