![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিনা খালা গত ক'দিন ধরে খুব অসুস্থ ।তাকে দেখতে যাব যাব করে যাওয়া হচ্ছেনা। আজ হঠাত করে খবর এলো মিনা খালা আর বেচে নেই। এই খবর রীতিমত আমাকে ঘাবড়ে দিল।
রাত বেশি না। এখন রওয়ানা দিলে শেষ বাসটা ধরতে পারব। খালার মৃত্যুর খবর আমাকে খুব ইমোশনাল করেছে কারণ মাত্র ক'দিন আগে খালা আমাদের বাসায় এসেছিলেন। তখন তাকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি অথচ আজ আর তিনি পৃথিবীতে নেই।
খালার বাড়ি গ্রামে, সে ঢের দূর। তবুও আমাকে যেতে হবে। না গেলে রিতা কি বলবে?
রিতা আমার খালাত বোন। আমরা খুব ভালো বন্ধুও। রিতার জন্য খুব খারাপ লাগছে। রিতার কথা ভাবতেই কেমন যেন গা শির শির করে উঠল। এই সেই রিতা যাকে আজ থেকে তিন বছর আগে এক শীতের রাতে জড়িয়ে ধরে প্রায় কান্নাই করেছিলাম।সে খুব জোর করে আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিল,সেই ঘঠনার জন্য আজও আমি অনুতপ্ত। এর পর আর রিতার সাথে কথা নেই। রিতা অনেক বার আমাদের বাসায় এসেছে কিন্তু আমার সাথে নিজ থেকে কথা বলতে আসেনি। আর আমিও গায়ে পড়ে কথা বলিনি।
স্টেশনে পৌছে দেখলাম ঘড়িতে বাজে মাত্র আটটা। শীত মাত্র পড়া শুরু করেছে। আমি একটা শাল গায়ে দিয়ে বের হয়েছি।শালের কারণে আমার শীত লাগছেনা। স্টেশনে তেমন কোন ভিড় নেই। একটা বাস যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করেছে। আমি উঠে পড়লাম।
আমি গাড়িতে উঠতেই পিছন থেকে এক বৃদ্ধ আমাকে চমকে দিয়ে বলে উঠলেন, এই গাড়িতে যেতে চাও ভালো কথা যাও কিন্তু মাঝ পথে যদি কোন বিপদ হয় তবে আমাকে বলতে এসোনা। আমি এসবের কিছুই জানিনা।
বৃদ্ধের কথায় কান না দিয়ে আমি গাড়িতে উঠলাম কারণ আমাকে যেতেই হবে। এরপরে আর কোন বাস পাওয়ার সম্ভবনা নেই।
আমিসহ গাড়িতে আরো তিন জন যাত্রী। ড্রাইভার গাড়ীতে উঠে স্টার্ট দিল। ড্রাইভারকে দেখে আমি কিছুটা আশ্চর্য হলাম কারণ যে লোক আমাকে গাড়িতে উঠতে কথা শুনিয়েছিল সেই বৃদ্ধ লোকটিই ড্রাইভার। বিষয়টা আমার কাছে খুব অদ্ভুত লাগল। আমি ওদিকে মনোযোগ না দিয়ে মোবাইল বের করে আম্মুকে ফোন দিলাম।
গাড়ি চলছে। জানালা খোলা ছিল বলে ধু ধু বাতাস এসে আমার কানে লাগছিল। আমি জানালাটা বন্ধ করতে গিয়ে অদ্ভুত একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম। আমি দেখলাম আমাদের গাড়ির পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর অদ্ভুত ব্যাপার হল মেয়েটি দাঁড়িয়ে অথচ গাড়ি চলছে কিন্ত আমি মেয়েটিকে সরে যেতে দেখিনি। সে গাড়ীর সমান বেগে আমাদের দিকে আসছে এটা কিভাবে সম্ভব? আমি চোখ ভাল করে বন্ধ করে খুললাম। আমার সাথে হ্যালোসিনেশন হচ্ছেনা তো?
