![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসসালামু আলাইকুম। বলার মতো তেমন কিছুই নেই । খুব সাধারন ঘরের খুব সাধারন ছেলে আমি। নিজের সাধ্য মতো সবার উপকার করতে ভাল লাগে, মানুষ এর মুখে যখন হাঁসি দেখি - তখন খুব ভালো লাগে। ভালবাসি দেশ, দেশ এর মানুষ কে। সব চেয়ে বেশি ভালবাসি আল্লাহ ও তাঁর হাবিব এর পথ এবং তাঁদের। ভালো থাকুক সকলে।
২০০২ সাল। ঘড়ে আসল নতুন মেহমান। একটা ছোট্ট নবজাতক মেয়ে। বাবা মা আর একটি ছেলের পরিবারের ৪ নাম্বার সদস্য। কারো খুশির সীমা নেই। ভাইটা জেনো সবার থেকে একটু বেশি খুশি। আদরের ধন বোন পেয়েছে। খুশিতে তার ছোটাছুটি কে দেখে।
.
বাবা আবার চাকরী করে আরেক শহরে। যার কারনে আর মেয়ের কাছে থাকা হয় না। মাসে ৩-৪ টা দিন পায় তার রাজকন্যার দেখা। বাবার আদর, ভাইয়ের আদর, মায়ের আদর যেন থামেই না। একটু একটু করে বেড়ে উঠে সেই পরীটা। ভাই টা স্কুল থেকে এসেই বোন টাকে নিয়ে মেতে উঠে। খুনসুটি করে। এসব দেখে বাবা মা হাসে। বাবার কষ্ট সার্থক বলে মনে হয়। বাবা আবার চলে যায় তার কর্মস্থলে। একটাই চিন্তা। আমার রাজপুত্র আর রাজকন্যার জন্যে আমাকে এই অসুস্থ শরীর নিয়েও কাজ করতে হবে। হুম সেই বাবা টা অসুস্থ। অনেক দিনের পুরনো রোগ। ডাক্তার ধরতেই পারে না সমস্যা কোথায়। এক গাদা ঔষধ খায় প্রতিদিন।
.
ভাই টা তো আছে তার মিষ্টি পাখি বোন নিয়ে। তাদের খুনসুটি থামেই না। একটু একটু করে বড় হতে লাগল সেই পরীটা। ভাই এর আঙুল ধরে হাটতে চেষ্টা করে। বার বার পড়ে যায়। আবার তুলে নিয়ে দাড় করিয়ে দেয় তার। একসময় শিখে যায় হাটা। এখন আর আঙুল ধরতে হয় না। সে নিজেই হাটে আবার পরে আবার হাটে। এই নতুন হাটা দেখে বাবা মা ভাইয়ের হাসি থামে না।
.
সেই পরীটার বয়স যখন ৮ বছর তখন জীবিকার তাগিদে বাবার বোঝা হালকা করার উদ্দেশ্যে ভাই টা পাড়ি জমায় প্রবাসে। বাবার সেই বড় চোখ, মায়ের অশ্রুঝরা কান্না আর এই পরীটার দুষ্টু হাসিতেই দেশ ছাড়ে সে।
.
বাবা চলে যায় কর্মস্থল এ। মা আর সেই পরী এখন একসাথে। ভাই টা পরীটার জন্যে প্রবাসে কাদে। মোবাইলেই খুনসুটি করে কিছুটা শান্ত হয়। বাবা তার আগের মতই কাজ করে যায়। এদিকে পরীটা বড় হচ্ছে।
.
ভাইটার চিন্তা পরীটার জন্যে কি পাঠাবে দেশে। সে নিজে জেতে পারছে না নানান জটিলতার কারনে। পরিচিত কেও যাবে শুনলেই আবদার নিয়ে হাজির। ভাই আমার কিছু জিনিস নিবেন? একটু কষ্ট করেন। ভাইয়ের জিনিসগুলার লিস্ট ভরা থাকে পরীটার বিভিন্ন আবদার দিয়ে। ৪৪/৪৫ টেম্পারেচার এ হাড়ভাংা পরীশ্রম করে সাথে ওভার টাইম করে বড় কষ্টের টাকা দিয়ে বোনের চাহিদা আর আবদার পুরন করে চলছে।
.
