![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“হয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি??আমি তো ভাবছিলাম,আরও এক দুই ঘন্টার নিচে আসার সম্ভাবনা নেই তোমার ।”
“ইশ!!আমি যেন তোমাকে খুব বেশি অপেক্ষা করাই??আমি মোটেই সাজুগুজু করি না অত বেশি ।”
পাশ থেকে ওর ছোট ভাইটা ফোড়ন কাটলো হঠাত্,“আপুনি সাজুগুজু করে না,তাতেই গাল গোলাপ সব রাঙা হয়ে আছে ।সাজুগুজু করলে কী রঙ হতো,মাথায় আনতে পারছি না।” বলেই ঝেড়ে দৌড়!!
হা হা করে হেসে উঠল রুদ্র ।তাকিয়ে দেখল,মেয়েটা লজ্জায় মুখখানা লাল করে দাঁড়িয়ে আছে।এক অজানা ভালোবাসায় ভরে উঠল হৃদয় ।ওর মাথাটা বুকে ঠেকালো ।ওকে শুনতে দিল নিজের হৃত্স্পকন্দন ।তারপর ওর চিবুকটা ধরে বলে উঠলো,“গাল যদি গোলাপই হয়,তাহলে আমার এই রাঙা গোলাপই ভাল।একটু সাজুগুজু করলে আমার অহনাকে অনেক সুন্দর দেখায় ।”
রুদ্রর মুখের দিকে তাকালো অহনা,চোখে এক অপরিসীম আস্থা নিয়ে।সেই আস্থা ভালবাসা মাখানো।কোনও পুরুষের সেই ভালোবাসা উপেক্ষা করার ক্ষমতা থাকে না।তারও ছিল না।তার আলিঙ্গনে ধরা দিয়ে কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বললো,“পাগলীটা আমার।”
ও একটু মুচকি হেসে বলে উঠল,“হুম,আমি তো পাগলীই।আর কেউ যেন পাগলামি করে না কিছু ।এই,দেখ না,এইটা পরে আমাকে কেমন লাগছে??”বলেই ঘুরে ঘুরে দেখাতে শুরু করল ।
“আমার শাকচুন্নিটা যা পড়ে,তাতেই অনেক সুন্দর মানায় ।এইটাতে তার থেকে আলাদা কেন হবে?”
“তাই?আমি যা পড়ি,তাতেই ভাল লাগে?তাহলে ওরকম একটা পড়ি?”বলেই ইঙ্গিত করল বিলবোর্ডের স্বল্পবসনা এক মডেলের দিকে ।
“হা হা হা!!পড়তে পারো।উমম...তবে সেটা শুধু আমার সামনে। রাজি তো?”
“ইমমম.....!!!!!খুব শখ,না?শয়তান একটা ।”
“ওভাবে শয়তান বলোনা গো!!আমি যে আবারও প্রেমে পড়ে যাই।”
“ও!!!তার মানে আমার প্রেমে পড়া যাবে না?আমি কিসে খারাপ শুনি?”
“এতবার প্রেমে পড়েছি,যে পড়তে পড়তে হাড়গুলো আর একটাও আস্ত নেই ।আবারও নতুন করে পড়তে বলছ??’’
“ইয়েস স্যার,আরও বেশি বেশি পড়তে হবে ।নাহলে কিন্তু আমি চলে যাব...।’’
……… ……… ………… ………… ………… ………… ………... ………..
“ সত্যিই কি চলে যাওয়ার খুব তাড়া তোমার?? :’( ”
হঠাত্ সম্বিত ফিরলো আসিফের আচমকা কথায়,“চিন্তা করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে ।” রুদ্র আর সামলাতে পারলো না।কেঁদে ফেললো।আসিফ জড়িয়ে ধরে সামলালো রুদ্রকে।“এটা কী হচ্ছে আমাদের সাথে!!এটা তো হবার কথা ছিল না ।বেশ তো ছিলাম আমরা ।হঠাত্ কিভাবে যেন কী হয়ে গেল।এতটুকু বুকে এত কষ্ট জমিয়ে রেখেছিলে তুমি!!আমাকে জানার সুযোগটাও দিলে না একটু!!!”
