![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(ছবিসহ গল্প ফেইসবুক হতে কপি করা। কপি পোস্টের কারণ গল্প পড়লেই বুঝবেন)
আমার ছেলের গার্লফ্রেন্ড এসেছে আমাদের সাথে দেখা করতে৷ একসময় লোকে পাত্রী দেখতে মেয়ের বাড়ি যেত এখন পাত্রী নিজেই চলে এসেছে হবু শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করতে। যুগ পাল্টেছে। যদিও যুগের সাথে তাল মেলাতে আমার আপত্তি নাই কিন্তু আমার বেগম মিসেস রেবেকা একদমই মেয়েটাকে পছন্দ করতে পারছে না। মেয়েটা আসবে শুনেই সকাল থেকেই রেগে আগুন হয়ে আছে।একশ একবার বলেছে,
-বিয়ের আগেই ঢ্যাঙঢ্যাঙ করে ছেলের হাত ধরে চলে আমবে।বেহায়া মেয়ে!আজকালকার মেয়েগুলা হচ্ছে নির্লজ্জ টাইপের। ভালো ছেলে দেখলেই গলায় ঝুলে পড়ার মতলব আঁটে।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আমি বললাম,
-ইসলামে কিন্তু মেয়েদের নিজ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সুন্নাত। উম্মুল মুমেনীন খাদিজা(রাঃ) আমাদের প্রিয়নবী মুহম্মদ(সঃ) এর চাচার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন।উনাকে তুমি কি বলবা বেহায়া?
যুক্তিতে না পেরে রেবু কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলের মত টগবগ করতে লাগল।গুণধর পুত্র বাড়ি নাই বিধায় সমস্ত দোষ গিয়ে পরল আমার ঘাড়ে। এই যেমন ছেলেকে আমি কোনোদিন শাসন করি নাই,শাস
করলে আজকের দিনটা দেখতে হত না।
ছেলের বয়স ছাব্বিশ৷সদ্যই ব্যাংকে চাকরি হয়েছে।পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়া একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য কখনই অপরাধ নয় এই সাধারণ সত্যটা রেবু বুঝতে চাইছিল না। বাঙালি মায়েদের এই এক সমস্যা। মাতৃস্নেহ কখন যে সন্তানের প্রাইভেসি অতিক্রম করে বেডরুমে ঢুকে পড়ে তা তারা নিজেরাই বুঝে না। যাই হোক,মেয়েটা আসবে সন্ধ্যায়। সকাল থেকেই গিন্নির মুখের পাশাপাশি হাত চলছে। এইযুগের বাচ্চারা পিঠাপুলি পছন্দ করে না।বেকারি আইটেম কিনে আনা হল। সাথে ঘরে বানানো বেকড পাস্তা,নুডৃুলস,চিকেস ফ্রাই আরো কত কী!
মেয়েটি শৈশবের সাথে হাজির হল ঠিক সন্ধ্যা সাতটায়।নাম মেঘা।বড় বড় চোখ,কোঁকড়া চুলের মিষ্টি চেহারার মেয়ে।নীল চুড়িদারের সাথে ম্যাচিং ছোট্ট নীল টিপ। মেয়েদের খুঁটিয়ে দেখার বয়স পাড় হয়ে গেছে বহু বছর আগে। কিন্তু এই মেয়েটি আমার পুত্রবধূ হবে বিধায় ওকে নিজ সন্তানের মতই আপন করে দেখছিলাম।মেঘা হোস্টেলে থাকে।ওর বাবার সরকারি চাকরির সু্বাদে শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে ওর পরিবার ঝিনাইদহ আছে আর ও ঢাকা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। এবছর এমবিএ দিবে। বয়সে শৈশবের বছর তিনেকের ছোট হবে।
দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিয়ে করবে সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের আপত্তি চলে না। মেয়েটিকে আমার ভালোই লাগল,অল্পবয়সী হাসিখুশি মেয়ে। কিন্তু আমার স্ত্রী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওকে প্রশ্ন করতে লাগলেন,
সম্পর্ক কতদিনের,কিভাবে পরিচয় ইত্যাদি!
