নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক গল্পঃ পরভৃতা (৬)

২৮ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:১৫

৫ম পর্ব


মানুষের জীবন বহতা নদীর মতো বয়ে যায় সময়ের স্রোতে, বয়ে যায় ক্ষণ, স্মৃতি হয়ে রয়ে যায় এক জনমের যত ভালোলাগা,ভালোবাসা, প্রাপ্তি ,অপ্রাপ্তি,মান,অভিমান, যশ, খ্যাতি, কলঙ্ক, পাওয়া না পাওয়ার মুহূর্তগুলো।

কোন কোন স্মৃতি গভীরভাবে জাগ্রত থাকে আবার কোন কোন স্মৃতি কালের অতলে হারিয়ে যায়।

কামরুন্নাহারের জীবনের অন্ধকার একটা অংশ আছে। কিন্তু সেই অংশকে কখনোই তিনি উন্মোচিত করতে পারেন নি নিজ স্মৃতি দ্বারা । আবছা আবছাভাবে তিনি অনুধাবন করতে পেরেছেন যদিও কিন্তু পুরোপুরিভাবে ধরা দেয়নি তাকে সেই সব দুঃসহ ক্ষণগুলো কখনই ।

কি সেই স্মৃতি? কি এমন ঘটনা ? যা ফিরে আসে ছায়া মত, আবার ধরা না দিয়ে ফিরে যায় অলক্ষ্যে।

নিজের জন্য, নিজেকে জানার জন্য তিনি অনেকবার সেই ছায়াটুকুকে ধরবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু কখনো স্মৃতি বিস্মৃতির সেই অংশটুকুতে আলো ফেলে তাকে উন্মোচিত করার সৌভাগ্য তার হয়নি।
তিনি এটুকু জানেন প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্নিঝড়ে তিনি নিঁখোজ ছিলেন অনেকটা দিন । এরপরের ঘটনাপ্রবাহ আরো ভয়ঙ্কর ছিল কিন্তু গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া সে ঘটনার স্বাক্ষীও নেই কোন। এখন কাকে শুধাবেন কামরুন্নাহার? কি হয়েছিল সেই সময়।

রওনক সিকদার সুনিপুণভাবে সে সব ঘটনাকে আড়াল করতে পেরেছেন কিন্তু মুছে ফেলতে পারেননি চিরতরের জন্য । সত্যকে সাময়িক ভাবে অস্বীকার করা যায় কিন্তু মুছে ফেলা যায় না কখনো।



স্নেহলতাদের বাড়ি থাকাকালীন পলাশ জরুরী ফোন কল পেয়ে উঠে গেছে অনেকটা আগে। অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর জানার ছিলো কামরুন্নাহারের ,যা পলাশ না এলে জানা সম্ভব নয়। পলাশের অপেক্ষায় তিনি এখনো বসে আছেন স্নেহলতাদের বাড়িতে আর এই সময় নানা ভাবনা এসে তার মনজগতকে গ্রাস করছে অস্বস্তিকরভাবে।

কেন তাকে অচেনা অসুস্থ মেয়েটির কাছে আনা হয়েছে। মেয়েটির ঘরে টাঙানো ফটোগ্রাফের সাথে তার সম্পর্ক কি?
স্নেহলতা মেয়েটি কে? তার পরিচয় কি? পলাশের সাথে তাঁর পরিচয় কীভাবে? তাকে অপ্রত্যাশিতভাবে এখানে টেনে আনার কারণ কি?

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়, অথচ পলাশের খোঁজ নেই, এদিকে স্নেহলতা আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার শ্বাসকষ্টের মাত্রা বেড়ে গেছে।
কিছুক্ষণ আগে কামরুন্নাহার তার বুকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। সে সময়টাতে তিনি অসহায় বোধ করছিলেন, মানুষের বিপদগ্রস্ততা তাকে ব্যকুল করে তোলে আর এই মেয়েটি তো তাকে......। কি করতে হবে বুঝতে পারছিলেন না।সেই মুহুর্তে স্নেহলতার মা মণি যার নাম চন্দ্রাবতী হনহনিয়ে ঘরে ঢুকে তাকে পাশের ঘরে বসতে বললেন।

বলার ভঙ্গিটাতে বিনয়ের লেশ মাত্র নেই।কেমন যেন কর্কশ আওয়াজ। মানুষের ব্যবহার এমন খারাপ হতে পারে তা তার জানা ছিলো না।অপরিচিত কারো সাথে কেউ এভাবে কথা বলে নাকি? এই মহিলাটিকে কামরুন্নাহারের একেবারেই পছন্দ হয়নি। কামরুন্নাহারকেও চন্দ্রাবতী পছন্দ করছে না বিচিত্র কারণে। বার বার তাকে দেখে বিড়বিড় করছে নিজের মনে। কি বলছেন কে জানে?

