নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পামাআলে

অতি সাধারণ

পামাআেল

অতি সাধারণ বান্দা

পামাআেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। যেসব চিন্তা মনে ঘুরপাক খায়ঃ প্রেক্ষিত প্রগতিশীল ব্যক্তিদের উপর আক্রমন।।

২০ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৫:৩৫

প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার উপর আক্রমণ দেখলেই মনের মধ্যে কতগুলো খট্কা বা প্রশ্ন ঘোরপাক খায়। সংখ্যায় এগুলো বিশ্ব কবির তিন খট্কার চেয়ে অনেক বেশী। বড় ইচ্ছে হয় এগুলোকে গুছিয়ে লিখে অন্যদের জানিয়ে দেই। সুস্থ পা থাকলেই হাঁটা গেলেও সুস্থ হাত থাকলেই তো আর লেখা যায় না। তার জন্য চাই লিখার হাত। আর সেই লিখার হাত না থাকাতেই আমার লিখার ইচ্ছা ইচ্ছা অন্তঃপুরেই বাস করে। এবার মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর উপর বর্বর মরণাঘাতের পরও আমার একই অবস্থা হয়। মনে মনে খটকাগুলোর লিস্ট করে বসে থাকি আর এ বিষয়ে বিভিন্ন জনের লেখাগুলো মনযোগ দিয়ে পড়তে থাকি। দেখতে পাই বিভিন্ন প্রিয় লেখকবৃন্দ এমনকি অনেক নূতন লেখকও ওসব বিষয়গুলো অত্যন্ত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। পড়ে মুগ্ধ হই। আমার লিস্টের দৈর্ঘ্য এভাবে কমতে থাকে। এমনই এক পর্যায়ে এসে মজুরগিরি করার বাধ্যবাদকতা থেকে দু’দিনের ছুটি পেয়ে খেয়াল বশত লিস্টে অবশিষ্ট থাকা কয়েকটি বিষয় লিখে ফেলার চেষ্টা করি। লিখার পর আরও বিপদে পড়ে গেলাম। আমার নিজের লেখা আমারই যে পছন্দ হয় না। তারপর ভাবি, দেখি না কি হয়? দেই না ইহাকে ব্লগে পোস্ট করে। আমি শতভাগ নিশ্চিৎ যে এ লেখা প্রকাশ পাঠকের নজর কারতে সক্ষম হবে না। তাতে আমার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। আমার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু হাসিল হয়েছে। আমি লিখেছি।

সৃষ্টিকর্তার গজবঃ যারা নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসী বলে দাবী করেন তাদের হরহামেশাই বলতে শুনি, ওমুকের উপর বা তুমুকটার জন্য সৃষ্টিকর্তার গজব পড়বে। তারা এসব বলে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলেন যে ধর্ম বিরোধী কাজ করলে অমুক শাস্তি নাজেল হবে বা তমুক আগুনে পোড়ে মরতে হবে। কিছুদিন আগে আমাদের সাবেক বিরোধী দলীয় নেতৃও এমন গজব তত্ত্বের বয়ান দিয়ে বলেছিলেন বর্তমান সরকারী দলকে ক্ষতি করার জন্য সাবেক বিরোধী দলের জোটকে কিছু করতে হবে না। সৃষ্টিকর্তার গজবেই ক্রমান্বয়ে সরকারী দলটি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তেঁতুল হুজুর গংরা তো উঠতে বসতে সব সময়ই এসব বলে থাকেন। আমার কথা হ’ল, তাই যদি হয়, তাহলে হুমায়ুন আজাদ বা অভিজিৎদের হত্যা বা হামলা করা কেন? এসব প্রগতিশীল ব্যক্তিরা যদি কোন ধর্ম বিরোধী কাজ করে থাকেন তাহলে ধর্মের কল বাতাসে নড়েই তো এদের উপযুক্ত শাস্তি হবার কথা। এখন দেখছি, আপনাদের ভাষায় খারাপ কাজ করার অপবাদ দিয়ে এদের উপর হামলা চালিয়ে আপনারাই আপনাদের কথার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করছেন। তাহলে কি ধরে নেব, ছোট বেলা থেকে নিজেদের ধার্মিক হিসেবে দাবীকারীরা এবং ধর্মনেতারা ধর্মের কলের বাতাসে নড়া বা সৃষ্টিকর্তার গজব বিষয়ে অসত্য কথা বলেছেন? ধর্ম কি তাহলে ধর্মের বা রাষ্ট্রীয় আইন নিজ হাতে তুলে নেয়া সমর্থন করে। রাষ্ট্র যে তা করে না তা ভাল করেই জানি। আর রাষ্ট্র যা সমর্থন করে না ধর্ম যদি সে নেতিবাচক কাজকে সমর্থন করে তাহলে কি এ ক্ষেত্রে অন্তত ধর্ম রাষ্ট্রের চেয়েও ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছে না।

