নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রচেষ্টা থেকেই শুরু নতুনত্বের। আমিও প্রচেষ্টা করি, তবে প্রচেষ্টাটা কোন কিছুর ইচ্ছে মেটাবার জন্য। হ্যা আমি আমার মনের কথা বলছি। ইচ্ছে হয় লিখে ফেলি মনের সমস্ত কথা। কিন্তু, আমি যে গুছিয়ে লিখতে পারিনা।

Pawky Kerf

আমি Pawky.. মনের খোরাক মেটানোর জন্যে লিখি। যখন যা ইচ্ছে হয়।

Pawky Kerf › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: লুকানো বাস্তবতা

২৮ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২৭



(অন্ধকার এক পতিতার অন্য গল্প)


(হাসান)- "স্যার আমার টাকাটা দিয়া দেন। আর কত চালামু? আপনার লাইগা আইজকা সারাদিন খালি লেগুনা নিয়া ঘুরতাছি। সার্জনে ধরলে গাড়ি আটকাইব, কাগজ নাই।"
(আমি)- "সমস্যা নেই, পুলিশের আই.জি আমার বন্ধু।"

- আমার টাকাডা? সারাদিন খালি লেগুনা চালাইছি, হেল্পারডারেও নামাইয়া দিছি। দিনডাই মাডি। জমা কি দিমু আর বাসায় কি নিমু?
- তোমার জমা সহ প্রতিদিন কত আসে?
-৩-৪ হাজার।
- আচ্ছা আমি তোমাকে ৫ হাজার টাকা দিব। চালাও যেখানে ইচ্ছা।

লেগুনা যাচ্ছে সাথে আমি যাচ্ছি, পুরো লেগুনাটা রিজার্ভ নিলাম। আমার দাম্পত্য জীবন ভালো যাচ্ছেনা। আজকে আমি ওর গল্প শুনব । হাসান লেগুনাটাকে দৌলতদিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি অবাক হচ্ছি, এদিকে কেন?
- হাসান, লেগুনা এইদিকে কেন?
- স্যার, এইহানে একটা পট্টি আছে যাইবেন নাকি? আপনি না চাইলে থাউক, গাড়ি ঘুড়াই।
- নাহ, চলো যাওয়া যাক।

হাসান লেগুনা চালাচ্ছে, গন্তব্য দৌলতদিয়ার পতিতা পল্লী, হয়ত ওর রিপু উত্তেজিত, আমাকে বোকা ভেবে নিয়ে এসেছে।
- কি হাসান? বউ নাই?? এখানে কি আসা হয়??
- হা হা হা, স্যার বউ লাগব কেন? ওইখানে ১৫০ টাকায় বউ পাওয়া যায়। আর হেইডা দিয়া বউ এর চাইতে বেশি কাম করা যায়। আপনের লাগব? আপ্নেগো লাইগা দামি জিনিস আছে ২০০০ টাকা। অনেক ইচ্ছা আমার অগোরে একটু ধরমু। কিন্তু ২০০০ টাকা কই পাই।
- ও আচ্ছা, চল। আমি দেব আজ।
- চলেন স্যার।

হাসানের চেহারা ঘামছে। লজ্জা লজ্জা ভাব, ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে আছে। ও যৌনতার উচ্চ শিখরে পৌছে গেছে, এক পশুত্ব চেহারায় ফুটে উঠছে। যৌন আকাঙ্কার এত ক্ষমতা আগে জানা ছিলনা।
আমরা চলে গেলাম ওখানে। ১৫০ টাকার পতিতা গুলো একটু নোংরা পরিবেশ এ থাকে, আর হাজার টাকার পতিতা গুলোর নিজেদের আলাদা ঘর রয়েছে। হাসানের হয়ত আগেই একটা পতিতা পছন্দ করা ছিল। হয়ত হাসান নীল নকশা বানাচ্ছিল ওর জন্যে। হাসান ঠিক একটা নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে গিয়ে থামল।

- স্যার এই বাড়িতে একটা নায়িকা আছে, তামিল নাইকার চাইতে সুন্দরী। মনে লাগছে। আজকে ওরে খামু। আপ্নে না কইরেন না আবার। চাইলে আইতে পারেন।
- হুম আমিও যাব। মেয়েটিকে দেখব।
- চলেন লাগলে দুইজনে মিল্লা.......
- থাম, চল যাই ভিতরে।

