নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

।। একজন বাঙালী ।। ধরণীর সন্তান ।।

মোঃ পলাশ খান

Entrepreneur, Journalist, Social Activist, Freethinke. www.fb.com/Pkhan.BD1, www.twitter.com/PkhanBD

মোঃ পলাশ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কষ্টের বাস্তবতা

১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২২


বাসে জানালার পাশেই বসলাম, একটু পরই বোরকা পড়া,ভদ্র মেয়ে পাশে বসলো অতঃপর…

জানালার পাশেই একটি খালি সিটে আমি বসলাম ! কিছুক্ষন পরেই দেখি ২০ বয়সী একটা সুন্দরী মেয়ে উঠে বসলো পাশের সিটে । বোরকা পড়া, মাথায় হিজাব দেয়া। মেয়েটাকে এক নজর দেখলেই বোঝা যায় খুবই ভদ্র ও অবস্থা সম্পন্ন ঘরের

মেয়ে। এদিক ওদিক সিট খুঁজে না পেয়ে শেষে আমার পাশে এসে বসলো। হাতে একটা মোবাইল। দেখে বোঝা যায় অনেক দামী একটা মোবাইল। কিছুদূর যাবার পর বাস আবার জ্যামে পড়লো। মেয়েটা বলে উঠলো, অসহ্য জ্যাম ! আমিও হুম বলে সম্মতি জানালাম । এরপর টুকটাক কথা হতে লাগলো । বাসও চলতে শুরু করলো ! কথায় কথায় জানলাম, মেয়েটি ইংরেজিতে অনার্স করছে। খুবই ফ্রী ভাবে কথা বলছিলাম আমরা !

এয়ারপোর্টের ওখানে গিয়ে আবারও জ্যামে পড়লো বাস। বিরক্তিকর জ্যাম ! জ্যামের মধ্যেই বাসে ঠলো সাদা শার্ট পড়া কালো চেহারার মধ্যে বয়সী একটা লোক। অনেক দিনের পুরনো বোধহয় শার্ট টা ! ময়লা হয়ে আছে। তার হাতে অনেক গুলো নামাজ শিক্ষা বই। কাধে

কালো রঙের একটা ব্যাগ। লোকটা নামাজ শিক্ষা বই বিক্রি করছে ! লোকটা অনেকক্ষণ যাবৎ, বইতে কি কি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, সূরা, মাসলা ইত্যাদি আছে তা বর্ননা করলো। কিন্তু বাসের কেউ একটা বইও কিনলো না !

আমার খুব খারাপ লাগলো। ইচ্ছে করছিল লোকটাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করি ! কিন্তু, লোকটাকে টাকা দিতে চাইলে যদি কিছু মনে করে। তাই দিলাম না ! একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, লোকটা বাসে ওঠার পর থেকে মেয়েটি আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। মাথা নিচু করে মোবাইল টিপতেছে !

বাড়িতে নামাজ শিক্ষা বই থাকা সত্বেও শুধু মাত্র লোকটিকে সাহায্য করার ইচ্ছায় বিশ টাকা দিয়ে দুইটা বই কিনলাম। লোকটিকে পঞ্চাশ টাকার নোট দিলে সে ত্রিশ টাকা ফেরত দিল ! টাকা ফেরত দেবার পরেও দেখি সে পকেট থেকে আরও টাকা বের করছে ! একটা একশ টাকার নোট আর কয়েকটা দশ টাকার নোট !

আমার দিকে এগিয়ে ধরলো ! আমি তো অবাক। আমাকে টাকা দেবেন কেন উনি ? আমার ভুল ভাঙলো তার ডাক শুনে ! তিনি আমাকে না মেয়েটিকে টাকা দিচ্ছেন ! তিনি বললেন, ‘সোমা টাকাটা রাখো । কিছু কিনে খেয়ে নিও! তোমার মা বললো,তুমি সকালে না খেয়েই ভার্সিটিতে চলে আসছো। ‘ মেয়েটি লজ্জায় মরে যাচ্ছিল। সে অত্যন্ত রেগে লোকটার দিকে তাকালো !বললো,লাগবে না ! লোকটি জোর করে টাকাটা তার হাতে দিয়ে বাস থেকে নেমে গেল !

মেয়েটার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না ! রেগে লাল হয়ে আছে ! আমি কৌতুহল সামলাতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে টাকা দিল উনি কে ? মেয়েটা বললো, আমাদের বাড়ির পাশে থাকে ! আমি বললাম, কিছু মনে করবেন না। একটা কথা বলি, উনি কি আপনার বাবা ? মেয়েটি রেগে তাকালো আমার দিকে ! জবাব দিলো না !

এমন ভাব করলো যেন আমি মহা অপরাধ করে ফেলেছি ! আমি বুঝতে পারলাম তার রাগের কারন। তার বাবা একজন ভ্রাম্যমাণ হকার। বাসে বাসে ঘুরে বই বিক্রি করে। আর সে দামী পোশাক পড়ে ভার্সিটিতে যায় ! সে একজন শিক্ষিত মানুষ ! এজন্য সে বাবার পরিচয়
দিতে লজ্জা পায় ! এই ময়লা শার্ট পড়া লোকটাকে বাবা বলে স্বীকার করাটাকে সে ঘৃনার
চোখে দেখে !

