নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হৃদয়ের ভেদবমি।

কিসু লিখার নাই

পার্থ সুমিত ভট্টাচার্য্য

আমি লিখি; কিন্তু আমাকে নিয়ে লিখি না .।

পার্থ সুমিত ভট্টাচার্য্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতঃপর আবার গড়ি .।.।.। :P

২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৫

আমি যখন শিক্ষা জীবন শুরু করি, তখন ডঃ কুদরত-ই-খুদার কল্যাণে আমাদের একটা শিক্ষা নীতি বা কাঠামো ছিল। আমার কাছে এটা এখন একটা পাঁচ তলা দালানের মতো। কিন্তু যতই দিন গেছে দেখেছি এটা কিভাবে আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে; ধ্বসে পড়ছে। আমি নিজের মতো করেই দেখাই।

এই পাঁচ তলা দালানের পঞ্চম তলায় ছিল " Ethics " এর দেয়াল। কিন্তু হঠাত করেই স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে নকল করার প্রবণতা বেড়ে গেল। অনেকদিন চলেছে এটা। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় এসে তার রাশ টেনে ধরা গিয়েছিল। অনেক চেষ্টা চরিত্র করে ধ্বস থামানো গেল। নকলের পরিমাণ কমল; কিন্তু ততদিনে শিক্ষকদের " ethics " পাল্টে গেছে। ওনারা ethical শুধুমাত্র প্রাইভেটের শিক্ষার্থীর জন্য। ওনারা আগেও প্রাইভেট পড়াতেন তবে বৈষম্যটা তীব্র ছিল না। ব্যস আস্তে আস্তে ওই ethics এর দেয়ালটা ধ্বসে গেল। ভেঙ্গে গেল পঞ্চম তলা।

৪র্থ তলা ছিল আমাদের " Question and marking system "। কিছু প্রবীণ ব্যক্তির মুখে শুনেছি পাকিস্তান আমলে নাকি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করত পুরো দেশেই শ'খানেকের আশেপাশে। তখন নাকি বৈষম্য হত। কিন্তু '৭২ থেকে মোটামুটি পুরো আশির দশকেও বাংলাদেশে পাশের ক্ষেত্রে এরকম "magical percentage" দেখা যেত না। কিন্তু ২০০০ এর পর থেকে জাদুকরী পরিবর্তন এলো। প্রশ্ন ব্যবস্থা পাল্টে গেল। এমনকি নাম্বার বন্টনেও এলো আমুল পরিবর্তন। তাছাড়া নাম্বার প্রদানের ব্যাপারে শোনা যায় বোর্ড থেকে বলা-কওয়া হয়। এই সব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা শ্যাওলার মতো ৪র্থ তলার দেয়াল নষ্ট করে দিল। ফলাফল একটাই... ভেঙ্গে যাওয়া।

৩য় তলা ছিল শিক্ষার প্রতি “dedication”। ঘন্টার পর ঘন্টা শিক্ষক দাঁড়িয়ে থেকে পড়িয়ে গেলেন, ছাত্রের মনোযোগ রইল অন্য কোথাও। এটাই ঘটছে আজকাল। হিন্দু ধর্মে টোল শিক্ষাতে দেখা যেত গুরুর আলয়ে শিষ্যের স্থান হত। সেখানেই পড়াশুনা খাওয়া-দাওয়া সব। পুঁথিগত, বাস্তবিক, আচার-ব্যবহার সব শিক্ষাই স্থান পেত সেখানে। মোগল আমলেও দেখা গেছে এই ব্যবস্থা। এখন তো ভোল পাল্টে গেছে। প্রাইভেট পড়ানো আর পাশাপাশি কোচিং সেন্টার। বর্ষাকালের মাশরুমের মতো কোচিং সেন্টার। শিক্ষার্থীরা পেল বিদ্যালয়ের বাইরে আরেক বিদ্যালয়। নানারকম সুবিধা আছে যেখানে। যেখানে special care নেয়া হয়। এসব দেখে শিক্ষকেরাও বেঁকে বসলেন। বললেন কোনো কারণে প্রাইভেট বন্ধ হলে তাঁরা শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দেবেন। এভাবে আবেগের কাছে তলিয়ে গেল dedication নামের শব্দটা। নীরবেই ভেঙ্গে পড়ল ৩য় তলাটা।

২য় তলাতে ছিল শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষক/শিক্ষিকাদের মিলিত দায়বদ্ধতা। প্রতিবছর হাহারেরে করে বই ছাপানো হত। Text book নামে যেগুলো পরিচিত। ক্লাসে পড়ানোর সময় সেগুলো স্যারেরা উল্টে পাল্টে নিলেও প্রাইভেটে বা উপদেশ প্রদানের সময় বলেন অমুক নামের গাইড বইটা দেখে নিয়ো। গণিতের ক্ষেত্রেও গাইডের সাহায্য নেয়া হয় আজকাল। শিক্ষার্থীরাও চায় না গাইডের তৈরি করে রাখা খাদ্য বাদ দিয়ে নিজে থেকে কিছু পড়ে বের করতে। অভিভাবকেরা তো চাপ দিয়ে হলেও পড়িয়ে নেবেন। এভাবেই নির্ভরতা বাড়লো। এমন একটা জিনিসের ওপর নির্ভরতা বাড়লো যে নিজেই পরজীবি। এই অপনির্ভরতাই ধ্বসিয়ে দিল ২য় তলাকে।

১ম তলা তো পরীক্ষা কাঠামোর। সৃজনশীলতা আনা হয়েছে এখানে। এই তলাতে কক্ষের মতো করে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে এখান থেকেই প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা শুরু হল। বিকট অভ্যন্তরীণ ধাক্কা এই দুর্বল ১ম তলা সামলাতে পারে নি। ছোটোখাটো একটা বিস্ফোরণ ঘটেছে।

এখনও খানিকটা বাকি আছে। ভিত্তিটা ! এর ওপর রয়েছে সব ধ্বংসস্তুপ।

এখনও সময় আছে; চাইলে আবার পাঁচতলা দালান দাঁড় করানো যাবে। শুধু এই শিক্ষামন্ত্রী থেকে পরবর্তি সব শিক্ষামন্ত্রীর একটু সদয় হওয়া প্রয়োজন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.