নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

।। একজন বাঙালী ।। ধরণীর সন্তান ।।

মোঃ পলাশ খান

Entrepreneur, Journalist, Social Activist, Freethinke. www.fb.com/Pkhan.BD1, www.twitter.com/PkhanBD

মোঃ পলাশ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনপ্রতিনিধি

১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:১০


হ্যা আজ একজন জনপ্রতিনিধির কথা, একজন নজরুল শেখ এর কথা বলবো

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকে আমরা কিছু তরুণরা মিলে সামাজিক সংগঠন Volunteers For Nation -VFN প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাড়িয়েছি, এখনো আমাদের কার্যক্রম চলমান। তবে সীমিতভাবে। কেননা সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশ লকডাউন থাকা অবস্থায় মানুষ বিপাকে পরেছিল তাই কাজও অনেক ছিল। এখন লকডাউন উঠিয়ে নেয়ার কারনে পেশাজীবিরা কাজে ফিরেছে তাই বিপাকে পড়া মানুষের সংখ্যাও কমেছে।

তবে আমরা সবসময়ই মানুষের কল্যান হোক এমন কিছু চিন্তা নিয়েই এগিয়ে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বস্ত সূত্রে সকল রোগের ঔষধ খ্যাত খাঁটি মধুর সন্ধান পেলাম। ভাবলাম এই সময় মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা(ইমিউনিটি) বাড়ানো জরুরী, কেননা করোনাভাইরাস এমন লোকদেরই কুপোকাত করতে সক্ষম হয় যাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা(ইমিউনিটি) কম। আর এই ইমিউনিটি বাড়ানোর একটি অসাধারণ উপায় হচ্ছে নিয়মিত মধু সেবন করা।

যেহেতু আমাদের সম্পূর্ণ ফ্রীতে তা বিতরণের সাধ্য নেই তাই যারা ইতোমধ্যে মধু সেবন করা শুরু করেছেন তাদের কাছে অন্তত শতভাগ খাঁটি জিনিসটি সুলভ মূল্যে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টাটি করতে পারি।

যেই ভাবা সেই কাজ। আমরা কয়েকজন মিলে নিজস্ব পরিবহন যোগে রওয়ানা করলাম সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে।
প্রথমদিন মংলা বন্দরে পৌঁছে কোনরকম জনমানবহীন একটি ফাঁকা হোটেলে আশ্রয় নিলাম। পরের দিন চলে গেলাম সুন্দরবন চাদপাই রেঞ্চ, জয়মনি এলাকায়। ওখানে গিয়ে খাঁটি মধুর সন্ধান করতে থাকলাম। কিন্তু বিপাকে পরলাম খাঁটি মধু সম্পর্কে যাকেই জিজ্ঞেস করছিলাম সে'ই বলছিলো তার কাছে আছে। আহা এ কেমন বিপদ! বুঝবো কি করে কারটা খাঁটি কারটা ভেজাল!

সারাদিন ঘুরতে থাকলাম। বিকালের দিকে সুন্দরবন ঘেষে বয়ে যাওয়া সেলা নদী তীরে বসে ছিলাম আশেপাশে অনেক লোকজনই ছিলো কিন্তু কেউ আগ বাড়িয়ে কথা বলছিলেন না এমনকি ফিরেও তাকাচ্ছিল না। হঠাৎ একজন মধ্যবয়স্ক লোক আমাদের কাছে এসে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে জানতে চাইলেন ভাইয়েরা কেমন আছেন, কোথা থেকে এসেছেন? প্রথমে আমরা প্রশ্নের জবাব দিয়ে কেটে পড়ছিলাম পরক্ষণে উনি আমাদের কাছে আবারও আসলেন আর কুশল বিনিময় করে আমাদের সাথে কথা বলা শুরু করলেন এবং নিজের পরিচয় দিলেন তিনি ঐ এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি(মেম্বার)।

