নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিভৃতচারী এক বোহেমিয়ান আবেগী যুবক।
আমি এখন পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগীর মত বিছানায় শুয়ে থাকি অধিকাংশ সময়। আগের সেই দিনগুলো এখন আর ফিরেআসেনা।সেই দিন গুলোতেও আমি এমন শুয়ে থাকতাম ছুটির দিনে।নীল-সাদার ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কেউ যদি জিজ্ঞেস করত কী করছি আমি,আমি চট করে উত্তর দিতাম,"আলসেমি"।
সেদিনের ছুটির দিনগুলোকে আমি বলতাম আমাদের 'ঈদের দিন"। শুক্র-শনি এ দু' দিন আমাদের ভার্সিটি বন্ধ থাকত।আমি মজা করে ঘুমাতাম যতক্ষণ না আমার পায়ের কাছের জানালাটা দিয়ে মিষ্টি রোদ আমার মুখে নরম পরশ বুলাতো।আজও পায়ের কাছের জানালা দিয়ে প্রতিদিন সেই পুরোনো রোদ এসে আমায় আদর করে।কিন্তু আমি এখন পাশ ফিরে শুই,চিরচেনা রোদকে কেন জানিনা মিষ্টি লাগেনা যে আর।
আমার ডেইলি রুটিনটা একটু বদলে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে আমি এখন মস্ত সুখে আছি। আমার আসে-পাশের মানুষগুলোও কেমন যেন বদলে গেছে। যে মা রাত তিনটা পর্যন্ত মোবাইল হাতে জাগলে আগে খুব রাগ করত,প্রতিদিন সকালে বিছানায় থাকতে সেই মা-ই এখন চার্জ থেকে মোবাইলটা খুলে আমার হাতে দেয়।যে বোন আগে আমার দুর্গন্ধযুক্ত কাপড়ের জন্য যাচ্ছেতাই বলত আমায়,সেই মেয়েটাই আজ পরম যত্নে আমার জামা-কাপড় কেচে দেয়।আমার মা'কে আমি এখন আর কাঁদতে দেখিনা কখনো। তবে মাঝে মাঝে যখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হই,খুব পরিচিত একটা ফোঁপানির আওয়াজ শুনতে পাই মাঝে মাঝে।
আমার সব বন্ধুরা দেখতে এসেছিল আমায় সেদিন।ভাবলে অবাক লাগে,আমি এখন কত্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা মানুষ যেন!! সবার শত গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন একটাই নাম। নামটি আমারই।তারপর এক সময় চাঁদের হাট ভাঙে,ওরা ফিরে যায় ওদের গন্তব্যে...এদেরই কেউ বড় অফিসার,ভার্সিটি টিচার হবে।কিন্তু আমাকে সাথে নেয়না ওরা,চাইলেও যে পারবে না।তবু ক্লাসের ফাঁকে ওরা সবাই যোগাযোগ করে আমার সাথে নীল- সাদার দুনিয়ায়।আমি মন্ত্র-মুগ্ধের মত শুনি প্রিয় স্যার-ম্যাডামদের সেই চিরায়ত গল্পগুলো, ওদের মুখে।
অদ্ভুত মানুষ এখন আমি।আমার ছোট্ট ছোট্ট ইচ্ছেগুলো পূর্ণ হচ্ছে এখন।আমি এখন আমার প্রিয় বইগুলো চাইলেই পাই হাতের কাছে। যারা আমায় ভালবাসে,তারা সাধ্যমত চেষ্টা করেছে আমার জন্য। তবে প্রিয় আকাশের নীল রঙটা কেন জানি আর আগের মত লাগেনা।
আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারিনি।না,পাপের ভয়ে নয়..স্বপ্নমৃত্যুর ভয়ে।আমার সাথে যে আমার স্বপ্নগুলোও মরে যাবে।তবে ঈশ্বর বলে যদি কেউ থেকে থাকেন,তবে তিনি হয়ত সেদিন আমার মৃত্যু-প্রার্থনায় মুচকি হেসে "তথাস্তু" বলেছিলেন নিভৃতে। তাই হয়ত,আমি ঘুমিয়ে গেলে শেষ প্রহর গোণা,টাক মাথার একমাত্র ছেলেটার কথা ভেবে চির স্বপ্নাতুর আমার মায়ের চোখে আজ অশ্রু ঝরে।
©somewhere in net ltd.