নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিনি জুলিয়েট রোজারিও

রিনি জুলিয়েট রোজারিও › বিস্তারিত পোস্টঃ

গিফট

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০২

মাত্র মিনিট দশেক আগে আমার জীবনে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে গেছে। শুধুই “আশ্চর্যজনক” বললে ঘটনাটাকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়ে যাবে। বলতে হবে, “অত্যন্ত এবং ভীষণ রকমের আশ্চর্যজনক একটা ঘটনা”। মোটামুটি “হাড় কিপ্টে” উপাধিপ্রাপ্ত আমার টিউশন ছাত্রের মা আমাকে একটা শাড়ি গিফট করেছেন। বাইরে সেই মুহূর্তে বসন্তের বাতাস। আমি দরজা খুলে বাইরে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে দাঁড়াতেই ফারহান, আমার এইচ এস সি পরীক্ষার্থী মহাশয়তান ছাত্র, দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আমার হাতে শাড়ির একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
- ম্যাডাম ম্যাডাম, মা আপনাকে এটা দিতে ভুলে গিয়েছেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি রোবোট হয়ে গেলাম এবং রোবোটের মত বেকুব গলায় থেমে থেমে উচ্চারণ করলাম,
- তোমার – মা – এটা - আমাকে – দিয়েছেন ?
ফারহান একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে প্যাকেটটা ঢুকিয়ে আমার হাতে আবার দিয়ে বলল,
- জ্বি, আপনাকেই দিতে বলে গিয়েছেন।
যেই মহিলা কখনোই মাসের বেতন সেই মাসে দেননা, সেই মহিলা কিনা আস্ত একটা শাড়ি আমাকে গিফট করলেন, তাও আবার মাসের মাঝখানে কোন কারণ ছাড়াই। ব্যাপারটা হজম করতে বেশ সময় লাগছিল, আবার কারনটা জিজ্ঞাসা করতেও ভীষণ লজ্জা লাগছিল। অভাবী মস্তিষ্ক বেশিমাত্রায় ভাবাভাবিতে অভ্যস্ত নয়, এখনই আরেকটা টিউশনিতে যেতে হবে, দ্রুত পা চালানোর তাগিদ অনুভব করলাম। কিন্তু পা বাড়াতেই ফারহান আবার ডাকল,
- ম্যাডাম, পরশুদিন আমার বার্থডে।
- ওহ তাই নাকি, হ্যাপি বার্থডে।
- আজ না ম্যাডাম, পরশুদিন, বাসায় এসে উইশ করবেন।
কি শয়তান বাপরে বাপ। বেকুব নাম্বার ১০ হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। ছেলেটা আমাকে বোকা বানাচ্ছে কিনা এটা ভেবে এরই মধ্যে এক ফাঁকে জিনিসটা দেখে নিয়েছি । শপারস ওয়ার্ল্ডের প্যাকেট। যেসব দোকানের দিকে তাকাতেও স্পর্ধার প্রয়োজন হয়, নিঃসন্দেহে সেইসব দোকানগুলোর মধ্যে একটি । আশ্চর্যজনকভাবে শাড়িটাও আমার প্রিয় রঙের। সময় যতই গড়াচ্ছে মনে হচ্ছে, শাড়িটা নেয়া আমার একদমই উচিত হয়নি। ফেরত দেয়াটাও অভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে। ভদ্রমহিলা জন্মদিনের দাওয়াত ও শাড়ি দুটোই নিজে না দিয়ে ছেলের হাত দিয়ে কেন পাঠালেন, এত দামী শাড়িই বা কেন দেওয়া হলো, এইসব রহস্য সারারাত এবং পরেরদিন ভেবেও উন্মোচন করতে পারলাম না।
দুটো টিউশনি আর একটা খন্ডকালীন চাকরী যার পুরো পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন, তার পক্ষে একটা দামী গিফট ম্যানেজ করা অকল্পনীয়ই বটে। হলও তাই। সারাটা দিন হ-য-ব-র-ল চিন্তা করেও ফারহানকে দেওয়া যায় এরকম একটা যুতসই গিফটের নাম মনে আসলো না। “কি করি, কি করি, কি কিনি, কি কিনি” করতে করতেই রাত ১২টা বেজে গেলো। শয়তানটাকে বার্থডে উইশ করা উচিত। ১২টা ১ মিনিটে “হ্যাপি বার্থডে” মেসেজ পাঠাতেই ফাজিলটা সাথে সাথে যে রিপ্লাই দিলো তাতে আমার বাকি রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেলো।
- থ্যাঙ্কুটা এখন দিবোনা ম্যাডাম, পাওনা থাকলো। আগামীকাল শাড়িটা পড়ে আসলে পাবেন। আর একটা অনুরোধ ম্যাডাম, প্লীজ কোন গিফট আনবেন না। কারণটা পরে বলবো।
- অনেক ফাজলামি করছো। এরকম শয়তানি করলে আমি আসবোই না।
- প্লীজ ম্যাডাম, এরকম করবেন না । সামনে আমার এক্সাম না ? আপনি না আসলে আমি ফেল করবো তো।
কত্ত ফাজিল। মিনিটে মিনিটে ফাঁপরের উপর রাখে। যেন ও না, আমিই ওর ছাত্র। লাইফে এত পেইন আর কেউ দিয়েছে বলে আমার মনে পড়েনা।
পরেরদিন নীল শাড়িটা পড়ে, দরকারের চেয়ে বেশি সাজগোজ করে ওদের বাড়িতে গেলাম। ড্রয়িংরুমে আগে থেকেই বসে থাকা ফারহানের মা আমাকে দেখে চোখ কপালে তুলে বললেন,
- বাহ শাড়িটা তো সুন্দর, কোত্থেকে কিনলে ? সাজগোজও করেছ ? দারুন দেখাচ্ছে তোমাকে।
ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দেখি মহা ফাজিলটা রুমের ভিতর থেকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছে ।
- সরি ম্যাডাম আজকে আমার বার্থডে না। শাড়িটা আসলে মা দেননি , আমিই আপনাকে ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে গিফট করেছি। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে, ম্যাডাম।

