নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর একটি পৃথিবী চাই

পিট পলাশ

নিতান্ত অলস একজন মানুষ

পিট পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার সিকিম দার্জিলিং ভ্রমণ

০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৫০



অনেকদিনের ইচ্ছা দার্জলিং যাব, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখব। সাথে সিকিম যাওয়ার ইচ্ছাও প্রবল। অবশেষে ট্যুরের গন্তব্য ঠিক করলাম সিকিম এবং দার্জিলিং। প্রথমে সিকিম যাব, এরপর দার্জিলিং। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সন্ধ্যায় যাত্রা শুরু করব। উত্তেজনায় আমার ঘুম হারাম। আর এদিকে ১৮ তারিখ যেন আসতেই চায় না। অবশেষে ১৮ তারিখ আসল এবং সেদিন সন্ধ্যায় আমি যাত্রা শুরু করি বুড়িমারির উদ্দেশ্যে।
যাইহোক, বুড়িমারি-চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডার পার হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছাই ভারতীয় সময় দুপুর ১ টায়। বাস থেকে নেমেই সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে জীপে চেপে বসি। ইতিমধ্যে আমার ২০ ঘন্টা টানা জার্ণি হয়ে গেছে। শিলিগুড়ি ছেড়ে কিছুদূর যেতেই ঠান্ডার আভাস পেলাম। ভ্যাপসা গরম বিদায় জানিয়ে দিয়েছে। রাস্তা ভেজা, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের জীপ শুধু উপরের দিকে উঠছে। এক সময় রাস্তার পাশে চলে এল তিস্তা নদী। বিশাল পাহাড় দুই পাশ দিয়ে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে, মাঝে তিস্তা নদীর ছুটে চলা। যেন তিস্তা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে সবুজ একটু বেশিই হয়েছে পাহাড়গুলো। অসাধারণ দৃশ্য।

শিলিগুড়ি থেকে দুপুর ১:৩০ এ জীপ গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। র‍্যাংপো চেকপোস্টে পৌঁছাই বিকাল ৫ টার কিছু পরে। সেখান থেকে সিকিম ভ্রমণের অনুমতি নিয়ে নিই, পাসপোর্টে সিকিমের এন্ট্রি সিল দিয়ে দেয়া হয়। এরপর আবার যাত্রা শুরু।
সিকিম পুরোটাই পাহাড়ী রাজ্য। ১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতে যোগদান করে। অনেকদিন পর্যন্ত সিকিমে বিদেশীদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। বর্তমানে সিকিম ভ্রমণের অনুমতি আছে বিদেশীদের জন্য। যাইহোক, দিনের আলো ফুরিয়ে গেলেও আমাদের রাস্তা যেন ফুরাচ্ছিল না। দিনের আলো ফুড়িয়ে এলে পাহাড়ের গায়ে সিকিমের অধিবাসীরা তাদের বাড়ির আলো জ্বালতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট আলোর বিন্দু দেখা দিল। আস্তে আস্তে পুরো পাহাড় জুড়েই দেখা গেল আলোর মেলা। যেন অনেকগুলো জোনাকি একসাথে মিলে বিশাল এক পাহাড় গড়ে তুলেছে। অভিভূত হলাম এমন দৃশ্য দেখে।

টানা ২৮ ঘন্টা জার্ণির পরে অবশেষে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক পৌঁছালাম। তখন ঝুম বৃষ্টি গ্যাংটকে। বৃষ্টির মধ্যেই আরেকটি ট্যাক্সি নিয়ে গেলাম এমজি মার্গ। সিকিমে তখন অফ সিজন। হোটেল পেতে কোন সমস্যা হয়নি। টানা জার্ণির কারণে আর ট্যুরিস্ট এজেন্সীর অফিসে ইয়ামথাং ভ্যালীর ব্যাপারে দামদর করতে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। হোটেল ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আমি সহ ৯ জনের একটি বাংলাদেশী গ্রুপের জন্য ১৬ হাজার রুপিতে একটি জীপ ঠিক করে নিলাম। এরমধ্যে ১ রাত লাচুং-এ থাকা, খাওয়া-দাওয়া, গাইড সহ সব কিছুর বিল একত্রে ধরা।

