![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পাভেল রইস । ভালো কিছু লিখত পারি না তবুও মাঝে মাঝে কিছু লিখি
একবার প্রান ভয়ে ছুটে চলা মুরগীকে দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশ মায়া লাগল । তারপর থেকে তিনি মুরগী খাওয়া ছেড়ে দিলেন । মুরগী কাটা দেখতে যতই খারাপ লাগুক , আমরা কেউই রবী ঠাকুর না বলেই হয়ত মুরগী খাওয়া আমদের এতো প্রিয় ।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মুরগী কাটার সময় চোখ বন্ধ করে রাখি । খাওয়ার সময় এতো কিছু মনে থাকে না ।
বাবা চারটা মুরগী আনলেন । মা এর আগের বার যখন মুরগী আনা হয়েছিল তখন একটা মুরগী রাখতে চেয়েছিলেন । বাবার মর্জিতে তা আর রাখা হয় নি । এবার আমার ছোট বোনের খেলার সাথী হিসাবে একটা মুরগী রাখা হল । ফ্লাট বাসায় মুরগী রাখা কঠিন ব্যাপার । চারটা মুরগী থেকে একটা মুরগীর পালকগুলো কিছুটা ঈগল পাখির মতো , মা সেটা রেখে দিলেন ।
মুরগী রাখার পর আমার ছোট বোন প্রথম প্রথম ভয় পেতে শুরু করল । দূর থেকে আঙ্গুল উঠিয়ে বলল , মুজ্ঞী , মুজ্ঞী ... আমি কখনবা ভয় কাটাতে কাছে নিয়ে গেলাম । দৈত্য দেখে ভয় পেয়েছে এমন ভঙ্গিতে আমাকে ধরে রাখল ।
মুরগীটা কখনো বারান্দায় , কখনো ডাইনিং রুমের রেকের পাশে বেধে রাখা হল । এই মুরগীর স্বভাব দেখে অবাক হলাম । অতি ভদ্র মুরগী । একে বেধে রাখার প্রয়োজন মনে করলাম না । দার্শনিক টাইপের মুরগী । গম্ভীরভাবে সে পায়চারী করে । কোন ডাকাডাকি করে না । বুঝাতে চায় সে ভালো বংশের মুরগী । তাকে জীবত রাখা হয়েছে এতেই সে আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ।
মুরগীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরনে আমি অবাক হলাম । কিছুদিন পর সে আমাকে দেখলেই ডিম পারবে , ডিম পারবে এমন একটা ভঙ্গি করে । ভাবটা এমন যে সে বুঝাতে চেষ্টা করে – ‘পাভেল ভাই , আমি চেষ্টায় আছি । আমার জন্য দোয়া করবেন । আর কয়েকদিন চেষ্টা করলে ডিম পাড়তে পারব’ ।
রাতে আমি ঘুমাই না । এটা পুরানো বদ অভ্যাস । খাওয়া দাওয়া করি রাত তিনটার দিকে । তারপর টুকটাক গল্পের বই পড়ি । মুরগী আমার পাশে বসে থাকে । আমি যা খাই তা ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারি আর সে কৃতজ্ঞতার সাথে খায় । খাওয়া দাওয়া বেশ বাছ বিচার করে চলে । দামি খাবারের প্রতি তার বেশি আকর্ষন । ভাতের চাল খায় না , পোলাও চাল খায় ।
এই মুরগী থেকে মুরগীও সম্পর্কে যা বুঝলাম যে , মুরগীরা নুডুলস খুব পচ্ছন্দ করে । দেখতে অনেকটা কেচোর মতো তাই হয়ত । আরেকটা ব্যপার লক্ষ্য করলাম যে , তাদের খাবারের মাঝে তাদের বিষ্ঠা লাগলে সে খাবার আর তারা খেতে চায় না । মুরগীকে জোর করে পানি খাওয়ানো যায় না , ওদের ইচ্ছে হলে ওরা পানি খায় ।
কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর মুরগীটা আমাদের পরিবারের একজন হয়ে গেল । আমি বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুললাম । ভদ্র ফ্যামিলির মুরগী তাই বাঁধন খুলে দেওয়া হল । সারা ঘর সে হাঁটতে শুরু করল । আমার ছোট বোন এখন আর মুরগীকে ভয় পায় না । ওকে যা খেতে দেওয়া হয় তাই সে মুরগীকে খেতে দেয় । না খেলে মুরগীর পায়ের দড়ি টান দিয়ে ধরে বলে , খা ... খা ...
হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর মা একবার মুরগী পালতেন । কিন্তু মুরগীটা ডিম দিচ্ছিল না । হুমায়ূন স্যার তার মাকে খুশি করানোর জন্য রাতে দোকান থেকে ডিম কিনে এনে মুরগীর পাশে রেখে দিলেন । তার মা ডিম দেখে ভীষণ খুশি হলেন ।এভাবে প্রায় সময় তিনি মুরগীর ডিম কিনে তার মাকে খুশি করাতেন । একদিন তার মা ভীষণ ক্ষেপে গেলেন । হুমায়ূন স্যারকে ডেকে ভীষণ বকাঝকা করলেন । কারন , হুমায়ূন স্যার ভুল করে হাঁসের ডিম দোকান থেকে কিনে এনে মুরগীর পাশে রেখে দিয়েছিলেন । তাতেই তিনি ধরা খেয়ে যান । মুরগী কিভাবে হাঁসের ডিম পারবে !
