![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাথার ভিতর অসংখ্য পোকাদের বসবাস। সুখ পোকা, দুখ পোকা, স্বপ্ন পোকা...। আমিও তো আসলে একটা পোকা। পোকার জীবন-যাপন আমার...
পর্ব-১
'শুধু ছয় আর ছয়। চোখ বুজলেই দেখি ছয় আর ছয়।' কামরুর ছয় ছয় চিৎকারে ভোর হলো। সে নাকি রাত্রে ঘুমাতে পারেনি। স্বপ্নে শুধু ছয় পিটিয়েছে। এই প্রথমবারের মতো এতদিনের ওয়াটার বয় থেকে প্রমোশন পেয়ে মুল একাদশে খেলার সুয়োগ পেয়েছে। সেই উত্তেজনায় তার ঘুম হারাম! ভোরে ঘুম ভাঙানোয় কামরুর উপর বিরক্ত। কিন্তু কি আর করার। জীবনে প্রথমবারের মতো মুল একাদশে খেলার সুযোগ পেয়েছে বেচারা। তাই ওকে উল্টা উৎসাহ দিলাম। দেখিয়ে দিতে হবে হ্যান ত্যান বলে এবার কামরুকে বলি, ' দেখ তো ইউনুছ কতদুর?' ইউনুছ ঢাকা থেকে রাত্রে রওনা দিছে। হিসেব মতে এতক্ষণে পিএসটিউতে পৌছে যাবার কথা। কামরু ইউনুছকে ফোন দিল। ইউনুছ জানায় সে লেবুখালি খালি ঘাটে এসে বসে আছে। বাইরে প্রচন্ড কুয়াশা তাই ফেরি চলাচল আপাতত বন্ধ।
ইউনুছ রুমে এসে পৌছালো সাড়ে আটটার দিকে। ততক্ষণে কামরু তার টিমমেটদের সাথে মাঠে শরীর কসরত করতে চলে গেছে। ইউনুছ আসতেই মামাকে ঠেলা দি, ' কই মামা। সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল তোমার পুতুল বাহিনীর কোন সাড়াশব্দ তো পাওয়া যায় না। নাস্তার কতদূর? পেট আর দেরি সহে না।' মামা বলল, ' আমি দেখছি।' নাহ মামার বান্ধবী মেয়ে হিসেবে ভালই। মামা ফোন হাতে নিতেই মামার ফোনে রিং বেজে উঠল। মামা ফোন রিসিভ করে পুতুল পুতুল করতে করতে করিডোরে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ বাদে মামা নাস্তা সংক্রান্ত সব রহস্যের ইতি টেনে দিল এককথায় ' সকাল থেকেই কারেন্ট নাই।' এখানে রান্না হয় ইলেক্ট্রীক হিটারে। যদিও হলে হিটার ব্যবহার নিষেধ। কিন্তু প্রতিদিন ডায়নিংয়ের সুস্বাদু খাবারে সকলেরই রুচি ধরে গেছে। তাই নিষেধের ফাক গলিয়েই প্রতিটি রুমে অবাধে শোভা পাচেছ হিটার। কারেন্ট নাই। তাই হিটারও জ্বলে নাই। নাস্তাও তৈরি হয় নাই। তবে মামা আমাদের আশ্বাস দিল, পুতুল বলেছে সে আমাদের তিনজনের সকালের নাস্তা বাইরে করাবে।
মামা আমাদের আগেই পুতুলের সাথে দেখা করতে চলে গেল। পরে আমি আর ইউনুছ হল থেকে বের হলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে মামা তার বান্ধবীদের সাথে আমার আর ইউনুছের আনুষ্ঠানিক পরিচয় করিয়ে দিল। এ হচ্ছে পুতুল আর এই এ্যানি। কিছুক্ষণবাদে যোগ হলো মামার আরেক বান্ধবী নুপুর।
