![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাসটা আসতে দেখে মেয়েটি বাসে উঠবে বলে এগিয়ে গেল। আমিও যথারীতি তার পিছু নিলাম। যখন দুজনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সে আমাকে হুঙ্কার ছেড়ে বাসে উঠতে বারন করেছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমি তার পিছু পিছু বাসে উঠে পরলাম। বাসটা ছোট হলেও, প্রায় ফাঁকাই বলা চলে, তেমন কোন ভিড় নেই। দুচারজন এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। মেয়েটি শেষের সিট গুলো ছেড়ে দিয়ে তার সামনের জানলার পাশের সিটে বসল। আমি তার পাশে বসতে গেলে, সে চোখ দিয়ে এমন ভঙ্গি করল, যেন এক্ষুনি আমাকে ভস্ম করে দেবে। আমি ভস্ম হবার ভয়ে, শেষের সিটের মাঝখানে বসলাম। মেয়েটি নিজের ব্যাগ থেকে হেডফোন বের করে কানে গুজে গান শুনতে শুরু করল। আমাদের বাস, বাস স্ট্যান্ড ছেড়ে চলতে শুরু করল। অনেকক্ষন দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই। আমি শুধু মেয়েটির দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে বসে আছি। সে আঁড় চোখে আমায় দেখছে, কিন্তু আমাকে বুঝতে দিতে চাইছে না যে সে আমাকে দেখছে। আমার উপস্থিতি তার শ্রুতি মধুর গান শোনায় বাঁধ সাধছে। বাসটি ইউনিভার্সিটির চার নম্বর গেটের সামনে যখন সিগন্যালে দাঁড়ালে পরে, তখন মেয়েটি কান থেকে হেডফোন খুলে বিরক্ত মুখে বলল-
-“দেখ, তোমার বাড়ি পৌছাতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। এই বাসটা অনেক রাস্তা ঘুরে যায়। এখনো সময় আছে তুমি নেমে যাও”।
আমি বললাম-“নামার জন্য তো আজ উঠিনি। আজ আমি তোমার সাথে যাবই”।
-“দেখ বাচ্চাদের মতো পাগলামি করো না। আমার এসব একদম ভাল লাগে না। এক্ষুনি নেমে যাও বলছি”।
মেয়েটা বকল আমায় অথচ গায়ে লাগল বাসের। রাগের চটে উনি গর্জন করে চলতে শুরু করলেন। মেয়েটি দেখল এখন আর আমাকে নামানো যখন সম্ভব না, তখন আর দূরে বসে থেকে লাভ কি? ওই জানলাটা ছেড়ে দিয়ে একদম শেষের সিটে এসে জানলার পাশে গিয়ে বসল। আমি দূরে সরে বসে আছি দেখে বলল-
“এবার কি নেমতন্ন করে ডাকতে হবে নাকি?”
আমি বললাম
-“না, এই তো আসছি”।
একদম মেয়েটির গা ঘেষে বসলাম। মেয়েটা আবারো কানে হেডফোন গুজে বসল। সন্ধ্যা বেলার বাতাসে, তার দুকানের পাশের চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে। সে বার বার নিজের হাত দিয়ে চুল গুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে। আমি তার দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে বসে আছি। কোন কথা বলছি ন। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে বাসে গা ঘষা ঘষি করে যাচ্ছি। বুকটা কেমন যেন ঢিপ ঢিপ করছিল। কেমন এক পুলকে শরীরে বিদ্যুৎ খেলছিল। ঘাড়টা ব্যাথা ব্যাথা করলেও, তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম। গালটা কি সুন্দর নরম। চোখে কি সুন্দর কাজল পরেছে। ঠোঁটটাও বেশ লাগছে। তার পরে চুল গুলো যখন হাওয়ায় উড়ছে। উফ! সে এক দারুন দৃশ্য। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে, মেয়েটি হেডফোন খুলে আবারো বিরক্তি ভরে আমায় বলল-
-“এরকম হাঁ করে, বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন?”
-“না মানে! তোমাকে দেখছিলাম”।
-“কেন আগে কোন দিনও দেখনি। সবার সমানে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকবে না। আমার এসব একদম পছন্দ নয়। যত সব বোকা বোকা”।
-“তাহলে হা বন্ধ করে তাকাই?”
-“কি?”
-“না, মানে তুমি শুধু গানই শুনছ, কথা তো বলছ না। তাই আমি আর একা একা বসে কি করব। তাই ভাবলাম তোমাকেই দেখি”।
-“এই সব ফালতু কথা বলে কোন লাভ। এই যে তুমি দুম করে আজ বাসে উঠে পরলে, তোমার বাড়ি ফিরতে কত রাত হবে জান?”
আমি জিঞ্জেস করলাম-
-“কত?”
-“অন্তত এগারোটা বাজবে। থাকত অজ পাঁড়া গায়ে। শহরে তো বাড়ি না। তার উপর রাস্তায় যদি জ্যাম থাকে তাহলে হয়ে গেল”।
-“আচ্ছা, উঠে তো পরলাম; কিন্তু কোথায় নামলে সুবিধা হবে বল তো?”
