নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে নিজেকে আঠেরো শতাব্দীর অঘোষিত সাফল্যহীন কবি মনে হয়। যার কিছু লেখা নামহীন বাজারি পত্রিকায় ছাপা হয়ে ছিল কিন্তু কেউ তা পড়ে দেখিনি।

পবিত্র হোসাইন

আমি মানুষ, রোবট নই।

পবিত্র হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরাবতী (একজন হত্যাকারীর গল্প)

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫




ঐ যে বিল্ডিংটা দেখছেন, ওখানে একটি ছেলে থাকে। আমি প্রতিদিন বিকালে ছাদে যাই ওকে দেখার জন্য। ওর সাথে আমার প্রেম নয়, আমার ভাল লাগা। এ ভাল লাগার কথা ছেলেটি জানেও না, হয়তো কোনদিন জানবেও না। ও যখন জানালার পাশে এসে দাড়ায়, আমি দেখি, ওর চোখ, ওর চুল, ওর মুখ।
ওর মুখ দেখলে মনে পরে রবিঠাকুরের কবিতা-

যদি প্রেম দিল না প্রাণে
কেন ভোরের আকাশ ভরে দিলে এমন গানে গানে?কেন তারার মালা গাঁথা,কেন ফুলের শয়ন পাতা,কেন দখিন হাওয়া গোপন কথা জানায় কানে কানে?।
যদি প্রেম দিলে না প্রাণে
কেন আকাশ তবে এমন চাওয়া চায় এ মুখের পানে?তবে ক্ষণে ক্ষণে কেন
আমার হৃদয় পাগল হেন,তরী সেই সাগরে ভাসায় যাহার কূল সে নাহি জানে?।


আরে! আমার নামই তো বলা হল না।
আমি ইরা। আমার বাবার ইরাবতী। প্রতিটি বাবার কাছে তাদের মেয়ের একটি নিজস্ব নাম থাকে। ইরা নামটি সম্ভবত আমার মায়ের দেয়া। এ নামের কারন আমার জানা নেই তবে ইরাবতী নামের অর্থ আমি জানি। ইরা অর্থ -দক্ষের কন্যা, কশ্যপের স্ত্রী, এবং ইরাবতী - উত্তরের কন্যা, পরীক্ষিতের স্ত্রী ।
হুম...পরীক্ষিতের স্ত্রী!!
আমিও স্ত্রী, তবে পরীক্ষিত কিনা তা জানি না। আমার বর জামান চৌধুরী। এক সময় আমার মায়ের বন্ধু ছিলেন। আমার মায়ের বন্ধু শুনে অবাক হচ্ছেন?
ঠিক, মায়ের বন্ধু না বলে আমার বাবার পত্নীর বন্ধু বললে যথার্থ হবে। কারন আমার মা মারা যাবার পরে বাবা যাকে বিয়ে করেন তাকে আমাদের সামাজিক ভাষায় সৎ মা বলে। তাহলে বলা যেতে পারে জামান চৌধুরী আমার সৎ মায়ের বন্ধু ছিলেন ।
জামান চৌধুরী আর আমার বয়সের ব্যবধান বছর ত্রিশেক হবে, ধরুন আমার বয়স ২২ হলে তার ৫২। তাতে কি? আমার সৎ মায়ের ভাষ্য মতে, আমার ভাগ্যটা অনেক ভাল। কারন অনেক ধনাঢ্য প্রানীর সাথে বিয়ে হয়েছে আমার। এত বড় ব্যবসা! আচ্ছা প্রানী বললাম রাগ করেননি তো? পুরুষ কি প্রানী হতে পারে? মেয়েদের পুরুষকে দেখে সর্বদা সামলে চলতে হয়। পুরুষ বলে কথা!! না হলে রক্তাক্ত হতে হবে। হোক সেটা শারীরিক অথবা মানসিক।
আর রক্ত? ওতো প্রতি মাসেই ঝরে। সে যাই ঝরুক পুরুষের জৈবিক চাহিদা মেটাতেই হবে, ওসব রক্ত-ফক্ত কিছু না।

তাহলে কিছুটা পুরনো কথা দিয়ে শুরু করি-
আমার মা মারা যাওয়ার বছর খানেক পরে আমার বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। তার কিছুদিন পরে জামান চৌধুরীর আগমন ঘটে। উদ্দেশ্য ছিল বাবা ডুবে যাওয়া ব্যবসাকে সফল করা। এ নিয়ে আমার সৎ মায়ের হট্টগোলের শেষ ছিল না। অনেকবার বাবাকে শুনতে হয়েছে -“আজ আমার বন্ধু না থাকলে তোমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হত “
দিন দিন জামান চৌধুরীর আসা যাওয়া বাড়তে থাকে। বাবা বাসায় না থাকা অবস্থায়ও দেখতাম তিনি বাসায় আসতো কিন্তু কিছু বলার সাহস ছিল না আমার।

