নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলো না পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি। কেউ কথা রাখেনি- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মেয়েদের জীবনটা একটা লুডুর ডাইসের মতোন।
কি??বিশ্বাস করলেন না? সত্যি বলছি, তিন সত্যি।
চলুন খানিকটা ভেবে দেখি। আমরা সবাই একই সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। অনেকটা মেরি গো রাউন্ড এর মতোন, ঘুরবে তো ঘুরবেই, ঘুরে ঘুরে একই জায়গায় আসবে। আমরা নিয়মমতো জন্ম নিচ্ছি, বড় হচ্ছি, পড়াশোনা করছি, বিয়ে করছি, বাচ্চা নিচ্ছি, বাচ্চা মানুষ করছি, বুড়ো হচ্ছি তারপর একদিন ফট করে মরে যাচ্ছি। এটা আমাদের আপাতত রেগুলার সার্কেল ধরা যাক। কারণ ব্যতিক্রম অবশ্যই থাকবে কিন্তু ব্যতিক্রম কখনও উদাহরণ হয়না।
তো এবার জন্ম থেকেই শুরু করি। বা তার আগে থেকেই ধরা যাক, জন্মের আগে থেকে একটা তীব্র বৈষম্য দিয়েই আমাদের জীবনের সূত্রপাত হয়। ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে, কালো হবে নাকি সাদা হবে। লুডুর গুটির মতোন সবাই প্রথমে সবাই ছক্কা চায়। তো এক্ষেত্রে ছক্কা হিসেবে ছেলে এবং সাদা কে ধরে নেয়া হয়। বাকি মেয়ে কিংবা কালো হলেই মন খারাপ। আগেই বললাম ব্যতিক্রম ধরা যাবে না।
তারপর ধরে নিলাম ছক্কা পড়ল না। অর্থাৎ মেয়ে হইল আবার কালো হইল। তবুও লুডু খেলায় হারব না। এই মেয়েরে ছোটবেলা থেকেই বুঝিয়ে দেয়া হবে সে অন্যদের থেকে আলাদা, সে সুন্দর না এবং তারে তথাকথিত সুন্দর অর্থাৎ ফর্সা হইতে হবে। এজন্য মেয়ের মা থেকে শুরু করে পুরো পরিবার মেয়েকে ফর্সা বানানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবে। জন্মদাত্রী মাকেও কাঠগড়ায় এনে দাড়ঁ করালাম বলে অভিসম্পাত করবেন না।
একজন মা জন্মের আগে থেকে চান তার একটা সুন্দর মেয়ে হোক, এখানে সুন্দর বলতে যে ফর্সা চামড়াকেই বুঝাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই মায়েরাই দোকানে গিয়ে ভিড় জমায়, দাদা, একটা ফর্সা হওয়ার ক্রিম দেন তো। মেয়ের পোশাক কিনার আগে পোশাক ভালো লাগবে কি লাগবে না তার আগে চিন্তা করেন, এই রঙে আমার মেয়েকে কালো দেখাবে না তো? এই মায়েরাই ছেলের বৌ ফর্সা হতে হবে এরূপ মনোভাব পোষণ করেন।
এ তো কেবল কলির সন্ধ্যে। মেয়ে বড় হচ্ছে, তার সাথে সমান তালে চলছে রঙ ফর্সা করার ক্রীম, হলুদ, মুলতানি মাটি, দুধের সর দিয়ে ঘষামাজা করে ফর্সা করার প্রচেষ্টা। তার সাথে তো পাশের বাসার ভাবীরা আছেই। "ভাবী, আপনার মেয়েকে ক্রিম, টোটকা দেন না ফর্সা হওয়ার জন্য? ও তো বড্ড কালো। বড় হলে তো বিয়ে দিতে সমস্যা হবে" এমন কথা মায়েদের মনে করিয়ে দেয় তারা লুডু খেলায় ছক্কা না পেয়ে হেরে গিয়েছেন।
