নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাদামাটা মানুষ। ভালবাসার কাঙ্গাল। অল্পতেই তুষ্ট। সবাই আমাকে ঠকায়, তবুও শুরুতে সবাইকে সৎ ভাবি। ভেবেই নেই, এই মানুষটা হয়ত ঠকাবেনা। তারপরেও দিনশেষে আমি আমার মত...

অপলক

তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।

অপলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবাস্তব ঘটনা: একটি এখনকার, অন্যটি তখনকার

২২ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:২০

নাগরিক জীবনে অনেক ব্যস্ততা। একদিন ফোন ছাড়া থাকলে, দম বন্ধ লাগে। কিন্তু দিনের দৈর্ঘ্য অনেক বাড়ে। বিদ্যুৎ ছাড়া পরিবেশ অনেক শান্ত লাগে, কিন্তু সবকিছুতে আলসেমি লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয়, হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো খুব একটা খারাপ ছিল না। আমি হারিয়ে যাবার আগে সময়কে ধরে রাখতে চাই। তাই আজ বসলাম শ্রেফ দুটো ঘটনা লিখব ভেবে, যেটার একটা আমার জীবনে ঘটা আর অন্যটা আমার এক আত্মীয়ের জীবনে ঘটা।



ঘটনা ১.
- আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। আনার্স শেষ, মাস্টার্স সেশন সবে শুরু হয়েছে এমন সময়। মেসে থাকি, নাম মহসিন কটেজ। নিচের তলায় শিবির, দোতলায় তাবলিগের ছেলেরা থাকে। অনেক দিন এই দুই তলা মেসটি বন্ধ ছিল। একটি ছেলের অপমৃত্যু ঘটেছিল। থানা পুলিশ হয়। তারপর দ্বীনদ্বার তাবলীগের ছেলেরা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। তবে সেই রুমটা নিয়ে একটা ভয় ছিল, যেটা আমি ওঠার আগে জানতাম না।

অপমৃত্যুর ঘটনা জানার আগেই আমি প্রায় দেড় বছর সেই রুমটিতে থেকেছি। অতদিনেও যেহেতু কিছু হয়নি, কাজেই জানার পর ভয়টয় লাগেনি। কিন্তু আমার রুমমেট এর ভেতরেই দু দু জন পরিবর্তন হল। তাদের রাতে বোবায় ধরত। যাইহোক, আমার নতুন এবং শেষ অবধি রুমমেট ছিল রাজু। ম্যাথের ছাত্র, পলেটিকস করে না আবার তাবলীগের আদবও রক্ষা করে না। আমার মত আর কি। তখন মেসের অনেকেরই সেমিস্টার ফাইনাল চলছিল। রাত জেগে সবাই পড়ে। আর আমি ১০টায় ঘুমিয়ে পড়ি। যদি চাঁদনি রাত হয়, তবে ২-৩টা পর্যন্ত ছাদে পায়চারি করি। একাই থাকতাম। রাতে ভয়ে কেউ মেসের ছাদে যেত না।

ঐ সময় ডিজুসের অফার চলছিল। ২টাকায় আনলিমিটেড কল বা গ্রুপ কনভারশন প্যাকেজ। আমরা স্কুল ফ্রেন্ডরা সারা দেশ থেকে যোগ দিতাম আর অনেক রাত পর্যন্ত গ্যাজাতাম যদিও তখন ভার্সিটিতে পড়ি। যেহেতু রুমে কথা বলা যায় না, তাই আমাকে কিছু কিছু রাতে ছাদেই যেতে হত। মাঝে মাঝে দেখতাম, আকাশ থেকে তারা খসে পড়ছে। একদিন দেখলাম, আগুন লাল একটা বল আকাশ থেকে নেমে পাশের শাহজাহান ভাইদের মেহগনি বাগানে নামল।

