![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা সময় ছিলো, অনেক গল্প ছিলো বলার। নিজের ঘরের চাবি হারিয়ে ফেলে ঘরে ঢুকতে না পারার গল্প অথবা মন খারাপ করা কোন এক বিষন্ন সন্ধেতে শহরের কাছে পোষ-মানা ওই নদীটার কাছে গিয়ে বসে থাকবার গল্প কিংবা ছবি। সবই। এখন আর ইচ্ছে করে না সেইসব । মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই । কিন্তু, এখনো পড়ে আছে সে সেই খোয়াই নদীর তীরে, যেখানে নৌকো নেই, ভাসছে না কোন ভেলা। ওপারটা বড্ড কাছে । দেখা যায় সব । যেনো বসে আছে, কেউ আসবে। অথবা, কারও অপেক্ষাতেও নেই। আসলে তাড়া নেই সম্ভবত। কোথাও যাবার নেই। সন্ধ্যেবেলা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মাঝে ভেজা শীতল ঘাসে পা দুটো মেলে দিয়ে বসে থাকি । দূরে, তৈরি হচ্ছে এরকম উঁচু ভবনগুলোর উপরে একগাদা ক্রেন। যেন জীবন্ত, একটা আরেকটার সাথে কাটাকুটি খেলছে। আসলে কোন গল্প নেই। শরীর খারাপ কোন গল্প হতে পারে না। শুয়ে থেকে ছাদের দিকে চেয়ে থাকা কোন গল্প হতে পারে না। অলস বসে থেকে যান্ত্রিক ও লোকদেখানো ফেইসবুকে নাটকের সাজানো চরিত্রগুলোর স্ট্যাটাস মেসেজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা নিয়ে কোন গল্প লেখা যায় না। আমাকে নিয়ে আমি কোন গল্প লিখতে পারি না। অনুভূতিহীন এইসব দিনেও আমি তীব্রভাবে বিষাদময়তায় আক্রান্ত হই, দম বন্ধ হয়ে ওঠে। কানে গান লাগিয়ে, অনেক পুরনো কোন ফিকশন বইয়ে নিজের চেহারা আড়াল করে, ফাঁকা ট্রেনের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে অন্ধকার দেখি। স্মৃতির আয়নায় উপহাস করে আমার গত কাল । একান্তই নিজের গল্প। যে গল্প আমি আর লিখতে পারি না। আমাকে পোড়ায় না রাষ্ট্রের সমরবাহিনীর যুদ্ধ অথবা বিদ্রোহ কিংবা নাশকতা, দেশ অথবা সময়ের পতন আমার কানে এসে থেমে যায়, মস্তিষ্কে কোন অনুভূতির তৈরি করে না। কান আমি বন্ধ করে রাখি, চোখে পড়ে থাকি ঠুলি। আগুন লেগেছে, বড়োজোর নিজের স্বজন আগুনের চারপাশে থাকার সম্ভাবনা না থাকলে আগ্রহ হারাই সে খবরে। কী দরকার যেচে পড়ে হাইপারটেনশন তৈরি করার? প্রতি মুহূর্তে স্বার্থপর অযোগ্য অমানুষ হয়ে উঠি। প্রতি ক্ষণে ভালো মানুষ না হতে পারার ব্যর্থতা আমাকে বিদ্ধ করে। আমি অন্ধকার হেঁটে গিয়ে অন্ধ হয়ে উঠি, কূপমন্ডুক হওয়ার পথে আরেকটু এগিয়ে যাই। কিন্তু এতকিছুর মাঝে, কিছু না লিখতে পারার কষ্টটাই বড্ড তীব্র হয়ে ওঠে।
আজ একটা দুখী মেয়ের গল্প বলি? গল্পটা একটা রুপকথার গল্প, কারন আমার কাছে এটা রুপকথা মনে হয়। আমি ক্ষুদ্র লেখক, আমার গল্প বাস্তবধর্মী না রুপকথা, তা নির্ধারন করার ক্ষমতা আমার আছে। তবে রুপকথার মেয়েরা বড় বুদ্ধিমান হয়। ঘুঁটে কুড়োনী মেয়েই হোক কিংবা রাজকন্যা কিরণমালা। কিন্তু আমি কি করে যেন একটা বোকা মেয়ের গল্প লিখে ফেললাম।