আমি বেশ অবাক হলাম। এই মেয়েটি এখানে কেন? তার রূপ লাবন্য আমাকে মোহিত করে ফেলেছে। বয়স ১৯-২০ হবে। এ কি সত্যি এক পতিতা? বিশ্বাস হচ্ছেনা। হয়ত সৃস্টিকর্তা একটু বেশিই দিয়েছিল ওকে তবে পরিনতি হিসেবে দিয়েছে পতিতাবৃত্তি। মেয়েটিকে দেখে আমার কামের ইচ্ছে জাগল, ইচ্ছে হচ্ছিল হাসান কে বলে দেই অন্য একটাকে খুঁজে নিতে, কিন্তু না আমাকে কন্ট্রোলে থাকতে হবে।

হাসান আমার সামনেই মেয়েটিকে নিয়ে মর্ত্য খেলায় মেতে উঠল, অবাক লাগছে যে মেয়েটিকে কত সহজে ৩০০০ টাকায় রাজি করালো। মেয়েটি বলল, ৪০০০ না দিলে কাম করুম না, হাসান বলল, তোরে ৩০০০ দিমু, মেয়েটি চলে এল।
হাসান খুবলে খাচ্ছে মেয়েটিকে। প্রথম যখন লেগুনায় উঠি, সেই হাসানের সাথে এই হাসানের কোন মিল নেই। কি আশ্চর্য এই দুনিয়া।
মনে হচ্ছে থামিয়ে দেই ওকে, এটি একধরনের ধর্ষন, আমি শিক্ষিত হয়ে নিজ চোখে সব দেখছি। পরোক্ষ ভাবে আমিও মেয়েটিকে ধর্ষন করছি। আমি বললাম,
- এই মেয়ে, তোমার খারাপ লাগেনা? হাসান কে থামতে বলব?
- না, ভালোই লাগে, লোকটারে আমার মনে ধরছে, আমি সহজে কারো লগে শুই না।

ওদের মর্ত্য খেলা চলতে লাগল, আমি বাইরে এসে সিগারেট ধরালাম, ১ টা ২ টা করে সিগারেট শেষ হচ্ছে। নিজেকে নিবারণ করলাম যৌনতা থেকে এবং আমি পেরেছি।
হাসান বের হল। ওর মুখে হাসি। আমরা চলে যাবার আগে আমি টাকাটা মেয়েটার হাতে দিয়ে বললাম, "আসি"। মেয়েটার মুখ মলিন হয়ে গেল। হয়ত হাসান কে ওর ভালো লেগেছে। হাসান ও বারবার পিছনে তাকাচ্ছে। হাসান বলল, "স্যার, ওর চেহারাটা মাথায় ঘুরতাছে। ওর মত সুখ আমারে এহন পর্যন্ত কেউ দেয়নি"।

বুঝতে বাকি রইলনা যে, হাসানের মনেও ওকে ধরেছে।
- হাসান, বিয়ে করবি ওরে?
- কেমনে স্যার? এইখান থেইক্কা ওরে বাইর করমু কেমনে? পট্টি থেইকা মাইয়া বাইর করা কষ্ট অনেক।

আমি আমার আই জি বন্ধু কে ফোন দিলাম। মিনিট ৪০ এর মধ্যেই দৌলতদিয়ার ওসি আসল। মেয়েটিকে তুলে নিয়ে আনলাম। মেয়েটি কাঁদছে, আর বলতেছে, "স্যার আমি কিছু করিনাই, আমারে পাচার কইরা দিয়েন না"।
আমি মনে মনে হাসছি। মেয়েটি নিজেও জানেনা যে কিছুক্ষনের মধ্যেই মুক্তি পাবে মেয়েটি এই নষ্ট জগৎ থেকে।

আমি হাসান কে কিছু বললাম না আর। ওর মুখে আগের মত সেই পশুত্বের ছাম টুকু নেই। ছেলেটার মুখে এক স্বস্তির ছাপ। আমি জানি হাসান মেয়েটিকে কষ্ট দিবেনা। বেশ সুখেই রাখবে, হয়ত এই রকম কিছু হওয়াটা হাসানের একটা Life Goal ছিল।
লেগুনা তার গতিতে চলছে। সন্ধ্যে হচ্ছে। হাসান বেশ ফুরফুরে মেজাজে লেগুনা চালাচ্ছে। আমি সামনেই বসলাম। মেয়েটি পিছনে বসে আছে। কাঁদছে বোকা মেয়েটা অনেক। ওসি হাসেব অনেক সাহায্য করেছে। সে থানা থেকেই কাগজ সহ এসেছিল। ওনাকে কিছু বকশিস দিয়া বিদায় দিলাম। আমরা ঢাকার দিকে আবার ব্যস্ততার দিকে যাচ্ছি। হাসান ভালো স্পিডেই লেগুনা চালাচ্ছে। আজ ওর ঈদ। হঠাৎ হাসান বলে উঠল-