আমাদের মেসের কিছু পোলাপান ছিল যারা রাত ১২ টা ১ টার দিকে চা খেতে হোটেলে যেত, বা হাটতে হাটতে ক্যাম্পাসের হলে চলে যেত। কেউ কেউ বিড়ি ফুকাত রাস্তার চিপাচাপায়। তারপর মেসে ফিরে আবার পড়তে বসত।

এখন মূল ঘটনায় আসি। ছেলেপুলের সেমিস্টার ফাইনাল চলছিল। কারও এক দুটা বাকি, কারও আবার ল্যাব বাকি। এরকম একদিন সন্ধ্যা থেকেই তুমুল বৃষ্টি। সে রাতে খিচুড়ি রান্না করেছে বুয়া। খেয়ে দেয়ে মুভি দেখলাম কম্পিউটারে। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া। বৃষ্টির কারনে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ভাল না। সিগন্যাল এক দাগ দু দাগ এরকম। রাত ১১টায় জানালা দিয়ে দেখলাম বৃষ্টি থেমে গিয়ে আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। ছাদে গেলাম কিন্তু কাউকে ফোনে পেলাম না।

নিচে নামতেই মেসের ছোট ভাই কৌশিক বলল, ভাই এতো তাড়াতাড়ি নামলেন যে? আজ তো চরম আবহাওয়া, তার উপর খিচুড়ি খাইছি। পড়তে মন টানতেছে না। যাবেন নাকি নীচে হাটাহাটি করতে। আমি আবার কুত্তা ভয় পাই। না হলে কইতাম না। চলেন যাই.. না কইরেন না।

এক নি:শ্বাসে কথা গুলো বলে সে থামলে বললাম, টি শার্ট পড়ো। আমি নীচে আছি, আসো। তারপর আর কি... নীচে নামতেই বললাম, চল রাবার বাগানে যাই। এই দিক দিয়ে শ্বশান ঘাটের ঐ পাশে গিয়ে গুড়ের চা খেয়ে আসি। রাতে কি স্টাডি করবা? কারন ২ঘন্টা মত লাগবে।

কৌশিক এক গাল হাসি দিয়ে হাঁটা শুরু করল। মুসলিম নগর মসজিদের পাশ দিয়ে আমরা বৃষ্টি ভেজা মাটির কাঁচা রাস্তা দিয়ে জোছনার আলোয় যাচ্ছিলাম। মিনিট বিশেক পর রাগীবআলীর রাবার বাগানের কাছে পৌছালাম। শুনশান নিরবতা। আমরা নিরবে হাটছি। আমাদের পায়ের শব্দ ছাড়াও আমরা আরও একটা খুসখুস শব্দ পাচ্ছিলাম। কৌশিক বলল, ভাই আপনিও কি সেটাই শুনছেন যেটা আমি শুনতেছি। আমি শুধু হুম বললাম। এদিকে আগেই আমি পকেটের চাবি মুঠ করে ধরে বোঝার চেষ্টা করেছি, যে ওটা চাবির গোছার শব্দ কিনা। কয়েকবার হুট করে পিছে তাকিয়েছি, দেখি কিছু একটা সরে যায়। শব্দটা এমন যে, আমরা হাঁটা শুরু করলে শব্দ শুরু হয়, থামলে কয়েক সেকেন্ড পরে শব্দটা থামে।

যখন কৌশিক বলল যে, ভাই দৌড় দিবেন নাকি পিছে ফিরে যাবেন? আমি কিন্তু লুঙ্গি পরে আছি। কাছা একটা মেরে, সেন্ডেল হাতে নিয়ে দৌড় দিমু। আপনে কোন দিকে যাবেন, আমার কিন্তু দিশা থাকবে না।

আমি শুধু বললাম, ঐ কালভার্টে গিয়া একটু রেস্ট নেই। এত জোড়ে হাটায় হাপিয়ে গেছি। যে পথে আসলাম, সে পতে ফিরব না। কোন মানুষ জন নাই। সামনে গেলে মাদ্রাসা, তারপর চায়ের দোকান। ঐ রাস্তা পাকা আছে। গাড়িটাড়ি যায়, কিছু হলে মানুষের চোখে পড়বে।