একদিন বাবা এবং সৎ মা কোন এক অনুষ্ঠানে যায়, আমাকে এসব যায়গায় নেয়া যায় না বলে একা বাসায় থাকতে হয়। এমন সময় বাসায় আসে জামান চৌধুরী। আমি তাকে ড্রইং রুমে বসতে দিয়ে আমার রুমে চলে যাই। হঠাৎ জামান চৌধুরী আমার রুমে আসে, চেপে ধরে হিংস্র বাঘের মত, তার ক্ষিপ্ত বাসনা পূরণ করে, বিশ্বাস করুন সেদিন আমার অসহায় মুখ যদি আপনাকে দেখাতে পারতাম! আমার মর্ম, আত্মা, আমার চিত্ত, চেত সেদিনই মারা গিয়েছিল। আমার মায়ের মুখটা অনেক মনে পড়ে, মা থাকলে এমন হত?
চলে যায় জামান চৌধুরী, শুধু বলে যায়- কাউকে কিছু বললে বাবাকে হারিয়ে ফেলবো!
পড়ে থাকি আমি, পরে থাকে আমার দেহ, আর কিছু রক্ত ...
মাস ছয়েক পরে একদিন জানতে পারলাম, জামান চৌধুরীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমার বাবার সম্মতি না থাকলেও তার কিছু করার ছিল না, কারন বাবার ব্যবসার অবস্থা ছিল শোচনীয়। বাবার ব্যবসা বাঁচাতে আমাকে বলির পাঠা হতে হয়।
এক বৃষ্টি বিকেলে আমার বিয়ে হয়। সেদিন প্রথম বাবার চোখে পানি দেখেছিলাম। আমার মায়ের মৃত্যুর দিনও বাবা কাদেঁনি। তবে আজ কি হল বাবার?

বিয়ের রাত। মানে বাসর রাত। জামান মদ খেয়ে এসেছিল সেদিন, ঘরে ঢুকে তার প্রথম কথা ছিল- “তারাতারি কাপড় খুলে বিছানায় আয় মাগী, এত ঢং করার কি আছে? সবতো দেখে নিয়েছি “
জানেন, ঐদিন থেকে আর কখনো কাঁদিনি, কারন প্রতিটিদিন ছিল একই রকম নরক যন্ত্রণার। আমাকে সব সময় তৈরী থাকতে হত নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য। কে বলে, মেয়েদের সৌন্দর্য তার চুলে, চোয়ালে, ঠোঁটে? সেটাতো আমার আঘাতের স্থান। এ ঘরের প্রতিটি দেয়াল জানে আমার আর্তনাদ, আমার চিৎকার!
কিন্তু আজ থেকে আর শুনতে হবে না সেগুলো। ঐ যে দেখেন জামানের নিথর দেহ পড়ে আছে!
হ্যাঁ আমি!!! আমি একটু আগে জামানকে খুন করেছি! আজ আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিল। আমি জানি এসব জামানের মনে থাকার কথা নয়। আজও জামান মদ খেয়ে এসেছিল। এখনো তার গন্ধ আমার শরীরে লেগে আছে। রান্না ঘরের বড় ছুড়িটা এনে রেখেছিলাম। জামান যখন ঘুমালো, আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। একবার শুধু ওর মুখটা দেখেছিলাম তারপর নিজেকে থামাতে পারিনি, চোখ খুলে দেখি শুধু রক্ত, অনেক রক্ত!
এ রক্ত আমার নয়! এ রক্ত একজন পুরুষের! এ রক্ত একজন মানুষের!

অনেক কথা বললাম, ঐ সিলিং ফ্যানের দড়িটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি মায়ের কাছে যাব। যেতে আমাকে হবেই, ঐ যে মা আমাকে ডাকছে .....

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৪

বিজন রয় বলেছেন: পুরুষশাষিত সমাজের ঘৃণ্য রূপ দেখলাম!!

ভাল লিখেছেন।

ওই রক্ত কোন পুরুষের নয়, কাপুরুষের।
ওই রক্ত কোন মানুষের নয়, অমানুষের।

+++++

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: আমরা শাসিত সমাজ চাই না , বন্ধুত্বপূর্ণ সমাজ চাই। সেটা হোক নারীর , হোক পুরুষের , হোক সবার।
ধন্যবাদ আপনকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য। শ্রদ্ধা রইলো আপনার প্রতি।

২| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৪

বিজন রয় বলেছেন: আপনার লেখা কি প্রথম পাতায় আসে না??