খাওয়ার টেবিলে মেঘা চাউমিন শৈশবেে প্লেটে সার্ভ করতেই রেবু বলে উঠল,
-ওমা!তোমাদের দুই বছরের পরিচয় কিন্তু এই জানো না! ওর চিংড়ি মাছে এলার্জি!
মেয়েটা সত্যি লজ্জা পেল।আমি পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্যে বললাম,
-ছোট ছোট চিংড়ি মাছ ও বোধহয় দেখতে পায় নাই।তাই না?
মেঘা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।
মেয়েটা ঘণ্টাখানেক পর বিদায় নিতেই রেবু ঘাড় বেঁকিয়ে বসল৷ এই মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিব ন্।
-কেন দিবে না?
-এই মেয়ে শৈশবের পছন্দ,অপছন্দ কিছুই জানে না।নীল রঙের কামিজ পরে চলে এসেছে।ও জানে না,নীল রঙ শৈশবের কতটা অপছন্দ!
-প্রিয়তমাকে মানুষ সব রঙে দেখতেই পছন্দ করে রেবু। আমারো লাল রঙ ভালো লাগত না,বিয়ের দিন তোমাকে লাল বেনারসিকে দেখে মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে।
রেবু লজ্জা পেয়ে বলল,
-ধুর!তোমার যত্তসব বুড়া বয়সে ভিমরতি।
এখনকার মত রেবুকে সামাল দেওয়া গেলেও ভবিষ্যতে ও এই মেয়েটাকে কতটা গ্রহন করতে পারবে জানি না।রেবু নিমরাজি ছিল তবু ওকে নিয়ে জোর করে চললাম ঝিনাইদহ। উদ্দেশ্য মেঘার বাবা-মায়ের সাথে পরিচিত হওয়া।মেঘারা তিন বোন,ও সবার ছোট।বড় দুইবোন জামাইসহ উপস্থিত ছিল। ওদের পরিবারে সবচেয়ে ভালো লাগল ওর বাবা নেয়ামত সাহেবকে। ভদ্রলোক দুই বছর পর অবসর নিবেন।রিটায়ার্ডের আগে ছোট কন্যাকে সুপাত্রস্থ করতে পারলে আর চিন্তা নেই। বুড়ো-বুড়ি শেষ ক'টা দিন গ্রামে গিয়ে পাড় করতে চান। নিজেদের বসতভিটার পাশে একফালি উঠোন আর পুকুরঘাট উনাকে স্বপ্নের মত টানছে। বুঝলা,সারাজীবন সরকারি সার্ভিস দেবার কল্যাণে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘোরা হলেও তার মন পড়ে আছে পিতৃ-পুরুষের ভিটায়। নিপাট ভদ্রলোক,একমাত্র এই লোকটার কথার জাদুতে রেবু বিয়েতে সম্মতি জানাল।মেঘাকে পছন্দ করতে না পারলেও আশ্চর্যজনকভাবে মেঘার পরিবারের প্রশংসার ফুলঝুরি শুনতে পেলাম স্ত্রীর মুখে। এটা অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার,কেননা রেবু সহজে কারো প্রশংসা করে না।
বিয়ের আয়োজন শুরু হল।রেবু গিয়ে খুব পছন্দ করে অ্যাংগেজমেন্টের আঙটি কিনে আনল। বেশ ভারী আঙটি,স্বর্ণের বাজারেদর আকাশছোঁয়া। তবু ও একমাত্র ছেলের বিয়েতে কার্পণ্য করল না।আঙটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শৈশব দেখল। তারপর বলল,
-আঙটিটা সুন্দর কিন্তু তুমি এটা পাল্টে ডায়মন্ডের রিঙ নিয়ে আসো।
রেবু জিজ্ঞেস করল,
-কেন?
শৈশব বলল,
-মেঘার খুব ডায়মণ্ডের রিং পছন্দ।ছোট হোক সমস্যা নাই,ডায়মণ্ডের হলেই হবে।
-ডায়মন্ডের কোনো ফিউচার ভ্যেলু আছে নাকি!সেদিন টিভিতে দেখলাম,একটা নামকরা কোম্পানির সব ডায়মন্ডই নকল।
-প্লিজ, মা।ওর একটা রিকুয়েষ্ট রাখো।
বিয়ে তো জীবনে একবারই করছি...