কৌশিক কালভার্টে বসে আছে, ওর পেছনে রাবার বাগান। আমি দাড়িয়েই ছিলাম। বাগানে সাদা কিছু হুট হাট করে গাছের আড়ালে চলে যায়। এর ভেতরে একটা কুকুর কাঁচা রাস্তা ধরে এসে আমাদের দেখে চুপচাপ পাকা রাস্তায় চলে গেল। এদিকে আমি যে বাগানের ঘুটঘুটে অন্ধকারে মাঝে মাঝে কিছু একটা দেখছি, সেটা তখন আর কৌশিককে বললাম না।

আমরা কিছুক্ষণ পর পাকা রাস্তায় উঠে মাদ্রাসার দিকে এগুচ্ছি। ডান পাশে একটা রিসোর্ট। ১০ ফুট খাড়া প্রাচীরের বাউন্ডারী দিয়ে ঘেরা। হঠাৎ দুজনে থমকে দাঁড়ালাম। দেখলাম, রাস্তার বাম পাশ থেকে একটা ধবধবে সাদা বিড়াল ডান পাশে গিয়ে এক লাফে সেই ১০ফুট উঁচু প্রাচীরে উঠল, আমাদের দিকে তাকাল এবং নিচে লাফ দিয়ে হারিয়ে গেল। অস্বাভাবিক ব্যপার হল, অন্ধকারেও বিড়ালটা খুব সাদা দেখাচ্ছিল। আর ওটার সাইজ প্রায় একটা বড়সড় কুকুরের মত। বিড়াল কিন্তু আমরা কখনই তত বড় সাইজের দেখিনি। গাওড়া বা মেছো বিড়াল দেখেছি, তবুও ঐটার সাইজের না।

আবার হাটা শুরু করলাম। চায়ের দোকান বন্ধ। হঠাৎ ঝিরঝির বৃষ্টি পরা শুরু হল। বৃষ্টিতে যত না ভিজলাম, তার চেয়ে ঘেমে বেশি অবস্থা খারাপ। শাহপরান হলের কাছে এসে দেখি, নয়াবাজার রোড পানির নিচে। পানি ডিঙ্গিয়ে মেসে ফিরে গোছল দিলাম। ১ঘন্টা ৪৫মিনিট হেঁটে এসে পা যেন আর চলছিল না।

সে রাতে কিছু ঘটল না। মরার মত ঘুমিয়েছি। ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল পরের রাতে। সে রাতে বৃষ্টি নেই। আকাশ ভর্তি তারা। জানালা খুলে আমরা দু রুমমেট মশারী টাঙিয়ে ১২ টার আগেই শুয়ে পড়েছি। হঠাৎ ঘুম ভাঙল। জানালা দিয়ে বাইরের লাইটের আলো আমার মশারীর উপর পরেছে। চোখ মেলে দেখলাম একটা তেলাপোকা মশারির উপর হেটে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বুঝতে পাচ্ছিলাম না, ঘুম কেন ভাঙল?

এর ভেতরে অনুভব করলাম, আমার হাত পা কে যেন চেপে ধরে আছে। নড়াতে পাচ্ছি না। মাথা আলোগ করে দেখলাম পায়ের কাছে কেউ নেই। আমার রুমমেট নাক ডাকছে। সেটাও শুনতে পাচ্ছি। ওকে যে ডাকব, গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। এরপর একটা উড়ন্ত সাদা বেলুনের মত, যার নিচের দিকে আবার লেজের মত, সেটা আমার বুকের উপর চেপে বসল। কে যেন আমার মাথাও বালিশে ঠেসে ধরল।

তুলতুলে হাতগুলো আমার মাথা দুহাত দুপা চেপে ধরে আছে। ওরা মোট ৩জন। বুকের উপর যে বসে আছে, সে বলছে: সেদিন ভয় দেখালাম তাও পালালি না। দুজন ছিলি তাই কিছু করিনি। আজ কই যাবি? খুব সাহস তাই না?

