নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

।। একজন বাঙালী ।। ধরণীর সন্তান ।।

মোঃ পলাশ খান

Entrepreneur, Journalist, Social Activist, Freethinke. www.fb.com/Pkhan.BD1, www.twitter.com/PkhanBD

মোঃ পলাশ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুলিশ_ও_সাধারন_জনগণ-২

২৩ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:০১

একজন আলাউদ্দিন.....

আলাউদ্দিন, গ্রামের একজন সহজ-সরল অল্প শিক্ষিত ছেলে। বয়স ৩০+ হবে। বিয়ে করেছেন, ঘরে একটি ছেলে ও দুটি কন্যা সন্তানও আছে।

অল্প শিক্ষিক হওয়ায় এবং আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে ভালো কোন চাকুরী বা ব্যবসা করতে পারেনি। চাকুরী নিয়েছেন একটি প্রাইভেট নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহকারী কোম্পানীতে। মাসিক বেতন ৮-৯ হাজার টাকার মত। এতে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

বাড়িতে বাবা-মা ও স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করলো বিদেশ যাবে। কিন্তু টাকা পাবে কোথায়? সবশেষে স্বীদ্ধান্ত হলো বিদেশ যাওয়ার পুরো টাকা সুদে আনবে তারপর বিদেশ গিয়ে তা পরিশোধ করবে।

এলাকার অনেক লোক বিদেশ নিয়েছে এমন একজন বিদেশ নেয়ার এজেন্ট (দালাল) এর খোঁজও মিলে গেল। সেই এজেন্টও (দালাল) আবার আত্মীয় হয়, সম্পর্কে বেআই। যাইহোক, দালালের সাথে চুক্তি হলো ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় সৌদী আরবে নিবে। ভিসা হওয়ার আগে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। বাকীটা পৌছানোর পরে দিতে হবে। পাসপোর্ট সহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিলো।

কয়েকদিন পরে এজেন্ট(দালাল) ফোন করে বললো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে হবে তাই আবেদন করেছে অনলাইনে। বাড়ীতে পুলিশ আসলে যেন ৫০০-১০০০ টাকা তাদের হতে ধরিয়ে দেয়।

কয়েকদিন পর পুলিশ ফোন দিয়ে থানায় দেখা করতে বললো। যদিও থানা থেকে আবেদনকারীর বাড়ীতে তদন্তে আশার নিয়ম। আলাউদ্দিন পুলিশের ফোন পেয়ে বাবাকে নিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৩-৪ কিঃ মিঃ দুরে থানায় উপস্থিত হওয়ার পর....

তদন্ত অফিসার: কোন দেশে যাবেন?

আলাউদ্দিন: স্যার সৌদী আরব যামু।

তদন্ত অফিসার: (রুক্ষ স্বরে) ক্লিয়ারেন্স করতে খরচ আছে জানেন?

আলাউদ্দিন: স্যার খরচ তো ব্যাংকে জমা দিছি।

তদন্ত অফিসার:‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ ধুর বেটা ওতে কি ক্লিয়ারেন্স হয়ে যায়......?

আলাউদ্দিন পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে স্যার নেন।

তদন্ত অফিসার: (রুক্ষ স্বরে) তুমি কি আমার সাথে ফাইজলামী করো? বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

আলাউদ্দিন তার বাবাকে নিয়ে প্রায় সারাদিন বসে থেকে অন্য রুমে গিয়ে বাকী স্টাফদের নিকট জানতে চাইল......

স্যার ওই স্যারে কই গেল? একজন উত্তর দিল কে বংশী সাহেব? হেরে আজকে আর পাইবেন না, কাল আসেন।

আলাউদ্দিন নিরুপায় হয়ে বাবাকে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। বাড়ী যেতে প্রায় সন্ধা হয়ে গেল।

পরের দিন.... আলাউদ্দিনের বাবা একটি ছোট দোকান করে, তার উপর গতকাল বন্ধ ছিল, আবার বাবার শরীরটাও বেশী ভালো যাচ্ছে না। শশুরকে নিয়ে থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল আলাউদ্দিন।

পথে দেখা হলো এলাকার এক পাতি নেতার সাথে.....

নেতা: কি মিয়া আলাউদ্দিন কই যাও?