পরদিন সকালে লাচুং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। গ্যাংটক থেকে লাচুং যেতে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘন্টা। পুরো রাস্তাই আপহিল, অর্থাৎ উপরের দিকে উঠতে হবে। যাত্রাপথে শুধু উপরের দিকে উঠছি। রাস্তার পাশে মেঘ। সাদা তুলোর পেঁজার মতো মেঘ পুরো রাস্তার পাশ জুড়েই ছিল। যত উপরে উঠছি তত ঠান্ডা বাড়ছে। যাত্রাপথে বেশ কিছু ঝর্ণা চোখে পড়ল। তবে মেঘালয়ের ঝর্ণার মতো এগুলো এত টানেনি আমাকে।

সন্ধ্যা প্রায় ৭ টার দিকে লাচুং পৌঁছাই। লাচুং-য়েও তখন বৃষ্টি। অন্ধকারও নেমে এসেছে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে লাচুং ১০ হাজার ৪০০ ফুট উঁচুতে। পাশাপাশি ঠান্ডাও প্রচন্ড। গাইড জানিয়ে দিল সকালের নাস্তা ভোর ৫:৩০- এ। ইয়ামথাং ভ্যালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হবে ৬ টায়। লাচুং-য়ের আশপাশ কিছুটা ঘুরে দেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন ভোরবেলায় নাস্তার পরে ৬ টায় জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। শীতের কাপড় যা সাথে ছিল তা দিয়ে শীতের সাথে যুদ্ধ করে পেরে উঠছিলাম না। মোটাসোটা আরেকটি জ্যাকেট লাচুং থেকে ভাড়া করলাম। লাচুং থেকে ভারত-চীন সীমান্ত জিরো পয়েন্টে যেতে সময় লাগল ২ ঘন্টার মতো। যাওয়ার সময় আরও উপরে উঠেছি কেবল। জিরো পয়েন্ট সমুদ্রপ্রষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫ হাজার ৭০০ ফুট উপরে। তীব্র ঠান্ডা। এমন ঠান্ডা আমার জীবনে কখনও অনুভন করিনি। হাড়ের ক্যালসিয়াম জমে যাচ্ছিল। মাসখানেক পরে এখানকার মাটি বরফে ঢেকে যাবে। তখন ঠান্ডার তীব্রতা কেমন হবে ভেবেই ভয় লাগে!

জিরো পয়েন্ট থেকে গেলাম ইয়ামথাং ভ্যালী। ছবির মতো সুন্দর। দুইপাশে সবুজ পাহাড়, মাঝখানে একটু সমতল ভূমি। তার মধ্যে দিয়ে নীলাভ-সবুজ পানির এক নদী বয়ে গেছে। সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা আছে। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে আমি অভিভূত। এমন সময় কোত্থেকে যেন একগাদা সাদা মেঘ উড়ে এসে পাহাড়চূড়াগুলো ঢেকে দিল। সত্যিই অসাধারণ দেখতে। এরপর গেলাম হট স্প্রিং দেখতে। এই তীব্র ঠান্ডা মধ্যে মাটির নিচ থেকে একটা জায়গায় ঠান্ডা পানি বের হয়। বিস্ময়কর বটে!

এরপর লাচুং এ ফিরলাম। দুপুরে লাচুং-এ খেয়ে আবার গ্যাংটকের পথে রওনা দিলাম। পথে নামল বৃষ্টি। রাস্তাও যেন ফুড়াতে চায় না। জীপের ড্রাইভারকে যতবার জিজ্ঞেস করি, “ভাইয়া, অওর কিতনা বকত লাগে গা?”, তার উত্তর একটাই, “অওর দেড় ঘন্টা লাগে গা!” বসে থাকতে থাকতে পা ধরে গেছে ইতিমধ্যে। এরমধ্যে আশার আলো হিসেবে দেখা গেল “Gangtok 1 KM”. কিলোমিটার মার্ক দেখার পরেও ড্রাইভার মজা করে বলল, “অওর দেড় ঘন্টা লাগেগা ভাইয়া, ও সাইন গলদ হ্যায়!”