প্রাথমিক পরিচয় পর্ব শেষে আমরা এক নম্বর গেটের সামনে একটা হোটেলে ঢুকলাম সকালের নাস্তার জন্য। পুতুল আমাদের সকলের নাস্তার অর্ডার দিল। ইউনুছ বলল, ' এক মিনিট। আমি একটু আসছি।' 'আমাদের ভাবির মিস্টি কন্ঠস্বর সকাল থেকে শোনা হয়নি তো। তাই আমাদের ইউনুছ ভাই আমাদের ভাবির কন্ঠস্বর শুনতে গেল।' মামার সহজ সরল উক্তি। ইউনুছ টেবিলে ফিরতেই আমার ফোন বাসা থেকে। বাসা থেকে জিজ্ঞেস করে আমরা এখন কুয়াকাটা যাচিছ কিনা। বাসায় আসলে তেমনই বলা ছিল। আজ আমরা কুয়াকাটা যাব। কুয়াকাটা ভ্রমণের পরিকল্পনা আমাদের আছে ঠিকই কিন্তু আজ নয়। মামাদের বান্ধবীগোর সাথে পরিচয় পর্বটা আগে ভাল করে সেরে নিই। আমি বাসায় বললাম, ' না মানে আজকে আকাশে মেঘ তো তাই আমরা আগামীকাল যাব ঠিক করেছি।' আমি কিন্তু বাসায় একদম মিথ্যা বলি নাই। আকাশে সেদিন মেঘ ছিল বইকি। মেঘের রঙটা সাদা শুধু এইটুকুই বাসায় জানানো হয় নাই। মামা সবার মোবাইলে কথা বলছে দেখে দুঃখীগলায় বলে, 'সবারই ফোন করবার মানুষ আছে। শুধু আমারই কেউ খোঁজ করে না।' বলতে বলতেই মামার মোবাইলে রিং বেজে উঠল। মামার আব্বাজান। মামার বান্ধবীরা খিলখিল করে হেসে দিল। মামা অমায়িক গলায় ফোন রিসিভ করে, ' হ্যালো। আসাসালামু আলাইকুম, আব্বু।........'
মনে বেশ সুখ সুখ লাগছে। এই প্রথম মেয়েদের পয়সায় নাস্তা করলাম। মামার বান্ধবীরা আসলেই খুব ভাল। নাস্তা শেষে ক্যাম্পাস চত্বরে আমরা যখন ফিরি ততক্ষণে কামরুদের ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে। কামরুরা প্রথমে ব্যাটিং। ক্যাম্পাসে পা দিতেই কামরুদের দলের প্রথম উইকেটের পতন। নুপুর লাফ দিয়ে উঠল,' দেখছ, আমি আসছি বলেই উইকেট পড়ছে।' পুতুলের গলায় ঝাঝ, ' এতো লাফানোর কি আছে খেলায় তো দুই একটা উইকেট পড়বেই।' নুপুরের লাফালাফি বন্ধ হয়ে গেল। পুতুলের গলার ঝাঝও কমে গেল। কারণ পরের প্লেয়ার নেমেই স্কয়ার কাট। চারররর।
খেলার মাঠে দর্শকে পূর্ণ। তারপরও মাঠের বাইরে গ্যালারিতে বসে থাকা তিনজনকে আলাদা করে চোখে পরে। পুতুল বলল, ' চল। মুক্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দি।' আমরা জানতাম মুক্তা বরিশালে। সে যে ক্যাম্পাসে আসছে জানতাম না। পুতুল আমাদের মাঠ আলো করে থাকা তিনবান্ধবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। মুক্তা এবং তার দুই বান্ধবী। (মুক্তা কে সে গল্প আরেকদিন হবে।) মুক্তা হয়তো ভদ্রতার খাতিরেই জিজ্ঞেস করেছিল, ' ও কামরুর ফ্রেন্ড। ...তারপর, কামরু তো ম্যাচে। সকালের নাস্তা হইছে?' মামা নির্দ্বিধায় বলে দিল ,'না। কামরু ম্যাচে তো। তাই আসলে...।' মুক্তা অবাক, ' কী আশ্চর্য। এখনও নাস্তা হই নাই। আমিও নাস্তা করি নাই। চল আমার সাথে।' আমরা আমন্ত্রণ ফেলি কি করে। আবারও মুক্তা এবং তার বান্ধবীদের সাথে চললাম সকালের দ্বিতীয় নাস্তা করতে। মুক্তা হয়তো ভাবেনি এভাবে আমরা এক কথায় রাজি হয়ে যাব। সে ইতস্তত করতে করতে আমাদের নিয়ে কিছুক্ষণ আগে নাস্তা করলাম যেই হোটেলে সেই হোটেলেই ঢুকল।