আজ অহনার অপারেশন।ডাক্তার বলে দিয়েছেন,সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। “এত বড় একটা অসুখ,এই গাধীটা আমাদের,অন্তত আমাকে একটু জানাতে পারতো ।কিন্তু কিচ্ছু জানায়নি মেয়েটা।” হয়তো জানতেও পারতো না কেউ,যদি ওদের পারিবারিক বন্ধু ড.তাহসিন শখ করে সবাইকে চেকআপ করতে না বলতেন।একদম রাজি হচ্ছিল না ও চেকআপ করতে।শেষমেষ অনেকটা জোর করেই রাজি করানো হল ওকে।রিপোর্ট এলে সবার চোখে এক অবিশ্বাসের ছায়া থাকলেও ওর চোখে এক আশ্চর্য নির্লিপ্ততা।সেদিন বুঝতে পারেনি কেউ,কতটা কষ্ট সে লুকিয়ে রেখেছিল তার নির্লিপ্ত,নিষ্পাপ ওই মুখটার পিছনে।যেদিন থেকে ব্যাপারটা জানতে পারলো ও,সেদিন থেকেই রুদ্রর সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো সে,যাতে রুদ্র ওর থেকে দূরে সরে যায়।শুধু ওর ছোট ভাইয়ের হাতে করে পাঠিয়েছিলো একটা চিঠি।খুব এলোমেলো লেখা,কিন্তু সেটাই যেন অনেক কিছু বলে দিচ্ছে নিঃশব্দে....
.........................................................................................................................................
রুদ্র,
তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান,স্বঘোষিত স্মার্ট ছেলে।অনেক কিছু নাকি জানো।আচ্ছা,বল তো,ভালোবাসার রঙ কি?আমি জানি,তুমি বলবে,লাল।হ্যা,একদম ঠিক।আচ্ছা,রক্তের রঙও তো লাল,তাই না?জানো,আজকে এই চিঠিটা লিখছি তোমার কাছে ভালোবাসার রংটা পাল্টে দিতে।যেই লালকে সবাই বলে ভালোবাসার চিহ্ন,সেই লাল রংটাই যে আমার জীবনে বেদনার নীল রঙ হয়ে ধরা দেবে,বুঝতে পারিনি কোনদিন।একটা খুব ছোট্ট কথা বলতে যাচ্ছি তোমাকে।কিন্তু এই ছোট্ট কথাটা শুনতে হলে অনেক বেশি মানসিক প্রস্তুতির দরকার,তাই আমি তোমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে নিতে কিছুটা সময় দিলাম ।
এই শোন,আমাদের কাল রমনাতে যাওয়ার কথা ছিল না?তোমাকে আসতে হবে না।আমি না যেতে পারব না।রাগ করো না প্লিজ!!আমার যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল।কিন্তু উপরে বসে যিনি আমাদের রঙ-তামাশা দেখেন,তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে আমার সাথে রঙ-তামাশা শুরু করেছেন।সেলুকাস!!!আমি এতদিন আমার সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না,আনন্দ-হতাশা সবকিছু তোমার সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছি,আমার সাফল্যের অর্ধেকটা ভাগ তোমাকে দিয়েছি।আজ সেই আমিই কিনা আমার সাথে হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন তামাশার ভাগ তোমাকে দিতে চাইছি না।রুদ্র,কপাল কুচকান বন্ধ করো তো!!অসহ্য একটা অভ্যাস।তোমার এই ভাবুক চেহারাটা দেখে কোন দুঃখে যে প্রেমে পড়েছিলাম!!ভাবছো,কিভাবে জানলাম আমি??স্যার,আমি সব জানি।আপনাকে আমার চেয়ে বেশি আর কে জানে,বলেন??
