নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই।কোথাও কেউ নাই। শুধু শূন্য। মহাশূন্য।\n

রেফায়েত প্রধান

পরিচয় খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি । খুঁজে পেলেই জানিয়ে দেব।

রেফায়েত প্রধান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:২৩

পূর্বটিকা :গল্পটিতে মেয়েদের কে নেগেটিভ ভাবে দেখানো হয়েছে। বিষয়টি এখানে রুপক অর্থে দেখানো হয়েছে। আমি বলতে চাই সব মেয়েই পজেটিভ, সামান্য কিছু মেয়ে আছে নেগেটিভ। আবার সব ছেলেও পজেটিভ না,তাদের মাঝেও নেগেটিভ ছেলে আছে।সুতরাং গল্পটি ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই সমভাবে প্রজোয্য।।।



" কি অদ্ভুত মানুষ আমরা "
,
,
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে কেন? নিঃশ্বাস নিতে এত কষ্ট হচ্ছে কেন?? আমার তো দুরের কথা, আমার বংশে কারো অ্যাজমা ছিল বলে আমার মনে পড়ছে না।
,
,মনে হচ্ছে বুকের উপর চেপে বসেছে কেউ।টিপে ধরেছে গলা।আর আমি এক চিমটি অক্সিজেনের জন্য ছটফট করছি।পাগলা ঘোড়ার মত হাত-পা ছুড়ছি দিগ্বিদিক।পৃথিবীটা চোখের সামনে পেন্ডুলামের মত দুলছে।
,
,
,
ঝন্ ঝন্ ঝন্।
বিকট শব্দে ভেঙ্গে গেল আমার ঘুম।বেড সুইচ টা on করলাম। ঝলমলে আলোয় ভরে গেল গোটা রুম। মেঝেতে তাকিয়ে দেখি অজস্র কাঁচের টুকরা। বেডের পাশে রাখা T-Table এর উপর থেকে পড়ে গেছে পানি ভর্তি কাঁচের জগ-গ্লাস।
,
,
পাশের রুম থেকে ছুটে এসেছে মা।আতঙ্কিত মুখ।বিস্ফারিত চোখ।কাছে এসে বললো,,
-কি হয়েছে বাবা? শব্দ হলো কিসের??
=কিছু না মা। জগ টা পড়ে গিয়ে শব্দ হয়েছে।তুমি কেন কষ্ট করে এত রাতে উঠে আসলে??
,
আমার অভয় বানী মার অস্থিরতা এতটুকু দুর করতে পেরেছে বলে মনে হল না।মা এগিয়ে এসে আমার শরীরে হাত বুলিয়ে বললো
-একি তোর গোটা শরীর তো ঘামে ভিজে একাকার!! বুক দেখি হাপড়ের মত ওঠানামা করছে! কি হয়েছে বাবা তোর? সত্যি করে বলত।
=কিচ্ছু হয়নি মা।তুমি এত ব্যস্ত হয়ো না।
,
,
মাকে তো আর আমি বলতে পারি না আমার জীবন আজ কোন্ ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি। তৃষ্ণায় আমার বুক ফেটে যায়।অক্সিজেনের অভাবে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।প্রতি রাতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় হিমালয় সম কষ্টের সাথে পান্জা লড়ে। তারপর রাত-জাগা পাখিদের মত জেগে থাকি সারা রাত।আমি নিশাচর প্রাণী হয়ে গেছি মা।তবে মুখে বললাম,
=তুমি আমায় একটু ঠান্ডা পানি দিয়ে ঘুমিয়ে পড় মা।আমার কিছুই হয়নি। আমি ঠিক আছি।
,
,
মা গেল কিচেন রুমে। আর আমি নিজেকে ধাতস্ত করার চেষ্টা করছি পরিবেশের সাথে।
,
মনের ভিতর সুনামির গর্জন শুনতে পাচ্ছি আমি।স্মৃতির আর্কাইভ Auto play করছে পুরোনো দিনের নানা স্মৃতি। বহুবর্ণ ভালবাসার স্মৃতি,যে স্মৃতি রোমন্থনে এক সময় আমি রোমাঞ্চিত হতাম। সেই স্মৃতিই আজ আমার হৃদয়ে রক্ত ঝড়াচ্ছে অহর্নিশি।
,
এমন তো হবার কথা ছিল না। কেন এমন হল??
উত্তর খুঁজে ফিরি আমি আকাশে-বাতাসে,ইথারে-পাথারে, স্বপনে-জাগরনে, সবখানে।।।।।।
তোমার কি উত্তর টা জানা আছে, সুখের পায়রা???
,
প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে দেখ সুখের পায়রা, কি অপরুপ সাঁজে সেজেছে প্রকৃতি। বসন্তের দক্ষিনা বাতাসে আলোড়িত হচ্ছে সবুজে শোভিত গাছ-গাছালি। গাছ-গাছালির মগ ডালে বসে হাওয়ায় দুলে উঠছে পাখ-পাখালি।বাক-বাকুম,বাক-বাকুম রবে নিজেদের মনের কথা,ভালবাসার কথা একে অপর কে জানিয়ে দিচ্ছে পায়রা গুলি।যেদিকে চোখ যায় দেখা, যায় শুধু তরুণ-তরুণী দের প্রেমের মিছিল। সুর-ছন্দ, তাল-লয়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে প্রতিটি জীবের জীবন।বাসন্তী রং লেগেছে সবার মনে। আমার জীবনের সুর-ছন্দ, তাল-লয় কোথায় হারিয়ে গেল,কেন হারিয়ে গেল,বলতে পারো সুখের পায়রা???
,
,
