![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হঠাৎই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল বিজয় বাবুর। ঘামে বিছানার চাদর একেবারে চুপসে গেছে। মাথার ওপরের পুরোনো সিলিং ফ্যানটা ঘর ঘর করে ঘুরছিল। চৈত্রের দুপুরে ফ্যানের বাতাস শরীর ছোঁয়ার আগেই উবে যায়।
আস্তে করে উঠে বসলেন বিজয় বাবু, টেবিলে ঢেকে রাখা এক গ্লাস জল নিমেষেই শেষ করে ফেললেন। হার্টবিটের শব্দটা কানে না আসলেও অনুভব করতে পারছিলেন। স্বপ্নটা তিনি আজ আবার দেখেছেন। ঠিক একই ভাবে শুরু, একই ভাবে শেষ।
স্বপ্ন বলতে ঠিক দুঃস্বপ্ন নয়, ছেলে বেলার বিশেষ এক স্মৃতি। সত্তর বছর বয়সে ছেলে বেলার স্বপ্ন রীতি মতন সুস্বপ্নই বটে, কিন্তু স্বপ্নটার এক বিশেষ দিক ওনাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
মাস খানেক আগে এক মাইনর এট্যাক হয়েছিল বিজয় বাবুর, তারপর থেকেই তিনি অনেকটা গৃহবন্দী। এর আগে দিব্যি বাজার ঘাট করতেন, নাতনীকে স্কুলে দেয়া নেওয়া করতেন, বিকেল বেলা বন্ধু আর পুরনো কলিগদের সাথে হাঁটতে যেতেন। এখন প্রায় সবই বন্ধ। আসলে নিজেই একটু ভয় পেয়ে গেছেন। কারো এক অদৃশ্য ইশারায় সব কিছুই যেন থামিয়ে দেওয়ার সমন জারি হয়েছে।
বছর দশেক হচ্ছে এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে অবসর নিয়েছেন বিজয় বাবু। এক মাত্র ছেলে বিনয় ও ব্যাঙ্কেই আছে। ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনীকে নিয়ে বেশ সুখের সংসার ওনার। স্ত্রী গত হয়েছে ওনার অবসরের আগেই।
টয়লেট গেলে ভালই হত, কিন্তু একে দুপুরের ঘুম তারপর আবার এমন আচমকায় ভেঙ্গে যাওয়ায় বিছানা থেকে নামার সাহস পেলেন না। মাথা ঘুরে পরে জাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দিন চারেক আগে বিজয় বাবুর ছেলে বিনয় একটা খবর নিয়ে এসেছে। সুষমার পরিবার নাকি দেশে আসবে।
বিজয় বাবুর শৈশব কাটে উত্তর বঙ্গের এক পাড়া গাঁয়ে। কোন এক শরতের অষ্টমীর সকালে দুর্গা পূজার মন্ডপের ধূপের ধুঁয়া ভেদ করে লাল পেড়ে শারি পরা পনের বর্ষীয় সুষমা হাতে প্রসাদের থালা নিয়ে আবির্ভূত হয় বিজয় বাবুর সামনে, তাও সে বছর পঞ্চাশেক আগের কথা। একে একে সকলের হাতে শশা, বরই, নারিকেল পেয়ারা দিতে দিতে বিজয় বাবুর পালা আসতেই চার চোখের প্রথম মিলন ঘটে। সদ্য শৈশব পেরনো মেয়েটির বিজয় বাবুর চোখের ভাষা পরতে এত টুকুও কষ্ট হয়নি।
তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় প্রেম ভালবাসা ছিল সকলের কাছে ঘৃণার বিষয়। অলস দুপুরে বিজয় বাবুর হৃদ্যয়ের রক্ত ক্ষরণ যখন এক একটা আস্ত আস্ত চিঠি প্রসব করছিল, তার ভাষাই সুষমাকে সমাজ বিরোধী হওয়ার সাহস যোগায়।
এর পরের সবটাই যেন স্বর্গীয় অনুভূতি। শরীরে বয়ে যেত কখনই না ফুরনো বসন্তের হাওয়া, অথচ ভেতরটায় অবিরত বৈশাখী ঝড়। সামান্য বৃষ্টির ফোটাতেও খুঁজে পেতে লাগলেন জীবন এর অর্থ। এক একটি চিঠি যেন তাঁকে আরও পরিণত করে তুলছিল। প্রতিটা মুহূর্তে দু চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে চাইতেন একে অপরকে।