কয়েকবার চেষ্টাতে মুঠোফোনে পাওয়া গেল পলাশকে ,পলাশ জানালো সে হাসপাতালে আটকে গেছে ।একটা জরুরি অপারেশন করতে হবে,সেই কারণে ফিরতে দেরি হবে তিনি যেন বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি গিয়ে কথা হবে।

বাড়ি ফিরতে সমস্যা নেই, পলাশ গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। কামরুন্নাহার আর দাঁড়ালেন না যদিও স্নেহলতাকে আরেকটিবার দেখতে তার খুব ইচ্ছে করছিলো। কেন জানি মনে হচ্ছিল ওর পাশে তাঁর থাকাটা খুব জরুরী। কিন্তু চন্দ্রাবতী তাকে সে সুযোগ টুকু দিলো না।

বাসায় ফিরেই তিনি সোজা নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে রইলেন।তাঁর প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা করছে।বুকের মধ্যে ধড়পড় ধড়পড় করছে। অস্থির লাগছে।
সারারাত তিনি নির্ঘুম কাটালেন। সকালেও তিনি দরজা খুললেন না।
বাড়ির কেউ অবশ্য তাঁর খোঁজে এল না । ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সবাই ভীষণ রকম ব্যস্ত। এত খোঁজ নেওয়ার সময় নেই কারো।

পলাশের বাবা কি একটা কাজে তাকে ডেকে পাঠলে কামরুন্নাহার তার সাথে দেখা করতেও গেলেন না ,সাড়াও দিলেন না।

কাজের লোক জানালো কামরুন্নাহার ঘুমাচ্ছেন।

কামরুন্নাহারের মাথায় নানা চিন্তা দুঃশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

তিনি অনেক হিসাবই মেলাতে পারছেন না বার বার ভাবছেন বারবার স্মরণ করার চেষ্টা করছেন। তাঁর জীবনের একটা অংশকে কিছুতেই তার স্মৃতিতে ধরা দিচ্ছে না সেই অংশটুকু।

কেন এমন হচ্ছে? কি আছে ওই অংশটুকুতে? পলাশ কি কিছু জানে? স্নেহলতা কে? ওই মহিলাটি কি ওর মা? ওর বাবা কে ইত্যাদি।
কেন তার চোখে একটি শিশুর মুখ ভেসে উঠছে,অসহায় একটি শিশুর মুখ। এটা কি অন্য কোন জনমের স্মৃতি। না সেতো অন্য কোন জনমে বিশ্বাস করে না। তাহলে?

কেন পলাশ তাকে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল?

এদিকে পলাশ লাপাত্তা। কোন খোঁজ নেই। ফোন বন্ধ।

টানা দুই দিন কেটে গেল দুঃসহ যন্ত্রণায়। আবছা স্মৃতি কিছু ফিরে এসেছে কামরুন্নাহারের ,তিনি বিহ্বল অবস্থায় আছেন খাওয়া দাওয়া গোসল কিছুই করেননি। এ ব্যপারে কেউ তাকে সাধতেও আসেনি। খোঁজ নেবার প্রয়োজনই বোধ করেন নি।

তৃতীয় দিন।
রাত তখন তিনটা। কামরুন্নাহারের ঘর থেকে চাপা আর্তনাদের আওয়াজ আসছে। এমন সময় ঘরের দরজায় দমাদম বাড়ি পড়তে লাগলো।

-ফুফু দরজা খোলো,দরজা খোল ফুফু, আমি পলাশ, জরুরি কথা আছে।
কামরুন্নাহার শুনেও যেন কিছু শুনতে পেলেন না । তিনি আছেন ঘোরে মধ্যে।

-ফুফু দয়া করে দরজা খোল। ফুফু.....
অনেকটা পরে কামরুন্নাহার যখন দরজা খুলল, ভয় পেয়ে গেল পলাশ।

একি এ কে? এত পরিচিত ফুফুকে দেখে সে রীতিমত হতবাক।এমন অচেনা দেখাচ্ছে কেন তাকে?কাপড় চোপড় আলুথালু । চুল এলোমেলো। চোখ দুটো রক্তজবার মত লাল ,দেখলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।

-পলাশ এলে?

-হ্যাঁ ফুফু ,কিন্তু তোমার এ অবস্থা কেন ? কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?

-কোথায় ছিলে? কত খুঁজেছি তোমায়।

-তোমার কি হয়েছে ফুফু?

-কেন ডাকছো বলো? কি দরকার? তাড়াতাড়ি বল আমি ঘুমাবো এখন। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। সারারাত ও জ্বালিয়েছে একটুও ঘুমাতে দেয়নি।

-কে ঘুমাতে দেয়নি? কি বলছো? তুমি এখনি চলো?

-কোথায়?

-স্নেহলতার কাছে?

-এখন গিয়ে কী হবে? সব কিছু কি ঠিক হয়ে যাবে?

-তুমি খবর পেয়ে গেছো?

-কী খবর?

-এই যে স্নেহলতা আর বেঁচে নেই?

-স্নেহলতা আর বেঁচে নেই? তুমি? তুমি ডাক্তার হয়ে ওকে বাঁচাতে পারলে না? কেমন ডাক্তার তুমি?