-“কিসের সুবিধা”।
-“না মানে ট্রেন ধরার। আমাকে তো আবার বাড়ি যাওয়ার জন্য, ট্রেনও ধরতে হবে; তাই না?”
-“ইস, এর জন্যে তোমাকে বারন করছিলাম উঠো না, উঠো না। শুনলে না আমার কথা। এই বাসটা তো আবার স্টেষানের পাস দিয়েও যায় না। চল এখানে নেমে যাই। অন্য বাসে উঠব”।
-“আরে না, না, থাক। ফালতু তুমি কষ্ট করতে যাবে কেন? আমি চলে যাব। তুমি শুধু বল কোথায় নামলে সুবিধা হবে। আমি তোমার বাড়ির ওখানেই নামি?”
-“একদম না। আজকে আমার বয়ফ্রেন্ড আসবে আমাকে নিতে। তোমাকে যদি আমার সাথে দেখে তো তোমার খবর আছে”।
-“তোমার বয়ফ্রেন্ড কে কি আমার থেকে ভাল দেখতে?”
-“হ্যাঁ, ভাল দেখতে, আর ভাল শুনতেও। আর শোন, তুমি যেমন বাচ্চাদের মতো বিহেভ কর, ও মোটেও সেরকম করে না”।
-“হ্যাঁ, বুড়োরা কি আর বাচ্চা হতে পারে নাকি?”
-“কি, কি বললে তুমি”।
কেস খেয়ে ধরা পরার ভয়ে বললাম।
-“কই, কিছু বলিনি তো। আমি তো মনে মনে কথা বলছিলাম। জানো তো ছোটবেলা থেকেই আমার মনে মনে কথা বলা অভ্যাস”।
সে মুখে কিছু না বলে, চোখ নাক মুখ ফুলিয়ে আমার উপর বিরক্তি প্রকাশ করল। আহা! সে বিরক্তি যে কোন প্রেমিকের হৃদয়ে ঝড় তুলতে যথেষ্ট। অনেকক্ষন দুজনে চুপচুপ। এখন আর হেডফোনটা তার কানে নেই। এমনি জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বসে আছে। বাসে এখন ভালোই ভিড়। বাসটা একটা গলির রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে। আমি মফসলের ছেলে, শহরের রাস্তা ঘাট কিছুই ভাল মতো চিনি না। কিন্তু তাতে কোন টেনশান নেই। কারন পাশে যিনি বসে আছেন, মনে হয় না তিনি খুব একটা নির্দয় হবেন। মাঝ রাস্তায় আমায় ছেড়ে দিয়ে পালাবেন না নিশ্চই। অনেকক্ষন নিরাবতা পালানের পর, মৌনতা ভেঙ্গে প্রশ্ন করলাম-
“আচ্ছা আমার ব্যাপারে কি ভাবলে?”
-“তোমার ব্যাপারে মানে?”
-“মানে আমি যে তোমায় বললাম। আমার তোমাকে ভাল লাগে!”
-“দেখ, আমি তোমাকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আমি রানাকেই ভালবাসি। আর ওকেই বিয়ে করব। দুবছর পর ওর সাথে আমার বিয়ে হবে”।
-“কিন্তু, তুমি যে সেদিন আমায় বললে, তোমার ওকে পছন্দ নয়। ও নাকি তোমার সাথে জোড়াজুড়ি করে। তোমার উপর নিজের জোড় খাটায়”।
-“তাতে কি হয়েছে, তার জন্য তো আমি ওকে ছেড়ে দিতে পারি না”।
-“আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার ওকে ছাড়তে হবে না। দেখ, আমিও তোমায় ভাল করে চিনি না, তুমিও আমায় ভাল করে চেন না। চল তোমাকে আমার সাথে প্রেম করতে হবে না। কিন্তু আগে তুমি আমাকে চিনে নাও, জেনে নাও। আমি কে, আমি কি কাজ করি, আমি আদৌ ভাল কিনা, আমার কোন বদ অভ্যাস আছে কিনা। দেখ, তুমি নিজেই বললে তোমার হাতে দুবছর সময় আছে। এই দুবছরে তুমি আমাকে দেখে নাও”।
-“প্রথম প্রথম সবাই ভাল থাকে। যেই মেয়েটা ফাঁদে পরে যায়, তখনই আসল রূপটা বের হয়ে আসে। তখনই সমস্ত জোড়া জুড়ি শুরু হয়। তুমি জান, রানাও প্রথম প্রথম আমার সব কথা শুনত। কিন্তু এখন আমি কিছু বলতে গেলে, পাত্তাও দেয় না। আমাকে সব সময় ওর কথা শুনতে হবে। ওর মতো করে চলতে হবে। ও যেখানে যেতে বলবে সেখানে যেতে হবে। যেখানে যেতে বারন করবে সেখানে যেতে পারব না”।
-“আরে সেই জন্যে তো বলছি। তুমি আগে আমায় চিনে নাও, জেনে নাও। তখনই তো বুঝবে। আমি ভাল না খারাপ”।
-“প্রথমে সবাই ভাল, পরে সবাই খারাপ হয়ে যায়”।
-“দেখ আমি সত্যি বলছি। আমিও আগে একটা মেয়েকে ভালবাসতাম। সেও তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি তো তাকে কখন দোষ দেইনি। তার আমাকে পছন্দ হয় নি তাই সে চলে গেছে। কিন্তু তার জন্য....
