নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপ্‌সরা

যেখানে ঘর বাঁধবো আমি, আসে আসুক বান, তুমি যদি ভাসাও মোরে, চাইনে পরিত্রাণ!!

অপ্‌সরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহা দেবযানী আহা মৈত্রেয়ী স্বর্গ ও মর্ত্যের দেবীরা.....১

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৪


২০২৪-২০২৫ একাডেমিক ইয়ারের শেষদিনগুলোতে যখন কোনো স্টুডেন্ট আসে না তবে টিচারদের রিপোর্ট কার্ড ও অন্যান্য কাজ থাকার কারণে শুধু তারাই স্কুলে আসে। সে সময়টাতে কাজের পাশাপাশি আমাদের কিছুটা আড্ডা দেবারও সময় জোটে। আমরা খাবার অর্ডার দেই, কাজের ফাঁকে ফাঁকে কেউ নাচ বা গানও গেয়ে ফেলি। কেউ কেউ কবিতাও আবৃতি করে ও একজন তো আছেই যে অবিরাম কৌতুক শুনিয়ে যায় আমাদের।

এরই মাঝে আমি একদিন আমি তাদেরকে শুনাচ্ছিলাম আমার কৈশরে পড়া লা নুই বেঙ্গলী ও ন হন্যতে উপন্যাসের কথা। আমার বাবা নিজে তেমন গল্প উপন্যাস পড়তেন না তবে আমাদেরকে দিয়েছিলেন বলতে গেলে এক সুবিশাল লাইব্রেরী জোড়া বই এর পাহাড়। তো লা নুই বেঙ্গলী পড়ে তারপরপরই ন হন্যতে হাতে নিয়ে চমকেছিলাম। বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই দুই বই এর লেখক লেখিকা কি চেনে দু'জনকে? বাবা বলেছিলেন হ্যাঁ। সেই অবাক হওয়া, সেই চমকে চাওয়া। তবে লেখেলিখি নিয়ে এই রকম এক ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটিয়েছিলাম আমি নিজের জীবনেও। তবে শুধু ইচ্ছেটারই প্রতিফলন ঘটিয়েছিলাম। কিভাবে সেটা হয়ত এখানে কেউ কেউ জানে যারা আমার বসন্তদিন পড়েছে তারা। তবে এই দুই বই এর লেখক ও লেখিকার লেখালিখির পিছনে ছিলো এক সত্যিকারের প্রেম। তাই থেকে হয়ত কিছুটা সত্য মিথ্যের মিশেলে সৃষ্ট সেই অমর প্রেম উপন্যাস দুটি। যাইহোক তো সেদিনের আমার গল্প শুনে বা সেই সাহিত্য আলোচনা শুনে তখন কেউ কেউ আমাদের টিচারেরা মুগ্ধ হয়েছিলো ও আগ্রহী হয়েছিলো এই ছুটিতে বই দুটি পড়তে। জানিনা তারা কে কে পড়েছিলো তবে আজকে ফেসবুকে মৈত্রেয়ী দেবীর ছবি দেখে সেই কথাটা মনে পড়ে গেলো ....


মির্চা এলিয়াদ। রোমানিয়ান দার্শনিক, ইতিহাসবিদ ও ঔপন্যাসিক কলকাতায় ১৯২৮–১৯৩১ বছর ছিলেন। সে সময় তিনি ভারতীয় দার্শনিক সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের কাছে পড়াশোনা করতে কলকাতায় এসেছিলেন ও তার বাড়িতেই আশ্রয় নেয় এই বিদেশী ছাত্র। সেখানে দাশগুপ্তের কন্যা মৈত্রেয়ী দেবী-র সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সম্পর্ক ও আবেগের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তিনি ১৯৩৩ সালে রোমানিয়ান ভাষায় লেখেন Maitreyi। বাপরে!! সোজা ঐ যুগে এক ইন্ডিয়ান কিশোরী বা তরুনীর নামেই লিখে দিলো বইটা!! কি ফাজিল! :( যাই হোক পরবর্তীতে ইংরেজি অনুবাদে প্রকাশিত হয় সেই বই যার নাম হয় Bengal Nights বা La Nuit Bengali ।