আমরা তাঁর পরিচয় পেয়ে একটু আশ্বস্ত হলাম এবং তাঁর সাথে শেয়ার করলাম আমরা সুন্দরবনে ঘুরতে চাই। সাথে সাথে তিঁনি জানতে চাইলেন আমরা কোথায় উঠেছি। জানালাম মোংলাতে। উনি বললেন তাহলে সকালে আসেন আমি বোটের ব্যবস্থা করে দিবোনে। তখন সময় রাত প্রায় ৭-৮ টা। তাঁর কাছে বিদায় নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তিঁনি বলছিলেন ভাই আপনারা আজ আমার এখানেই থেকে যান, কাল একবারে ঘোরাফেরা করে যাইয়েন। আমরা সায় দিলাম না, বললাম না ভাই আমরা নাহয় কালই আসি। মনে হলো তিঁনি একটু কষ্ট পেলেন, বলেও ফেললেন আমরাতো অচেনা, থাক আপনারা কালই আসেন।

পরেরদিন গিয়ে ফোন দেয়ার পরে তিঁনি জানালেন আমি একটি জরুরী কাজে আটকে আছি শেষ করে আসছি। আপনারা একটু ওখানেই ঘোরাঘুরি করেন। ঠিক কয়েক ঘন্টা পরেই তিঁনি আমাদের কাছে এলেন এবং আমরা খাওয়া-দাওয়া করেছি কিনা, ভালো আছি কিনা, কোন সমস্যা আছে কিনা আরো বিভিন্ন কথা বিস্তারিত জানলেন। এরপর বোটের ব্যবস্থা করতে একজন বোটের মালিককে ডেকে জানতে চাইলেন ভাড়া কত? বোটের মালিক ভাড়া বেশী চাইলেন। তিঁনি কথা বাড়ালেন না। অন্য কাউকে ফোন দিয়ে ন্যায্য ভাড়ায় বোটের ব্যবস্থা করলেন। তাঁকে আমাদের ভ্রমণের সঙ্গী হওয়ার আহ্বান করলাম, সাথে সাথেই সায় দিলেন। আবার বলছিলেনও কিছু জরুরী কাজ আছে.. যাক আপনারা মেহমান আসছেন, ম্যানেজ করে নেবোনে। এই বলে তিঁনি আমাদের সাথে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলেন।

আমরা বোটের কাছে আগে পৌঁছে গেলাম। বোটের মালিকের কাছে জানতে চাইলাম.. ভাই আপনি এতো কম ভাড়ায় যাবেন কেন, অন্যান্যরাতো আরো বেশী ভাড়া চেয়েছে। তিনি জানালেন ভাই মেম্বার সাব ডাকলে না এসে পারিনা আর এই ভাড়াই আমাদের ন্যায্য।
অবশেষে সুন্দরবন হাড়বাড়িয়া পয়েন্ট দিয়ে আমরা প্রবেশ করলাম সুন্দরবনের অভ্যন্তরে। অনেক ঘুরলাম। অনেক বেশী উপভোগ্য হয়েছে ভ্রমণ টি, কেননা নজরুল ভাই(উক্ত জনপ্রতিনিধি) আমাদের সাথে থাকায় আমাদের কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়নি। খুব সুশৃঙ্খলভাবেই আমরা বন ঘুরে দেখলাম।

ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে সেলা নদীর তীরেই নজরুল ভাইয়ের দপ্তরে এসে বসলাম। ঘোরাঘুরির সময়ও তার জীবনের অনেক গল্প শুনেছি। তাঁর দপ্তরে বসে আরো জানলাম তিনি টানা ৩ বারের ঐ স্থানের জনপ্রতিনিধি
এর মধ্যে একবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি চিলা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। আর মেম্বার হিসেবেও আছেন।

তিনি আমাদের জানালেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুইবার এই এলাকায় এসেছেন আর দুইবারই অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিঁনি আরো জানালেন প্রধানমন্ত্রী যখন এসেছেন তখন আমি একসাথে দুইবার তাঁকে সালাম করেছি তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন আমি কেন দুইবার সালাম করলাম? আমি বলেছিলাম আপা আপনি যেন আমার জন্য বেশী বেশী দোয়া করেন তাই। এই কথা শুনে তিঁনি বলেছিলেন তুমি অনেক বড় হবে, শুধুমাত্র গরিবের হক নষ্ট করবে না আর নিজের দায়িত্ব জীবন দিয়ে হলেও সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করবে। আর আমি আপার সেই কথার কখনো নড়চড় করিনি। আমি আমার এলাকার মানুষদের সর্বসময় খোঁজ-খবর নেই, তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকি। আর আমার এলাকায় যত পর্যটক আসে তাদের সকলের ভালো-মন্দ খোঁজ-খবর রাখি।