মামার তো ডোন্ট মাইন্ড পেট। যতই খাবার তার পেটে ঢুকাও না কেন তার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আমার আর ইউনুছরে দিয়ে তা হবে না। এখন আবার বলাও যায় না যে এই কিছুক্ষণ আগে আমরা সকালের নাস্তা করেছি। মামা ফুলপ্লেট পরেটা, ডিমের ওমলেট আর সবজি ভাজি নিলো। আমরা দুইজনা গরম গরম সিঙ্গারা আর ডিমের ওমলেট নিয়াই সন্তুষ্ট থাকলাম।
পরে ভেবেছি মুক্তাকে এইভাবে প্রেসার দেওয়া ঠিক হয় নাই। মামাতো একরকম জোর করেই মুক্তার বাসায় আমাদের আমন্ত্রণ নিয়ে নিল। আমরা আগামীকাল মুক্তাদের বাসায় যাচিছ। কনফার্ম। বেচারীতো আর না করতে পারে না। কিছুক্ষণ পরে তাকে আর মাঠে খুঁজে পাওয়া যায় না। কই যে গেল? এরপর আমরা যতক্ষণ ক্যাম্পাসে ছিলাম তার আর দেখা পাই নাই।
আমি আর ইউনুছ আবিস্কার করলাম শুধু মুক্তা নয় মামাকে এবং তার বান্ধবীদেরও খুঁজে পাওয়া যাচেছ না। কি হলো? এই টানটান উত্তেজনাকর খেলা ফেলে চোখের নিমিষে তারা কই গেল? খেলা আসলেই জমে উঠেছে। কামরু তো জটিল পারফর্ম করল। ছয় হয়ে যাচিছল প্রায়। অল্পের জন্য ব্যাট মিস করে বল সুইং করে স্ট্যাম্পে লেগে যায়। ততক্ষণে কামরুর ব্যক্তিগত স্কোর জিরো। কি অসাধারণ পারফর্ম না? আমরা তুমুল করতালি দিয়ে কামরুকে অভিনন্দন করলাম। মামাকেও খুঁজে পাওয়া গেল মাঠের এককোনায় উইথ হিজ বান্ধবী। খেলার আর প্রাণ নাই। তাই মামার বান্ধবীরা আমাদের নিয়া ক্যাম্পাস পরিভ্রমণে বের হল।
বিকালে আমাদের পিঠা খাবার নিমন্ত্রণ ছিল। এইবার আমরা কামরুকেও সাথে পেলাম। কামরু তার এক ভাবীর সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল। পুতুল ভাবীকে বলে,' এই সেই।' ব্যাপারটা যে কি বুঝিলাম না। 'এই সেই' অর্থ কি? সে যাকগা। ভাবী আমাদের পেস্টি কেক খাওয়াইল। তার আগে পুতুলদের সৌজন্যে আমরা সকলে শীতের ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠা খেলাম। বিকালের নাস্তা শেষে আমরা ভ্রমনে বের হলাম। পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে গ্রাম গ্রাম ভাব। তাই শহরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে গ্রামের শোভিত প্রকৃতি, মামার বান্ধবীদের সঙ্গ, অনেকদিন পর আমাদের চারবন্ধুর মিলন সব মিলিয়ে দারুন এক বিকাল কাটল।