উপন্যাসে তিনি কাব্যিক ভাষায় তাদের প্রেম, সাংস্কৃতিক বিভাজন, মানসিক দ্বন্দ্ব এবং শেষমেশ বিচ্ছেদের কাহিনি তুলে ধরেন। তবে এতে মৈত্রেয়ীর চরিত্র ও ব্যক্তিগত জীবনের কিছু বিবরণ এমনভাবে এসেছে, যা নিয়ে মৈত্রেয়ী দেবী পরে আপত্তি তুলেছিলেন। তুলতেই হবে। ঐ দেশের একটা তরুন বা কিশোরের কাছে যা ডালভাত একজন ইন্ডিয়ান মেয়ের কাছে গোপনীয় আবেগ অনুভূতির সবার সন্মুখে প্রকাশ মোটেও ভদ্রতা নহে। তাই যতই এই প্রেমের উপন্যাস মন দিয়ে পড়ি না কেনো আমি এই লেখকের উপর বেশ রাগান্বিত। মৈত্রেয়ী দেবীর সন্মানের কথা ভাবেনি বলে। তাই এই লেখক আমার চোখে ১ নং লেখক হতে পারে তবে ১ নং প্রেমিক নহে।

যাইহোক ন হন্যতে বইটা বহু বছর পরে (১৯৭৪ সালে) মৈত্রেয়ী দেবী লেখেন বাংলা উপন্যাসে। যার আবার ইংরেজি অনুবাদ It Does Not Die। একটা কথা বলি এই বইটা পড়ার পর আমি পুরোহিতদের মুখে সিনেমা নাটকে মন দিয়ে শুনতাম, ন হন্যতে হন্য মানে শরীরে এমন এমন কথাগুলি এর মানে শরীর ধ্বংস হলেও আত্মা বা সত্তা ধ্বংস হয় না। কথা সত্য! এই কারণে যতই মির্চা সত্য কথা লিখুক না কেনো আর মৈত্রেয়ী সত্য মিথ্যায় যতই লাজ লজ্জা আবেগ ঢাকা দিক না কেনো সেই আসল প্রেমিকা। ভালোবাসা তো হৃদয়ের গভীরেই রয়ে যায় চিরতরে.....

যাইহোক মির্চা এলিয়াদের লেখা La Nuit Bengali এর জবাবেই মৈত্রেয়ী দেবী সে বই লিখেছিলো বটে তবে আমার মনে হয় নির্লজ্জের মত সব কিছু প্রকাশ করে দেওয়া মির্চার বই এর ঐ প্রকাশিত সত্যগুলির লজ্জা ঢাকতেই মৈত্রেয়ী দেবী বাধ্য হয়েছিলেন এই বই লিখতে।
অথবা সত্যিই হয়ত তার মনে হয়েছিলো এই অমর প্রেম ন হন্যতের মত বেঁচে থাকুক সকল প্রেমিক হৃদয়ে।

যাইহোক দুটো বইই একই অভিজ্ঞতার দুটি দিক, দুটি ধারা যা কিছুটা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। এখন পাঠক নিজেদের মত করে বুঝে নেবে কোনটা কি। মির্চা ঢেলে দিয়েছে বিদেশি প্রেমিকের আবেগ, বিস্ময় আর কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গি।( শয়তান বেটা এখানে আমি মনে মনে বলি) আর ন হন্যতে এক ভারতীয় নারীর অভিজ্ঞতা, সামাজিক বাস্তবতা আর আত্মসম্মানের কণ্ঠস্বর।( এইখানে আমি আহারে বলি।)