সে চায় না দুনিয়ার কেউ জানুক এই হকার তার বাবা ! কত বড় বিবেক সম্পন্ন মানুষ সে ! যে লোকটা রাত দিন পরিশ্রম করে বাসে বাসে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বই বিক্রি করে মেয়েটাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছে। তাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে।

নিজে কয়েক বছরের পুরনো একটা শার্ট পড়ে অথচ মেয়েটিকে দামী পোশাক, ব্যাগ, দামী মোবাইল কিনে দিয়ে তার সমস্ত চাওয়া পূরন করেছেন। সেই মানুষটাকে বাবা বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে মেয়েটির ! কত বড় নির্লজ্জ ! যে মানুষটা তাকে লালন পালন করে এত
বড় করলো, যারটা খেয়ে বেঁচে আছে তাকে বাবা বলে পরিচয় দিতে সমস্যা !

মেয়েটি হয়তো শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু তার ভেতরে বিবেক ও মানুষত্ব তৈরি হয়নি ! হকার লোকটির প্রতি শ্রদ্ধায় মনটা ভরে উঠলো ! লোকটা হাজার কষ্টের মাঝেও পরম মমতায় নিজের মেয়েটিকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলছেন ! আদর্শ বাবা মনে হয় একেই বলে।

অন্য কেউ হলে হয়তো অনেক আগেই মেয়েটিকে কোন শ্রমিকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিত। সেটাই বোধহয় ভাল হত! তাহলে তখন হয়তো মেয়েটি বাবার পরিচয় অস্বীকার করতো না ! যেই শিক্ষা আমাদের মধ্যে বিবেক ও মনুষত্ব তৈরী করে না, কি লাভ সেই শিক্ষা গ্রহন করে?

#জুমবাংলা হতে সংগৃহীত__

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৪৮

কনফুসিয়াস বলেছেন: আমার নিজের চোখে এমন বহু ঘটনা দেখেছি। খুবই কষ্ট লাগে এমন জিনিস সামনে পড়লে। বেচে থাকুক সকল বাবা হাজারো শ্রদ্বা নিয়ে।

২| ১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেল।

৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:১০

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মনটা খারাপ হয়ে গেল।
সত্যি মনটা খারাপ হয়ে গেল।

৪| ১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:২২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: এসব ছেলেমেয়েদের কপালে শনি আছে।

৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:০৭

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: আমি ভাবছি অন্যকিছু। হয়তো আপনি ব্যাপারটি দেখছিলেন বলে মেয়েটি বিবতবোধ করছিল। বাসায় গিয়ে ঠিকই হয়তো বাবাকে জড়িয়ে কান্না করেছিলো। অনুমান করছি।

৬| ১২ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১:১৯

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: মনটা ভীষণ রকমের খারাপ হয়ে গেল..

আমাদের মধ্যে বিবেক ও মনুষত্ব তৈরী করে না, কি লাভ সেই শিক্ষা গ্রহন করে?

এটা শিক্ষা নয়.. এটা কুশিক্ষা... মেয়েদের দোষই বা কি দিবেন..?

ব্লগার কাওসার ভাই তার 'বায়স্কোপ' বইয়ে লিখেছে "-

"আমাদের দেশের শিক্ষা চাকরী ও রেজাল্ট নির্ভর। জ্ঞান অর্জন করাটা এখানে গৌণ।"

যথার্থ। এইদেশে চারিত্রিক শিক্ষা দেয়া হয় না। সব বইয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। মনে পড়ল...

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন
নহে বিদ্যা নহে দন হলে প্রয়োজন।

এটাই সত্য। চিরসত্য।

৭| ১২ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৬:৫৮

চাঙ্কু বলেছেন: সুশিক্ষিত না হয়ে চাকরির-জন্য-শিক্ষা হলে এই অবস্থাই হবে! :(

৮| ১২ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:২৭

নীল আকাশ বলেছেন: ঠিক এই লেখার এর আগেই আরেকজন ব্লগে পোস্ট দিয়েছিল। পুরানো লেখা।
স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজে লিখুন।
অন্যের লেখা পোস্ট করে আপনার কি লাভ?
আপনার নিজের লেখা পড়তে চাই!!
ধন্যবাদ।

৯| ১২ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৫৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: বাবার পরিচয় (আপনার বা লেখকের কাছে) অস্বীকার করে মেয়েটা নিঃসন্দেহে একটা খারাপ কাজ করেছে, কিন্তু তার পরেও কেন যেন তাকে দোষারোপ করতে ইচ্ছে করছে না। তার আচরণের অনেক মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ থাকতে পারে।
নীল আকাশ এর পরামর্শটি (৮ নং মন্তব্য) সঠিকভাবে মেনে চলবেন বলে আশা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.