নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই রকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি যেখানে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা হবে। যেখানে থাকবে না কোন পাপ পঙ্কিলতা।

ইসিয়াক

সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সৎকার

০২ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:১৮

সখিনা ভোর রাতে ঘুমের মধ্যে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেল।
তার পাশে তার আট বছরের ছেলে জামাল শুয়ে ছিল, মৃত্যুর আগে সে পানি পানি করে কয়েকবার ছেলের কাছে পানি চেয়েছে কিন্তু নিতান্ত শিশু জামাল তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । সে তার মায়ের ডাক শুনতে পায়নি। এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে আর হাজারও অবজ্ঞা অবহেলা অবসান ঘটিয়ে সখিনা না ফেরার দেশে চলে গেছে।

জামাল বরাবরই দেরি করে ঘুম ওঠে। এটা তার নিত্য অভ্যাস।সত্যি কথা বলতে খিদে না পাওয়া অবধি সে ঘুম থেকে জাগে না।

বেলা গড়িয়ে গেলে যখন জামাল ঘুম থেকে জাগলো তখন মাকে তারপাশে শুয়ে থাকতে দেখে সত্যি একটু অবাকই হলো। মা তো এত বেলা অবধি ঘুমিয়ে থাকা মানুষ না।এসব ভাবতে ভাবতে মাকে কয়েকবার ডাক দিল,
- মা ও মা ওঠ সকাল হইয়া গেছে তো, উঠবি না মা। ওমা....
নিষ্পাপ জামাল জানে না তার মা আর ইহ জনমে ঘুম থেকে উঠবে না।
মুখের কথায় যখন কাজ হলো না তখন মায়ের শরীর ধরে ঝাঁকুনি দিতে গিয়ে কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হলো। তার মায়ের শরীর তো কখনও এত ঠান্ডা থাকে না।মায়ের কি কিছু হলো নাকি? নানা আশংকায় আরও জোরে জোরে গা ঝাঁকুনি দিতে লাগলো সে,
-ও মা ওঠ।উঠোস না ক্যাঁ? আমার খিদা পাইছে তো।ওমা.....

জামালের ডাকাডাকির শব্দে পাশের ঘরের আলেয়া জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জানতে চাইলো,
- কি হইছে রে জামাইল্লা,
- মাইরে এত ডাক পাড়ি, মায়ে খালি ঘুমায়।ওডে না খালা।
-দুয়ার খোল দেহি কি হইছে।
জামাল দরজা খোলে।
আলেয়া ঘরে ঢুকে সখিনার গায়ে মাথায় হাত দেয়। বুকে কান পাতে নাকে হাত দেয়। তারপর ঝনাৎ করে সরে আসে।অবিশ্বাসের দৃষ্টি তার চোখে মুখে। মুখ দিয়ে তার নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসে,
-হায় আল্লাহ সখিনা তো মইরা গেছে! কেমনে কি! হায় আল্লাহ!

মুহুর্তে কথাটা ছড়িয়ে পড়ল লোকজনে ঘর ভর্তি হয়ে গেল। হায় হায় রব পড়ে গেল।
জামাল ভীষণ রকম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।মা মরে গেছে মানে কি? তার কাছে জন্ম মৃত্যু এসব অস্পষ্ট শব্দ। তাই সে বুঝতে পারছে না ঠিক কি হয়েছে। শুধু এটুকু বুঝতে পারছে তার আর মা ঘুম থেকে উঠছে না।
এদিকে তার ক্ষিদেয় পেটের মধ্যে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।ক্ষুধার কষ্টে জামাল কাঁদতে লাগলো। তবে ক্ষুধার জ্বালা দ্রুতই মিটে গেল।ততক্ষণে আলেয়া কোথেকে ডাল পরোটা এনে দিতেই জামাল মৃত মায়ের পাশে বসে খাওয়া শুরু করলো।
একজন মৃত মানুষের পাশে অভুক্ত এক শিশু নিশ্চিন্তে খাচ্ছে এ দৃশ্যটা সত্যি অদ্ভুত।
জামাল আবারও ভাবে, আসলে সে একটা ব্যাপার বুঝতে পারছে না তার মা আজ কেন এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছে? সবাই বলছে মা মরে গেছে। মানুষ মরে গেলে বুঝি ঘুমিয়ে থাকে? পেট ভরে গেলে জামালের একটু গড়াগড়ি দেওয়ার অভ্যাস। মায়ের পাশে তার একটু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এত লোকের আনাগোনার মধ্যে কি ঘুমানো যায়।