যাইহোক আমার চোখে মানে চক্ষু মুদে আমি দেখতে পাই শানবাধানো বিশাল বারান্দার জাফরীকাটা রেলিং এর ধার ঘেষে একটি ১৪/১৫ বছরের বালিকা চুপি চুপি হেঁটে যাচ্ছে কোনের অতিথি ঘরের দিকে। কখনও সে হেঁটে যায় খুব ভোরে সকলের অলখে মা যখন পূজায় বসে বা বাড়ির ঝি চাকরেরা ব্যস্ত ভোরের কাজে, ছোটবোন ঘুমিয়ে থাকে। ঠিক তখনটায় সে গিয়ে ঘুম ভাঙ্গায় মির্চা ইলিয়াদ নামের সেই তরুনটির।

আাবার ঠিক ঝিম ধরানো কোনো দুপুরে সবাই যখন ভাত ঘুমে বিভোর সেই বালিকা চুপি চুপি পৌছে যায় কোনের ঘরের দূয়ারে। ছেলেটা তখন হয়ত কিছু পড়ছে বা লিখছে কিংবা অপেক্ষাতেই আছে সেই বালিকার! পিছে গিয়ে চোখ চেপে ধরে দুষ্টুমীতে। আর ছেলেটা তো জানেই কে এমনটা করতে পারে!

সেই বালিকা বৃষ্টি নুপুর পায়ে নেচে যায় ঝুম বরষায়। কখনও ফাল্গুনের প্রথম প্রহরে হারমোনিয়ামে গায় রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে,রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত-আকাশে, নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল ..... আর মুগ্ধ হয়ে শোনে সেই তরুণ প্রেমী। তার প্রানে জাগে ভালোবাসা বা প্রেমের হিল্লোল....

সব কিছুই একদিন ফুৎকারে শেষ হয়ে যায়। ভেঙ্গে যায় তাসের ঘরের মত তাদের প্রেমের ঘরখানা। ছোটবোন তাদের গোপন প্রেম ও অভিসারের বার্তা পৌছে দেয় মায়ের কানে...... কালবিলম্ব না করে সংস্কারপ্রেমী মা বাড়ি থেকে বের করে দেন সেই ভীনদেশী যুবককে। মৈত্রেয়ী তখন উপরের ঘরের জানালায়..... মূর্ছা যায় সে .....

সেই বেদনা বাঁজে এরপর বোনটির বুকে ...... শোনা যায় একদিন এই বেদনা নিয়ে আত্মহ্ত্যা করে সে বোনের প্রেমের অশ্রুজলের সমাধীতে.....

বালিকা মৈত্রেয়ী ১৯১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বরে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। সেপ্টেম্বর তার জন্ম মাস! :)

লা নুই বেঙ্গলী ও ন হন্যতে এই দুই বই নিয়ে আমার ভাবনাগুলি ও রবিঠাকুরের অমর সৃষ্টি দেবযানী ও কচ নিয়ে আমার মনের আরও কিছু লিখবো এই প্রত্যাশায় ..... :)

এই লেখা চলিবেক ...

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৩

নীল-দর্পণ বলেছেন: মির্চাকে আমার শয়তান ব্যাটাই মনে হয়েছিল যখন পড়েছিলাম তখন :P
তাদের নাকি অনেক বয়স করে দেখাও হয়েছিল সামনা সামনি। তখনো ঐলোক ভালো ব্যবহার করেনি মৈত্রেয়ী দেবীর সাথে!

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৩

অপ্‌সরা বলেছেন: হ্যাঁ সেটাও লিখে রাখবো ভাবছি!!!


আরও বয়স হলে যেন সে সব পড়ে পড়ে শয়তান বেটাকে বদদোয়া দিতে পারি!!!!!!! :)


কেমন শয়তান সে চলে যাবার ২ বছরের মধ্যে মৈত্রেয়ীর বিয়ে দিয়ে দিলো মা আর ঐ শয়তান আবার এই বই লিখে বসে আছেন।

ভাগ্যিস তখন ইনটারনেট ছিলো না। ভাগ্যিস তখন ঐ বেটা ইংলিশে অনুবাদ করতে পারেনি ....

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯

বিজন রয় বলেছেন: ভেরী গুড! ভেরী গুড।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

অপ্‌সরা বলেছেন: ঐ ভাইয়া কি ভেরী গুড!!!