মেঘার একটা রিকুয়েষ্ট রাখতে গিয়ে দেখলাম একটার পর একটা অনুরোধ নামের বিপত্তি আসতে লাগল।হবু বউমা আর ছেলে নিয়ে প্ল্যান করেছে অনুষ্ঠান হবে চারদিনের। মেহেন্দি,হলুদ,বিয়ে,রিসিপশন। আমার ছেলে সদ্য চাকরিতে জয়েন করেছে। বেতন পায় চব্বিশ হাজার আর বউয়ের দু'হাত মেহেন্দিতে রাঙাতেই মেকাপ আর্টিস্ট পেমেন্ট নিবে পনের হাজার।একমাত্র ছেলের বিয়েতে কার্পণ্য করব না কিন্তু তাই বলে স্রেফ ফটোগ্রাফি আর ভিডিও বানাতে চাইছে ত্রিশ হাজার।টাকা কি গাছে ধরে নাকি!আক্কেল গুড়ুম হল তখন যখন হবু পুত্রবধূ পঞ্চাশ হাজার টাকার লেহেঙ্গা পছন্দ করে বসে থাকল। একদিন মাত্র যেই পোশাক পরা হবে তারজন্যে এতগুলা টাকা নষ্ট!শুধু একদিনের জন্যে তো নয়,চারদিনে চার রকমের সাজপোশাক। সাথে বরের জন্যে চাই ম্যাচিং পাঞ্জাবি,শেরওয়ানি কমপ্লিট স্যুট। হিসেব করে দেখলাম বর-কনের পোশাকের পিছনেই বাজেট রাখতে হবে দেড় লাখ।বেগাঢ় এতগুলা টাকা খরচ করতে বুকের ভেতরটা কেমন ব্যথা করতে লাগল।ছোটোখাটো ব্যবসা করি।বাড়ি তৈরি করে আর ছেলেকে দাঁড়া করাতে গিয়ে সঞ্চয় বলতে তেমন কিছু নাই। বিয়ে উপলক্ষ্যে বড় অঙ্কের টাকা ধার করতে হবে।কিভাবে শোধ করব জানি না,তবু আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া ছেলেটা যেন সুখে থাকে।
একটা সময় বিয়ে ছিল দুটি পরিবারের মিলন,আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। কিন্তু আমার ছেলেট নিজের বিয়ে উপলক্ষ্যে এতটাই এক্সাইটেড যে বাবা-মাকেও ভুলে যেতে বসল। প্রি ওয়েটিং শ্যুট করতে চলে গেল গাজীপুর। সন্ধ্যায় ফিরে আসল মন খারাপ করে। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় ভিডিওগ্রাফি মনের মত হয় নাই।রেবু রেগে গজগজ করছে।
-কেমন ছেলের বউ ঘরে আনছ বুঝি না বাপু।
পাথরের গহনার সেট কিনেছে বাইশ হাজার টাকা দিয়ে।এত ঘটা করে বিয়ের অনুষ্ঠান না করে পাঁচ ভরি গোল্ড কিনলেও ভবিষ্যতে কাজে লাগত।
খরচ আমার একার হচ্ছে না। মেয়ের বাবারও অবস্থা কাহিল।বড় দুই বোনের বিয়েতে হাজার মানুষের আয়োজন ছিল ছোট মেয়ের বিয়েতে কম করলে মান থাকে না।সময়ের সাথে রুচি পাল্টেছে। বিয়েতে নরমাল পোলাও,রোস্ট করলে চলবে না।কাচ্চি বিরিয়ানি সাথে টিকিয়া কাবাব শাহী রোস্ট।নেয়ামত সাহেবকে কল দিয়ে বললাম,
-ভাই,আপনি মাথার উপর চাপ নিয়েন না। আমি বুড়ো মানুষ।পোলাওয়ের সাথে এক পিরিচ দই হলেই খাওয়া হয়ে যায়।কাচ্চি-ফাচ্চি বড়লোকি খাবার গরীবের পেটে সইবে না।
-কি যে বলেন না,ভাইসাব!জামাই আমার একটা আবদার করেছে। ঢাকা থেকে ওর বন্ধুবান্ধব,কলিগরা বরযাত্রীতে আসছে। তাদের জন্যে একবেলা খানাপিনার আয়োজন করব এ আর খুব বেশি নাকি!