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৫

Palash Talukder বলেছেন: ভাল রাগলো

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে :)

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১১

এস নবীন (সম্রাট) বলেছেন: আজব গিফট! আপনার ছাত্র সত্যিই আপনাকে ফাপোরের জালে জড়িয়েছে।দারুণ..........

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: হা হা হা

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২২

স্বপ্ন ও ভালোবাসা বলেছেন: ওয়াও ....! দারুন গল্প........ অনেক ভালো লেগেছে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৫

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ :)

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৭

সুমন কর বলেছেন: হাহাহা.......শেষটা অন্যরকম ভেবেছিলাম !! আপনার লেখা শেষটাই ভালো লাগল। পোস্টে +।

আপনি যখন অন্য কারো'র মন্তব্যের প্রতি উত্তর দিবেন। তখন নিচের ছবির মতো সর্ববাম পাশের এ্যারোতে ক্লিক করে জবাবটির উত্তর দিবেন। তাহলে উনি জানতে পারবেন।


২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৩

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, সুন্দর মন্তব্য এবং দরকারী একটা বিষয় জানানোর জন্য :)

৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৯

দ্যা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলেছেন: হা হা হা, আসলেই চমৎকার একটা গল্প! অবশ্যই আপনার ছাত্রের ফাইজলামির প্রশংসা না করে পারছি না, তবে ম্যাডাম এত বোকা হলে কি চলে? ;)

শুভ কামনা জানবেন!