কেউ তো আজকাল বই পড়েই না....... আগে যারা পড়তো তাদের মনের কথাই বা কে পড়বে!!!!!!!

সবাই বিজি মারামারি কাটাকাটি রাজনীতি ক্ষমতানীতি নিয়ে আছে......


তুমি তো নিশ্চয় এসব ক্লাস ফোর ফাইভেই পড়েছো!!! বলোতো কার জন্য দুঃখ হয় ? নিশ্চয় মৈত্রেয়ী দেবীর জন্য!!!

৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭

বিজন রয় বলেছেন: ভেরী গুড এই জন্য যে, একটি দামী বিষয় নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।

কার জন্য বেশী দুঃখ হয় ?...........

অবশ্যই মৈত্রেয়ী দেবীর জন্য নাহ! অবশ্যই মির্চা এলিয়েদের জন্য।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

অপ্‌সরা বলেছেন: ঐ ভাইয়া!!!!!!!

কি কারণে মির্চার জন্য হয় দুইটা কারণ বলো!!!!!!

নীলুমনি আর আমরা বলবো কেনো সেটা হওয়া চলবে না !!!!!! X((


আমাদের আলোচনা দক্কাল!!!!

ওরা সেই যুগে প্রেম করে অমর হয়েছে আর আমরা এই যুগে তাই নিয়ে ঝগড়া করে অমর হবো এই ব্লগে!!!!!! :)

৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৯

বিজন রয় বলেছেন: ও হ্যাঁ, আর একটা কথা আপনার এই পোস্টের মর্ম এখনকার নকল পাশ, অটোপাশ, ধর্মীয়পোকারা বুঝবে না।

তাই আফসোসসস................ হয়।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭

অপ্‌সরা বলেছেন: না বুঝুক তুমি তো বুঝেছো। নীলুমনি বুঝেছে!!!

দু একজন বুঝলেই চলবে!!! :)


দেখো মির্চা কেমন শয়তানের লাঠি। প্রায় ৩ বছর কাটালো ইন্ডিয়ায় সেই জমানায়! তো একজন কলকাতাবাসী সম্ভ্রান্ত ঘরের বালিকাকে এইভাবে তার গোপন প্রেম প্রকাশ করে দিলে সে কেমন বিপদে পড়বে সেটাই বুঝলো না!!!!!

লিখে ফেললো একটা বই তাও আবার কোনো রাখ ঢাক ছাড়া ঐ মেয়ের নাম দিয়েই!!!!!! প্রেমিকার মান সন্মানের কোনো বালাই ছিলো না তার কাছে ...

৫| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৬

বিজন রয় বলেছেন: আলোচনা করবো সে সময় কোথায়? এক-দুই কথায় তো আর আলোচনা করা যায় না।

মৈত্রেয়ী দেবী তাঁর উপন্যাস ন হন্যতেতে যা-ই বলুন না কেন, লা নুই বেঙ্গলীতে অ্যালেনের এই প্রেম মানব-মানবীর অবিনশ্বর ভালোবাসার কথাই বলে।

অ্যালেনকে লেখা মৈত্রেয়ীর শেষ চিঠিতে : ‘… আমি তোমাকে হারিয়ে কী নিয়ে বাঁচব? তুমি যে আমার সূর্য, তোমার কিরণধারাই যে আমার প্রাণসত্তা। … প্রতি রাতেই তুমি আমার কাছে আসো, যেমন করে তোমাকে আমাদের ভবানীপুরের বাড়িতে পেতাম আর আমি তোমার কাছে কনে-বউ সেজে যেতাম। তুমি আমাকে নারীত্বে উত্তীর্ণ করে দিয়েছিলে। আর তুমি, তুমি আসো অজস্র মণিমুক্তা সজ্জিত সুবর্ণ দেবতার মতো, অসীম অপার সুষমায় আমি তোমার সামনে সাষ্টাঙ্গে প্রণত হই।’

............. মির্চা এলিয়াদ অনেক বড় মাপের এই জন্য মৈত্রেয়ী দেবী এভাবে বলতে পেরেছিলেন।