বেরসিক সমাজের কাছে এসবের কোন মর্মই ছিল না। লাউ ডগার মত ওই সরু হাত খানি স্পর্শ করতে অপেক্ষা করতে হত পূজা পার্বণ অথবা গ্রামের মেলার। মানব সমুদ্রের চাইতে ভাল হারিয়ে যাওয়ার যায়গা আর পৃথিবীতে হয় না।
সরস্বতী পূজার মণ্ডপে ভিড়ের মাঝে চুপ করে হাতে বড়ই গুঁজে দেওয়া আর বড়ই পারতে গিয়ে কাঁটার আচর লাগার সহানুভূতি পাওয়ার লোভ কখনই সামলাতে পারতেন না বিজয় বাবু। দুর্গা পুজর সময় মণ্ডপে যাওয়ার নাম করে নির্জন নদীর ধারে একান্ত কিছু সময় কাটানর সৌভাগ্য হত তাঁদের। উপহার হিসেবে নিজ হাতে পাড়া ওই বরই, তেঁতুল, পেয়ারা পেলেই সুষমার বিস্ময়ের শেষ থাকত না। মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকত বিজয় বাবুর দিকে। কখনও বা কল্মি ফুল গুঁজে দিতেন চুলে, শরীরে ছড়িয়ে দিতেন এক মুঠো বকুল ফুল।
মেলয় দুজনে হাত ধরে মিলিয়ে যেতে চাইতেন ভিড়ের মাঝে। লাল নীল চুরি ফিতে এসবের পশরা সাজত যেন তাদেরি জন্য।
কোন এক দুর্গা পূজায় যখন সন্ধ্যা আরতি চলছিল, সকলের চোখ ফাকি দিয়ে মণ্ডপের পেছনে হ্যাজাকের আলতো আলো উপেক্ষা করে বিজয় বাবু প্রথম ঠোঁট ছুঁইয়েছিলেন সুষমার নরম গালে। সুষমার লজ্জা রাঙ্গা মুখে সেদিন এক ঐশ্বরিক দীপ্তি দেখেছিলেন।
এর পরের গল্পটা হয়তো অন্য রকম হতে পারত, কিন্তু একাত্তরে মুক্তি যুদ্ধের প্রভাব তাদের ওপরেও সমান ভাবে পরল। সুষমার বাবা পরিবার নিয়ে রাতারাতি দেশ ছাড়লেন, বিজয় বাবু পালিয়ে বেড়ালেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। সে এক লম্বা বিচ্ছেদ।
দেশ স্বাধীনের পর সুষমার কাকা পরিবার নিয়ে ফিরলেও সুষমারা কেও ফিরল না। বিজয় বাবুর বাবার সাথে সুষমার কাকার বন্ধুত্বতার সূত্রে সুষমাদের কলকাতার ঠিকানা পেতে খুব একটা কষ্ট হয়নি।
কিন্তু যতক্ষণে বিজয় বাবু কোলকাতায় পৌঁছলেন ততদিনে সুষমা অন্যের স্ত্রী। বালি গঞ্জের তিনতলা বারির সামনে টানা দুই দিন দাড়িয়ে থাকার পর আপাদমস্তক এক গৃহিণী বারান্দায় কাপড় শুকতে এসে নিচে চোখ যেতেই যখন হঠাৎ থমকে গেলেন তখন বিজয় বাবুর চিনতে আর কষ্ট হল না।
সুষমা কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পাথরের মত দারিয়ে থাকল। বিজয় বাবু আগ্রহ ভরে এক পা সামনে এগিয়ে একটা অপ্রসস্থ হাসি দিলেন, তাতে অবশ্য সুষমার চাহনিতে কোন পরিবর্তন হল না। হাতের ভেজা কাপড় গুলো থেকে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পরতে লাগল। বিজয় বাবু হাসিটা ধরে রেখে আর এক পা এগোতে চাচ্ছিলেন, আর মনে মনে স্বর্গ থেকে পুষ্প বৃষ্টির কল্পনা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে যেন কিছু শবদেহ বাহক মুখে বলহরি হরিবোল রব তুলে তাদের মাঝখানে এক মানব প্রাচীর তৈরি করে ফেলল।
মানব প্রাচীর ভেদ করে সামনে এগতেই শূন্য বারান্দা আর বন্ধ দরজা ছাড়া আর কিছুই চোখে পরল না।
সেদিনের মত ফিরে এসেছিলেন বিজয় বাবু, কিন্তু মনে মনে ভালবাসার এই অপমৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না। কিছুদিন পর স্বামীর অনুপস্থিতিতে আবার হানা দিয়েছিলেন সুষমার বাসায়। কথা বলেছিলেন সামনাসামনি। কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন যে সেদিনের সেই সমাজ কে বুড়ো দেখানো মেয়েটিকে আজ সমাজ আস্টে পিষ্টে জরিয়ে ধরেছে, তখন আর জোর করেননি। দেশে ফিরে এসেছিলেন।