ধর্ম থেকে বাদ দেয়াঃ প্রায়ই শুনি, ওমুক গ্রুপকে অহিন্দু, অমুসলিম বা অখ্রীষ্টান ঘোষণা করা হোক বা সমাজচ্যূৎ করা হোক। যতদূর জানি যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাদেরকে ধর্ম থেকে বের করে দেবার দাবী জানানো হয়, তারা নরহত্যার মত জঘন্য অপরাধের জন্য অভিযুক্ত নয়। নরহত্যার চেয়ে কম জঘন্য অপরাধের জন্য যদি এসব গ্রুপগুলোকে ধর্ম থেকে বের করে দেবার দাবী জানানো হতে পারে, তবে, নরহত্যার মত জঘন্য ঘটনার জন্য হুমায়ুন আজাদ, রাজিব বা অভিজিতদের হত্যাকারী/আক্রমণকারী ধর্মীয় গ্রুপগুলোকে সংশ্লিষ্ট ধর্ম থেকে বের করে দেবার দাবী উঠছে না কেন? ধর্মের নাম ব্যবহার করে আর্মি অব গড, তালেবান, বুকোহারাম, বাজরং দল প্রভৃতিরা যেসব ভয়াবহ অপরাধ কান্ড ঘটিয়েছে বা ঘটাচ্ছে তা কমবেশী সবারই জানা। আমরা এটাও জানি যে তারা সবাই ধর্মের নাম ব্যহার করেই নরহত্যার মত জঘন্য ঘটনা ঘাটিয়েছে বা ঘটাচ্ছে। কিন্তু তাদের তো ধর্ম থেকে বাদ করার দাবী উঠে না। তবে কি ধর্মের নাম ব্যবহার করে নির্বিচারে হত্যার মত ঘটনা ঘটালে ধর্মের তথা ধর্ম-মহাপুরুষদের অবমাননা করা হয় না? তাতে কি কোন ধর্মবাদীর ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে না? তাহলে কি ধরে নেব ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগা নির্ভর করে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা গ্রুপ কর্তৃক ট্রিগার টেপার উপর। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি বা গ্রুপ যখন কোন ঘটনার পর ধর্মানুভূতির সুইচ টেপে কেবল মাত্র তখনই এই বিশেষ আঘাত প্রাপ্তির উদ্রেক হয় নইলে নয়।