দুঃখটা এখানেই লুকিয়ে আছে।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫

অপ্‌সরা বলেছেন: সারা পৃথিবী থেকে দূরে, একান্ত একান্তে একাত্ম হয়ে থাকার কল্পনায় বিভোর হয়ে থাকতাম। বিগত দিনের কত ভুলে যাওয়া স্মৃতি, কত ছোট ছোট তুচ্ছ অথচ মধুময় ঘটনা আবার জীবন্ত হয়ে উঠতো আমার অন্তরে। কত গভীর, কত নিবিড়, কত ললিত গীতিময় সে সব ব্যথার গাথা। যে-সব তুচ্ছ জিনিসকে আগে কখনো কখনো কোনো মূল্যই দিইনি, সেগুলো এখন আমার অন্তদৃষ্টিতে জ্বলজ্বলে ভাস্বর হয়ে উঠছিল। আমি যেন মৈত্রেয়ীকে ভেঙে ভেঙে গড়ছিলাম, সেই পাইন, চেস্টনাটের ছায়ায় ছায়ায়, পাহাড়ে, জঙ্গলের পথে পথে। আমি আমার সেই অপূর্ব ভাবনার অন্তরঙ্গতায় এমন আপ্লুত ও আবিষ্ট হয়ে থাকতাম যে, মাঝে মাঝে আমার ভয় হতো। এই স্বপ্ন যদি ভেঙে যায়, আমি আমার এই যন্ত্রণাময় শারীরসত্তা নিয়ে বাঁচবো কী করে। আমি জানতাম, এবং নিশ্চিন্তই ছিলাম যে, মৈত্রেয়ীও তার ভবানীপুরের ছোট্ট ঘরে বসে বসে আমারই মতো গভীর চিন্তায় মগ্ন, আমাদের চাওয়া-পাওয়া, আমাদের মিলন, কিংবা আমাদের বিচ্ছেদ অথবা মৃত্যু।

কোনো কোনো শুক্লপক্ষের সন্ধ্যায় চাঁদের আলোয় আমি বনের পথে বেরিয়ে পড়তাম, হয়ত একটা টিলার ওপর উঠে দূরে কোনো অঝোরে—নেমে আসা ঝর্ণার শুভ্র নির্ঝর দেখে প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠতাম—মৈত্রেয়ী মৈত্রেয়ী’ যতক্ষণ না আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি—আমি আমারই শব্দের প্রতিধ্বনি পাহাড়ে পাহাড়ে ধ্বনিত হতে শুনতে পেতাম। যেন এক স্বপ্নের পথ ধরে, অবর্ণনীয় সুখ আর প্রশান্তি বুকে নিয়ে বাংলায় ফিরে আসতাম; মনে হতো, মৈত্রেয়ী নিশ্চয়ই আমার ডাক শুনতে পেয়েছে, ঐ আকাশের মধ্য দিয়ে বাতাস ও ঝর্ণার ধারায় ভেসে আমার প্রাণের আর্তি নিশ্চয়ই তার কানে গিয়ে পৌঁছেছে।


আবার পড়ে আসলাম মির্চা এলিয়াদের লেখার এখানটায় !!! :(


অনেক কষ্ট পেয়েছিলো সে ঠিকই নইলে এইভাবে লিখতে পারতো না। তবে হ্যাঁ সে মনে হয় খুব শিঘ্রী বিদেশে ফিরেই ভুলে গিয়েছিলো অনেকটাই ......