যেহেতু এটা আধুনিক রুপকথার গল্প, তাই গল্পের শেষে শুভ সমাপ্তি হবে কিনা, তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবোনা। আমার গল্পটা রাজকন্যার জীবনের গল্প, তবে আজকাল অহরহ রাজপুত্রদের সাথেও এমনটা হচ্ছে। আমি বরং প্রার্থনা করি, আমার গল্পের পড়বে যেসব রাজপুত্র রাজকন্যারা, তাদের জীবনে যেন এমন রুপকথা তৈরী না হয়।
~~~~~
আজ আমি অনেক খুশি। কারণটা শুনলে আপনাদেরও খুব মজা লাগবে। আজ আমাকে দেখতে আসবে, মানে বিয়ের জন্য আরকি। আমি জানি আমাকে সবাই বেহায়া ভাবছেন। ভাবছেন কি বিয়ে পাগল মেয়েরে বাবা। তাতে অবশ্য আমার কিছু আসে যায় না। বেহায়া ভাবলে বেহায়া, আমি মারাত্মক খুশি।
আজকের দিনটার জন্য আমি গত ৬ বছর ২ মাস ২৪ দিন ধরে অপেক্ষা করছি। আমি প্রেম করতে করতে ক্লান্ত। এবার সংসার করব। বান্ধবীরা সব চুটিয়ে সংসার করছে। আমি ই এখনো প্রেমের গন্ডি পার হতে পারলাম না। আর কত? আব্বু রোজ রোজ নিত্য নতুন বায়োডাটা নিয়ে আম্মুকে ভায়া করে আমার কাছে পাঠায়। আমার না শুনতে শুনতে দুজনেই ক্লান্ত। শেষে প্রায় বাধ্য হয়েই আম্মুকে বলেই ফেললাম, একজনকে ভালোবাসি।
আমার আম্মুটা এত ভালো না !! কি সুন্দর আব্বুকে রাজী করিয়ে ফেলেছে। আমিতো ভয়েই মরে যাচ্ছিলাম, আব্বু যা রাগী। যাই হোক এখন আমি বুঝে গেছি, আমার আব্বু আম্মু আসলে দুজনেই ভিষন ভিষন ভিষন ভালো। উফ, খুশীতে নাচতে ইচ্ছা করছে আমার।
ব্যাপার গুলো অবশ্য এত সহজও ছিলো না। ওর ফ্যামিলি কিছুতেই রাজী হচ্ছিলো না। আমার বেলায় সবকিছুই কেমন জানি উল্টোপাল্টা। সারা জীবন জেনে এলাম, মেয়ের বাবা কিছুতেই রাজী হয় না। নানা ঘাত প্রতিঘাতের পর মেয়ের বাবা অবশেষে নায়ক নায়িকা দুজনের মাথায় হাত রেখে বলেন, তোমাদের ক্ষমা করলাম, সুখী হও। আর আমার বেলায়? আব্বু অবশ্য ব্যাপার গুলোতে তত বেশি খুশী না, তাও রাজী তো অন্তত হলো, তাই না?
কিন্তু ওর বাবাটা কিছুতেই রাজী না। কারন আছে অবশ্য। ও তো এখনো তত ভালো চাকরী করেনা। ছোটখাটো একটা চাকরী, বেতনও যৎসামান্য। অবশ্য ব্যাপার না। ওই সামান্যতেই আমি ঠিকঠাক সব ম্যানেজ করে নেবো। অনেক ভালোবাসি আমি ওকে।
আর সেও এমন গাধার গাধা, কবে থেকে বলছি মাকে বোঝাও, বাবাকে একটু বোঝাবে। তা না, সে উল্টো নিজেই আমাকে আরো অপেক্ষা করতে বলে। আরে গাধা, এমনিতেই আমরা সমবয়সী, তার উপর আমি বাড়ির বড় মেয়ে। কিভাবে এত অপেক্ষা করি? আমার সমস্যাটা কি আপনারা বুঝতে পারছেন?
যদি টিনেজার হতাম, ব্যাগ প্যাক করে দুজনে পালাতাম। কিন্তু এখন? তাছাড়া আমার বাবা মাকেই বা আমি ব্যাখা দেবো? তারা তো মেনে নিল আমার সব দাবী !! তাও কিভাবে আব্বু আম্মুর সম্মানটা নষ্ট করবো আমি ?
