কামলাচরিত 01

১৩ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:২০

রফিক সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মনে করার চেষ্টা করল আজ কি বার। যখন বুঝল আজ শুক্রবার নয় সে তখন ঘুম ভুলে চোখ খুলে হাই তুলে বিছানা থেকে নামল, অফিসে যেতে হবে। বাসষ্ট্যান্ডে পৌছে রফিক দেখল তার গন্তব্যগামী বাস ছাড়া মোটামুটি সব রুটের বাস আছে। দীর্ঘ সময় তীর্থের কাকের মত নিস্পলক অপেক্ষার পর বিধাতার অসীম কৃপায় সে তার গন্তব্যগামী একটি যাত্রী পরিপূর্ণ বাসের দেখা পেল। বাসষ্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষারত সকল যাত্রী হঠাৎ সর্বহারা মানুষের মত বাসটির দিকে দৌড় শুরু করায় সে অবাক বিস্ময়ে ভাবল, এই বাসষ্ট্যান্ডের সব যাত্রীর গন্তব্যই কি তার অফিসের আশেপাশে? এই মুহূর্তে এই বাসে উঠতে পারাটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য মনে করে ছোটবেলায় রেসলিং এ দেখা ধাক্কা দেয়ার সকল কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে কিছুক্ষণের মধ্যে সে নিজেকে বাসের ভেতর আবিষ্কার করল এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ হিসেবে মেনে নিল। দেশের গুরুত্বপূর্ণ (ভি.আই.পি.) ব্যক্তিবর্গের চলাচলের সুবিধার্থে প্রায় ৩০ মিনিট ব্যাপী রাস্তা বন্ধ থাকাকালীন সময়ে সে মেজাজ বিলা করে ভাবল ভি.আই.পি. ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা এবং সময় যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হয় তবে তারা আকাশপথে চলাচল করলেই তো পারে।

প্রায় ২০ মিনিট দেরিতে অফিসে পৌছে দুরুদুরু বুকে বেচারা নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল এবং বসের আসন্ন ঝাড়ির কথা মাথায় রেখে প্রাণপণে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে লাগল। বিকালবেলা তার মনে পড়ল আজ সন্ধ্যায় তার এক বন্ধুর গায়ে হলুদ এবং তার সেখানে যাওয়ার কথা। সে তার বসের রুমে গেল বসকে জানাতে যে আজ সে অফিস ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বের হতে চায়। কিন্ত বসের কাছে কথাটা বলার আগেই বস তাকে আরো বেশ কিছু কাজ ধরিয়ে দিলেন। এই কাজগুলো আগামীকাল করলে চলবে কিনা জিজ্ঞাসা করায় বস কাজগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে যে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন তাতে রফিকের মনে হল আজকের মধ্যে এই কাজগুলো শেষ না করলে তার বসের চাকরি তো যাবেই, এমনকি গোটা কোম্পানিকেই হয়ত লালবাতি জ্বালাতে হবে। সে মনে মনে ভাবল এত গুরুত্বপূর্ণ কাজই যদি হবে তাহলে তাকে সেটা সকালে কেন দেয়া হল না? রাগে তার ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠল কিন্ত কিছু করার নাই।

সব কাজ শেষ করে রাত ১০টায় রফিক যখন অফিস থেকে বের হল তখন গোটা এলাকায় শুধু সে আর রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা একটা কাল কুকুর ছাড়া আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আবার আগামীকাল এই একই নাটক মঞ্চস্ত হবে। এইভাবেই চলবে পরের দিন, তার পরের দিন, দিনের পর দিন। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবল নিজের জন্য সামান্য সময় না পেলেও মাস শেষে বেশ কিছু টাকা তো পাচ্ছে, এটাই বা কম কিসের।
আহা কি যে সুখ!!

১ টি +০/-০