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৭

অপ্‌সরা বলেছেন: আমার এই যে আত্ম-অনুশোচনার অনুভূতি, এটা শুধু মৈত্রেয়ীকে হারানোর জন্যই নয়, আমি আমার আশ্রয়দাতা গুরুর প্রতি যে অন্যায় ও পাপ করেছি, আমার পরম শ্রদ্ধাস্পদা অতুলনীয়া মায়ের প্রতি, ছোট্ট ছবুর জীবনের প্রতি, সেই মেয়েটা- মৈত্রেয়ী- যাকে আমি চরম বিপদের মধ্যে ফেলে এসেছিলাম, সে সবের জন্যেও আমার এই মানসিক যন্ত্রণা। এই সমস্ত দুশ্চিন্তা আমার বুকের ভেতর চেপে বসে যেন আমার শ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছে। এখন নিজেকে ঘুম পাড়ানোর জন্য আমার বোধ হয় ঘুম-পাড়ানী মাদকের দরকার, যাতে না-স্বপ্ন, না-কোনো জ্ঞান, না-মৃত্যু, না-পাপ, না-বিচ্ছেদ—কিছুই উপলব্ধি করতে পারি



ভাইয়া ...... এইখানে এলিয়াদের আত্মপলদ্ধিটা একদম রবিঠাকুরের কচের মত তাই না ?

৬| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১

বিজন রয় বলেছেন: ভাইয়া ...... এইখানে এলিয়াদের আত্মপলদ্ধিটা একদম রবিঠাকুরের কচের মত তাই না ?

এই জন্যই তো বলেছি এলিয়াদের জন্য দুঃখ হয় বেশি।
তার নিজের ভালবাসা তার মৈত্রেয়ী দেবীকে যত বেশি ভুলতে চেয়েছিল ততবেশি করে তার মনে মৈত্রেয়ী দেবী জ্বলন্ত হয়ে উঠেছিল।
প্রত্যেক প্রেমের বেলায় কমবেশি এই উপলব্ধি হয়। কিন্ত লা্ লুই বেঙ্গলী একটি অন্যরকম ফ্যাক্টর।

মনস্তাত্ত্বিক বিষয় হলো, মানুষ কী চায় সে জানে না। যখন জানতে পারে তখন হয়তো চাওয়ার সময় থাকে না। বহু নর-নারীর জীবনে প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটে চলছে।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫

অপ্‌সরা বলেছেন: কিন্তু মির্চার জীবনে এত দ্রুত জেনী, মেনি পেনিরা চলে এলো আর উনি স্বাগত জানিয়ে দিলো এটা জেনে যে কি রাগ লাগছিলো!!!!!! মৈত্রেয়ী দেবীও মনে হয় সে সব জানলে জীবনেও এই বেটার জন্য আর ঐ দুঃখের চিঠি লিখতো না !!!!!!

৭| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৫

বিজন রয় বলেছেন: ব্লগার ভোরের তারা এর কথা মনে আছে?
তার একটি পোস্ট ছিল এই বিষয় নিয়ে, ................. ভোরের তারা ......... জোড় বাধা ভালবাসার বই

পড়ে দেখবেন নিশ্চয়ই।

আর ওই পোস্টে পুরানো অনেক বিখ্যাত ও নাম করার ব্লগারদের পাবেন।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

অপ্‌সরা বলেছেন: হ্যাঁ মনে আছে তো!!!! ভোরের তারা আপুনি!!!! আহা কত মানুষ ছিলো একদিন এই ব্লগে।

এই পোস্টের বই দুইটাও কত জনেরাই পড়েছিলো আর আজ কোথাও কেউ নেই..... :(

৮| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:০৪

বিজন রয় বলেছেন: কিন্তু মির্চার জীবনে এত দ্রুত জেনী, মেনি পেনিরা চলে এলো আর উনি স্বাগত জানিয়ে দিলো এটা জেনে যে কি রাগ লাগছিলো!!!!!

হা হা হা .............. এখানেই তো প্রেমের গভীরতা!