" স্যার আপনেরে ধন্যবাদ দিমু না। আপ্নেরে একটা ছোট গল্প কই। আমি লেগুনা চালাই কেন জানেন? কারণ পড়ালেহা করিনাই। তয় আমি নিজেরে শিক্ষিত মনে করি। আমি জীবনে কত চেষ্টা করছি একটা ** আইনা বিয়া করুম। পারিনাই। আসলে ইচ্ছা ছিল একজন রে মুক্তি দিমু। আমি আরিচা যাইতাম, কিন্তু যহন আপ্নে কইলেন এই দিক কেন তহন মজা কইরা কইসি যে এইহানে পট্টি আছে। আপনেও সায় দিলেন আর আমিও গেলাম। তিতা সত্য কি জানেন? মাইনষের মুখে শুনতাম আমার নাকি বাপ ঠিক নাই। খারাপ লাগত। মইরা যাইতে ইচ্ছা করত। কিন্তু কি করব কন? মরা এত সহজ। এর পর বড় হইলাম। যহন নিজের উপ্রে রাগ হইত তহন **গো লগে খেলতাম। পরে চাইতাম মুক্তি দিতে। কিন্তু এত ক্ষমতা নাই আমার। এই মাইয়ারে আমি কষ্ট দিমুনা। আর জীবনেও পট্টিতে যামু না, এই কান ধরলাম"
- আরে, কান পরে ধইর। এক্সিডেন্ট করবা।
হাসান আসলেও নিষ্পাপ। ওর চেহারায় আমি যে পশুত্ব দেখেছি তা কৃত্রিম। এবার ওর আসল চেহারা দেখা হল।
আমি গাবতলী নেমে যাই। হাসান কে দশ হাজার টাকা দেই। মেয়েটিকে ভালো রাখার জন্যে বললাম। বোকা মেয়েটি এখনো কাঁদছে। ওরা চলে গেল। হয়ত হাসান ওকে বিয়ে করে সুখে থাকবে নয়ত ওদের ঝগড়া হবে। বাকিটা উপর ওয়ালার ইচ্ছা।

আর প্রায় ২০ বছর হল, ওই দিনের পর আর যোগাযোগ নেই। ওদের মনে পড়ে। ঠিকানা দিয়েছিল, ইচ্ছে করেই যাইনি। এখন আমি বুড়ো হয়ে গেছি। আমার কোম্পানি এখন দেশের নামকরা ব্রান্ড এ পরিণত হয়েছে। অনেক বেকার যুবক যুবতীর কর্মস্থল বানিয়ে দিয়েছি। আমার টাকার অভাব নেই। আমার স্ত্রী ৭ বছর আগে মারা গিয়েছে। আমার একমাত্র ছেলে, ওর বয়স এখন ২৭ এর কাছাকাছি। আমার কোম্পানির ম্যানেজার পদে গছিয়ে দিয়েছে। ল্যাটা চুকিয়ে দেওয়া আর কি।
আজ ওদের কথা বেশ মনে পড়ছে। কেমন আছে হাসান?
মাঝ খানে এসে একটা ঠিকানা দিয়ে গেছিল হাসান। তবুও যাওয়া হয়নি। মনটা উস্কিয়ে উঠছে। এক মায়ার টানে আজ যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। না যাওয়া যাক। ড্রাইভার ডেকে চললাম সেই ঠিকানায়। একটা চারতলা বাসা। কিন্তু হাসান নামে কাউকে পেলাম না। বাড়িয়ালার সাথে দেখা করতেই বললেন, " আপনি কি ****** সাহেব? "
আমি অবাক হয়ে বললাম, "জ্বি, হাসান নামেএ কোন লেগুনা ড্রাইভার থাকত আপনার বাসায়?"
- হ্যা, ওরা এই বাসা ৩ বছর আগে ছেড়ে দিছে। যাওয়ার আগে ঠিকানা দিয়া গেচগে। হাসান ভাই আপনের খোঁজ নেয় যে, কেউ ওনারে খুঁজতে আসল কিনা? এই নেন ঠিকানা"