বুঝলাম,শৈশবও কম যায় না। একসময় মেয়ের বাবা পিষ্ট হত যৌতুকের ঘানি টেনে। আর এইযুগে ছেলে এবং মেয়ের বাবা দুজনেই পৃষ্ট হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার লোক দেখানে বিয়ের অনুষ্ঠানে। স্রেফ ফেসবুকে কিছু ছবি আপলোড আর বন্ধুবান্ধবদের কাছে নিজেদের স্ট্যাটাস প্রমাণ করার জন্যে এত বড় আয়োজন।রেবুর কাছে আক্ষেপ নিয়ে বললাম,
-আমরা আমাদের সন্তানকে মানুষ করতে পারি নাই। যেইসব ছেলেপুলে বাবা-মায়ের কায়িক পরিশ্রমের টাকা স্রেফ লোক দেখানো কালচার দেখাতে গিয়ে উড়িয়ে দেয় আমি তাদের শিক্ষাকে কুশিক্ষা বলব।
আম্বানিমার্কা বিয়ের খরচ করা অধিকাংশ পরিবারের ধরাছোঁয়ার বাইরে। আম্বানি এক বিয়েতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করলে সেই বিয়ে উপলক্ষ্যে দশ হাজার কোটি টাকা আয়ের ব্যবসায়িক বুদ্ধি রাখে। মধ্যবিত্ত বাঙালিরর বিয়েতে জমে কিছু সস্তা ডিনার সেট আর রাইস কুকার। যাই হোক,লাখ টাকা খরচ করে লোকজন ডেকে পোলাও-কোরমা খাইয়ে তাদের কাছে উপহার আশা করাটাও এক ধরনের ছ্যাচড়ামি। আমার টাকা নাই ব্যস আমি খুরমা খাইয়ে ছেলের বিয়ে দিব।বড়জোর নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে ডেকে একবেলা ডাল-ভাতের আয়োজন করা। কিন্তু নিতান্ত অর্ধপরিচিত মানুষদের বিয়ে উপলক্ষ্যে জড়ো করে, বিরাট কমিউনিটি সেন্টার আলোকসজ্জা করে টাকার শ্রাদ্ধ করার কোনো মানে হয় না। একজন মধ্যবিত্তের লাখ টাকা যোগাতে বছরের পর বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় সেখানে এক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে লাখ দশেক টাকা খরচ করাকে বোকামি ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না।
যথারীতি মেহেন্দি, গায়ে হলুদ আর ব্যাচেলর নাইট উৎযাপনের পর বিয়ে সম্পন্ন হল৷ যেই মেয়েটা ব্রান্ডের লেহেঙ্গা ছাড়া বিয়ের পিঁড়িতেই বসতে চাইছিল না সেই মেয়েটা নিজের অধিকার ফলানোর ব্যাপারে খুব কাঁচা। দেনমোহর ধার্য করা হল পাঁচ লাখ। নগদ কোনো টাকা বা সোনার গহনা দিয়েও কিছু উসুল করা হল না। তাতে কি!মেঘা ব্যস্ত বিয়ের ফটোসেশনে। নানান অঙ্গভঙ্গি করে ক্যামেরাম্যানের সামনে ছবি তুলে যাচ্ছে। গত চারদিনের অনুষ্ঠানে সম্ভবত এক হাজার ছবি তোলা হয়ে গিয়েছে। এত আর্টিফিসিয়াল ছবি কি সত্যি অ্যালবামে বন্দী হয় নাকি রয়ে যায় ফোনের মেমোরি কার্ডে বছরের পর বছর ধরে।ওরাই ভালো জানে।
