যখন তুমি স্পর্শের বাইরে -২ :

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৩

সন্ধা নেমে আসছে । কিশোর বাসের কাউন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন পর পর চোখে মুখে ধূলো-বালি উপভোগ করছে !!! বনশ্রী এখন ধূলোমাখা ঢাকার প্রতীক। “ডাস্ট এলার্জি” থাকা বনশ্রীতে বসবাসরত মানুষের দুর্ভোগের কথা ভাবছে কিশোর। সে অসীম সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। এদেশ শৃঙ্খলিত হয়ে আছে “ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ আর অসৎ ব্যবসায়ী” – এই দুইয়ে গড়া একটি দুষ্টচক্রের হাতে। তার চিন্তায় ছেদ পড়ল বাসের হর্নের শব্দে। কেন যেন এই বাসে যেতে ইচ্ছে করছে না তার, মনে হচ্ছে কেউ তাকে খুঁজছে এখানে। পরের বাসে যাবে সিন্ধান্ত নিল। ধূলো উড়িয়ে বাস চলে গেল, কিশোর বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেলল। চোখ খুলেই দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে “মায়া”!!!



মায়া আজ লাল শাড়ি পরে এসেছে, হাতে লাল-সবুজ চুড়ি, কপালে লাল টিপ, খোঁপায় লাল রঙের ফুল আর খালি পায়ে রুপার নুপুর। মায়া এসেই বললো, মুখটাকে এমন পেঁচার মত করে রেখেছো কেন? দেশ নিয়ে তোমার চিন্তা না করলেও চলবে। তুমি শুধু তোমাকে আর আমাকে নিয়ে ভাববে!!!

কিশোর বলল, আমি যদি তোমার মতো স্বার্থপর হতে পারতাম, তাহলে বেশ ভাল হতো।

মায়া একটু আহত হলেও বুঝতে না দিয়ে বলল, এই দেখো তোমার জন্য কি নিয়ে এসেছি , বলেই মায়া একটি বেহেশতী ফুল বাড়িয়ে দিলো কিশোরের দিকে। ফুল পেয়ে কিশোরের মুখে ফুটে উঠল নিস্পাপ হাসি। তারা দুজন হাঁটতে শুরু করল খালি পায়ে।



মায়াকে খুব সুন্দর লাগছে হাতির ঝিলের হালকা আলোয়। মায়া যেন প্রকৃতিরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। বেহেশতী বাতাস বইছে। কিশোরের মনে হচ্ছে সে স্বর্গে বসে আছে।

মায়াঃ তুমি বিয়ে করছ না কেন? আমাকে এখনো ভুলতে পারোনি, নাকি প্রিয়াকে???

কিশোরঃ বিয়ে ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকী আছে, মায়া। দোয়া করো আমার জন্য।

মায়াঃ বলতো তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ??? তোমার জন্য আমার খুব চিন্তা হয় ......

মায়া কিশোরের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল.........

কিশোরঃ কাঁদে না মায়া ... আমিও তো একদিন তোমার কাছে চলে আসব ...... আমরা সবাই ওপারের বাসিন্দা হব। আর আমার আর এরশাদ সাহেবের টার্গেট এখন একটাই ...... হাহাহা .........।

মায়াঃ কিশোর আমি তোমার এই প্রাণখোলা হাসিকে ভালবাসি । কিশোর ....কিশোর ......কিশোর ..... আমি আইসক্রীম খাব ......। কিশোর রাস্তা পার হয়ে দুটি আইসক্রীম নিয়ে আসল।

দুজন আইসক্রীম খাচ্ছে ...... এই সময় মায়া বলল আমার যেতে হবে .....

কিশোরঃ আবার কবে দেখা হবে ????

মায়াঃ বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না ...... খুব দ্রুত আমি আবার আসব!!! ভাল থেকো ......

কিশোরঃ আমি আসব তোমার সাথে ......???

মায়াঃ আজ আসার দরকার নেই ...... একটি রহস্যময় হাসি হেসে দুই পায়ের নুপুরে শব্দ তুলে মায়া চলে গেল তার না ফেরার দেশে......।।

কিশোর ঘাসের উপর শুয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ......

একটু দূর থেকে শাহ আব্দুল করিমের একটি গানের সুর ভেসে আসছে ......

“কেন পিরীতি বাড়াইলা রে বন্ধু ...... ছেড়ে যাইবা যদি .........

কেন পিরীতি বাড়াইলা রে বন্ধু ...... ছেড়ে যাইবা যদি .........”



আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হল ......কিশোর প্রকৃতির সাথে একাত্ন হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল....।(চলবে)

কিশোর

০৩/০৪/২০১৩

০ টি +০/-০