মির্চা প্রকৃতপক্ষে মৈত্রেয়ী দেবীকে ভুলতে চেয়েছিল, ভোলার জন্য উনি জীবনে অনেক কিছু করেছিলেন, তার মধ্যে ছিল নতুন প্রেম, নতুন নারী ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৈত্রেয়ীকে ভুলতে পারেনি।

আর হ্যাঁ, মির্চা ছিল পশ্চিমা সংস্কৃতির, এসব ব্যাপারে তারা কেমন আপনি নিশ্চয়ই জানেন।
আর আমরা হলাম বাঙালি। এই জন্য আমাদের রাগ হয়। আমি বাঙালি হয়ে গর্বিত।

আচ্ছা, আমাদের হুমায়ুন আহমেদ যখন শাঙনকে বিয়ে করেছিলেন, তখন কি আপনার রাগ হয়েছিল?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪০

অপ্‌সরা বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ আর শাওনের বিয়ে নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। তখন আমার কিছু অলস সময় ছিলো। এরপর লাস্ট ভাবনা চিন্তা গবেষনা করেছিলাম বরগুনায় মিন্নী যে মেয়েটা দুইটা হাসব্যান্ড নিয়ে দু'জনেরই মৃত্যুর কারণ হলো তাকে নিয়ে।

এরপর এমন আরও গবেষনা আমি নিজের মনে করে যাই কিন্তু সেসব নিয়ে কাউকে কোনো গিয়ান দান করতে যাই না। ইদানিংকালের লায়লা মামুনের মনস্তত্ব নিয়েও আমি নিজে নিজে বেশ গবেষনা করেছি আমার ব্যস্ত সময়ের মধ্যে......

হুমায়ুন আহমেদ, শাওন ও গুলতেকীনের মাঝে আমি হুমায়ুন আহমেদকে ১০০% দোষ দিতে পারিনা। আমার গবেষনায় মনে হয়েছে গুলতেকিনেরও দোষ ৫০% ছিলো কিংবা ভুল। আর এদের ৩ জনের মাঝে শাওনের দোষ বা ভুল ছিলো ৮০% আমার কাছে মনে হয় শাওন জেদ, যশ ও উন্মাদনার কারণে হুমায়ুন আহমেদকে বিয়ে করেছিলো। আমার কাছে মনে হয় তার মাঝে কোনো ভালোবাসা নেই। যদিও তার স্মার্ট বাচনভঙ্গি বুদ্ধিদীপ্ত কথার মারপ্যাচ ও গুনগুলিকে আমি ভীষণ পছন্দ করি কিন্তু তার মাঝে আমার মনে হয় ভালোবাসার কোনো গুনাবলীই নেই। কেনো মনে হয় জানিনা। শাওন শুনলে অনেক কষ্ট পাবে তার চাইতেও খেপে যাবে কিন্তু এটাই আমার ধারনা কি করবো বলো?


আর গুলতেকীন আহমেদ আমাদের স্কলাসটিকার টিচার। ভীষন ভদ্র নরম শরম ভালোমানুষ হওয়া স্বত্ত্বেও তার মাঝে হুমায়ুন আহমেদ ও তার পরিবারের প্রতি ঘৃনাটা বুঝা যায়। সেই ঘৃনার আঁচ দূর থেকে আমিই বুঝতে পারি হুমায়ুন আহমেদ হয়ত অনেক আগেই বুঝেছিলেন। তাই ভালোবাসাটা মরে গিয়েছিলো।

হুমায়ুন আহমেদ ও শাওনের প্রেমটাকেও আমার খুব বড় কিছু মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয় হুমায়ুন আহমেদ কিশোরী বালিকার প্রেম বা একটিভিটিগুলি দেখতে পছন্দ করতেন এবং ভেতরে ভেতরে ঘৃনাময় ভালোবাসায় তিনি হতাশ হয়ে উঠেছিলেন।

কবি ও লেখকদের ভেতরে প্রেম না থাকলে সে লিখবে কিভাবে!! তাই প্রেমে পড়তেই হয় ক্ষনিকের জন্য হলেও। কিন্তু শাওনের কাছে বাঁধা পড়ে গেলো !!! কি আর করা!!!


আল্লাহ হুমায়ুন আহমেদ আমাকে ভূত হয়ে এসে ধরে নাকি আজ রাতে ভাবছি!!!!!! আলাই বালাই কালাই লা হাওলা ...... :P

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৭

অপ্‌সরা বলেছেন: চাঁদকন্যা ও সূর্য্যপুত্র


ভাইয়া একে তুমি চিনতে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.