সৃষ্টিকর্তা বা ধর্ম-মহাপুরুষদের অবমাননাঃ বাটা জুতার এক ডিজাইন হঠাৎ দেখলে আরবী হরফে লেখা সৃষ্টিকর্তার নাম হিসেবে ব্যবহৃত একটি শব্দের অনুরূপ মনে হওয়াতে একবার আমাদের দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও জঙ্গীপনা হয়েছিল। প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ ছিল, সৃষ্টিকর্তার নামের অবমাননা করা হয়েছিল বাটা কোম্পানীর ঐ ডিজাইনে। এরপরও বহুবার বিভিন্ন ছুতা তুলে প্রতিবাদের নামে ঐ ধরণের জঙ্গীপন অনেকবারই হয়েছে। আইএসআইএস যে এখন একজন ধর্ম মহাপুরুষের এবং সৃষ্টিকর্তার নাম লিখা পতাকা নিয়ে মানুষের কল্লা কাটছে, এতে কি ঐ মহাপুরুষের বা সৃষ্টিকর্তার অবমাননা করা হয় না। যদি হয় তবে তার জন্য তো কোন প্রতিবাদ হতে দেখিনি অদ্যাবধি। জানি যারা অভিজিতকে হত্যা করেছে এবং এ হত্যা যারা সমর্থন করে তাদের সাথে আইএসআইএস এর কোন তফাৎ নেই। কাজেই তারা এর প্রতিবাদ করবে না বরং বাহবা দিবে। কিন্তু যারা নিজেদের প্রকৃত ধার্মিক বলে দাবী করেন, যারা বলেন, ধর্ম কোন প্রকার হত্যা সমর্থন করে না, যারা অভিজিতের হত্যা ঠিক হয়নি বলে পরের বাক্যে বলেন, অভিজিতেরও ওভাবে লেখা ঠিক হয়নি। তাদের কেন ঐ ধর্ম মহাপুরুষের বা সৃষ্টিকর্তার নামের ঐ চরম অবমাননাতেও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগেনি। তারা কেন ঐ অবমাননার ঘটনায় ফেইসবুক, ব্লগের পাতা গরম করেন না। তারা কেন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন না। বলতে পারেন, বাটা জুতার ঘটনা দেশে সংঘটিত হয়েছে আর আইএসআইএস এর ঘটনা হয়েছে দেশের বাইরে। সেটাই যদি প্রতিবাদ না হওয়ার কারণ হয়, তবে, দেশের বাইরের কার্টুনকে নিয়ে কেন দেশে লংকা কান্ড বাধানো হয়। একজন ধর্ম মহাপুরুষের ও সৃষ্টিকর্তার নামাঙ্কিত পতাকা নিয়ে হত্যা করার চেয়ে জঘন্যতর অবমাননার ঘটনা আর কি হতে পারে? তাহলে কি ধরে নেব যে ধর্ম-মহাপুরুষদের অবমাননার প্রতিবাদ সমীকরণেও রাজনীতি ঢুকে গিয়েছে। এটিও হয়ে পড়েছে কারও কর্তৃক ট্রিগার টেপা নির্ভর।

সৃষ্টিকর্তা খুশী নাকি অখুশীঃ কথা বা লেখা দিয়ে সৃষ্টিকর্তা বা কোন ধর্ম-মহাপুরুষের অবমাননা করলে (কিছু ধর্মবাদী বা ধর্ম গ্রুপের মতে) কোন আলাপ আলোচনা বা বিচার বিশ্লেষণ না করে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে, বা রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় না নিয়েই, তাদের মাথার মূল্য ঘোষণা করা বা তাদেরকে হত্যা করার ঘটনা আজকাল একটি হুজুগে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা সঠিক না বেঠিক, এগুলো করলে কি লাভ বা কি ক্ষতি সেসব প্রশ্নে না গিয়ে শুধু একটি প্রশ্ন করতে চাই। এসব হত্যাকান্ড দেখে সংশ্লিষ্ট ধর্ম-মহাপুরুষগণ বা সৃষ্টিকর্তা কি খুশী হন, নাকি অখুশী হন? যদি বলি খুশী হন তাহলে সৃষ্টিকর্তার বা সংশ্লিষ্ট ধর্মমহাপুরুষগণের জন্য এর চেয়ে বড় অবমাননাকর আর কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। যেহেতু সৃষ্টিকর্তা খুশী হননা, তাহলে সৃষ্টিকর্তার নাম ব্যবহার করে কেন এই হত্যা আর অরাজগতা। আমাদের পছন্দ হোক আর না ই হোক, অভিজিৎ যেহেতু একজন মানুষ কাজেই তিনিও অন্য সবার মত সৃষ্টির এক সেরা জীব। সৃষ্টির এ সেরা জীবের হত্যাকান্ড দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে নিশ্চয়ই অখুশী করা হয়েছে। এ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে অখুশী করার মত এ জাতীয় বর্বর ক্রিয়াকলাপ চিরতরে বন্ধ হোক আমাদের জনপদ থেকে।