আরেকটু বেলা হতে বস্তির মালিক পক্ষের এক লোক এলো কি হয়েছে আর কে মরেছে জানতে।
লোকটির নাম মুজিদ।এই বস্তির ঘরগুলো সে ই দেখাশোনা করে।
মুজিদ ঘরে এসে জামালকে ডেকে জানতে চাইলো কিছু কথা কিন্তু জামাল তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারলো না। ঘরের মধ্যে জিনিস বলতে একটা তক্তোপোষ আর একটা বাক্স। বাক্সে একটা তালা ঝোলানো। আর একপাশে ঘর গৃহস্থালী কিছু জিনিস পত্র তাছাড়া আর কিছু নেই। মুজিদ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো চারদিকটা ।সে বেশ খানিকটা বিরক্ত।অারও কিছু আশা করেছিল সে।

দেরি হয়ে যাচ্ছে লাশ সৎকার করা প্রয়োজন। কে নেবে দায়িত্ব?
যত সব ঝামেলা।

মুজিদের ঘর পর্যবেক্ষণ শেষ হলে এদিক ওদিকে ভালো করে তাকিয়ে নিয়ে মুখ চেনা কয়েকজনের সাথে কিছু কথা বলল। তারপর কোথায় যেন ফোন দিল। কিছু কথা বিনিময় হওয়ার পরে সে আবার ঘরে ঢুকে আতি পাতি করে কি যেন খুঁজতে লাগলো।মনে মনে সে বেশ হতাশ। খানিক বাদে জামালকে ডাকল,

-ওই পোলা এদিক আয়।

-কি?

-হেই বেডি তোর মা লাগে নিহি?

-হ।

-তোর মায়ে তো মইরা গেছে। বুঝছোস?

জামাল কোন কথা বলে না।চুপ করে থাকে।মরে গেছে এই কথাটা শুনতে তার ভালো লাগছে না।

-কথা কস না কেন? যাউগ্যা চৌকির নিচে ওইটা কি? বাক্স না? বাক্সে কি আছে? জানস কিছু ? দাফন কাফনের তো একটা ব্যবস্থা করণ লাগে নাকি! ঘরে টাকা পয়সা কিছু আছে?

- মায়ে উঠবো না?

মুজিদ পিচ করে দেয়ালের গায়ে এক দলা থুতু ফেলে বলল,
-না উঠবো না।বাক্সটা আন দেহি।জামাল বাক্স টেনে আনল খর খর আওয়াজে। মুজিদকে এই বস্তির সবাই ঘৃণা মিশ্রিত ভয় করে। তারা কেউ ভয়ে ঘরে না এলেও জানালায় কেউ কেউ ভীড় করেছে। কি হচ্ছে বুঝতে চেষ্টা করছে।
মুজিদ হঠাৎ হুঙ্কার দিল
-এই শালা খা*কির পোলারা তোগো কাম কাইজ নাই। যা ফোট।

সব শালাকে একটু দূরে রেখে সুযোগ বুঝে বাক্স খুলল মুজিদ।বাক্স খুলে দেখা গেল তাতে রয়েছে একটা শাড়ী।একটু হাতড়াতেই কিছু গয়নার খোঁজ পাওয়া গেল। সোনা না এমিটেশন বোঝা যাচ্ছে না তবে সোনা হবার সম্ভাবনাই বেশি ।এই সব দেহপসারিনীরা নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে গয়না গড়াতে ভালোবাসে। মুজিদ জানে।

আর শাড়ীটা যে বিয়ের এটা নিশ্চিত। আর আছে একটা পুরান ডায়েরি। এছাড়া আর তেমন কিছু নেই। ডায়েরি দেখে মুজিদ বেশ অবাকই হল।কৌতুহল বশতঃ পাতা উল্টাতে লাগলো সে। ডায়রিতে তেমন কিছু লেখা নেই।দুটো ঠিকানা একটা বসের আরেকটা অজানা তবে......... আর কয়েক পাতা দিনলিপিও আছে।
সখিনা কি তাহলে লেখা পড়া জানতো? তাই তো মনে হচ্ছে। অথচ বোঝা যায়নি এতদিন। ভালো ঘরের মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে। এ কেচ্ছা অবশ্য নতুন না এই বস্তিতে।