এসব শুনতে শুনতে আমার গলায় দুহাতে চেপে ধরার মত কিছু একটা অনুভব করলাম। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। পুরো গা ঘেমে শেষ। অথচ রুমে দুটো ফ্যান চলছে। আমি ভাবছি, খারাপ স্বপ্ন দেখছি। হয়ত বোবায় ধরেছে। যদি কোন ক্রমে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল নড়াতে পারি তাহলে অবস্থাটা কেটে যাবে। কারন এভাবে আমি আগে বোবা ধরা কাটিয়েছি।



আমি দেখলাম, আমি পায়ের বুড়া আঙ্গুল নড়াতে পাচ্ছি, হাতের সব আঙ্গুল মুঠি করতে পাচ্ছি। কিন্তু নড়তে চড়তে পাচ্ছি না, মাথা ঘোরাতে পাচ্ছি না। কি এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। আয়াতুল কুরছি পড়ব, জ্বিবা নড়ছে না। মুখ হা করে মনে মনেই পড়া শুরু করলাম। ১ বার পড়ে ২য় বার পড়া শুরু করতেই সেগুলো আমার হাত পা ছেড়ে দিল। আমি তখন মশারির বাইরে ৩ টা অবয়বকেই দেখলাম উড়ছে। ৩য় বার জ্বিবা নেড়ে পড়ার সাথে সাথে সেগুলো জানালার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি উঠে বসলাম। আমার বিছানার চাদর পর্যন্ত ঘামে ভিজে চপচপ করছে। লাইট জ্বালিয়ে পানি খেলাম। সে রাতে আর ঘুম হল না।

পরের রাতে স্বপ্নে দেখলাম, সেই তিনটা জিনিস বলছে: তোর উপর কারও খাস দোয়া আছে। না হলে কালকেই তোকে শেষ করে ফেলতাম। এটুকু বলেই মিশে গেল। আমি জেগে দেখি ফজরের আযান দিচ্ছে। আমি দেরি না করে বাসে করে সেদিন বিকেলে হোম ডিস্ট্রিকে বাবা মার কাছে ফিরি। আব্বাকে ঘটনাটা বলি। আব্বা কোন এক হুজুরকে বলে কিছু একটা তদবির করেছিল। তারপর আর সমস্যা হয়নি। এই হল প্রথম ঘটনা।





ঘটনা ২:

এটা ১৯৩০-১৯৫৫ সালের ঘটনা। বগুড়া সূত্রাপুর এলাকার। এটা ঐ সময়ের এলাকাবাসী অনেকেই জানত। আমি শুনেছি আমার নানীর কাছে। ভিক্টিম হল আমার নিজের নানীর আপন নানী। এ্ই ঘটনাটা খুব বিশদ আকারে লিখব না। কারন ঐ সময়ের পরিস্থিতি পুরোপুরি আমাকে বলা হয়নি। যদিও ঘটনাটা নানীর কাছে কলেজ লাইফে শুনেছি। মানে অনেকটা বড় হলে শুনেছি।

শুরুটা এরকম যে, ঐ এলাকায় নানীর নানা মানে বুড়া নানা স্থায়ী বাসিন্দা। দুই তলা মাটির বাড়ি। কিন্তু মেঝে পাকা। দুই তলায় কেউ থাকে না। সংসারের হাবিজাবি জিনিস পত্র বা খাবারের ডাবর বা লেপ কাথা এসব রাখা হয়। অনেক মেহমান আসলে মাঝে মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করা যায়। এ রকম আর কি।

বুড়া নানা বুড়া নানীকে বিয়ে করে আনলেন। ওনারা বয়সে কিন্তু তখন কচি। বুড়া নানী খুব পরহেজগার ছিলেন। কুরাআনে হাফেজ। ঘটনা শুরু হয় বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে। ওনার ওপর জ্বীন ভর করে। পরপর দুটা বাচ্চা মারা যায়। উনি দিনে রাতে অদৃশ্য কারও সাথে কথা বলতে থাকেন। কোন তাবিজ কবজ কাজ করে না।

