![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালোবাসি সব সত্য কে,সত্য জিনিসগুলোকে।
অরিত্র অনেকক্ষন ধরে ফাঁকা রাস্তায় হাটছে।মনটা আজ তার ভালো নাকি খারাপ সে বুঝতে পারছে না।তবে কিছু একটার শূন্যতা সে অনুভব করছে।
অরিত্র তখন মনে করে তার শৈশব।
অরিত্র তখন সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে সে সবার কাছে প্রিয় ছাত্র আর ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। সে যখন টু তে পড়ে তখন প্রার্থনা তাদের স্কুলে প্রথম এল।প্রার্থনাও কিছুদিনের মধ্যে সবার প্রিয় হয়ে উঠল সবার, তাই নিয়ে তাদের দু'জনের মধ্যে শুরু হল তুমুল ঝগড়া-বিবাদ।
কে কার থেকে বেশি নম্বর পাবে,কাকে স্যারের কাছে বেশি করে মার খাওয়ানো যাবে এই নিয়েও প্রতিযোগিতা চলত। মেয়ে হওয়াতে প্রার্থনাই এগিয়ে থাকত।এভাবে কখন যেন সময় শেষ হয়ে যায়।
তারপর অরিত্র চলে যায় বয়েজ স্কুলে আর প্রার্থনা গার্লস স্কুলে।সেই তখন থেকে অরিত্র একা হয় যায়, কারন প্রার্থনার সেই খুঁনসুটি, চোখ কটমট করে তাকানো খুব মিস করে অরিত্র।একদিন এক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অরিত্র নাম দেখে প্রার্থনার।সেটা দেখে নিজের নাম বাদ দিয়ে দেয় সে কারন সে প্রার্থনার আবৃত্তি শুলবে।তারপর আবার শুরু তার সেই একাকীত্ব।সেই শহর ছেড়ে তারা দুই জন চলে যায় দুই শহরে।
অরিত্রের অনেক বন্ধু-বান্ধবী হয় কিন্তু কখনো অরিত্র প্রার্থনাকে ভুলতে পারে না।সে তার বন্ধুর কাছে জেনেছে প্রার্থনা কোথায় থাকে কিন্তু ঠিক কোন জয়গাটাতে তা অরিত্র জানত না।
অরিত্র তখন ক্লাশ নাইনে পড়ে ফেসবুকে তখন সে একজনকেই খুঁজে আর সে হল প্রার্থনা।সার্চ বক্সে হাজারও প্রার্থনা,প্রার্থনা,প্রার্থনা লিখল।অনেক প্রার্থনার সাথে কথা হল কিন্তু কোন প্রার্থনাই তার সেই প্রার্থনা না।
দেখতে দেখতে অনেক সময় যায় অরিত্র খুঁজে প্রার্থনাকে কিন্তু কখনো ভাবেনি প্রার্থনা কি কখনো তাকে খুঁজে?? খোঁজার প্রয়োজন মনে করে নি অরিত্র।
চাওয়া না চাওয়ার মাঝে ও সম্পর্কে জড়িয়ে যায় অরিত্র কিন্তু সেই প্রার্থনা তার জায়গাতেই থেকে যায়।অরিত্র জানে না কবে কখন তাকে পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং এর সময় জানতে পারে সে আর প্রার্থনা একই কোচিং এ পড়ে খুঁজতে থাকে প্রার্থনাকে।খুঁজে তাকে কোচিং এর রেজাল্ট বোর্ডে খুঁজে পায় না।প্রার্থনার ভালো নাম ইয়াশনা সিদ্দিকী খুঁজে পায় বোর্ডে কিন্তু কলেজের নাম মিলে না।কোচিং এর সময়টা কি একটা ঝামেলার কারনে অরিত্র খুব খারাপ সময় কাটায়।তার মাঝে ও খুঁজে ফেরে প্রার্থনাকে।একদিন এক মেয়েকে সে ভেবেই বসেছিল এই যে তার প্রার্থনা দেখতে সে ঠিক তার মত।তার পর তাকে জিগ্যেস করে জানত পারল সে প্রার্থনা না।