ধর্মীয় প্রতিবাদ হোক ধর্মসুলভ, রাজনৈতিক দশ্যুতায় নয়ঃ অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মানুষের ধর্ম। তাই ব্যক্তি, সংঘ-সমিতি, রাজনৈতিক দল, ধর্মগোষ্ঠী, রাষ্ট্র প্রভৃতি সব পর্যায়েই প্রতিবাদ করা হয়ে থাকে। এ প্রতিবাদের ভাষা ও কর্মসূচী বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। প্রতিবাদের ভাষা, মাধ্যম বা কর্মসূচী যা ই হোক, তা হতে হবে একটি নিয়মনীতির মধ্যে থেকে এবং জানমালের ক্ষতি সাধন না করে। আবার ধর্মগোষ্ঠীর প্রতিবাদ গুলো রাজনৈতিক প্রতিবাদ গুলোর চেয়ে অনেক সহনশীল, মার্জিত এবং জঙ্গী অবস্থা বিবর্জিত হবে এটা ভাবাই স্বাভাবিক। মাদার তেরেসার ধর্ম সন্যাসিনী গ্রুপের প্রতিবাদ বিজেপি বা কংগ্রেসের প্রতিবাদের মত জঙ্গী এবং উগ্র হবে এটা কেউই আশা করে না। আর যদি তা ই না হয়, তাহলে, ধর্মীয় গ্রুপগুলো বা ধর্মনেতারা কি শিক্ষা দিবেন তাদের অনুসারীদের। আর সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতারা ই বা কি আদর্শ নেবে ধর্মীয় গ্রুপগুলো থেকে। এখন ধর্মীয় প্রতিবাদে যদি থাকে জঙ্গী রূপ আর জ্বালাও পোড়াও, তাহলে, রাজনৈতিক প্রতিবাদে লাশ ফেলানো বা পেট্রোল বোমা হামলা হলে ধর্মীয় নেতারা তাদের কিভাবে দোষারূপ করবেন। বরফ যে ঠান্ডা তা বরফের প্যাকেটের গাঁয়ে লিখে তা বিক্রি করতে হয়না। মানুষ এমনিতেই জানে যে তা ঠান্ডা। তেমনি কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে বা বললে তার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ হবে তার রকম দেখেই আমরা বুঝতে চাই যে তা ধর্মীয় প্রতিবাদ। তা না হয়ে যদি প্রতিবাদটি হয় জঙ্গী ও জানমাল ক্ষতিকারী তবে সহজেই বুঝা যাবে যে এটি আসলে ধর্মের অবমাননা বা অনুভূতির কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার প্রতিবাদ।



আস্তিক-নাস্তিক, ভাল-মন্দ, বিদ্যান-মূর্খ কারও আজ বুঝতে বাকী নেই যে ধর্মের নামে যত হাক-ডাক, সৃষ্টিকর্তা বা ধর্ম-মহাপুরুষদের অবমাননার কথা বলে যে এত শোরগোল, তার কিছুই ধর্মের জন্য বা পরকালের জন্য নয়। তার সবই ইহজাগতিক লাভের জন্য। কারও কারও রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক আখের গোছানোর জন্যই এসব। টেস্ট কেইস হিসেবে আভ্যন্তরীণ ও বাইরের উৎস থেকে অর্থাগমন বন্ধ হয়ে যাক, দেখা যাবে কয়দিন আন্দোলন আর আস্ফালন বহাল থাকে। দিনের শেষে এসবের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে ধর্মের আর মানুষের। এভাবে অভিজিৎদের হত্যা প্রক্রিয়া চলতে থাকলে মানুষ আস্তে আস্তে ধর্ম সম্বন্ধে বলতে শুরু করবে, ভিক্ষার দরকার নাই, কুত্ত ঠেকাও। নিহত অভিজিৎ যে জীবিত অভিজিতের চেয়ে তীব্র মাত্রায় তার লক্ষ্যের দিকে মানুষকে ধাবিত করতে সক্ষম হচ্ছেন, তা আশা করি তারা অন্তত বুঝতে পারবেন, যারা নিজেদেরকে প্রকৃতি ধর্মবিশ্বাসী বলে দাবী করেন, যারা বিশ্বাস করেন ধর্ম কোন হত্যাকেই সমর্থন করে না।

-----০-----

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.