বছর খানেক সময় লেগেছিল ক্ষত সারতে। তারপর পরিবারের চাপে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। কিন্তু মনের কোন এক কোনে সুষমা যে ঘাপটি মেরে ছিল বিজয় বাবু আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছেন।
বিজয় বাবুর ছেলে বিনয় আর সুষমার কাকার ছেলে একই ব্যাঙ্কে চাকুরী করেন। ওনার কাছ থেকেই সুষমাদের দেশে আসার খবর আনে বিনয়। বিনয়ের আমন্ত্রণে সুষমার পরিবারে বাসায় আসার কথা। দিন তিনেক আগে বিনয় নিজে বিজয় বাবুকে জানালে বিজয় বাবু খুব একটা আগ্রহ নেই এমন ভাব করার চেষ্টা করেছিলেন, পাছে সুষমার প্রতি তার দুর্বলতা ছেলের চোখে পরে যায়। যদিও এর কোন সুযোগ নেই, কারণ সুষমা আর বিজয় বাবুর বিষয়টা তারা দুজন ছাড়া পৃথিবীর তৃতীয় কেও কখনই জানতে পারেনি। তারপরেও কেমন জানি একতা সঙ্কোচ বোধ করছিলেন। আর সেই জন্যই সুষমাদের বিষয়ে বিস্তারিত তেমন কিছু জানতে সুযোগ হয়নি ওনার। ছেলে তার বউকে বলার সময় ঘর থেকে যতটুকু কানে আসে শুধু সেই টুকুই।
স্বপ্নটার আবির্ভাব হয় খবরটা আসার ঠিক পর থেকেই। গত তিনদিনে কম করেও পাঁচ বার দেখেছেন স্বপ্নটা। সেই চিরোচেনা নদীর ধার, বকুল আর কল্মি ফুল। মেলার ভিড়ে হাতে হাত রেখে ছুটে চলা। স্কুল থেকে ফেরার পথে সুষমাকে অনুস্মরণ করা, পূজা, মন্ডব, ধূপের ধোঁয়া, ঢাকের শব্দ একে একে সব বায়স্কোপের মত ভেসে উঠছিল ।
স্বপ্নটা সবদিক দিয়েই একটা সুস্বপ্ন হতে পারত। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল তখন, যখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার স্বপ্নে সব কিছু স্পষ্ট অনুভব করতে পারলেও নিজের সে সময়ের চেহারাটা স্পষ্ট উনি স্পষ্ট দেখতে পারছিলেন না। হয়তো নিজের অবস্থান থেকে স্বপ্নটা দেখা বলে।
কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে সত্যিই যখন সে সময়ের নিজের চেহারা মনে করতে পারছিলেন না, তখন কেমন জানি একটু উদ্বিগ্ন অনুভব করলেন। স্বপ্নের ভাল দিক গুলো ছাপিয়ে সামান্য এই বিষয়টা মাথার মধ্যে বারবার ঘুরপাক খেতে লাগল বিজয় বাবুর। সুস্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নিল।
পশ্চিমের জানালা দিয়ে পর্দা চিড়ে আলো এসে বিজয় বাবুর মুখে পরছিল। তিনি অকারণে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর ধীর পায়ে বিছানা থেকে নেমে টয়লেট সেরে খাটের তলা থেকে একটা ভারী ট্রাঙ্ক খুলে বেশ কিছু পুরনো ছবির এ্যালবাম বের করলেন। গুচ্ছের কিছু সাদা কালো ছবি। প্রায় বেশির ভাগেরই রঙ উঠে গেছে। অস্পষ্ট হয়ে গেছে। যে দুই একটা রঙ্গিন ছবি আছে সেগুলো তাঁর ছেলে বিনয়ের। বিজয় বাবু এ্যালবাম ঘেঁটে নিজের পুরনো ছবি খোঁজার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সব চাইতে পুরোনো যেটা বের হল সেটিও বিয়ের পরের। সেগুলো দেখেও খুব একটা সুবিধা করতে পারলেন না। হতাস হলেন বিজয় বাবু। কেমন জানি একটা উৎকন্ঠা আর অসসস্থি বোধ হতে লাগলেন।