যেটা বিভিন্ন হুজুরের মাধ্যমে জানা গেল, বুড়া নানীকে এক জ্বীন পছন্দ করে। সে বুড়া নানীকে বিয়ে করতে চায়। এখানে তার কোন বংশ রক্ষা করতে দেবে না। এরপর বুড়া নানী সেই জ্বীনকে ওয়াদা করে যে, এই ঘরে এক ছেলে এক মেয়ে জন্ম দিয়ে তাকে বিয়ে করবে।

সে হিসেবে ছেলে মেয়ে হয়। তারা ৮-১০ বছর বয়স্ক হয়। এদিকে বুড়া নানী ছলে বলে কৌশলে ঘুরাতে থাকে সেই জ্বীনকে। শুরুতে বলত: দুধের বাচ্চা রেখে কি করে যাই। মানুষ অভিশাপ দেবে। এরপর আর একটু বড় হলে বলত: আমি মনের মত স্বতীন খুজতেছি। স্বামীকে বিয়ে দিয়ে বাচ্চাদের তার হাতে তুলে দিয়ে যাব।



জ্বীনটা বুড়া নানীর ছলা কলা এক সময় বুঝতে পারে। এক মধ্যরাতে মানুষের কান্নায় বুড়া নানার ঘুম ভাঙ্গে। দেখেন তার স্ত্রী বিছানায় নেই। দোতলার চিলেকোঠা থেকে কান্নার শব্দ আসছে। কন্ঠ শুনে বুঝলেন, এটা তার স্ত্রীর গলা। হেরিকেন নিয়ে গিয়ে দেখেন, অদৃশ্য থেকে কেউ তার স্ত্রীকে বেত্রাঘাত করছে। পুরো শরীরে ফুলে ফাটা ফাটা দাগ পড়ে গেছে। এরপর অজ্ঞান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

জানা যায়, বুড়া নানী জ্বীনের সাথে ছলনা করায় পিটিয়েছে। তাকে আর সময় দেবে না। এরপর বড় হুজুর দিয়ে তাবিজ লাগিয়ে গা বন্ধ এসব করে কয়েক বছর ভালই যায়। কিন্তু আবার সেই বিড়বিড় করে কথা বলা শুরু হয়। এবার তার ছোট মেয়ে গায়েব হয়ে যায় বাসার ভেতর থেকে।

সারা বাড়ি , এলাকা খুঁজেও পাওয়া যায় না। পরে, বুড়া নানী ঘর থেকে সবাই কে বের করে দিয়ে ২য় তলার অন্ধকার রুমে যায়, পুরোটাই এক রুম। কিন্তু নীচে সেটা কয়েকটা রুমে ভাগ করা। যাইহোক, অনেক মারধর কান্নাকাটির শব্দ পাওয়া যায়। পরে ভোর রাতে দরজা ভেঙ্গে মা মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। বুড়া নানীর গালে থাপ্পরের দাগ ছিল। সারা গায়ে তো জখম ছিলই।

এর পর আরও কয়েক বছর যায়। জ্বীনের উপদ্রপ কেউ বন্ধ করতে পারে না। সবাই এটা তখন মেনেই নিয়েছে। ছোট মেয়েটা তখন কিশোরী। জ্বীন কে বলত, মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েই তোমার কাছে সত্যি সত্যি চলে যাব। তখনও চিটিং করে বুড়া নানী। ছেলে মেয়ের বিয়ের পর বুড়া নানী বাসার সবার ভেতর থেকে উধাও। ৭ দিন পর জীর্ন শীর্ন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায় পায়খানার চাড়ির ভেতরে। সে সময় খোলা পায়খানা ছিল। নিচে মল মুত্রের চাড়ি থাকত। সুইপার এসে পরিস্কার করে দিয়ে যেত।