একটা মানুষ কতটা কৃতজ্ঞ হলে এমন করতে পারে আমার জানা নেই। যাই হোক এবার আরো ইচ্ছে হল হাসান কে দেখার। ওই একবার ছাড়া আর দেখাও করেনি এই ২০ বছরে। চলে গেলাম ঠিকানা অনুযায়ী।
হ্যা, আমি দেখতে পাচ্ছি মেয়েটাকে, আমাকে সালাম দিল যে। এটাই তো ওই মেয়েটা। হাসানকেও পেলাম। চুল পেঁকে গেছে বেঁচারার। হাসান আমাকে দেখে কেঁদে দিল, আমাকে জড়িয়ে ধরে। জিজ্ঞেসা করলাম কেন দেখা করোনি? হাসান উত্তর দিলনা, কথা পাল্টদানোর চেষ্টা করল।
হাসান নিজের গল্প বলছে আবার, " স্যার ভাবছিলাম পোলা হইব, কিন্তু হইল মাইয়া, কি আর করার? আর কোন বাচ্চা নিলাম না। ওরেই মানুষ করলাম। এখন আমার মাইয়া অনার্ষে পড়ে ২ য় বর্ষ, ইডেনে। পাশাপাশি অফিসে কাজ ও করে। ভালো বেতন পায়। শান্তিতেই আছি স্যার। "
- বাহ, ডাকো তোমার মেয়েকে।
হাসানের মুখ চুকিয়ে গেল। মা রাইসা বলে ডাক দিল। একটি ফুটফুটে মেয়ে বেড়িয়ে এল। আমাকে দেখে বলল,
- স্যার আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন স্যার?
- একি স্যার বলছ কেন? ( মেয়েটিকে আমার চেনা চেনা লাগছে ভীষন।)
- স্যার, চেনেন নি আমাকে? আমি রাইসা, আপনার অফিসের পার্ট টাইম রিসিপসনিষ্টস আমি।

আমি অবাক হলাম এজন্যেই কি হাসান যেতনা আমার অফিসে। হে আল্লাহ। তোমার লীলা খেলা বেশ। রাইসাকে আমার বেশ ভালোই লাগে। না চেনার কারণ হচ্ছে অনেক গুলো রিসিপসনিষ্ট, তার উপ্রে ওদের ওভাবে চেনা হয়না। সেদিন অনেক্ষন গল্প করে আসলাম। খেলাম। মেয়েটির হাতের রান্না অসাধারণ, রাইসা আমাকে নিয়ে বেশ ব্যাস্ত ছিল। কি নিষ্পাপ মেয়েটা লাবন্য উপচে পড়ছে। সেদিন চলে এলাম। রাইসাকে অনার্স ভালো করে পড়তে বললাম আর বলে এলাম যে অনার্স শেষ হলে আমার কোম্পানিতে ওকে পারমানেন্ট চাকুরি দিব। রাইসা অবাক হলো এই ভেবে যে, আমি কিভাবে ওর বাবাকে চিনি। রাইসা হয়ত হাসান কে জিজ্ঞাসা করবে। হয় হাসান সত্য কথা বলবে নয়ত মিথ্যে।

অনেক দিন চলে গেল। আমার ছেলে রাফির ভালোই বয়স হল। বিয়ে দিতে হবে, ভাবতে ভাবতে রাফি একদিন নিজেই এসে বলল, " বাবা, আমি জানি তুমি আমার বিয়ে নিয়ে ভাবছ, আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। এই দেখ তার ছবি"। আমার বোকা ছেলেটা রাইসার ভহবি দেখালো। আমি হাসতে হাসতে শেষ। বাহ বাহ। শেষমেশ একটা পতিতার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হবে যার বাপ একটা লেগুনার ড্রাইভার আর যাদের বিয়ে আমিই দিয়েছিলাম। হায়রে জীবন। আমি হাসছি তো হাসছি।
তবে যাই হোক, রাইসা অন্তত চা টা খারাপ বানায় না। এক তৃপ্তি আসে রাইসার হাতের চা খেয়ে।

(সমাপ্ত)
লেখা: Pawky_Kerf

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.