আলাউদ্দিন: থানায় যাই, একটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর লাইগ্গা আবেদন করছি, পুলিশে ঘুরাইতাছে।

নেতা: তা টাকা-পয়সা কত দিছো?

আলাউদ্দিন: ৫০০ ব্যাংকে জমা দিছি আর ৫০০ পুলিশরে দিছিলাম নেয় নাই, আজকে যাইতে কইছে।

নেতা: ওইয়াতে কি আর কাম অইবো.....? আমরাই তো করতে যাইয়া দুই-আড়াই আজার দিয়া আইছি। যাও দেহ কি কয়।

আলাউদ্দিন শশুরকে নিয়ে আবার থানার দিকে এগোতে লাগলো।

অতপর থানায় পৌছানোর পর............

একরুমে একসাথে অনেকজন পুলিশ বসে আড্ডা দিচ্ছে, আলাউদ্দিনকে দেখে একজন তদন্ত অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো বংশী সাহেব আপনার মক্কেল আইছে।

তদন্ত অফিসার: অন্যদের উদ্দেশ্য করে, আরে এই মিয়া আমারে ৫০০ টাকা দেয় ক্লিয়ারেন্স এর জন্য, আপনারাই বলেন এইয়াতে কি কাম অয়?

উপস্থিত একজন পুলিশ সদস্য বলে উঠলো এখানে আমাগো খরচই তো তিন হাজার- পয়ত্রিশ্য টাকা। উপস্থিত অন্য এক পুলিশ সদস্য আলাউদ্দিনকে কাছে ডেকে আস্তে করে বললো আপনি পয়ত্রিশ্য দিয়ে দেন কাজ হয়ে যাবে।

আলাউদ্দিন নিরুপায় হয়ে ৩৫০০ টাকা তদন্ত অফিসারের হাতে দিয়ে, দুইদিন পরে এসপি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার আশ্বাস নিয়ে শশুরকে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।

দুইদিন পর আলাউদ্দিন এসপি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে গেলে.....

আলাউদ্দিন: স্যার আমার নাম মোঃ আলাউদ্দিন, আমি একটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে দিছিলাম, ওইডা নাকি আপনার কাছে, আমি নিতে আইছিলাম।

ক্লিয়ারেন্স প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ: আবেদন করছেন কবে? লগে ভোটার আইডি কার্ড আনছেন?(রুক্ষ স্বরে)।

আলাউদ্দিন: স্যার তিন-চাইরদিন আগে, ভোটার কার্ড আনছি স্যার।

পুলিশ: ছয়শো টাকা দেন।

আলাউদ্দিন: ছয়শো কিয়ের স্যার? আমিতো ব্যাংকে আর থানায় টাকা দিছি।

পুলিশ: ওইখানেরটা ওখানে দিছেন, এখানকারটা এখানে দিতে হবে।

আলাউদ্দিন: স্যার আমি গরিব মানুষ, একটু কম দিলে অয়না?

পুলিশ: গরিব হলে আমি কি করবো? টাকা ছাড়া কাজ হবে না, মিয়া বিদেশ যাইবেন আবার গরিব মানুষ সাজেন.......... দেন দেন টাকা দেন।

আলাউদ্দিন আবারও নিরুপায় হয়েয়ে ৬০০ টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ী আসলো।

এই পর্যন্ত যা খরচ হলো সব টাকাগুলোই আলাউদ্দিন সুদে এনেছে। পরেরদিন সে চলে গেলল তার কর্মস্থলে। খরচ হওয়া টাকার সুদ পরিশোধ করে রাখতে হলে আয় করতে হবে যে।

এখন আলাউদ্দিন বিদেশ যাওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে..............

[বিঃদ্রঃ সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা]
মোঃ পলাশ খান
১৮/০৩/২০১৯ইং

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ে ওই লোকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা যেতে পারে।

২| ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৪৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আহারে ...............

৩| ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৫৯

মা.হাসান বলেছেন: সব মিথ্যা, কয়েক দিন আগেও পুলিশের এক নম্বর লোক বলেছেন -পুলিশ জনগনের বন্ধু। বন্ধুকে তো বন্ধু ভালোবেসে কিছু উপহার দিতেই পারে, আপনার খালি শুধু শুধু হিংসা।

২৩ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:১৭

মোঃ পলাশ খান বলেছেন: কথাটা খারাপও বলেননি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.