জানতে চাইলাম এই এলাকায় আপনার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই?
সাথে সাথে হেসে বললেন আছে। তবে মজার ব্যাপার হলো এখানে আমার জনগণ আমাকে খুব করে চায় তাই আমাকে কেউ হারাতে পারেনা।

অবশেষে ভাইয়ের সহযোগীতায় খাঁটি মধুর সন্ধানও পেয়েছি।

এই যুগে যেখানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পরে তারা শহরে নিজেদের আলিশান বসত বাড়ীতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকে, বছরের পর বছরেও এলাকার কোন খোঁজ-খবর রাখেনা। সেখানে আমি দেখেছি নজরুল ভাই নিজের বসতবাড়ী রেখে তাঁর এলাকার যে স্থানে মানুষ সবচেয়ে বেশী কষ্টে থাকে তাদের খোঁজ-খবর ঠিকমত রাখতে সেখানে তিনি একটি ছোট ঘর উঠিয়ে একা থাকেন।

আমরা এলাকাটি একটু ঘুরে ঘুরে কিছু সাধারণ মানুষের কাছে বিভিন্ন ছলে জানতে চেয়েছিলাম তাদের মেম্বার কেমন, সাধারণ মানুষের সাথে কথোপোকথনঃ-

আমিঃ আপনাদের মেম্বার সাব কেমন?
এলাকার একজনঃ আরে কইয়েন না আর, পাগল একটা।
আমিঃ কেন, কি পাগলামী করে?
এলাকার একজনঃ আরে ধুর ভুয়া, বিয়া-ছাদি করেনা।
আমিঃ তাহলে আপনারা করিয়ে দেন।
এলাকার লোকঃ আরে ঝাড়িবাজ, কোনহানে ছেকাটেকা খাইয়া বইয়া রইছে।
আমিঃ এমনিতে মেম্বার হিসেবে আপনাদের কেমন খোঁজ-খবর রাখে?
এলাকার একজনঃ এইহান দিয়া পুরা ঠিকাছে।
আমিঃ ভালো মানুষ?
এলাকার একজনঃ হ সাঁচ্চা।

জনপ্রতিনিধির আসল রুপ কাকে বলে আমি তা নজরুল ভাইয়ের মধ্যে পেয়েছি। কিভাবে একজন জনপ্রতিনিধি তার এলাকার মানুষদের অতি যত্ন সহকারে খোঁজ-খবর রাখতে পারে, কিভাবে একজন জনপ্রতিনিধি নিজের এলাকার সুনাম সর্বস্তর-সর্বস্থানে পৌঁছে দিতে পারে তা আমি এই আদর্শ জনপ্রতিনিধি মোঃ নজরুল ইসলাম শেখ ভাইয়ের মধ্যে পেয়েছি।

নজরুল ভাই বাগেরহাট জেলা, মোংলা উপজেলা, চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার জনপ্রতিনিধি(মেম্বার)

শেষকথা অবশেষে আমরা খাঁটি মধু এবং খাঁটি মানুষ দুইয়েরই খোঁজ পেলাম।

সর্বশেষ এমন আদর্শবান জনপ্রতিনিধিদের জন্য রইলো অন্তরের অন্তস্থল হতে অকৃত্রিম ভালোবাসা, দোয়া ও শুভ কামনা। আপনাদের হাত ধরেই দেশ একদিন খাঁটি সোনার বাংলায় পরিণত হবে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি কোন এলাকার মানুষ?

১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১:০৮

মোঃ পলাশ খান বলেছেন: শরীয়তপুর জেলা।

২| ১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ২:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



আসল মধু কি দামে কিনেছিলেন, মানুষযকে দিয়েছেন?

৩| ১২ ই জুলাই, ২০২০ ভোর ৬:২৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
এই লোক খালি টেবিলের সামনে বসে আছে কেন?
এটা কি ফটো সেশন?

৪| ১২ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো প্রতিনিধির খুব দরকার আমাদের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.