![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প.. এক চিলতে মিষ্টি হাসি
প্রথম দেখায় দেখেছিলাম স্কুল ড্রেসে.. না ভুল হলো.. কলেজ ড্রেসে.. সেই রাস্তায়..। আমার মেসের সামনের পিচঢালা মাঝারি প্রশস্ত পথ.. ছোট কিংবা হালকা যান চলাচলের জন্য সংযোগ সড়ক। স্কুল, কলেজ কিংবা মূল শহর থেকে ফেরার জন্য প্রতিনিয়ত শত যানবাহন, অটোরিকশা ব্যবহার ছাড়াও দুপাশে সবুজ পাতার গাছের সারি আর স্থির জলাশয়ের স্বচ্ছ পানিতে একঝাক হাঁসের ভেসে চলা মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে করতে পথ হেটে গন্তব্যে পেীছায় অনেকে..।
সারাদিনের অবসাদ, ক্লান্তি দূর করতে প্রায়ই বন্ধুসহ এই পথ দিয়ে যাই প্রিয় ক্যাম্পাসে এক সতেজ মনোমুগ্ধকর সবুজ শান্ত স্নিগ্ধ অনুভূতির জন্য। যাহোক প্রায়ই যেমন এই পথের যাত্রী হতে হয় তেমনি মাঝে মধ্যে দর্শন মেলে ঐ শত পথচারির মাঝে মন কেড়ে নেওয়া একটি মেয়ের...। জানি না.. চিনি না.. তবে চেনা চেনা লাগে। দেখা মাত্রই এক চিলতে মিষ্টি মুচকি হাসি দিত আর পাশ কেটে চলে যেত মেয়েটি। দেখা পেতাম প্রায় একই সময়ে বিকাল ৪.৪৫ থেকে ৫টা কিংবা তার কিছু আগে পরে। এইতো সেদিন দুই বন্ধু ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলাম হঠাৎ দুর থেকে আমার চোখ আটকে গেল..
এই তো সেই.. সুন্দর ভঙ্গিমায় হেটে চলা.. হুম আজ হিজাব পরিহিত.. একটু কাছে আসতেই সেই এক চিলতে মিষ্টি মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নত করে নম্রভাবে পাশ কেটে গেল..। এরকম কোন হাসি আগে কারো দেখেছি .. নাহ! মনের অ্যালবামে পাই না। ও পাশ কেটে গেল কিন্তু কিছু নিয়ে গেল..। বন্ধুকে বললাম নাম পরিচয় চাই.. কি করি , শেষমেশ বুঝি মিষ্টি হাসির ফাদে পড়ি।
দিন যায় .. মাঝে মধ্যে মিষ্টি হাসির আঘাতে মচকানো হৃদয় মোচড় দিয়ে ওঠে। কি করি কখনো কোন মেয়ের সাথে সেভাবে কথা বলিনি.. তাও আবার অচেনা.. মরছি..। তবুও আমার তার মিষ্টি হাসি চাই। বন্ধু বলল অপেক্ষা কর। পরবর্তী দিনে অবশ্যই কথা বলব চিন্তা করিস না। হুম! সেই অপেক্ষায...।
এরপর নির্দিষ্ট সময়ে মেসের গেটের বাইরে অপেক্ষা । আসবেই তো। কিন্তু না .. এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল.. আমার ভাবনাও বেড়ে গেল.. পাবো তো দেখা.. আর একটি বারের মতো। শেষ দেখা অন্তত..। পাবোই তো দেখা। তবে কিভাবে শুরু করব প্রথমে.. নাম শুনতে চাইব.. না.. আমার পরিচয় আগে দিব.. এই মেয়ে শেনো তোমার নাম কি? নাহ.. প্রথমে হ্যালো.. শুনছেন..। ধুর... এসব চিন্তা করতে করতে রাতে ঘুম যেতে দেরি করি .. যার ফল সকালে উঠতে দেরি। আর ক্লাস মিস। বন্ধু বলল.. তোর খবর কি? এত পানচুয়াল ছেলে অথচ ইদানিং সবকিছুতেই লেট। এরকম হলে চলবে। দোস্ত তুই দেখ না কি করা যায়? ক্যান বিকালে বের হবো দেখা হলেই কথা বলব। তা তো যাবি.. আমার যে তর সইছে না।