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪২

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: ইতা এক বোকা ম্যাডামের গল্প। হা হা হা। আপনাকেও শুভকামনা :)

৬| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৬

ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: খুব ভাল খুব চমৎকার ! কোনটা বলুন তো ? শাড়ীটা না কি আশ্চর্য ঘটনা টা ? একটাও নয় ম্যাডাম । চমৎকার আপনার ঘটনা লেখার কৌশলটা ।।। চমৎকার গল্প লিখতে পারেন তো দেখছি । আমি তো পারি না । আমি হলে বড়জোড় দু চার লাইনের কবিতা লিখতাম । লিখতামঃ লীলশাড়ীতে সজ্জিতা সুন্দরী
লীলাঞ্জনা না কি নাম তার
নীল আকাশের তলে সবুজ ঘাসের বুকে দাঁড়িয়ে একা, রক্তজবা দু'ঠোটে গুনগুনিয়ে গায় কার নামে গান..... উতলা মন -উতলা প্রাণ... কার তরে হায় চাতকপ্রায় অপেক্ষমান বাসন্তিক বিকালে .....চঞ্চল শাড়ীর নীলাঞ্চল তার উড়ে উড়ে পড়ে বারে বারে, বসন্ত বয়সের বসন্ত বাতাসে... শান্ত শোভন সোনালী বিকালে ।। হাঃ হাঃ হাঃ..... ।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪৭

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, দাদা।

বাহ আপনার কবিতার হাতও তো দারুন। শুভকামনা আপনাকেও।

৭| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৪

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: মহাফাজিল ছাত্রের লাস্ট মেসেজে ম্যাডামের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? =p~
দারুণ গল্প। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট ভাল লাগল।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪৯

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: কিছু কথা থাকনা গোপন । হা হা হা। ধন্যবাদ অফুরান। :)

৮| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
++++++

নিয়মিত ব্লগিং করুন।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৫

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ দাদা, এত্তোগুলা পয়েন্টের জন্য :)

৯| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭

মহামানব রেহান বলেছেন: কাকতালীয় ভাবে আমার একমাত্র বদ ছাত্রীটার সাথে গিফটের ব্যপারটা মিলে গেছে ।মেসেজ এর বদলে একটা চিরকুট ছিল আমার গিফট প্যাক এ । তবে ছাত্রীর মা অনেক ভালো মনের মানুষ ।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৭

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: ভাইয়া কি ভ্যালেন্টাইন গিফট পেয়েছিলেন ?? :)

১০| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: হা হা আমারও প্রায় একরকম একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তবে আমার উপহারটা ছিল থ্রিপিস আর গিফট ছাত্রীর কিপটা মা নিজেই করেছিলেন।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: আপু, ছাত্র/ছাত্রীর কিপটা মায়ের কাছ থেকে গিফট পাওয়ার আনন্দই আলাদা, সেটা যাই হোক না কেন। হা হা হা।

১১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মহা ফাজিল ছাত্র!! :P

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: লাইফ একেবারে ছেড়বেড়া, কি বলবো ।

১২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: বিশাল সারপ্রাইজ শিক্ষকের জন্য। কারো কাছ থেকে গিফট পেতে মন্দ লাগে না তবে এরকম গিফটের জবাবে কি বলা উচিত আমার মাথায় কাজ করছে না।
ভালো লেগেছে লেখা।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪২

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: নিঃসন্দেহে বিশাল সারপ্রাইজ। ধন্যবাদ আপু ।

১৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২

আহা রুবন বলেছেন: গল্প শেষ হবার পরও পাঠকের আগ্রহ শেষ না হওয়া, লেখকের বড় সার্থকতা। আর বলতেই হয়, আপনার গল্পের হাত বেশ পাকা। অনুরোধ--নিয়মিত হোন।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি ব্লগে, পত্রিকায় অনিয়মিতভাবে লিখি। আপনাদের বিপুল উৎসাহ আমার জন্য অনেক বেশি অনুপ্রেরনাদায়ক। শুভকামনা আপনার জন্য।

১৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর গল্প পড়ে শেষ করে দিলাম কিন্তু শেষ হয়নি ঠিকি বলেছেন আহ রুবন ভাই । অাপনার সু-স্বাস্থ্য কামনা করছি।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭

রিনি জুলিয়েট রোজারিও বলেছেন: অনেক সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন আপনিও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.