-মৃত্যুর আগেও তোমাকে বারবার দেখতে চেয়েছিলো।আমি জরুরী কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম। তাই আসতে পারিনি।

-সবাই ব্যস্ত। শুধু আমার ই ব্যস্ততা নেই ।এবার আমি ও চলে যাবো ।

-কোথায় যাবে? কি বলছো এসব। কামরুন্নাহার জ্ঞান হারালেন। পলাশ ছুটে গিয়ে ফুফুকে জড়িয়ে ধরলো।

ততক্ষণে সারা বাড়ি জেগে উঠেছে ,এ কদিন তারা কেউ সেভাবে কামরুন্নাহারের খোঁজ নেন নি। ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো সবাই।
ঘটনার আকষ্মিকতায় সবাই হতবাক। কারো কাছে কোন কিছু পরিষ্কার নয় । কি হলো কে জানে? জানতে উৎসুক সবাই।
পলাশ কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। তার দায়বদ্ধতা অনত্র বাঁধা আছে। সে নিজেও এ ব্যপারে আলোচনা করবে না কখনই স্বার্থপর এই লোকগুলোর সাথে।

চলবে
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
ছবিঃ গুগোল
ফুটনোটঃ পরভৃত ১. /বিশেষণ পদ/ পরপুষ্ট, পরের দ্বারা প্রতিপালিত। ২. /বিশেষ্য পদ/ পরের দ্বারা প্রতিপালিত এইজন্য. কোকিল। /পর+ভৃত/। /বিশেষণ পদ/ স্ত্রীলিঙ্গ. পরভৃতা।
গল্পটি সাত পর্বে সমাপ্ত। আশা করি সবাইকে পাশে পাবো। শুভকামনা।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কষ্ট লাগছে এখন :(

ভালো লাগলো গল্প

২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। শুভকামনা রইল।

২| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৩৪

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন:

পরবর্তী পর্বগুলো পড়তে আমরাও সবাই উৎসুক হয়ে আছি।
দারুণ ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

২৮ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:০২

ইসিয়াক বলেছেন: আগামী পর্বে শেষ হয়ে যাবে ভাইয়া। বেশি বড় লেখা আমি লিখতে পারি না। ধৈর্য থাকে না।

ভালো লেগেছে জেনে অনুপ্রাণিত হলাম।
শুভ কামনা রইলো।

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: এখন আর গল্প না বলে উপন্যাস বলেন। ধারাবাহিক উপন্যাস।

২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন: সামনের পর্বে শেষ। এতো ছোট উপন্যাস হয় নাকি?

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৫৬

ওমেরা বলেছেন: জীবন বড়ই জটিল।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:১৪

ইসিয়াক বলেছেন: আপু পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।

শুভ কামনা সতত।

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৭

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: নাহার ফুফুর ছোট বেলায় নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ঝড়ের প্রকোপে পড়া ও স্মৃতিভ্রম হয়ে যাওয়া এই জায়গায় স্নেহলতার জন্মের একটা যোগ পেতে পারি বলে মনে হচ্ছে। তবে শুরু থেকেই পলাশের ডাক্তারি পড়া নিয়ে উল্লেখ পেলাম না। হয়তো আমার ভুল হতেই পারে।আর সেটাযদি হয়ে থাকে তাহলে স্নেহলতা পলাশের সহপাঠী হওয়ায় তারো ডাক্তার হওয়ার কথা ছিল। যেটা হলে তার দুরারোগ্য ব্যাধির হয়তো আরো একটু ভালো চিকিৎসা হতো। গল্প ভালো হচ্ছে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

শুভেচ্ছা জানবেন।

১০ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৪৪

ইসিয়াক বলেছেন: পরবর্তী পর্ব দিয়ে দিয়েছি প্রিয় দাদা । আশা করি পড়ে জানাবেন কেমন হলো?
ভালো থাকুন সবসময়।

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:০৪

ঢুকিচেপা বলেছেন: আহা বেচারা স্নেহলতা মারাই গেল!!!!

মনে করেছিলাম এ পর্বে জট খুলবে কিন্তু পরের পর্বে যেতেই হচ্ছে।
কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি দেখি মিলে যায় কিনা।

১০ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৪৫

ইসিয়াক বলেছেন: আপনার চিন্তার সাথে মিলল কিনা জানতে পারলাম না। জানাবেন নিশ্চয়।
শুভ সকাল।

৭| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: সামনের পর্বে শেষ। এতো ছোট উপন্যাস হয় নাকি?

হয়। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে। আপনি টেনে টূনে দশ পর্ব করুন। উপন্যাস হয়ে যাবে।

১০ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৪৫

ইসিয়াক বলেছেন: বেশি টানলে আবার ছিড়ে যাবে =p~

৮| ০২ রা এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:১৭

মা.হাসান বলেছেন: পলাশ যে ডাক্তার জানা গেলো। নাহার ফুপুর স্মৃতি তাহলে কি ফিরে আসলো?

১০ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৪৬

ইসিয়াক বলেছেন: চলে আসুন পরের পর্বে। শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.