নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাওয়াই মিঠাই। অথবা ১ টাকার আইসক্রিম।

স্যার পাইরেট কিং

কিং। পাইরেট কিং।

স্যার পাইরেট কিং › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাভার ট্র্যাজেডি এবং কিছু কথা

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯

ছোটবেলায় সকালে যখন ঘুম থেকে উঠে চোখ আধো বন্ধ আধো খোলা রেখে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা হতাম তখন রিকশায় বসে দেখতাম একদল মানুষ, বিশেষ করে মেয়েরা, সারিবদ্ধ ভাবে হেঁটে তাদের কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছে। তাদের হাঁটার মধ্যে সে কি তাড়া! কয়েকজনের হাতে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার। দুপুরে কাজ থেকে বিরতি নিয়ে এক ফাঁকে নাকে মুখে কিছু গুঁজে নিবে। এরপর আবার সেই কাজে ফিরে যেতে হবে।



আমার ধারণা ছিলো এরা হয়তো অনেক বেশি টাকা বেতন পায়। ১০,০০০+ তো হবেই! নইলে এতো ভালোবাসা কিভাবে জন্মায় তাদের কাজের প্রতি? কিন্তু একটু বড় হয়ে জানতে পারলাম এদের অধিকাংশের বেতন ২০০০ থেকে ৪০০০ এর মধ্যে। ৫০% ওভার টাইম করলে ১০০০-২০০০ টাকা বেশি মিলে। এদের বেশিরভাগই এই অল্প বয়সে নিজের ছোট্ট কাঁধে তুলে নিয়েছে পুরো পরিবারের দায়িত্ব। পরিবারের জন্য এদের অধিকাংশ দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় বেতনের অর্ধেকটা। কোনও কোনও সময়ে হয়তো আরও বেশি।



আমার শিক্ষা জীবনে আমি যতবার বাংলাদেশের কোনও কর্মক্ষেত্রে সুবিধা - অসুবিধার কথা পড়েছি ততবার আমরা একটা টার্মের সাথে দেখা হয়েছে। 'বাংলাদেশের শ্রম বাজার খুব সস্তা। এইজন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়।' বিনিয়োগ প্রতিবছর বাড়লেও এইসকল কর্মচারীদের বেতন সেই কচ্ছপ গতিতেই বাড়ে। বেতন কোঠা বাড়ানোর জন্য তাদের আন্দোলন এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বেতন তো বাড়েই না, উল্টো পুলিশ এবং মালিক শ্রেণীর লোকদের হাতে মার, লাত্থি কপালে জুটে তখন।



এদের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে জানবেন? ঠাণ্ডা এসি রুমে বসেও আপনি যখন বরফ দেয়া শীতল পানি খেয়ে বলেন 'উফ, এই বছর গরমটা অনেক বেশি পড়েছে' তখন তারা কাজ করে যায় আগুন গরম কোন এক বদ্ধ ঘরে। একমনে কাপড় সেলাই করে যায় একটার পর একটা। মেশিনের তাক লাগানো আওয়াজে আশেপাশের কথা কানে প্রায় আসে না বললেই চলে। প্রায়ই এদের অনেকের হাত ঢুকে যায় মেশিনে। আগুন লেগে যায় গার্মেন্টসে। বের হতে পারে না অসংখ্য শ্রমিক সেই বদ্ধ ঘর থেকে। সেখানেই তাদের মৃত্যু বরণ করতে হয় ধুঁকে ধুঁকে।



এরা নালিশ করতে ভয় পায়। কারণ চাকরীটা চলে গেলে বাড়িতে অসুস্থ বাবা মার সেবা অথবা ছোট ভাইটার পড়ার খরচ থেমে যাবে। নিজেদের পরিবার হবার কথা চিন্তাও করে না এরা। নিজেদের সেলাই করা পোশাক পড়ার অধিকার পায় না এরা। এদের জীবনটা এক বিশাল সাগরের মতো। যার শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই। এরমাঝে টর্নেডো, কিংবা সুনামির মতো বড় বড় বিপদ সে তো প্রতি মাসে কিংবা বছরেই তাদের সঙ্গী হয়।



আজ বুধবার সকাল নয়টায় সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ধসে পড়ে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন। নয়তলা ওই ভবনে বিপণিকেন্দ্র, পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই ভবনে ফাটল দেখা দিলে সেই ভবনের পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। আজ সকালে কাজ করতে ভবনে ঢুকতে অস্বীকৃতি জানালে শ্রমিকদের জোর করে ঢুকানো হয় ভবনে। ‘একটা পিলার ফাটলে কিছু হয় না!’ এমনটা বলে তখন মাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলেন মালিক পক্ষের লোকজন।



এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা বলেন, 'মঙ্গলবার ফাটল দেখা দেওয়ায় আমরা কাজে যোগ দিতে চাইনি। কিন্তু বুধবার সকালে আমাদের ভয় দেখিয়ে কারখানায় আনা হয়।'



এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা আগামীকাল পর্যন্ত ক্রমেই বাড়বে। ধ্বংসস্তূপ সরালেই বের হবে নতুন কোনও ব্যক্তির লাশ। আমার প্রশ্ন, এটা দুর্ঘটনা নাকি যারা ভবনের অবস্থা ভালো না জেনেও জোর করে তাদের কাজে পাঠিয়েছে তাদের দ্বারা সংঘটিত খুন বা গণহত্যা? বাকি সব ঘটনার মতো এটিও কি ধামাচাপা পড়ে যাবে? বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করার কাজে নিয়োজিত এই গার্মেন্টস কর্মীরা কি পাবে সঠিক বিচার?



উত্তর হয়তো কোনোদিন জানা যাবে না। বাংলাদেশে মানুষের মনে হাজারো প্রশ্ন জন্মায়, কিন্তু উত্তর দেয়ার ক্ষমতা যাদের তাদের মানবতা, মনুষ্যত্ব জন্মায় না।



ভবন ধ্বসে পড়ার কারনে অনেক লোক আহত হয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় এখন হসপিটালে আছে। তাদের জন্যে বিভিন্ন গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন। যারা যারা রক্ত দিতে আগ্রহী তারা এই নাম্বারগুলাতে যোগাযোগ করেন।



তুহিন 01923337010 (জাহাঙ্গীরনগর)

রন্তু 01681212777

(এনাম ম্যাডিক্যাল) 027743779-82, 01716358146

তাসলিমা :০১৭১১৫৪৪৫৪৪



লেখাটি ছড়িয়ে দিন সব জায়গায়। প্রচুর রক্ত দরকার সেখানে। সাভারের প্রতিটা ক্লিনিকেই এখন আহতরা রয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়ে গেছে। আহতের সংখ্যা ৮০০/৯০০ এর উপরে। এগিয়ে আসুন সবাই।



যারা রক্ত দিতে পারবেন তারা উক্ত নাম্বারে ফোন করুন, রক্ত না দিতে পারলে পোস্টটি শেয়ার করুন নিজের স্ট্যাটাসে, বিভিন্ন বাংলা পেইজে ও গ্রুপে, যেন অন্য কেউ এটি দেখে রক্ত দিতে এগিয়ে আসে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.