এখন পরীটা একটু বড় হয়েছে। স্কুল এ যায়। এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছে। বাবা ভাইয় এসব পাত্তা দেয় না। মাত্র তো ক্লাস এইটে পড়ে। ছোট্ট পরী, কিসের বিয়েটিয়ে। বয়স কম অন্তত এইচ এস সি পাস করুক তারপর ভাবাভাবি। ভাই প্রবাসে, বাবা তার কর্মস্থলে, মা বাড়িতে এভাবে পরীটা বড় হচ্ছে।
.
হঠাত পরীটাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আত্বীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। সেখান থেকে নিখোজ। বাবা, মা ভাই পেরেশান। কোথায় তাদের রাজকন্যা। নাহ কোথাও নেই। সকলের খাওয়া, ঘুম নেই। খবর পায় এক ছেলের সাথে কোথাও পালিয়েছে।
.
আকাশ টা ভেঙে পড়লো বাবার মাথায়। ভাই প্রবাসে আর কাজ করতে পারে না। পুরা পৃথিবী টা চোখের সামনে ঘুরছে তার। মা কেঁদে বুক ভাষায়। বাবা সব ফেলে আসে বাড়িতে। ভাইটা ত হাজার মাইল দূরে। দেশে আসার মতো ব্যাবস্থা নেই। ৬ টা বছর ধরে প্রবাসে। সে ভাবতেই পারে না তার ছোট দুনিয়ায় এরকম ঝড় আসবে।
.
বাবা মা পাগল প্রায়। শুরু হয় চেষ্টা তদবির। এর মধ্যে পরীটা ফোন করে মায়ের কাছে। বলে আমি ভালো আছি। আমি এই ছেলেকে বিয়ে করবো। আমার জন্যে চিন্তা করো না। বিয়ে করে পরে আসবো। বাবা বলে ঘরে আয় ওখানেই বিয়ে দিবো। পরীটা বলে না আপনাদের বিশ্বাস নেই, যদি কথায় না থাকেন। আমার সোজা কথা আমি এই ছেলেকেই বিয়ে করবো। জানা যায় এতো বিয়ের প্রস্তাব এর ভিরে এ ছেলের প্রস্তাব ও না করে দেয়া হয়েছিল। অথচ পরীটাই এ প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো। যা বাবার অজানা।
.
এসব শুনে বাবা মা আর ভাইটার কান্না থামে না। অঝোরে কেদেযায়। কেও দেশে, কেউ প্রবাসে। ভাইটা কাজ করে আর কাদে। বন্ধুদের লুকিয়ে লুকিয়ে কাদে। যদি দেখে ফেলে কি জবাব দিবে। পরীটার পড়ার টেবিল ঘেঁটে বাবার হাতে তাঁর নিজের লিখা একটা চিঠি ধরা পড়ে। যা রীতিমত আত্বহত্যার নোট। যার কারনে বাবা আর তদবির করতে সাহস পায় না। ছিনিয়ে আনতে পারে কিন্তু পরে???!!!! এখানে এসে থেমে যায় সকল চেষ্টা।
.
পৃথিবী টা যেন থেমে গেছে। সেই ছোট্ট পরীটা কতো বড় হয়ে গেছে। বাবার স্বপ্ন ভালো পাত্রে ধুমধাম করে বিয়ে দিবে তার রাজকন্যার। ভাইয়ের স্বপ্ন আরো কিছু দিন একটু কষ্ট করি। বোনটাকে পড়াতে হবে। বিয়ে দিবো অনেক টাকার দরকার। সকল স্বপ্ন ভাসিয়ে দিয়ে আজ পরীটা নির্দয় ভাবে আঘাত করেছে তাদের উপর।
.
সত্যিই আজ পৃথিবী টা বিরক্তিকর মনে হয় বাবা মা আর ভাইটার কাছে। কি দোষ ছিল তাদের। কি করেনি তারা সবার সুখের জন্যে। এ তো সেই পরীটাই নাকি অন্যকেও???!!! বিশ্বাস হতে চায় না।
.
সেই ছোট্ট পরী নিমিষেই পর করে দিলো। সেই পরী। এখনো কাদে তার মা। তার বাবা এবং তার সেই প্রবাসী ভাই।
হয়ত একদিন মোহ কেটে যাবে। ফিরে আসবে সে। কিন্তু সেই পরী হয়ে নয়।
[ছবি সংগৃহীত]
©somewhere in net ltd.