আমার একবার মনে হল একটা ডিম কিনে এনে মাকে খুশি করি । কিন্তু হাস্যকর সমস্যা এই যে আমি ফার্মের ডিম আর দেশি মুরগীর ডিম আলাদা করতে পারি না । তাহলে হয়ত মা প্রশ্ন করবেন , দেশি মুরগী ফার্মের ডিম পারল কিভাবে ! তাই , আর ডিম কেনা হল না । ও চেষ্টায় আছে, চেষ্টায় থাকুক ।
মুরগীর প্রধান সমস্যা ওরা ঘন ঘন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয় । এটা আমার বাবার পচ্ছন্দ হল না । আমি বাচ্চাদের পেম্পাশের কথা ভাবলাম । মুরগীকে পড়িয়ে দিলে কেমন হয় ! তা আর করা যায় না ।
বাবা একদিন অফিসে যাওয়ার সময় বলে গেল আজ মুরগীটাকে কেটে ফেলব ।মুরগীরা মানুষের কথা বুঝে কিনা জানি না । মুরগীটা হয়ত ভয় পেয়ে গেল । বাসায় ফিরে দেখি মা একটা মুরগীর ডিম হাতে নিয়ে বলছে , এটা আমাদের মুরগীর ডিম । আমি হাসি দিয়ে বললাম , বাহ !
ডিম পাড়া মুরগী কে কাটতে চায় । সে যাত্রায় মুরগী রক্ষা পেল ।
মায়ের ধারনা ছিল মুরগী প্রতিদিন ডিম দিবে । কিন্তু মুরগীটা আর ডিম দিল না । রাতে আমি ঘুমাতে যাওয়ার সময় দেখি মুরগী জেগে আছে । আমি মাথা ধরে একটু আদর করে দিলেই গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়ে । এটা প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেল ।
মুরগীর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া বন্ধ হল না । বরং এর নতুন স্বভাব হল সোফার উপর উঠে বসে থাকা । বেশ আরামেই দিন কাটাচ্ছিল । বাবা একদিন বলল , মুরগীটা কেটে ফেলি । আমি ঘোষণা দিলাম , এই মুরগী আমি কাটতে পারব না ।
বাবা আমার কথায় অবাক হলেন না , আমি অবাক হলাম । আমার খুব কম মানুষ অর্থাৎ পরিবারের বাইরের কারো প্রতি তেমন কোন টান নেই । কিন্তু সামান্য মুরগীর প্রতি আমি গভীর টান অনুভব করলাম । এ মুরগী আমি কখনোই কাটতে পারব না ।
শুক্রবারে গোসল করতে গেলাম । রান্না ঘরে গিয়ে দেখি একটা মুরগীর মাংস আর নাড়ি ভুড়ি আলাদা করা । বুকের ভেতর কেমন ছ্যাঁত করে উঠল । বাবাকে বললাম , মুরগী কেটে ফেলেছেন ?
বাবা পরিস্থতি স্বাভাবিক করার জন্য মজা করে বলল , কক কক কক কক কেত কেত কাট ...
আমি ধাক্কার মতো খেলাম । বিশ্বাস হল না । বারান্দায় গিয়ে দেখি মুরগী নেই ।
মুরগীর খাবার আর অর্ধেক খাওয়া পানি পড়ে আছে । অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেল । কিন্তু বাবার প্রতি রাগ হল না । একদিন না একদিন মুরগীটা কাটতেই হত ।
মায়া বড় অদ্ভুত কিছু । কত মুরগী খেলাম কোন মায়া লাগে নি । কিন্তু কাছে থাকা মুরগীটা চলে যাওয়ায় মনে হচ্ছে কি যেন নেই । ঘরে ঢুকে চোখ পড়ে মুরগীটা যেখানে বাধা ছিল সেখানটায় । রবী ঠাকুরের মতো মুরগী খাওয়া হয়ত ছাড়তে পারব না তবে কোন মুরগীকে আর কোনদিন এমন মায়ার বাধনে জড়াবো না ।
এই লেখাটা কোন লেখার পর্যায়েই পড়ে না । অনেকের ধারনা হতে পারে সময়টা নষ্ট হল । কিন্তু আমার বুকের ভেতর জমে থাকা কিছু বাষ্পময় অনুভূতি গুলোকে লেখাটা না লিখলে আমি হয়ত বের করে আনতে পারতাম না ।
মানুষ মরে গেলে স্বর্গ অথবা নরকে যায় । মুরগী মরে গেলে কোথায় যায় আমার জানা নেই । তবে , সে স্বর্গে যাক আমার একটাই চাওয়া ।
- পাভেল রাইস
©somewhere in net ltd.