বিয়ের পর নবদম্পতি যেখানে চড়ুই পাখির মত সারাদিন কিচির-মিচির করে ঘুরে বেড়ানেোর কথা। সেখানে ওদের রাতদিন ঝগড়া চলছে। শৈশব কথা দিয়েছিল ওকে নেপাল হানিমুনে নিয়ে যাবে। বিয়েতে প্রচুর টাকা খরচ করে অবস্থা করুণ।কক্সবাজার যাবারও পয়সা নাই। ছেলে যেন এবার কিছুটা লজ্জা নিয়েই আমার কাছে হাত পাতল। আমি বললাম,
-দেখ বাবা,তোকে পড়াশোনা করাইছি। বিয়ে করেছিস এখন আমার দায়িত্ব শেষ। আমাদের বুড়ো-বুড়িকে তোর না দেখলেও চলবে কিন্তু তোর বউয়ের দায়িত্ব একান্তই তোর।
সন্তানদের আদর্শ লিপি,নামতা মুখস্থ করানোর আগে যে সংসারের দৈনন্দিন কাজগুলো শেখানো উচিত তা ওদের বিয়ের পর হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম।মশারি টানানো নিয়ে দুজনের রোজ ঝগড়া চলে,বউমা এক কাপ চা বানিয়ে আনলে শৈশবের পছন্দ হচ্ছে না।
-এটা কি বানিয়ে আনছ? চিনি দিয়ে গুলানো শরবত।
-নিজে করে খাও না!
নাহ!আমার ছেলেরও এক কাপ চা বানানোর মুরোদ নাই।
মানুষ জন্ম থেকে কিছু শিখে আসে না। দুঃখজনকভাবে আমার ছেলে এবং ছেলের বউ দুজনের খাবার রুচি,চেহারা এবং মানসিক অবস্থা যোজনগুণ ব্যবধানে থাকলেও একটা ব্যাপারে দুজনের বেজায় মিল।দুজনে কেউই মানিয়ে নিতে পারে না এবং নতুন কিছু শেখারও আগ্রহ নাই। মেঘা বেলা দশটা অবধি ঘুমায়। উঠে এক কাপ চা হাতে নিয়ে ফোনে স্ক্রলিং করতে থাকে আর শৈশবের তো রোজই অফিস যেতে দেরি হয়।এমন করলে ওর চাকরিটা থাকবে কী না কে জানে!
একরাতে ওদের ঘর থেকে তর্কের আওয়াজ ভেসে আসছে। আমরা বুড়ো-বুড়ি চুপচাপ নিজেদের ঘরে দরজা এঁটে বসে ছিলাম।রেবু বলল,
-হল তো তোমার বিশ্বাস।ওরা একে অপরের জন্য পারফেক্ট না।দুজন না চাইতেই দুনিয়া পেয়ে গেছে তো তাই জানে না একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে স্ট্রাগল করতে হয়।তখন ওদের কথায় রাজি হয়ে ঘটা করে বিয়ে না দিলে আজকের এই দিন দেখতে হত না।
-তাহলে আমি কি করতাম বলো?
-পাছায় লাথি দিয়ে ছেলেকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া উচিত ছিল। চাকরি পেয়েছিস এখন নিজে বাড়ি-গাড়ি করে টাকা জমিয়ে বিয়ে কর।বাপের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে বউয়ের জন্য লাখ টাকা লেহেঙ্গা কিনতে সবাই পারে। নিজের টাকায় একটা বিয়ে করতে হলে বুঝত ঠেলা।কত ধানে কত চাল!