এত আকুল হলে তো হবে না.. হয়তো গতকাল আসেনি কারণ শনি-সোম-বুধ এর যাত্রীও হতে পারে। অর্থ্যাৎ প্রাইভেট অথবা কোচিং এ সপ্তাহে তিনদিন পড়তে পারে সেজন্য গতকাল আসেনি হয়তো। আজ বুধবার দেখা হলেও হতে পারে। ও তাই তো.. দোস্ত রেডি থাকিস আর সময় হলে আমায় বলিস।
...সময় ৫.৪৫ মিনিট। দ্রুত বের হলাম দেখি বন্ধু রুমে নাই। ওহ.. তাহলে একা যেতে হবে! তবু যাবো.. চললাম ক্যাম্পাস অভিমুখে দেখা হলেও হতে পারে। কিন্তু এত সাহস তো নেই একা কথা বলার.. তবুও কেন জানি খুব কনফিডেন্ট পাচ্ছি। ক্যাম্পাসে প্রবেশ দ্বারে ঢুকতে না ঢুকতেই... এইতো মিষ্টি মুচকি হাসির সেই মেয়ে। ওহ.. যা খুশি লাগছে.. কিন্তু প্রথম দেখার মতো আমার হৃদস্পন্দন বাড়ছে না ! এগিয়ে সামনে দাড়ালাম অমনি বলা শুরু করলাম.. খুব ভালো লাগে .. মানে তোমার হাসিটা.. আর চলাটাও.. না মানে হেটে চলা..। সে তাৎক্ষনিক আমায় থ্যাংক ইউ ভাইয়া বলে পাশে থাকা অটোরিকশায় উঠলো আর বললো আমার পরীক্ষা চলছে.. বাসায় যাবো দেরি হচ্ছে। আমি তড়িৎগতিতে বললাম তোমার ফোনটা.. আরে না.. মোবাইল নম্বরটা..। না থাক.. আচ্ছা না.. আমারটা দিচ্ছি। পারলে ফোন দিও। ও তাই.. তবে দেন ভাইয়া তারাতারি..।
ওহ! মোবাইল নম্বর নিতে চাওয়ায় আমার উত্তেজনা বেড়ে গেল। কোথায় কাগজ.. না নেই.. তাহলে টাকায় লিখে দেই। নাও..। ভাইয়া একি ! ক্যান কি হইছে? আরে নাম্বার তো ৯টা ডিজিট দিয়েছেন। আর ২টা?.. কী? দাও তো দেখি ও তাই তো। আবার লিখলাম কিন্তু ভুল হচ্ছে.. ওহ! কি হচ্ছে এসব ! আমার কি হলো ! ভাইয়া আসি দেখা হবে..। অটোরিকশা ততক্ষনে ছেড়ে দিয়েছে.. আমি জোরে বলছি.. তুমি লিখো আমি বলছি নাম্বারটা... ০৭১.. ধুর..০১৭...
ঔ গাধা.. ওঠ। আরে গাধা ৫টা পার হলো। কখন বের হবি, সেমিনার আছে ওঠ।
হকচকিয়ে উঠলাম.. ঘুম ভেঙ্গে দেখি!!! আমি ক্যাম্পাসে.. না এ তো বেডে.. ওহ শিট!! দুপুরের খাবার পর বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপর এই..।
সেদিন স্বপ্নেই দেখা পাই বাস্তবে আর দেখা পাই নি.. আজো..। তবে আছি অপেক্ষায়.. সেই মিষ্টি মুচকি হাসির...।
©somewhere in net ltd.