আর ঠিকানা যা লেখা সেটাও তো ভদ্র পাড়াই মনে হচ্ছে। এই ঠিকানার সাথে সখিনার কি সম্পর্ক কে জানে?
তবে জানতে হবে। একেবারে না জানলে হবে না।লাশ দাফন কাফনের ব্যপার আছে। ছোট এই ছেলেটারও তো একটা গতি করতে হবে। এক বছরের ঘর ভাড়াও বাকি সমস্যাটাও এখানে। গয়নাগুলো পকেটে পুরে নিল মুজিদ।
এদিকে বস্তির মালিকের সাথে সখিনার সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। অবশ্য এই বস্তিতে সতী চরিত্র কারোই না। যাক মরা মানুষ নিয়ে এসব ভাবনা চিন্তা ঠিক হচ্ছে না ।
গয়নাগুলো যেহেতু হাতানো গেছে তার হাত ধরে কিছু কর্তব্যের দায়ও এসে গেছে। ছেলেটার যদি কিছু হিল্লে হয়। সেই আশায় দুজন অধিনস্তের দায়িত্বে লাশ রেখে একবার ঠিকানা অনুযায়ী তদন্তে বের হল মজিদ নিজে।
দুলাল বলল,
-ওস্তাদ পুলিশরে খবর দেওন লাগবো না?
- আরে না। রোগে মরছে পুলিশ আইয়া কি করবো?
মুজিদ জামালের হাত ধরে বলল
- চ
-কোন হানে?
-যাবি তো।
জামাল আর কিছু না বলে মুজিদের সঙ্গী হলো। বেশ মিশুক ছেলে বলে মনে হচ্ছে।
ঠিক এই সময় এক দোকানদার এসে উপস্থিত হলো ঘ্যান ঘ্যান করে তার দোকানে সখিনার বাকির হিসাব দাখিল করলো।
মুজিদ সেসব পাত্তা না দিয়ে জামালকে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। সে দুতিন জন সহযোগী নিয়োগ করে জামালের হাত ধরে ডায়েরির ঠিকানায় কিছু পাওয়া যায় কিনা খোঁজ করতে গেল। ফোনে কথা হয়েছে বসের সেরকমই নির্দেশ। মুজিদ বসকে চটাতে চায় না।
ভাগ্য আজ সুপ্রসন্ন বলতে হবে।যেহেতু ঠিকানাটা পরিচিত রাস্তার বেশ নামকরা একটা মিষ্টির দোকান।তাই খুঁজে পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হলো না।
কাউন্টারে ভীড় একটু কমতে মুজিদ আর জামাল কাউন্টারে এসে দাড়ালো।
বয়স্ক একটি লোক হোটেল চালাচ্ছেন তিনি মনে হলো খানিকটা বিরক্ত হয়ে আছেন। বয়সের ভারে নূজ্য।
- কিছু কি বলবেন?
-হ
-বলুন।
- এই পোলার মা মইরা গেছে।
ভদ্র লোক একটু বিষ্মিত হলো বটে পরক্ষণেই মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন
-এই খোকার মা মারা গেছে তো আমাকে কি করতে হবে? আমি তো হুজুর মানুষ না যে জানাজা পড়াবো।
- তেড়া কথা কন ক্যান আপনাকে জানাজা পড়াতে হইবো সেই কথা কে কইছে?
- তো এর মা মরে গেছে তাতে আমার কি? ওর মা কি আমার আত্নীয় লাগে?
-দাদু আপনি মুরুব্বি মানুষ কথা একটু ভালো কইরা কইলে লাভ বই ক্ষতি নেই। কি কন?
-তোমার কাছে আমার শিক্ষা নিতে হবে কিভাবে কথা বলতে হবে? খালি বকবক।যতসব ফালতু।
-খামাখা পাঠ নিচ্ছেন কেন? এর মা মরেছে গরীব মানুষ। সাত কুলে কেউ নেই। সৎকার করতে হবে আপনার সাহায্য চাইছি।
- আমি কি এখানে দান ছত্র খুলে বসেছি।যত সব পাগল ছাগল।
-আবার বাঁকা কথা।
নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটা দশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলেন ঝামেলা দূর করার জন্য।
-আপনের নাম কি?
বুড়ো নিজের নাম বলল,
মুজিদ তার হলুদ দাঁত বের করে বলল,
- ভিক্ষা লইতে আসি নাই। লাশ যদি দাফন না হয় আপনের লাইগ্যাই হইবো না। লাশ আইন্যা সোজা আপনের দোকানের সামনে রাইখ্যা দিমুনি।
-আরে আমার এলাকায় এসে আমায় শাসাচ্ছিস তুই, খুব সাহস তো? আমারে হুমকি দেস। কোথাকার কে রে তুই?
মুজিদ আর কথা বাড়ালো না তবে চলেও গেল না।লোক জমে গেছে।
বুড়ো আবার খেঁকিয়ে উঠলো,
-সোজা কথা কানে যায় না, যা,ভাগ এখান থেকে।
-দাদু একটু মাথা ঠান্ডা করুন। জরুরি কথা আছে।সুন্দর করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে মুজিদ। উৎসুক লোকজনকে সরে যেতে বলে সে।
সময় নিয়ে লোকজন সরে যেতেই মুজিদ একটু মনে মনে হাসলো কাহিনী যা আন্দাজ করেছে তা যদি সত্যি হয় বুড়ো এবার ভিমড়ী খাবে। তবে কাহিনি সত্য বলে মনে হচ্ছে।মুজিদ আস্তে করে বলল,
-চন্দনা কে হয় আপনার?
এই একটি কথায় বুড়োর যা চেহারা হলো তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ভাব দেখে মনে হচ্ছে বুড়োর নাক বরাবর কেউ বিরাশি সিক্কার ঘুষি বসিয়ে দিয়েছে। তবে তা নিতান্ত সাময়িক সময়ের জন্য। সে ঝটপট নিজেকে সামলিয়ে নিল।
- কেন? আমি চিনি না ও নামে কাউকে।
- চন্দনা আজ সকালে মাইরা গেছে?
বুড়ো চুপ করে রইলো।কোন কথা বলল না।
মুজিদ আবার বলল,
- আপনে কি তারে শেষ দেখা দেখতে চান? আমার লগে এই পোলা চন্দনার। আমার কথা বিশ্বাস না হইলে এরে জিগান।
বুড়ো কি যেন ভাবল।কয়েকজনকে ডেকে কিছু নির্দেশ দিলেন। তারপর বলল,
- আমাকে কোথায় যেতে হবে? চলুন আমি যাচ্ছি।