-“আমার ও তোমাকে পছন্দ না!”
-“কিন্তু কেন? আমাকে কি দেখতে খারাপ”?
-“না!”
-“তবে? আমার চরিত্রে কোন দোষ?”
-“না”
-“তবে?”
-“দেখ, তোমার আর আমার মধ্যে মাত্র তিন বছরের ডিফারেন্স। আমার বাড়িতে তোমাকে মেনে নেবে না। আমার সব জামাই বাবুরা দিদিদের থেকে সাত আট বছরের বড়। আমাকেও তাই বেশি বয়সী ছেলেকে বিয়ে করতে হবে! আমি তোমার সাথে প্রেম করতে পারব না”।
হায় হায়, পোড়া কপাল আমার। বয়েস কম বলে “রিজেক্ট” হয়ে গেলাম? কান্না পাচ্ছে। যাঃ এমন ক্লজে কাউকে কখন রিজেক্ট হতে শুনিনি। আমিই বোধ হয় প্রথম। হাল ছেড়ে দিলাম। বললাম –
“ঠিক আছে। তোমার যা ভাল মনে হবে তাই করবে। তোমার হাতে দুবছর সময় আছে। ভেবে দেখ। তুমি বলেছিলে তোমার ওকে পছন্দ না। তুমিই আমাকে স্পেস দিয়েছ তোমার কাছে আসার। নইলে আমি তোমার কাছে ঘেঁষতাম না। হ্যাঁ, আমার তোমাকে ভাল লাগে। তুমি সুযোগ দিয়েছ বলেই আমি তোমাকে কথাটা বলেছি। না হলে, হয়ত তুমি কোন দিনও এই কথাটা জানতেও পারতে না। আমি জানি তোমাকে অনেকে ভালবাসে। তাদের দলে আমিও। অনেকদিন পর, আবার তুমি আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছ। আমি তোমাকে নিজের মনের কথাটা বলেছি। ডিসিশান সম্পূর্ণ তোমার”।
এই বিষয়ে আর কোন কথা বলল না মেয়েটি; শুধু বলল,
-“শোন! তুমি এখানে নেমে যাও। না হলে তোমার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে আর রাস্তায় সমস্যা হতে পারে”।
আমি বললাম-
-“আচ্ছা!আবার কবে এরকম এক সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাবো?”
-“আর কোনদিনও না”।
-“কেন?”
-“এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই”।
-“যাবার আগে তোমার সাথে হ্যান্ডশেক করতে পারি”।
সে একটু করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। জানি না, ঠিক কি কারনে, তবে দৃষ্টিটা সত্যিই করুন ছিল। বোধহয় আমার জন্যে মায়া হচ্ছিল।
-“কি গো! যাবার আগে তোমার হাতটা একটু ধরতে দেবে?”
সে ঘাড় বেকিয়ে হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত করে, হাতটা আমার হাতের দিকে বাড়িয়ে দিল। আমিও আলত করে ধরলাম। খুব বেশি ধরবার সুযোগ হয় নি এই হাতটা। হাতে গোনা কয়েকবার সে আমাকে ধরতে দিয়ে ছিল। তার পরে আর কোন দিনও সে আমাকে তার হাতটা আর ধরতে দেয়নি। আমি বাস থেকে নামার আগে গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। নামার ইচ্ছে ছিল না। মনে হচ্ছে ওর সাথে চলে যাই। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ফিরে তাকাতেই মুখটা জানলার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে, কানে হেডফোনটা গুজল। আমিও বাস থেকে নেমে, বাসটার চলে যাওয়া দেখতে থাকলাম।
০৯ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:২৬
কবি কালিদাশ বলেছেন: অন্যের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার আগে, সে একজন মানুষ। তাই মানুষের সঙ্গে হাত মেলানোই যায়।
২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:১২
রাজীব নুর বলেছেন: আধুনিক গল্প।
এ যুগের ছেলে মেয়েদের প্রেম ভালোবাসা আমি বুঝি না।
০৯ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:২৭
কবি কালিদাশ বলেছেন: আমিও বুঝি না। এরা প্রেম করে এক জনের সঙ্গে, বিয়ে করে অন্য কাউকে।
৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৬
ইসিয়াক বলেছেন: সুন্দর।
০৯ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:২৬
কবি কালিদাশ বলেছেন: ধন্যবাদ ইসিয়াক।
৪| ২২ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:১৩
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: আজব তো
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ১০:২৯
পবিত্র হোসাইন বলেছেন: অন্যের গার্লফ্রেন্ড হাত ধরাটা কি ঠিক হলো ?