সন্ধ্যা হবার আগেই পুতুলরা আমাদের থেকে বিদায় নিল। কারণ সন্ধ্যায় ওদের হলে সকলকে রিপোর্ট করতে হবে। আমরা চারজনা আরও কিছুক্ষণ সবুজের মাঝে হাটলাম। তারপর সন্ধ্যার রক্তিম আলো শেষে যখন চারিদিকে রাত্রি নেমে এল আমরা ফিরে এলাম পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের গা ঘেষে গড়ে ওঠা স্থানীয় বাজারে। এখানকার রসগোল্লা আর স্পন্জের মিস্টির স্বাদ অতুলনীয়। নস্টালজিয়া আমাকে মনে করিয়ে দেয় ছেলেবেলায় প্রতি হাটবারে বাবার সাথে হাটে যেতাম রসগোল্লা খাবার লোভে। অনেকদিন পর হারিয়ে যাওয়া সেই মিস্টির স্বাদ আজ আবারও যেন ফিরে পেলাম।
মিস্টি খাওয়া শেষে মামা আমাদের জন্য চিপস, বিস্কুট আরও অনেককিছুই কিনল। আমরা তো তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু শুনি না। এগুলো সবই মামার পটুয়াখালীর বান্ধবীদের জন্য। মামা আমাদের সান্তনা স্বরুপ সবাইকের প্রাণ চাটনি কিনে দিল তাহাতেই আমরা খুশি। বাহ মামা, বাহ।
জায়গাটা আবছা অন্ধকার। এই অন্ধকারের মাঝেই আমরা মামার সাথে চাঁদ সুলতানা হলের সামনে ঘুর ঘুর করছি। কারণ মামা পুতুলকে ফোন দিয়েছে। সে হলের গেস্ট রুমে আসবে। মামা তার হাতে রাত্রের খাবার প্যাকেটটা দিয়ে দিবে। আমরা মামাকে বোঝায় কি দরকার এত কষ্ট করার। রাত দুপুরে মেয়েদের ডিস্টার্ব করার। আমরা তো আছিই তোমার খাবার প্যাকেট ভ্যানিশ করার। কিন্তু কে শোনে কার কথা। পুতুলের আসতে কোন কারণে দেরি হচ্ছিল। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে যায়। আমি চাঁদ সুলতানা হলের দেয়ালের গায়ে লাগানো বেঞ্চে বসে পড়ি। কামরু আর ইউনুছও আমাকে অনুসরন করে। মামা গতকালের স্মৃতিচারণ করে। এই বেঞ্চে বসেই নাকি সে গতকাল বিকালে তার বান্ধবীদের সাথে সময় কাটিয়েছে। হালকা হালকা ঝোপে ঢাকা সবুজ বনানীতে ঘেরা বেঞ্চগুলো বালক-বালিকাদের সময় কাটানোর জন্য যাকে বলে যথার্থ অতি উত্তম জায়গা। কামরুর যা কথা, এখানে দিনের বেলায় নাকি বেঞ্চে জাযগা পেতে রীতিমতো সিরিয়াল পড়ে যায়।
মামা এবং তার বান্ধবীর গল্প আসলে শেষ হবার নয়। এভাবে পৃষ্টার পর পৃষ্টার লিখে ফেলা যায়। তাই আজ আর লিখছি না। এই পর্যন্তই থাকলো। আশাকরি মামার বান্ধবীদের নিয়ে পরবর্তীতে আরও লেখা হবে । তবে শেষ করবার আগে আরেকটা খবর জানিয়ে শেষ করি। কামরুর গ্রাডুয়েশন কমপ্লিট হতে চলল। ওর গ্রাডুয়েশন কমপ্লিট হবার আগে আগে আরেকবার পটুয়াখালী থেকে ঘুরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সবাই মিলে আরেকবার যাওয়া যায় কিনা ভাবছি। দেখি মামার বান্ধবীরা কি বলে!javascript:void(0);
পুনশ্চ: অনুমতি না পাওয়ায় ছদ্ম নামে মামার বান্ধবীদের উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৬:৫৫
আলোকিত পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪১
ফিরোজ-২ বলেছেন: জটিল কাহিনি +++
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৪৪
লুথা বলেছেন: ++++++++++++++++++++++++++++++++++++