আমার না একদম পড়াশুনা হচ্ছে না।ভাল লাগছে না।অবশ্য পড়াশুনা করেই বা কী হবে??আমার পড়াশুনা,দুটো সার্টিফিকেট,আমার তিন সেমিস্টার মিলিয়ে সিজিপিএ,সবকিছু আমার কাছে এখন মূল্যহীন।এই,টেনশন দিচ্ছি তোমাকে?খবরদার,টেনশন করে শুধু শুধু মাথা খারাপ করো না তো!তুমি যা ভাবছো,তেমন কিচ্ছু হয়নি।আমি একদম ঠিক আছি।আমাকে ফোন দিয়েও লাভ নেই গো।আমার ফোনটা অফ আছে।আজ থেকে আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করো না,প্লিজ।মন দিয়ে পড়াশুনা করবে।আর শোনো,এই সেমিস্টার ফাইনাল হয়ে গেলেই তুমি জব খুঁজে নিও।তোমার ওই ঘরঘর করে সিগারেট টানার বিশ্রী অভ্যাসটা বাদ দিয়ো।আর যদি একদমই ছাড়তে না পারো,দিনে দুটোর বেশি না।সময়মত খাওয়াদাওয়া করে নিও কিন্তু।শরীর যেন একদম খারাপ না করে।যদি আমার ভূতটার কিছু হয়,আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না বলে দিলাম।
অনেক খবরদারি করলাম।রাগ হচ্ছে,তাই না??কী করব,বল?এরপর তো আর এই সুযোগটা পাবো না,তাই একটু করে নিলাম।এখন আসল কথায় আসি।জানি,এতক্ষণে মাথার চুল একটাও আস্ত রাখা হয়নি।আচ্ছা,থাকতে পারবা আমাকে ছেড়ে??খুব বেশি কষ্ট যাতে না পাও,তাইতো এই চিঠি।একটু মাথাটা ঠান্ডা করে শোনো।একটু প্রস্তুত হয়ে নাও এক্ষুনি।
রুদ্র,আমার লিউকেমিয়া।মানেটা জানো তো??আমার অস্থিমজ্জা নাকি আজকাল আর আমাকে শ্বেতরক্তকণিকা দিতে পারছে না।কী অদ্ভুত,না??সারাজীবন পড়ে আসছি ফিজিক্সের জিনিসপত্র,আর আজকে আমাকে মেডিকাল টার্ম নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে হচ্ছে!!!আচ্ছা,শ্বেতরক্তকণিকা কি জিনিস যেন??
রুদ্র,মনে আছে তোমার,একদিন বলেছিলে,আমাকে ওই আকাশের তারায় তারায় বাসা বানিয়ে রেখে দেবে?আমি তোমার আশা পূর্ণ করতে যাচ্ছি রুদ্র।আমি আর মাত্র কয়েকটা দিন পর থেকে ওই আকাশের তারা হয়ে যাবো।আর কিছুদিনের অপেক্ষা।আচ্ছা,মানুষ মরে গেলে কি সত্যিই আকাশের তারা হয়ে যায়?ওখান থেকে সারাদুনিয়ার সবকিছু ইচ্ছে করলেই দেখা যায়?আমি না সবকিছু দেখতে চাই রুদ্র,সবকিছু।আমি এতো তাড়াতাড়ি মরে যেতে চাই না রুদ্র!!আমি কি আর একটু সময় পেতে পারতাম না?? :’(
আচ্ছা,ওই তারাগুলো কি সত্যিই ফুলের মত হয়?ওদের দিয়ে কি মালা গাঁথা যায়?আমি তাহলে একটা মালা গাঁথব।ফুল দিয়ে।তারার ফুল।তুমি আমাকে যেভাবে চুলের খোঁপায় ফুলের মালা পরিয়ে দাও,ওটাও ওভাবেই পরিয়ে দেবে।ওহ,না না!!এখন থেকে তো আমাকে তুমি আর চুলের খোঁপায় মালা দিতে পারবে না।আমি তো অনেক দূরে থাকব।অনেক দূরে।..........”
নাহ,আর পড়তে পারলো না রুদ্র।চোখটা ভিজে এসেছে ওর।আসিফ রুদ্রকে ছাড়েনি এখনও।রুদ্রকে নিয়ে ফিরে এলো বাসায়।বাসায় ফিরেই নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো রুদ্র।নাহ,আর কাউকে নিজের কান্না দেখাবে না রুদ্র।ছেলেরা কাঁদে না।কান্না মেয়েদেরই শোভা পায়।কিন্তু কাউকে না দেখিয়ে কাঁদতে তো আর কোনও বিধিনিষেধ নেই।আজকে কাঁদবে রুদ্র।আজকে আর কারো কথার তোয়াক্কা করবে না সে।ওর অহনা আজ ওকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে।আজ তো ওর কান্নারই দিন।
.........................................................................................................................................
হঠাৎ রিংটোন শুনে ঘুম ভাঙল রুদ্রর।এত সকালে???কে হতে পারে??ভাবতে ভাবতেই চোখটা রাখল ফোনের স্ক্রীনে।কলারের নামটা দেখেই ধরফর করে উঠে বসলো । এ কি!!!এটা তো অসম্ভব!!অহনা কিভাবে ফোন দেবে?ও তো...... নাকি অসম্ভব ব্যাপারটাই সম্ভব হয়ে উঠল?অহনা কি তাহলে......