ছবি থেকে মনোযোগ সরিয়ে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলেন। খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন নিজেকে। সুষমা পরবর্তী সময়ে নিজেকে কেমন দেখতে তা নিয়ে কখনই মাথা ঘামাননি । এতদিন পর সুষমা চিনতে পারবে তো? হঠাৎ কেমন জানি একটা সঙ্কোচ বোধ হতে লাগল।
মাথা ভর্তি সাদা চুল, কুঁচকে যাওয়া চামড়া আর প্রায় দাঁতহীন মুখে নিজেকে খুব কুৎসিত বলে আবিষ্কার করলেন তিনি। সত্তর বছরের বার্দ্ধক্য জনিত স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করতে মন চাইছিল।
বর্তমান চেহারা থেকে শৈশবের চেহারার কোন হদিস করতে পারলেন না বিজয় বাবু। এক বুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিছানায় এসে বসলেন। স্বপ্নটা বারবার মাথার মধ্যে ঘুরছিল, কেও যেন কোন একটা কঠিন ধাঁধাঁর ছুঁড়ে দিয়ে বিদ্রূপের হাসি হাসছে।
দিন কতক এই ভাবেই কাটালেন বিজয় বাবু, স্বপ্নটা ঘুরে ফিরে আসছিল। সুষমার কচি মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলেও নিজের চেহারাটা আড়ালেই থেকে গেল। এর মাঝে বাড়ি জুড়ে তন্নতন্ন করে নিজের পুরনো ছবি খুঁজলেন, ছেলেকে এড়িয়ে আত্মীয় স্বজন দের কাছেও খোঁজ করতে ছাড়লেন না। কিন্তু কিছুতেই কোন ফল পেলেন না।
সুষমাদের আসার দিন আস্তে আস্তে এগিয়ে আসল। মনে মনে অজানা এক উত্তেজনা বোধ করছিলেন বিজয় বাবু। এতদিন পর সুষমার আগমন বিজয় বাবুর বিচার বুদ্ধির প্রাকৃতিক নিয়মকে তছনছ করে দিচ্ছিল। কৈশোরের উত্তেজনা অনুভব করছিলেন শরীরে এবং মনে। সেই সাথে কৈশোরের চেহারা খুঁজে ফেরার বিড়ম্বনা তো ছিলই।
কখনো কখনো মনে হচ্ছিলো সুষমার কি মনে আছে তাঁর কৈশোরের চেহারাটা? ওনাকে কে কি হদিস দিতে পারবে, দেখতে কেমন ছিলেন তিনি? সুষমাই তো শেষ ভরসা। তাঁর কৈশোরের সব চাইতে বড় সাক্ষি।
অবশেষে শুক্রবার সকালে বিজয় বাবু জানতে পারলেন, সুষমার পরিবার দুপুরের দিকে আসবে। বিজয় বাবু ঠিক বুঝতে পারলেন না নিজেকে ঠিক কি ভাবে উপস্থাপন করা যায়। অবশেষে গত পূজায় ছেলের দেওয়া প্যান্ট আর শার্টই বের করে পরলেন। ধুতি পাঞ্জাবি পরে তথাকথিত বৃদ্ধ সাজতে ইচ্ছা করল না। একবার ভাবলে চুলে কলপ করলে ভালই হত, কিন্তু চক্ষু লজ্জা দায় ঠেকল।
সাড়ে এগারোটার দিকে কলিং বেল বেজে উঠল। বিজয় বাবু ঠাঁই হয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে রইলেন। ঘরের দরজা আধা ভেড়ানো। সশব্দে মাথার অপরে ফ্যানটা চলছে। সম্ভবত বিনয়ই দরজা খুলেছে, বেশ কিছু মানুষের হুল্লোড় শোনা গেল। বিজয় বাবুর চোখ স্থির, অনড়। কান শুধু ছটপট করে কারো আওয়াজ খুঁজে বেড়াচ্ছে। শব্দ আস্তে আস্তে কমে আসল, হয়তো সবাই বসবার ঘরে জমায়েত হয়েছে। বিজয় বাবু আগের মতই স্থির, যেন এক মহা ধ্যানে বসেছেন।
হঠাৎ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল। চমকে উঠলেন বিজয় বাবু।
“বাবা, এসো একবার। তোমাকে দেখতে চাইছে তো।“
বিজয় বাবু নিজেকে সামলে নিয়ে-
“হুম, আসছি। তুমি যাও”
“আমি ধরব?”