যাই হোক সুস্থ্য হলে জানা গেল, ঐ প্রেমিক জ্বীন তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। বিয়ের সব আয়োজন করে সেখানে। কিন্তু সে বুড়া নানাকে ছাড়া থাকবে না, মানে জ্বীনকে বিয়ে করবে না। তখন ৭ দিন ধরে তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। না খাইয়ে রাখা হয়। পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে রেখে যায়।



এরপর বুড়া নানী মোটামুটি বুড়ি। চুলে পাক ধরেছে। শেষ বার বুড়ানানা মধ্যরাতে ঘুম ভাঙলে দেখেন, বুড়ানানী ঘুমন্ত অবস্থায় হাওয়ায় ভাসছেন। তারপর দোতলা দিকে ভেসে ভেসে চলে যায়। লোকজন নিয়ে বুড়ানানা দোতলায় গিয়ে দেখেন, সেখানে বুড়ানানী নেই।

এভাবে ১৫দিন কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায় না। ১৫দিন পর দিবাগত রাতে সেই দোতলা থেকে কুকানোর শব্দ শুনতে পায় সবাই। গিয়ে দেখে উল্লঙ্গ অবস্থায় বুড়ানানী পড়ে আছে। তার গায়ের বিভিন্ন জায়গায়, ছেকা দেয়ার দাগ, বেত মারার দাগ, নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল।

প্রেমিক জ্বীনকে বুড়ানানী ওয়াদা করেছিল যে তাকে বিয়ে করবে। সে ছলনা করেছে, সেটা বোঝার পরেও বারে বারে ক্ষমা করেছে, সুযোগ দিয়েছে। শেষে ধৈর্য্যহারা হয়ে বারে বারে তুলে নিয়ে গিয়ে অনেক কিছুর লোভ দেখিয়েছে, শাস্তিও দিয়েছে। তাও বিয়ে করেনি। সবশেষ বার তার গোত্রের জ্বীনরা বুড়া নানীর শাস্তি নির্ধারন করে। যখন বুড়ানানী ছাকা/ মাইর এসব আর সহ্য করতে পারছিল না, তখন সেই প্রেমিক জ্বীন তাকে নিয়ে পালিয়ে তাদের জগৎ ছেড়ে চলে আসে। এজন্য হয়ত সে আর কখনও ওদের জগতে ফিরতে পারবে না।

বুড়ানানীর কিছু দিনের ভেতরে মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে বলেছিল: ঐ জ্বীনকে যেন সবাই ক্ষমা করে দেয়। সে খুবই ভাল এবং সৎ। আমিই সে তুলনায় খারাপ। কথা দিয়ে কথা রাখিনি। আমি তো আর বাঁচব না। আজ রাতটা তোমরা সবাই ঘরের বাইরে থাকো। ওর কাছে আমার ক্ষমা চাওয়ার আছে। তোমরা থাকলে সে আসতে পারবে না।

এই হল ঘটনা। সে রাতেই কোন এক সময় বুড়া নানীর মৃত্যু হয়। এরপর নিয়ম মাফিক দাফন কাফন করে। ঐ বাড়িটা যুদ্ধের পরেও অনেক দিন টিকে ছিল। তবে মালিক পক্ষের কেউ থাকত না। এখন সেই বাড়ির জায়গাটি ২য় কোন পক্ষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে এখন নতুন এক আবাসিক বিল্ডিং।



আসলে ভালবাসার মূল্য সবাই বোঝে না, সবাই দিতে জানে না...



মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২৫ ভোর ৫:১৮

কাঁউটাল বলেছেন: ছাগল খায় আম - এই লেখায় লাইক দিছে !! হের আইডি হ্যাক হইছে নাকি?

২৩ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৭:৪২

অপলক বলেছেন: আপনার চোখ তো দেখি খুব তীক্ষ্ণ। কোন কিছু এড়ায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.