অরিত্র ভর্তি হল ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে, অরিত্র খুঁজে বেড়ায় প্রার্থনাকে। একদিন তার এক বন্ধুর কাছে জানতে পারে প্রার্থনা এখন অস্ট্রিলীয়াতে কিন্তু কোন শহর বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তা জানত না।মন ভেঙে যায় অরিত্রের।
তারপর একদিন প্রার্থনার কাছের একজনের কাছে জানতে পারে সে কোন শহরে কোনবিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নে সেও তড়িৎ প্রকৌশলে পড়ে।
অরিত্র সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনের কাছে জানতে পারে প্রার্থনার কথা তার ফেসবুক একাউন্টে প্রাইভেসীর কারনে খুঁজে পাওয়া যায় নি।অবশেষে তার সেলফোন নম্বর পেল।তখন অরিত্র খুঁজে পেল নিজেকে নতুন করে।
ফোন করল অরিত্র কিন্তু কেউ রিসিভ করল না।কিছুক্ষণ পর অরিত্রের ফোনটা বেজে উঠল রিসিভ করতেই অরিত্র শুনল তার প্রার্থনার সেই চিরচেনা কন্ঠ।নিজেকে সামলাতে পারল না অরিত্রের কখন যেন চোখের পাশে জল এল।অরিত্র একটু পরেই নিজের পরিচয়টা দিল অবশ্য প্রার্থনা নিজেই বলে দিল: অরিত্রের নাম।
১০ বছর পর অরিত্র প্রার্থনার কথা শুনল সে যেন নিজেকে বিশ্বাস ই করতে পারতেছে না।প্রার্থনা খুব খুশি তার ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুর সাথে কথাবলে ।
অবশেষে ফেসবুকে ফ্রেন্ড হয় তারা।দু'জন ছবি দেখে ১০ বছর পরে।
এতদিন কোথায় ছিল অরিত্র।এত দিনের সব জমানো কথা কি শেষ হয়??অনেক অনেক আবেগ দিয়ে ঘেরা সেই কথা।
কথা হয় তাদের পড়াশুনা নিয়ে,আরও অনেক কিছু নিয়ে অরিত্র আর প্রার্থনার বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়।
সেই প্রার্থনাকে নিয়েই সারাটাদিন অরিত্রের।একই বিষয়ে দু'জন পড়ায়, তাদের পড়াশুনাটা অনেক ক্ষেত্রেই মিলে যায়।খুব আফসোস হয় কেন একসাথে পড়ল না ওরা??
ওরা স্বপ্ন দেখে আগামীর।কবে আবার একসাথে পড়বে,পোষ্ট গ্রাজুয়েশনে এক সাথে পড়বে ওরা।অনেকদিনের অপেক্ষা অরিত্র আর প্রার্থনার কবে আবার দেখা হবে।
পথচেয়ে আছে অরিত্র কবে আসবে প্রার্থনা।
প্রার্থনার কোন কষ্ট হলে অরিত্র সেটা সহ্য করতে পারত না, কেন করবে সে যে তার অনেক আপণ।কখনো প্রার্থনার এতটুকু মন খারাপ হলে মন কাঁদে অরিত্রের ও।
প্রার্থনাও অরিত্রকে খুব ভালো বুঝে।সব সময় অরিত্র কে বোঝায় শাসন করে।
প্রার্থনা যখন রাগ করে অরিত্রের উপর, অরিত্রের তখন খুব মন খারাপ হয়।প্রার্থনাও জানে এটা।
কিছু কথা অরিত্র এখনো বলে নাই প্রার্থনাকে।যে কথা গুলে শুধুই প্রার্থনার জন্য।বলবে না ও লিখবে।মনের খাতায় হাজার পৃষ্ঠা লিখে ফেলল ও এখনো কাগজে কলমে লেখে নি অরিত্র।
লেখা হয় নি অরিত্রের, মনের পৃষ্ঠাটা খুঁজে পাচ্ছে না।
সেই পৃষ্ঠা পেলেই সে লিখবে।
অরিত্র মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে তার প্রার্থনার জন।
কখন যে অরিত্রের বাসায় পৌছে গেছে অরিত্র খেয়ালই করে নাই, প্রার্থনার ফোন আসে অরিত্র রিসিভ করতেই বকা শুনে "কই ছিলি তুই?সারাটাদিন খবর নাই"।
©somewhere in net ltd.