“না না...।তুমি যাও, আমি পারব।“
নিজেকে কোন ভাবেই অসহায় প্রমাণ করতে চান না বিজয় বাবু। ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠলেন। উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর উত্তেজনায় হাঁটু কাঁপছিল। বুকের ভেতরটা কেমন জানি দুরুদুরু করছিল। এই দুরুদুরু যে হার্টের রোগ জনিত কোন সমস্যা না সেটা তিনি ভালই বুঝতে পারছিলেন। প্যান্ডেলের পেছনে সুষমার গালে ঠোঁট ছোঁয়ানর সময় এমনটা হয়েছিল।
ঘড়ে ঢুকেই দেখলেন বিভিন্ন বয়সের জনা আস্টেক মানুষ, তাদের মধ্যে সুষমার কাকার ছেলে যিনি বিনয়ের সাথে চাকরি করেন, ওনাকেও দেখলেন। উনি একে একে বিজয় বাবুর সাথে সকলের পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুষমার দুই মেয়ে, দুই মেয়ে জামাই আর তাদের ছেলে মেয়ে। সকলে একে একে বিজয় বাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। বিজয় বাবু ভাল করে চোখ ফিরিয়েও সুষমাকে কোথাও দেখতে পেলেন না। অনেকটা নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে সুষমার নামটা বেরিয়ে এলো।
“সুষমা………”
সুষমা নাম শুনে ঘড়ে কেমন যেন একটা নিস্তব্ধতা নেমে এলো। সুষমার বড় মেয়ে নীরবতা ভাঙলেন-
“মা তো গত বছর এই সময় চলে গেছেন। উনি খুব চাইতেন একবার এই বাংলায় আসতে। ওনার শেষ ইচ্ছা ছিল। ওনার ইচ্ছা তো পূরণ করতে পারলাম না। সেই জন্যই ওনার শেকড়ের সন্ধানে আমরা এসেছি। যদি ওনার আত্মা শান্তি পায়।“
বিজয় বাবু প্রথমটায় সব কিছু বুঝেও যেন বুঝতে পারলেন না। প্রতিটা শব্দ বিজয় বাবুর কাছে যেন এক একটা তিরের মত বিঁধল। কথা বলার কোন শক্তি রইল না। নিমেষেই যেন সব কিছু চুরমার হয়ে গেল। প্রিয় মানুষকে হারানোর কষ্ট তো ছিলই সে সাথে যোগ হল কৈশোরের নিজের চেহারার এক মাত্র সাক্ষীকে হারানোর যন্ত্রণা। আর এই যন্ত্রণা আর অস্বস্তি নিয়েই হয়তো বাকি জীবনটা কাটাতে হবে তাঁকে।
কোন রকমে চোয়াল শক্ত করে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলেন। ঠিক এমন সময় একটা ১৮-১৯ বছর বয়সী ছেলে ঘড়ে ঢুকল। বিজয় বাবুকে দেখে থমকে যেতেই সুষমার বড় মেয়ে বলল-
“মামা বাবু, ও আমার বড় ছেলে। এই বাবু, দাদু হয় প্রণাম কর।“
ছেলে ঠুক করে একটা প্রণাম করে হাঁসি মুখে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই ছেলেটার চেহারা দেখে মাথার মধ্যে একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। এক আশ্চর্য অনুভূতির মধ্য দিয়ে বুক থেকে যেন একটা ভারী বোঝা আস্তে আস্তে নেমে যেতে লাগল। মুহূর্তের মধ্যে মনে পরে গেল কৈশোরের সেই চেহারা। একদম স্পষ্ট।
২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৮
সুমন কর বলেছেন: বর্ণনা এবং কাহিনী দারুণ লাগল। প্লাস।
শুভ সকাল।
৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৪
প্রতীক সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৯
সুমন কর বলেছেন: আপনি যখন অন্য কারো'র মন্তব্যের প্রতি উত্তর দিবেন। তখন নিচের ছবির মতো সর্ববাম পাশের এ্যারোতে ক্লিক করে জবাবটির উত্তর দিবেন। তাহলে উনি জানতে পারবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:২৮
শেয়াল বলেছেন: সুন্দর