আমার জীবন নদীর পানি শুকিয়ে যখন চড় জেগে উঠেছিল,গৃষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে সেই চড় যখন ফেটে চৌচিড় হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তখনই কাল-বৈশাখী ঝড়ের মত প্রচন্ড বেগ তুমি এসেছিলে দুরন্ত আবেগ নিয়ে। সিঞ্চন করেছিলে অমৃত সুধা চৌচিড় হয়ে যাওয়া আমার হৃদয়-মাটিতে। আবার আমার জীবন-নদীতে উঠেছিল জোয়ার,ডুবে গিয়েছিল জেগে ওঠা চড়।
,
তুমি এসেছিলে যেমন কাল-বৈশাখি ঝড়ের মত,চলে গেলে তার থেকেও দ্রুত গতিতে ঠিক যেন সুনামির মত।সুনামির যে তান্ডব আমার জীবনে ঘটে গেল তা যে আমি শামাল দিতে পারছি না।তোমার কাছে এই সামান্য সময় টুকু হয়তোবা ছিল ঢাকা টু কক্সবাজার ভ্রমনের মত আবহাওয়া পরিবর্তন। কিন্তুু আমার কাছে যে এটা ছিল মৃতপ্রায় জীবন থেকে জীবনের পথে ভ্রমন।
,
কেন তুমি আমার জন্য এত কিছু করলে? আর কেনই বা এখন এ রকম করলে? আরে ধুর তোমায় কেন আমি এ প্রশ্ন করছি? এর উত্তর তো আমি জানি।তুমি তো সুখের পায়রা। সুখের জন্যই তো আমায় মাঝ সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে নৌকা থেকে ফেলে দিলে, তাইনা?
,
কিন্তুু সুখি হতে পেরেছ কি সুখের পায়রা? আমায় ফেলে নতুন যাকে তোমার নৌকায় ঠাঁই দিয়েছ, সে কি তোমায় দিতে পেরেছে সুখ? সুখ কি এতই সহজ!! টাকা থাকলেই কি আর সুখ কেনা যায়,সুখের পায়রা?
,
আচ্ছা সুখের পায়রা, শুনলাম তোমার নৌকার নতুন মাঝি এরই মাঝে নাকি তোমায় ফাঁকি দেয়া শুরু করেছে? তোমার নৌকায় করে সে নাকি মাঝেমধ্যেই নিত্য-নতুন পায়রা নিয়ে নৌবিহারে যায়??
,
হায়রে সুখের পায়রা রে, ,,,,,,,,,,
তোমার অবস্থা দেখে সেই পেঁয়াজখোর সম্ভ্রান্ত পাত্রের কথা মনে পড়ে গেল।যার কোন বাজে অভ্যেস ছিল না।শুধু একটু পেঁয়াজ খেত।খোঁজ নিয়ে দেখা গেল,সে পেঁয়াজ খেত কারণ সে মাঝে-মধ্যে মাল(মদ)খেত।কেন সে মাল খেত,কারণ সে মাঝে-মধ্যে পাড়ায় (পতিতালয়) যেত।কেন সে পাড়ায় যেত? মাঝেমধ্যে মাথাটা গরম হয়ে গেলে রিল্যাক্স করার জন্য।কেন মাথা গরম হত?কারণ সে মাঝেমধ্যে খুন-খারাবি করত।তারপরও সে সম্ভ্রান্ত, ভদ্র কারণ তার অঢেল টাকা আছে।
,
,সুখের পায়রা বলতো এতে লাভটা কি হল? জানি তুমি বলতে পারবে না। কারণ তোমাদের মত সুখের পায়রাদের সারাটা জীবন পেঁয়াজের গন্ধেই জীবন পার করে দিতে হবে কিন্তুু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারবে না।সারা জীবন অভিনয় করে যেতে হবে মিথ্যা সুখের।
,
,
সুখের পায়রার সাথে আমার আলাপচাড়িতায় ছেদ পড়ল মা রুমে ঢোকার ফলে।মা গরম দুধ,ফলমুল ও ঠান্ডা শরবত নিয়ে এসেছে। পরম মমতায় নিজ হাতে আমায় সব খাইয়ে দিল।গায়ে মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিল।আমি বললাম,
=মা, এবার তুমি যাও,ঘুমিয়ে পড়।
-আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই বাবা?
=আর লাগবে না মা,আমি ভাল আছি।
,
মার আতঙ্ক তবুও কাঁটে না।আমি এক প্রকার জোর করেই মাকে তাঁর ঘড়ে শুইয়ে দিয়ে এলাম।
,
,
আমি জানি বাকি রাতটুকু আমার নির্ঘুম কাটবে।এরকম কত নির্ঘুম রাত কেটেছে তার কোন হিসেব নেই।কত রাত যে আমি পার করেছি আকাশের পানে তাকিয়ে থেকে,চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তা আমি জানি না। তবে আজকের এই নির্ঘুম রাতে আমার মাথায় নতুন এক চিন্তা কাজ করতেছে। "মায়ের ভালবাসা আর এইসব সুখের পায়রাদের ভালবাসার মাঝে কত তফাৎ। "
,
সুখের পায়রাদের তথাকথিত ভালবাসা সামান্য একটু পাওয়ার জন্য আমার,আমার মত আরো অনেকের, সবারই কতই না প্রানান্তকর প্রচেষ্টা।
,
আর দুঃখিনি মা,যে আমায় ভালবাসে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি,সামান্য একটু কারণে যে মায়ের চোখে ঘুম নেই,সেই মায়ের ভালবাসার সামান্য একটু মূল্য দেয়ার নূন্যতম চেষ্টা আমার মাঝে নেই।
,
,
কি অদ্ভুত আমি! কি অদ্ভুত আমরা!! কি অদ্ভুত মানুষ!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.