ফেসবুকে ওদের বিয়ের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।ওদের ছবি,ভিডিওর কমেন্টবক্সে চমৎকার সব শুভকামনা।বেস্ট কাপল,কাপল অব দ্য ইয়ার।অবশেষে ভাইয়া-আপুর প্রেম পরিণতি পেল!কে বলবে হাসোজ্জ্বল চেহারায় কপোত-কপোতীর ছবিগুলো স্রেফ অভিনয় ছিল।ঋনের টাকা প্রতিমাসে একটু একটু করে শোধ করি আর আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি ওদের বিয়েটা যেন এযাত্রায় বেঁচে যায়। জানি না,সৃষ্টিকর্তা এই পাপী বান্দার মোনাজাতে সাড়া দেবেন কী না!তবু সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের প্রার্থনা চিরকালই মঙ্গলময়।
দুই বছর পর-
আমি এবং নেয়ামত সাহেব কোর্টের বারান্দায় বসে আছি। আজ শৈশব এবং মেঘার ফাইনাল ডির্ভোস হবে। মেঘা এক বছর ধরে বাপের বাড়িতে ও শৈশবের চেহারা পর্যন্ত দেখতে চায় না। নেয়ামত সাহেব বললেন,
-ভাইসাব,আমি আমার মেয়েকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। বিয়ে ব্যাপারটা ছেলেখেলা নয়।কিন্তু মেয়েটা এতটাই বেয়াদব,বাবার কথা শুনল না।আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নাই। আমি জানি মেঘাকে আপনারা যত্নের ত্রুটি করেন নাই।
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
-সব দোষ আমার কপালের ভাই।ছেলেটাকে প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারি নাই।তাই ও মেয়েদের সম্মান করতে জানে না।
দুজন সর্বস্বান্ত বুড়ো কোর্টের বারান্দায় হাতল ভাঙা চেয়ারে নীরবে বসে রইলাম।ভিতরে তালাকের প্রক্রিয়া চলছে।ব্যাংকে এখনও আমার দুই লাখ টাকা ঋণ আরো দেনমোহর পরিশোধের আরো পাঁচ লক্ষ টাকা যুক্ত হল। নেয়ামত মেয়ের বিয়েতে পেনশনের অধিকাংশ টাকা খরচ করে নিঃস্ব হয়েছেন। মেয়ের চিন্তায় গত এক বছরে দুইবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন। ডির্ভোসি মেয়েকে নিয়ে সমাজের কাছে কি বলবেন তা নিয়ে আরো দ্বিগুণ চিন্তা হল।
বহুবছর আগে একটা কবিতায় পড়েছিলাম,"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে'। সন্তানকে দুধ-ভাত খাওয়ানোর আগে কি উপায়ে গরু থেকে দুধ পাওয়া যায় ধান থেকে ভাত হয় তা শেখানো জরুরি। নয়ত দুধভাত খেয়ে থালায় লাথি মারত দু'বার ভাববে না।কেননা না চাইতে যা পাওয়া যায় তা চিরকালই মূল্যহীন, যেমন মূল্যহীন ওদের কাছে বাবা-মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা।
হাবিবা সরকার হিলা
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫০
জটিল ভাই বলেছেন:
জটিলবাদ। আপাতত এছাড়া কোনো বিকল্প দেখছি না।
২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩৯
অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: অথচ অনেকে প্রেম করতে পারেনি বলে কত আফসোস !
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:০০
জটিল ভাই বলেছেন:
দিল্লী কা লাড্ডু, কেউ খাইয়া পস্তায়, কেউ না খাইয়া পস্তায়!
মন্তব্যে জটিলবাদ জানবেন প্রিয় ❤️
৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩২
শেরজা তপন বলেছেন: যুগের হাওয়া মাইনা লইতে হইবে।
পড়েছিল আপনার সোর্স থেকে।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৩
জটিল ভাই বলেছেন:
আন্তরিক জটিলবাদ প্রিয় ভাই
আগের পোস্টে আপনাকে যা বলতে চেয়েছি, আশা করি ভুল বুঝেন নাই ❤️
৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৭
শেরজা তপন বলেছেন: মন্তব্যের উত্তর দেখে আসেন।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৪
জটিল ভাই বলেছেন:
প্রিয় বড় ভাই, ক্ষমা করবেন। আমি আমার লিখা পূর্বের পোস্টে আপনাকে বলা কথাগুলো সম্পর্কে বুঝাতে চেয়েছিলাম ❤️
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪৭
অপ্সরা বলেছেন:

আপাতত আমার বড়ই সৌন্দর্য্য ড্রাই ফ্রুট রোজমেরী ল্যামন টি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো!!!