কি যে বিপদ গেলো কটা দিন আমার উপর দিয়ে, এটা শুধু আমি ই জানি। যাই হোক শেষ পর্যন্ত এর যে একটা হেস্তনেস্ত হয়েছে, তাতেই আমি খুশী। ওর মা নিজে আমাকে বলেছেন, আজ আমাকে ওরা দেখতে আসবে।
সকাল থেকেই বাসায় উৎসব উৎসব একটা আমেজ। আমার মায়ের পাগলামী দেখে আমি হাসবো না কাঁদব বুঝতে পারছিনা। সকালে উঠেই যে রান্নাঘরে ঢুকেছেন, বের হবার আর কোন নাম নেই। কত শত রান্না যে করেছেন, তা হিসেব করতে গেলে আমারই মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কিছু বললেই শুধু এক জবাব। আমার প্রথম মেয়ের বিয়ে, আমি কোন কমতি রাখতে চাইনা। কেউ যেন কোন খুঁত না ধরতে পারে। বেশ সুখী সুখী আমেজ চারিদিকে। শুধু আব্বুর মুখের দিকে তাকালে বুকটা কেমন যেন চিনচিন করে উঠছে। কি যেন একটা নেই ওখানে। কি যেন একটা. . . .
.
অবশ্য এত ভাবার সময় আমার নেই। ভালোয় ভালোয় সব মিটে গেলে হয়। আব্বু ঠিক একসময় বুঝতে পারবে, আমি ভুল করিনি। আমি আপাতত রুপচর্চায় ব্যাস্ত। ওদের বাড়ি থেকে ওর খালা, ফুফু আরও কে কে যেন আসবে। আমাকে ওরা কখনো দেখেনি। তাছাড়া প্রথম বারের মত আমাকে কেউ দেখতে আসবে। তাও আমার প্রিয় মানুষটার প্রিয় মানুষগুলো, আমারতো একটু সেজেগুজে থাকাই উচিত, তাইনা?
এখন বাজে ছটা। ঠিক সাড়ে ছটায় ওদের চলে আসার কথা। আমি রেডি, আম্মুও আম্মুর নাস্তা সমেত রেডি। আমার ফোনটা বাজছে, ওরা রওনা দিয়েছে বোধহয়। এই গাধাটা আবার আমাকে না জানিয়ে একটা কাজও করতে পারেনা। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ গাধা যাকে বলে আরকী।
ওরা আসবেনা। আমার সত্যি এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা, ওরা সত্যি আসবেনা। ওই কলটা আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটারই ছিলো। যে আমাকে জানালো, ওরা আসবেনা, আর কোনদিনও না। ওর বাবা এই বিয়েতে রাজী নয়। আমি যেন তার জন্য অপেক্ষা না করি। অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হই। যেন অনেক সুখী হই। অনেক অনেক অনেক সুখী. . . . . . .
গত ছটা বছরের প্রতিটা দিন আমার চোখের সামনে ভাসছে। আমাদের দুজনকে দেখে হিংসে করতো অনেকেই। ছবির মত একটা জীবন ছিল আমাদের। সবকিছু মাপা মাপা, হিসেব করা। আমি তো আমার রুমের পর্দা থেকে শুরু করে বাচ্চাদের নাম পর্যন্ত ভেবে রেখেছি। আমি কোনদিন বড় কোন স্বপ্ন দেখিনি, ভেঙে যাবে বলে। কারো খারাপ চাইনি কখনো। এই একটা মানুষকে ছাড়া আর কাউকে ভাবিনি কল্পনাতেও। কি করে বোঝাবো, কতটা ভালোবাসি, আর কতটা ভালোবাসলে আমার স্বপ্নগুলো এভাবে ভেঙ্গে যেতো না? কতোটা. . . . . ??
সেকি কাঁদছিলো? নাহ, তার কন্ঠে আমি কোন কান্নার রেশ শুনিনি। আমার ভিষন ভয় লাগছে। দরজার ওপাশে আমার পুরো পরিবার অপেক্ষা করছে। কি বলবো আমি তাদের? সন্ধ্যাতারার কাছ থেকে জানতে চাইলাম আমি কি করব। মনে হল তারাও আমার ভাগ্যের মত আমার দিকে তাকিয়ে নিরবে উপহাস করছে।
~~~~~আমার গল্পটা এখানেই শেষ। আমি হয়ত চাইলে রাজকন্যার আত্বহত্যার মধ্য দিয়ে আমার গল্পটা শেষ করতে পারতাম। কিন্তু মাঝে মাঝে লেখকরাও কাহিনীর হাতে বন্দী থাকে। তাই সমাপ্তিটুকু ভেবে নেয়ার ভার আমি আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। আ
- তৃপ্ত সুপ্তপনারাই আমাকে ভেবে জানাবেন, রাজকন্যা এখন কি করবে ??
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১০
আহসানের ব্লগ বলেছেন: এই লেখা লেখির একটি অনবদ্য জগতে আপনাকে স্বাগতম,

ভালো থাকবেন,
লিখবেন,
পড়বেন
এবং মন্তব্য করে অন্য লেখক দের উৎসাহিত করবেন।