| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অপলক
তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।
বাজার তদারকি দল এবং ভোক্তা অধিকার বহুল প্রচলিত ৩৮টি কম্পানির লবন ল্যাব টেস্ট করেছে, কোনটাতেই আয়োডিন নেই। সুন্দর প্যাকেট আর মিথ্যা বিজ্ঞাপন দেখে আমরা ৩.৫ টাকার (বর্তমান মূল্য) লবন খাই ৪০-৫০টাকা কেজিতে, যদিও আয়োডিন বলতে কিছু নেই।
২০২৫ সালে ৬৪ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড দেশে খাদ্য লবন উৎপানে হয়েছে। তবুও বর্তমানে লবণ উৎপাদনের কম্পানিগুলো সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইন্ডাসট্রেরিয়াল লবণের নামে খাদ্য লবণ আমদানি করে। আবার খাদ্য লবণের নামেও খাদ্য লবণ আমদানি করে। লাভ হল, দেশের টাকা পাচার, অতি মূনাফা আর জনগনকে ভেলকিবাজি দেখানো।
ভেলকিবাজিটা আয়োডিন শব্দটা জড়িয়ে দেয়াতে। আয়োডিন মানব শরীরের জন্যে দরকার। যদি আয়োডিন না-ই থাকে তাহলে খোলা লবণ আর প্যাকেটজাত লবণের পার্থক্য কোথায়? পার্থক্য আছে, সেটা দামে। পাইকারী বাজারে এক মন ওজনের বস্তার লবণ ৪০০টাকা বা তার কম। আর আপনি আমি যে লবণ খাই, সেটা ঝরঝরে করে চকচকে প্যাকেটে বন্দী করে হয়ে যায় ৪০টাকা, মানে ৪০ কেজির লবণের দামে আমরা পা্ই ১০ কেজি।
আপনি কি জানেন, ৪০০টাকা মনের লবণ এবছর লবণ চাষীদের কাছ থেকে কত দরে ব্যবসায়ীরা কিনছে? মাত্র সাড়ে ৩ টাকা থেকে ৬ টাকার মধ্যে প্রতি কেজিতে। অর্থাৎ ১ মন লবনের দাম, ১৪০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৭০টাকায়। তাও সেই মন হল ৪৫কেজি তে। যদিও বছরের শুরুতে ৫ টাকা কেজির আশে পাশে ছিল এ দাম। এর উপর চাঁদা বাজদের আবার ৩টাকা করে মন প্রতি দিতে হয়।
এবছর আমি পরীক্ষামূলক ভাবে ৩ কেজি খোলা লবণ কিনেছিলাম ৩০টাকায়, মানে বস্তার লবণ খুচরা বাজার থেকে, দেশী লবণ যেটা কিনা পশু খাদ্য হিসেবে বিক্রি হয়। কোন সমস্যা হয়নি খেতে বা স্বাদে। আপনারও হবে না আশা করি।
সাধারনত: গরুর খামারীরা, মাছ চাষীরা এ সব লবন কিনে থাকেন। তবে গ্রামের দিকে গিয়ে দেখলাম, অনেক দরিদ্র মানুষ খোলা লবন কিনছে নিজেদের খাওয়ার জন্যে। তাদের কারও গলা ফোলা / গলগন্ড রোগ দেখলাম না। তবে চরাঞ্চলে আমি দু একজন বয়স্ক মানুষকে দেখেছি যাদের গলগন্ড রোগ আছে। যারা বর্ষায় চর ডুবে না গেলে, সারা বছর চরেই জীবন কাটান। তারা সাধারনত নদীর পানি বা অগভীর টিউবয়েলের পানি পান করেন, তাই এ রোগ হওয়া স্বাভাবিক।
এবার দেখা যাক আয়োডিনের তীব্র অভাবে কি কি রোগ হয়?
- চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
- স্বাভাবিক কাজকর্মে অলসতা আসা
- মহিলাদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়া
- মহিলারা গর্ভধারন না করা
- ঘ্যাগ বা গলগন্ড রোগ হওয়া
আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক সহনীয় হয়েছে। আগের তুলনায় মানুষ নিজেও সচেতন। কাজেই গর্ভ ধারনে সমস্যা বা গর্ভবতী মায়ের শারীরিক নমুনা দেখলেই ডাক্তার আয়োডিন ও আয়রন ট্যাবলেট দিয়ে থাকেন। আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পরামর্শ দেন। কাজেই আয়োডিন যুক্ত লবণের ভাওতাবাজি আমাদের উপেক্ষার সময় হয়েছে। দুর্নীতি গ্রস্ত কম্পানিগুলো সাজা দিতে, তথা প্রকৃত লবণ চাষীদের বাঁচাতে আমাদের অতি মূল্যে প্যাকেট লবণ কেনা বন্ধ করা উচিত।
হয় কৃষকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের বেশি মূল্যে লবণ কিনতে হবে আর না হয় প্যাকেট লবণের দাম ২০ টাকার নীচে বেঁধে দিতে হবে। সাথে সাথে সরকারের উচিত লবণ আমদানি বন্ধ করে দেয়া। গত বছর ১ লাখ টন খাদ্য লবণ আমদানির অনুমতি সরকার দিয়েছিল। যদিও গত বছরের উৎপাদিত ১৪ লাখ টন লবণ কৃষকদের হাতে মজুত আছে।
সংক্ষেপে লবণের একটা পরিসংখ্যান দেই :
-- ২০২৫ এ দেশের লবণের চাহিদা ২৪-২৫ লাখ টন
-- ২০২৫ এ লবণ উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার টন
-- ২০২৫ এ এখন পর্যন্ত দেশে উৎপাদিত লবণের পরিমান ২৩লাখ টন
-- গত বছরের অবিক্রীত লবণের পরিমান ১২লাখ টন প্রায়
-- জাতীয় অর্থনীতিতে লবণ চাষীদের অবদান ৩৫০০কোটি টাকা প্রায়
-- ২০২৪ সালে সরকার ১ লাখ টন ক্রুড লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছিল, এনবিআর বলছে ৫.১৫ লাখ টন আমদানি হয়েছে। আর ২০২৫ সালের তথ্য অপ্রকাশিত।
--সোডিয়াম ক্লোরাইড (খাবার লবন) ২৫ লাখ টনের মধ্যে ৯ লাখ টন মনুষ্য ভোজ্য লবণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, ৬ লাখ টন মাছ ও পশু খাদ্যে এবং বাকিটা শিল্প খাতে।
-- ২০২৪ মার্চে দাম ছিল ৪৮০টাকা মন, ২০২৫ মার্চে ২৬০টাকা মন, ২০২৫অক্টোবরে ১৫০-১৮০টাকা প্রায়
-- নথি অনুযায়ী ৪১ হাজার ৩৫৫ জন প্রান্তিক লবণ চাষী আছে, প্রায় ৫ লাখ শ্রমিক লবণ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার। নায্য দামে দেশের লবণ খাবেন নাকি বেশি দামে একই লবণ খেয়ে মধ্যস্বত্য ভোগীদের ভুঁড়ি মোটা তাজা করবেন?
লবণ উৎপাদনে ৬৪ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড
দেশে উৎপাদন পর্যাপ্ত, তবু লবণ আমদানি
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে লবণ চাষিদের বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদ
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮
অপলক বলেছেন: সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই...
২|
২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: সব দোষ শেখ হাসিনার।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: দেশি লবন চাষীদের বাঁচাতে হবে।