অল্প কিছু সময়ের মধ্যে তিনি জামাল ও মুজিদের দেখানো পথ অনুসরণ করলেন।

রাত বাড়ে,গভীর হয়। শাহীন ঢালী দুপুরের পর শুধু একবার ফোন করে জানিয়েছেন উনার আসতে রাত হবে একটু ঝামেলায় আছেন। রাহেলা বেগম যেন চিন্তা না করে। আর এ ব্যপারে কারো সাথে যেন আলাপও না করেন। বাড়ি এসে তিনি সব জানাবেন।

বয়স হয়েছে শাহীন ঢালীর। অনেক কাজ করতে হলো।লাশের সৎকার,দেনা পাওয়া মেটানো,এতিমখানায় জোগাড় যন্ত্র। বাড়ী ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে গেল।এতে অবশ্য ঝামেলা এড়ানো গেল।ছেলে বৌরা সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । শুধু জেগে আছে রাহেলা বেগম।শেষ পর্যন্ত সুস্থ দেহে স্বামীর ফিরে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। দরজা খুলেই জিজ্ঞেস করলেন,
- কোথায় ছিলে সারাদিন? আমি ভেবে মরি।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজায় কপাট তুলে দিলো শাহীন ঢালী।
- কি হলো? খিল দিলে যে, ভাত খাবে না?
- চন্দনার নিখোঁজ হয়েছে ঠিক কত দিন হলো বলতে পারো?
- বারো বছর তো হবেই। হঠাৎ এ কথা কেন?
- আজ দোকানে দুপুরের আগে অচেনা এক ছেলে আর তার সাথে একটা বাচ্চা এসেছিল।ওরা চন্দনার কথা বলছিল।
- খোঁজ পেলে চন্দনার?
-চন্দনা মারা গেছে বলল।
-কি? কি বলছো কি তুমি?
- একথা শুনে আমি সত্যি বিষ্মিত হয়েছিলাম।চন্দনাকে কত খুঁজেছি আমরা কোথাও পাইনি। আজ এই লোক বলছে সে মারা গেছে। প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি।আহারে বাছা আমার!
এতদিন পরে চন্দনার ব্যপারটা সামনে আসতে মন এতটা ভার হলো কি বলবো। তার উপর মৃত্যু সংবাদ।
গিয়ে দেখি সত্যি চন্দনা। শুয়ে আছে। নিথর।আমাদের চন্দনা লাশ হয়ে শুয়ে আছে। কিন্তু এত খুঁজেও কোথাও জীবন্ত চন্দনাকে পাওয়া না গেলে মৃত চন্দনাকে পাওয়া গেল। হায় ভাগ্য!
যার হাত ধরে গিয়েছিল সে এখন দিব্যি ঘর সংসার করছে। আর আমার মেয়েটা ভেসে গেল নিজের ভুলে।
রাহেলা বেগম মুখে কাপড় চেপে কাঁদছিলেন। নিজের ক্ষতি পরের লাথি। এ প্রবাদটা তিনি ভালো মত জানেন। অনেক পরে তিনি আস্তে আস্তে বললেন,
- আর কিছু জানতে পারলে হতভাগী সম্পর্কে ? কীভাবে কি হলো?
-মরে বেঁচেছে হতভাগী।
-ঠিক কি হয়েছিল ওর?
- জানি না। ভদ্র ঘরের মেয়ে বেশ্যাগিরি করে জীবন কাটাতে বাধ্য হয় কখন জানো রাহেলা।যখন আর কোন পথ খোলা থাকে না। মেয়েটা আমার! সোনা মানিক আমার। আহ!
এই পথ ধরে কি এক দূরারোগ্য ব্যধি হয়েছিল নাকি ওর।কে যেন বলছিল। শুনতে ইচ্ছে হয়নি আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল যতক্ষণ ছিলাম। কেউ দেখে ফেলল কিনা এসব নিয়ে তটস্থ ছিলাম। লজ্জা লজ্জা!

