নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

।। একজন বাঙালী ।। ধরণীর সন্তান ।।

মোঃ পলাশ খান

Entrepreneur, Journalist, Social Activist, Freethinke. www.fb.com/Pkhan.BD1, www.twitter.com/PkhanBD

মোঃ পলাশ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাঁদনী হত্যার বিচারহীনতা এবং একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠার গল্প

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫২


ব্যানারটি গত বৎসরের এখন বিচারহীনতার প্রায় চার বছর।

সময়টা ২০১৫ সাল। সত্যি বলতে তখন একটু আত্মকেন্দ্রীক ই ছিলাম, সমাজের চেয়ে নিজেকে নিয়ে একটু বেশীই ভাবতাম।

২০১৫ এর মার্চ মাস শুনলাম ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া চাঁদনী নামের একটি মেয়েকে খুব নৃশংসভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে জাজিরার মূলনা ইউনিয়নের একটি খালের ধারে! বেশী একটা কৌতুহল করিনি এই বিষয়, ভাবলাম আমাদের দেশে আইন আছে আর এমন একটা নৃসংশ ঘটনার বিচার ত্বরানিত করার জন্য তাগিদ দেয়ার মত মানুষ আমাদের সমাজে অনেক আছে।

কিন্তু এক বছর পর ২০১৬ সালে সামনে মার্চ মাস হঠাৎ ছোটভাই মাহমুদুল হাসান শাকুরী আমার কাছে একটা কাজে আসলো, কথায় কথায় সেই নির্মমভাবে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হওয়া চাঁদনীর কথা উঠে আসলো। দুজনে কথোপকথন চালতে থাকলো- চাঁদনীর হত্যার বিচারের কি অবস্থা এক বছর পার হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত এই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচারের অগ্রগতির কথা শুনলাম না! তারপর ছোট ভাই বললো চলেন ভাই একটু খবর নিয়ে দেখি ওর পরিবারের সাথেও দেখা করে ভাল-মন্দ জানি। চিন্তা করলাম চাঁদনী যদি আমার বোন হতো অথবা ওর জায়গায় যদি আমার পরিবারের কারো সাথে এমনটা হতো পারতাম কি বসে থাকতে? বিবেকের টানে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা এই ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে বিচার তরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো।

পরেরদিন চলে গেলাম চাঁদনীদের বাড়ীতে ছোটভাই মাহমুদুল হাসান শাকুরী এবং আমি। চাঁদনীর মা এবং কাকার কাছে বিস্তারিত জানলাম, আশেপাশের পড়শীদের কাছেও জানলাম। যতটুকু জানলাম বুঝতে পারলাম এই ব্যাপারটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই!! মোবাইলে যোগাযোগ করলাম ঢাকায় অবস্থানরত চাঁদনীর বাবা আজগর খানের সাথে, সেও সবার মত আমাদের হতাশার কথা শুনালো। ঐদিন ফিরে এসে দুইভাই চিন্তা করলাম কি করা যায়, মনে পড়লো আমাদের একজন বড়ভাইয়ের কথা জামাল মাদবর যার মনটাও আমাদের মত ব্যথিক হয়ে উঠলো সেই নৃশংস ঘটনার বিচার কার্যের এমন হালের কথা শুনে।

এবার বড়ভাই জামাল মাদবর এর নেতৃত্বে শুরু করলাম সেই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার কার্য তরান্বিত করার দাবীতে আন্দোলন।

আন্দোলন শুরুর কাল হতেই আমাদের বিভিন্ন বাধার এবং কটু কথার সম্মুখীন হতে হলো! যেমন, এসব আজাইরা কাজ বাদ দাও কোন লাভ নাই, তোমাদের কি খেয়ে-দেয়ে কোন কাজ নাই? আরো কত সব কথা!! আবার হুমকি-ধামকিও দেয়া শুরু হলো- এসব ছাড়ো নইলে ভালো হবে না আগরুম-বাগরুম কত কি!!

কিন্তু আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসিনি। বড়ভাই জামাল মাদবর এর নির্দেশনায় আন্দোলন আরো তিব্রতর করতে লাগলাম। যেকোন কর্মসূচীতে চাঁদনীর বাবা আজগর খানকে আমরা জানাতাম, সেও উপস্থিত থাকতো। আমরা ভাবতাম উনি একা একা মামলা চালাচ্ছে তাকে আমরা সাহস দিয়ে রাখতাম ন্যায় বিচার একদিন পাবো ইন-শা-আল্লাহ্।

আজগর সাহেব কেঁদে কেঁদে আমাদের বলতো আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই আমাকে সাহায্য করুন, আর আমরাও একজন অসহায় হতভাগা বাবাকে তার মেয়ের নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত পাওয়ার জন্য সামাজিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে লাগলাম এই আশায় যে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের যদি দৃষ্টান্তমূলক একটি শাস্তি হয় তাহলে আমাদের সমাজে কোন অপরাধীর জন্ম হবে না। যে কেউ অপরাধ করার আগে এই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা চিন্তা করবে।

বড়ভাই জামাল মাদবর এর নেতৃত্বে গড়ে তুললাম একটি সামাজিক সংগঠন- #নারী_নির্যাতন_দমন_চাঁদনী_মঞ্চ। যার দ্বারা এই আন্দোলনের পাশাপাশি চালিয়ে গেলাম বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম যেমন-শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, অসহায়দের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ, বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ।

আন্দোলন শুরুর কাল হতে এই পর্যন্ত যতটুকু বুঝলাম এই সমাজে ন্যায়ের পক্ষে লড়ার মানুষ সংখ্যায় খুবই কম!

বিশ্বাস ছিলো খুব শিঘ্রই একজন হতভাগা বাবাকে এমন একটি নৃশংস হত্যাকান্ডের সু-বিচার পেতে সাহায্য করতে পারবো, কিন্তু না, তা আর হলো না!! বাবা নামের স্বার্থপর - বেইমান - ভিতু লোকটা বিবাদীদের হুমকী ও টাকার লোভে তাদের সাথে সমঝোতা করে নিজের মেয়ের ইজ্জত ও লাশ টাকার কাছে বিক্রি করে দিলো!!! স্থানীয় নির্বাচন করলো, নির্বাচনে পরাজিত হলো এবং তার কয়েকদিন পরে সে নিজেও ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা গেল।

আমরা আর কোন চাঁদনীকে শিয়াল-কুকুর-শকুনদের থাবায় পড়তে দেখতে চাই না!
যারা এই হত্যাকান্ডের বিচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং বলে যাচ্ছেন তাদের এটুকুই বলি আপনার ঘরেও চাঁদনীর মত একজন ফুটফুটে মেয়ে অথবা বোন আছে। এই বিচার হওয়া মানে তাদের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হওয়া। আর যারা বলেন আপনার কি? আপনার এতো জ্বলে কে? এই মানুষগুলোর কাছে শুধু এটুকুই জানতে চাইবো আপনার বোনের সাথে যদি এটা হতো তখন আপনি কি করতেন?? বা ভবিষ্যতে যদি হয় তখন কি করবেন??

পরিশেষে বলবো আমরা দমে যাইনি আমরা চাঁদনীর নৃশংস হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এই দেশে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার যদি ৪০ বছর পরেও হতে পারে তাহলে চাঁদনীর হত্যাকান্ডের বিচারও একদিন হবে ইন-শা-আল্লাহ্। আমরা আর কোন চাঁদনীকে এমন নৃশংসভাবে হারিয়ে যেতে দেখতে চাই না।।

মনে রাখবেন সত্যের জয় নিশ্চিত।।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.