দুরুদুরু বুকে ফোনটা রিসিভ করলো রুদ্র।নাহ,অহনা নয়,ফোনটা করেছে অহনার বাবা।“রুদ্র বাবা,অহনা তোমাকে একবার একটু দেখতে চাইছে।তোমার কি একটু আসার সুযোগ হবে?”
উঠে পড়লো রুদ্র।কোনও কথার উত্তর দেওয়ার সময় নেই এখন ওর।ওকে যেতে হবে।তার অহনা তাকে ডাকছে।তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব,যেতে হবে ওকে।বেরিয়ে পড়েছে রুদ্র, প্রাণপণ ছুটে ছলেছে শূন্য রাজপথ ধরে।এই রাস্তার যেন আর শেষ নেই।রুদ্র ছুটছে,জোরে,আরও জোরে............
#এক_বছর_পর
সারাজীবনই পূর্ণিমারাতে ঘাসের উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকা অসম্ভব পছন্দের একটা ব্যাপার রুদ্রর কাছে।আজও সেভাবেই শুয়ে আছে সে।এক বছর আগেও থাকতো,কিন্তু সাথে ছিল আরও কেউ একজন।হ্যা,অহনাই তো।তখন তো অহনাও ছিল।আজ অবশ্য অহনা নেই।কিন্তু না থেকে আজ যেন অহনা আরও বেশি করে আছে রুদ্রর চারপাশে।অহনা যেরকম বলেছিল,সেভাবেই আজ আকাশের তারা হয়ে মিশে গেছে নক্ষত্রের ভিড়ে।রোজকার মতো আজও আকাশভরা নক্ষত্রের ভিড়ে অহনাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করছে রুদ্র।আচ্ছা,অহনা কি সত্যি আকাশের তারা হতে পেরেছে?ওই দূর আকাশ থেকে কি এখন রুদ্রকে দেখছে সে?আচ্ছা,কেমন আছে অহনা?নাহ,ও তো এখন আর এই ভালো লাগা না লাগার বেড়াজালে আটকে থাকা একটা রক্ত-মাংসের মানুষ নয়।তাহলে কেন ভাবছে এই কথা?আচ্ছা,অহনা কি বুঝতে পারছে রুদ্রর মনের কথা?হয়তো পারছে,হয়তো পারছে না।কিন্তু আজ আর এসবে রুদ্রর কিছুই যায় আসে না।দ্রুত ভেবে চলে সে,“অহনা,তুমি ওইদিন ভুল বলেছিলে।ভালবাসার কোনও রঙ হয় না।নাহ,আসলে ভালবাসার অনেক রঙ।তার পরতে পরতে বৈচিত্র্যময় রঙের ছড়াছড়ি।সেদিন তোমার প্রতিটা নিউরনজুড়ে ছিল রক্তিম লাল রং,তাই তোমার কাছে ভালবাসার রঙ ছিল লাল।অহনা,আজ আমারও ভালবাসার রঙ আছে।কালো,মিশমিশে কালো।তুমি যেই রংটা আমাকে উপহার দিয়ে নিঃসীম আঁধারে হারিয়ে গিয়েছিলে এক বছর আগে।নাহ,হারাও নি তো!!এইতো আছ তুমি,আমার সবটুকু জুড়ে,যেভাবে ছিলে আগেও।তোমাকে হারাতে দেব না কোনোদিন।অহনা,আমি তোমার কাছেই আসছি।যতদিন বাঁচব,তোমাকে নিয়েই বাঁচব।বলেছিলাম না একদিন?আমি আমার কথা রাখব অহনা।......”
............... ..................... ........................ .................. .....................
খুব সকালেই মৌচাক মোড়ের কাছে ছোটখাটো একটা জটলা পাকিয়ে গেছে।রোড অ্যাক্সিডেন্ট,বেশ চটকদার একটা খবর হবে,গন্ধে গন্ধে মিডিয়াও হাজির।শুধু যাকে নিয়ে এত্ত কিছু,সেই রুদ্রই নেই।পূর্ণ চাঁদের আলোতে চারিদিকে যখন মায়াময় এক পরিবেশ,পৃথিবীর সব মায়া ছাড়িয়ে রুদ্র তখন অসীমের পথে যাত্রা করেছে।হ্যা,হেরে গেছে রুদ্র।ভালবাসার কাছে হেরে গিয়ে তারার পানে ছুটে চলেছে সে।একটা মালা গাঁথতে হবে।ফুলের মালা।তারার ফুল।অহনার খুব ইচ্ছে ছিল।হ্যা,একটা মালা গাঁথতেই হবে......
©somewhere in net ltd.