তারপর আসে বড় হওয়ার সময়টুকু। আচ্ছা, কালো হইলে কি? এই মেয়েকেই সর্বগুণসম্পন্ন বানানো লাগবে যাতে শ্বশুর বাড়িতে কেউ কিচ্ছু বলতে না পারে। শুরু হয় মেয়েদের ট্রেনিং। রান্নাবান্না শিখো, ঘরের কাজ শিখো, তার সাথে হাতের দু একটা কাজ শিখতে পারলে ওইটা বোনাস। সব ধরনের খাবার খাওয়া শিখতে হবে যাতে পরের বাড়িতে গেলে নষ্ট ভাত থেকে শুরু করে বিরিয়ানি পর্যন্ত গিলতে অসুবিধা না হয়। কোন কিছুতেই যেন বলতে না হয় যে তুমি এইটা খাও না, তুমি এই কাজ পারো না।
এই ট্রেনিং এর পাশাপাশি মেয়ের পড়াশোনাও চলে। লক্ষ্য একটাই লুডুর ডায়াসে এইবার ছক্কা তুলতেই হবে। বেশিরভাগ বাবা মার মেয়েদের পড়ানোর উদ্দেশ্য একটাই, একটা ভালো পাত্রস্থ করা। এবার যেন ছক্কা আসে। মেয়েরা বিয়ের আগ পর্যন্ত থাকে ট্রেনিং সেন্টারে, যেখানে শ্বশুরবাড়িতে কিভাবে চলবে, কিভাবে বলবে, কি খাবে, কি করবে আদ্যোপান্ত ট্রেনিং দেয়া হয়। বাপের বাড়িতে সে পরের বাড়ির আমানত। ছোটবেলা থেকেই " একদিন তো পরের ঘরে যাওয়াই লাগবে" এই কথা শুনিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয় এই ঘরও তার কোনদিন ছিলনা, তার কোনদিন হবেও না। আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর শুনতে হয়, এ তো পরের বাড়ির মেয়ে। মানে লুডু খেলব, ছক্কা দান চাইব, কিন্তু ডায়াস টা আমারও না, তোমারও না। কিন্তু ডায়াসের দানগুলো আমি তুমি চেলে দিব, আমার তোমার ইচ্ছামতো দানগুলো পড়বে।
এভাবেই একজন মেয়ের জীবন লুডুর ডায়াসের মতোন অন্যের হাতে হাতেই কেটে যায়। জীবনের প্রথমাংশে সে বাবা মায়ের হাতের পুতুল, আর জীবনের পরবর্তী অংশে সে আরেকজনের মর্জিমাফিক রোবট। মেয়েদের নিজেদের কোন ইচ্ছা থাকতে পারেনা, নিজের ইচ্ছামত আর বাবা মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা মানে সে অবাধ্য ট্যাগ ধারণকারী মেয়ে/কন্যা। স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা মানে সে নারী অচ্ছুৎ, অসতী।
শোন মেয়ে, কান খুলে নিজের মননে মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে নাও, তুমি একজন মেয়ে/নারী/মহিলা কিন্তু তুমি মানুষ নও। তোমার কোন ইচ্ছা থাকবে না, তুমি অন্ধ, তুমি বোবা, তুমি কালা শুধু তোমার ক্ষেত্রে। তোমার কোন মন নেই অবশ্য মন থাকার প্রশ্নই আসে না। যখন যেই কর্তা আসবে, তার ইচ্ছাই তোমার কর্ম।
জন্মই যখন আজন্ম পাপ, সেখানে তোমারে এই দুনিয়াতে আলো বাতাস দেখতে দিচ্ছে, খেতে পড়তে পারতেছো, এইটাই তো বেশি। মেয়ে মানুষ হয়ে আবার এত বেশি বুঝো কেন?? চুপ থাকবা!! বেশি কথা কইবা না।
ছবি: গুগল।
©somewhere in net ltd.