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৯

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: হয়তো এখনো সেটার যোগ্য হতে পারিনি।
ধন্যবাদ আবার মন্তব্যের জন্য।

৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় পবিত্রভাই ,

গল্পটা ভালো লিখেছেন । সত্যি কিনা জানিনা ; যে কারো না পড়ে বেশি বিষন্ন লাগলো। তবে বিজনদার মন্তব্যটি একদম জাস্টিফায়েড।

তবে সংলাপগুলো একটু এলোমেলো হয়ে গেছে। হাইফেন দিয়ে যদি লিখতেন তাহলে বুঝতে আরো সুবিধা হত। যাইহোক লেখার হাত খুব ভালো। লিখতে থাকুন এভাবে । আশা করি খুব শীঘ্রই প্রথম পাতায় জায়গা পাবেন।

অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা প্রিয় পবিত্রভাইকে।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: আপনার মন্তব্যে ধন্য আমি। না দাদা , এটা শুধুই একটা গল্প যার বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই ।
সংলাপকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করছি , আশা করি আপনারা সাথে থাকলে পারবো ।
আপনার প্রতি ভালোবাসা সবসময় থাকবে ।

৪| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৪

হাবিব বলেছেন:




সুন্দর প্রচেস্টা। গল্প লিখা বেশ কঠিন মনে হয় আমার কাছে.......
আপনি যতটুকু পেরেছেন আমি তাও পারিনা....
নীলাকাশ ভাই খুব ভালো গল্প লিখেন.....সময় পেলে ঘুরে আসবেন
পদাতিক ভাইয়ার গল্প পড়লে আপনিও সুন্দর লিখতে পারবেন।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: আসলে সামুতে অনেক প্রতিভাবান লেখক আছেন । যতটুকু লিখতে পারি তা ওনাদের অনুপ্রেরণায় । নীলাকাশ ভাই অনেক ভালো লেখেন । পদাতিক দাদার তুলনা হবে না ।আর আপনার কবিতা , সেতো মায়ার টান ।
অসংখ্য ধন্যবাদ আর ভালোবাসা রইল আপনার জন্য ।

৫| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩১

ডার্ক ম্যান বলেছেন: এখন মেয়েরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি কমবেশি । জামাই ভাল না লাগলে ডিভোর্স দিতে পারে ।
বর্তমান সময়ের উপযোগী করে গল্প লিখুন ।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৬

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: ডার্ক ম্যান ভাই , ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। এখন থেকে চেষ্টা করবো সময় উপযোগী গল্প লেখার ।

৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯

ইসিয়াক বলেছেন: সুন্দর

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২১

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রিয় ইসিয়াক ভাই।

৭| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৯

বর্ন ট্রাভেলার সোহান বলেছেন: আপনিও ভালো লিখেন ভাইয়া। শুভকামনা :)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো আপনার প্রতি। ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য ।

৮| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



হাউকাউ ধরণের লেখা

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২২

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য , জনাব চাঁদগাজী।

৯| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫১

কালীদাস বলেছেন: গল্পের লাইনগুলো আমাকে চুম্বকের মত টেনে রেখেছিল প্রায় শেষ পর্যন্ত। নারীবাদী লেখা বলার স্কোপ নেই, মার্জিন কখনই ক্রস করেনি।

কিন্তু ফিনিশিংএর দুই লাইনে বিরক্ত হলাম। সুইসাইড কেন, ম্যান? এতটা স্ট্রেংথ যে নারী দেখাতে পেরেছে সে কেন চলে যাবে? আমি যে পয়েন্টে একটা লাইফের থ্রাশহোল্ড দেখছিলাম সেখানে মৃত্যুটা এভাবে কাম্য ছিল না। বাট, এটা লেখক হিসাবে আপনার স্বাধীনতা :((

চমৎকার লেখনি (শেষ ২ লাইন বাদে)!!!

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৯

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: প্রিয় কালিদাস ভাই , আপনার মতো অভিজ্ঞ আর সিনিয়র লেখকের কাছে থেকে এত সুন্দর মন্তব্য , সত্যি আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
কিন্তু ফিনিশিংএর দুই লাইনে বিরক্ত হলাম। - আপনার বিরক্তির জন্য বিষন্নতা বোধ করছি ।
তবে এই ভেবেও ভালো লাগছে , বাকি অংশ গুলিতে আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।
আশা করি এভাবে পাশে থেকে অনুপ্রেরণা যোগাবেন ।
ধন্যবাদ ।

১০| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৪

তুহিন নাজমুল বলেছেন: অনেকের ই অব্যক্ত ব্যথা নিয়ে লিখেছেন। ভাল লাগল। আমাদের সমাজে এই ঘটনা আজও ঘটে, বিভিন্ন রুপে।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৯

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: অনেক ভালো কথা বলেছেন প্রিয় নাজমুল ভাই ।
আমাদের সমাজে এরকম অনেক ঘটনা ঘটে , যেটা কারো কাম্য নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.