সন্ধ্যা ৭ টায় বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছালাম গ্যাংটক। পরদিন শুক্রবার। জুমার নামাযের পরে রওনা হলাম হিল স্টেশন দার্জিলিং-এর উদ্দেশ্যে। সিকিমে যেখানে কোথাও একটি চিপসের প্যাকেট দেখিনি, রাস্তার কোন টিস্যু পেপার পড়ে থাকতে দেখিনি, র‍্যাংপো চেকপোস্ট পার হওয়ার পরেই রাস্তায় নোংরা আবর্জনা দেখতে পেলাম। সিকিম আসলেই খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। একেবারে ঝকঝকে তকতকে। কালিম্পং এর পরে জীপ শুধু উপরের দিকে উঠছে তো উঠছেই। রাত নেমে গেছে। শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। ড্রাইভার কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। শুধু রাস্তার পাশের রিফ্লেক্টরগুলো আবছা বোঝা যায়। তার উপর ভরসা করেই পথ চলতে লাগলাম আমরা। বেশ কিছু সময় পরে রাস্তার পাশে দেখতে পেলাম সেই বিখ্যাত টয় ট্রেনের লাইন। বুঝতে পারলাম চলে এসেছি দার্জিলিং। রাত তখন সাড়ে ৮ টা।
দার্জিলিং বিখ্যাত এর আবহাওয়া, টয় ট্রেন এবং চায়ের জন্য। তিন দিন দার্জলিং-এ থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পেলাম না। ভাগ্য খারাপ। তবে দার্জিলিং শহরটা চমৎকার। মল রোডে ঘন্টার পর ঘন্টার বসে থাকলেও বিরক্তি আসে না। ব্রিটিশরা দার্জিলিং-য়ের সাথে লন্ডনের আবহাওয়ার মিল খুঁজে পেয়েছিল। বেশিরভাগ বাড়িঘরই ব্রিটিশ আদলে গড়া। ঘুরে দেখতে ভালোই লাগে।

বৃষ্টিতে ভিজেই কয়েকটি হোটেল দেখে মল রোডের কাছেই একটি হোটেল ঠিক করলাম। খুব ইচ্ছে ছিল টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর সূর্যোদয় দেখব। টাইগার হিল গেলাম বৃষ্টিতে ভিজে। বছরের এ সময়টায় সাধারণত দার্জিলিং-য়ে বৃষ্টি হয় না। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, দার্জিলিং-এ নামার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে দেখা দিল নিম্নচাপ। হোটেল থেকেই বের হওয়া যায় না এমন অবস্থা। এরপরেও বাতাসিয়া লুপ, জাপানিজ টেম্পল, দার্জিলিং জু, মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট ছাতা মাথায় করেই ঘুরে দেখলাম। পরদিন দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি-চ্যাংড়াবান্ধা-বুড়িমারি হয়ে ঢাকা ফিরলাম। শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা না পাওয়ার আফসোসটা সাথে রয়ে গেল!

বর্ডার থেকে আমিসহ মোট ৯ জনের একটি গ্রুপ হয়ে যাই এই ট্যুরে। আমার মোট ১২ হাজার রুপি খরচ হয়েছিল ৭ দিনের ট্যুরে।

কিছু ছবিঃ




মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১০:১২

সোনাগাজী বলেছেন:



ওখানে কোন মানুষ চোখে পড়েছিলো?

০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১০:২৮

পিট পলাশ বলেছেন: মানুষ তো ছিলই! তবে সিকিমে গ্যাংটকের বাইরে বসতি তুলনামূলক কম

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১০:৩১

সোনাগাজী বলেছেন:




আমি মনে করেছিলাম, ওখানে ১টি বিড়াল বাস করে মাত্র।

০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১০:৩৩

পিট পলাশ বলেছেন: হা হা হা! এমজি মার্গের ছবিতে মানুষের ঢল দেখতে পাবেন।

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫২

আদিত্য সিংহম বলেছেন: আমি গিয়ে এলাম ডিসেম্বরের শুরুতে। দারুণ জায়গা সিকিম। নর্থে বন্যার পর রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন দুই রাত স্টে করতে হয় নর্থে। ছাংগু লেকে গেলে ভাল করতেন। দারুণ জায়গা।

৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫

আদিত্য সিংহম বলেছেন: লাচুং এর টেম্পারেচার রাতের দিকে -৯ পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল যখন আমরা ছিলাম। আসার দুই তিনদিন পর বরফ পরা শুরু হয়। তবে নর্থ সিকিমে আমাদের যে ট্রাভেল এজেন্সি নিয়ে গেছে তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাল ছিল না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.