আমি কিছুটা ভয় পেলাম, ভয় পাওয়ারই কথা। আমি হেল্পারকে ডেকে বললাম, ভাই লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিন।
সে কর্কশ গলায় বলল, লাইট জ্বালানো যাবেনা। গেলে যান না গেলে নেমে পড়েন।
আমি আর কিছু না বলে মোবাইলে গেম খেলা শুরু করলাম। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে আমি হঠাত করে ঘুমিয়ে পড়লাম অথচ গাড়িতে চড়তে আমার কখনোই ঘুম পায়না। এটা কি করে সম্ভব?
যখন ঘুম ভাংল তখন আমি বুঝতে পারলাম গাড়িটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং গাড়িতে কোন যাত্রী নেই এমনকি ড্রাইভার হেল্পারও নেই।
আমি ভীষণ ভয় পেলাম। বাহিরে চাঁদ উঠেছে। চাঁদ এর আলোয় পুরো গাড়ির ভিতর ফর্শা। আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোঠেও প্রস্তুত ছিলাম না।
গাড়িটি রাস্তায় নেই। ধান খেতের মাঝখানে গাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কি করব বুঝতে পারছিনা, গাড়ীতে বসে থাকব নাকি গাড়ি থেকে নামব?
আস্তে করে উঠে আমি গাড়ির ভিতর ভালো করে দেখলাম। না কোথাও কিছু নেই। চারিদিকে সুনসান নিরবতা।
আমি গাড়ি থেকে নামলাম। চার পাশে ধান খেত। পাকা ধান। আমি হাটা শুরু করলাম। কি হচ্ছে আমার সাথে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। মনে মনে আমি দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম।
কিছু দূর আসার পর মনে পড়ল আমি মোবাইল নিয়ে আসিনি, মোবাইল গাড়িতে ফেলে এসেছি। সাহস করে মোবাইল আনতে আর গেলাম না।
আমি কোন দিকে হাটছি আমি নিজেও জানিনা। এই হাটার শেষ কবে হবে তাও জানিনা।
হঠাত করে কি যেন একটা আমার পায়ের কাছ দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। আমার শরীরের সব ক'টি লোম কাটা দিয়ে উঠল। আমার মনে হচ্ছে আমি আর বাচবনা। আজকেই আমার জীব্নের শেষ দিন, কিন্তু না আমি খুব সাহস করে সামনে এগুতে লাগলাম। আরেকটু সামনে গিয়ে আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোঠেও প্রস্তুত ছিলাম না।
সেই বৃদ্ধ ড্রাইভারটি একটি তাল গাছের সাথে ঝুলে আছে, চোখ দুটি কোটর থেকে অনেকটা বেরিয়ে এসেছে এবং জিহ্বাটাও মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। কোন কিছু না ভেবেই আমি উলটো দিকে দৌড় দিলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি আবার আমার সেই গাড়ির কাছে চলে আসলাম।
আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। গাড়ীতে উঠব নাকি আবার দৌড়াব?
আমি দৌড়াতে শুরু করলাম, হঠাত শুনতে পেলাম আজান পড়ছে। আজানের ধ্বনি শুনে সামনের দিকে এগুতে লাগলাম, অনেকটা পথ যাওয়ার পর দেখলাম একটি মসজিদ থেকে কিছু লোক নামাজ পড়ে বেরিয়েছে।
আমি হাপাতে হাপাতে তাদের কাছে পৌছালাম। তারা আমাকে পানি খাওয়াল। তাদেরকে আমি আমার কাহিনি খুলে বললাম,
তারপর তারা আমাকে যে কথা শুনাল তা শুনে আমার পিলে চমকে গেল। গত রাতে নাকি ওইখানে একটি বাস এক্সিডেন্ট হয় আর ওই বাসের ড্রাইভার নাকি খুব বুড়ো ছিল। সে জায়গাতেই মারা যায়।
এই ঘটনার ব্যাখ্যা আমি খুজে পাইনি। কেন এমন হয়?
আসলে কি আমার সাথে এসব ঘঠেছিল? যদি ঘঠে থাকে তবে এটা কি করে সম্ভব?
(ঘঠনাটি আমার এক বন্ধুর কাছে শুনা, আশা করি সবার ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।)
লেখকঃ চৌধুরী মোহাম্মদ ইমরান
এম সি কলেজ, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ।
©somewhere in net ltd.