ভাগ্য সবই ভাগ্য। কত বড় জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছিল মেয়েটার।দূর্ভাগ্যবশত কি মতি হলো এক জানোয়ারের হাত ধরে ঘর ছাড়লো। তাও যদি ভালো থাকতো। কিছু আফসোস ছিল না।
এমন পরিণতি আর এমন মৃত্যু মন কিছুতেই মানতে চাইছে না। কারো কাছে কিছু বলার মুখ আর রইলো না।
- বাচ্চা ছিলো আমার মেয়েটার?
- ছিল এক ছেলে? তার জন্যই তো এতিম খানায় বন্দোবস্ত করতে করতে রাত হয়ে গেল। খুব মিষ্টি দেখতে। কিন্তু কি পরিচয়ে ওকে বাসায় আনবো?

তারপর দুজন বয়স্ক মানুষ সযতনে নিজেদের লুকানো দুঃখ কষ্ট নিয়ে শোক পালন করতে লাগলো নিরবে নিঃশব্দে। রাত বয়ে যায়....
এ এমনই কষ্ট যা কখনোই প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যাবে না সামাজিকভাবে পতিত হবার ভয়ে।এমনকি ছেলে বউকেও জানানো যাবে না। তারা এসব বরদাস্ত করবে না কখনো। অথচ শোক তো শোকই পালন তো করতেই হবে। নাড়ী ছেড়া ধন।সন্তান সে যেমনই হোক সে সন্তানই। তাকে কি করে এক কথায় মন থেকে মুছে ফেলে দেবে। তা কি সম্ভব?
বাবা মায়ের কোথায় দুঃখ কোথায় কষ্ট সন্তানেরা নিজেরা না বুঝলে বা বুঝতে না চাইলেও বাবা মার মন সন্তানের মঙ্গল কামনায় সর্বদাই আকুল হয়ে থাকে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কঠিন জীবনের আরো কঠিন কষ্টের গল্প

কত গল্প যে মিশে আছে চলার পথে পদে পদে- আমরা ক'টাই বা জানি!!

+++

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:১৮

ইসিয়াক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।

আসলেই চলার পথে জীবনের বাঁকে বাঁকে কত না অজানা কাহিনী লুকিয়ে আছে তার কটাই বা আমরা জানি। শুভকামনা সতত।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৫৫

অক্পটে বলেছেন: গল্প পড়া শেষ হল। চোখের কোনে জল জমা আছে এখনো। গলায় দলা পাকিয়ে আছে কষ্টবোধের এখনকার অনুভবটি। আপনার লেখার বুননটাই এমন যে মর্মের ভেতরে গিয়ে লাগে। জীবনবোধ থেকে নেয়া এসব সত্য সবার মনে সমান ভাবে আলোড়িত হোক। সমাজ বদলের হাওয়া লাগুক সবার গায়ে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:২১

ইসিয়াক বলেছেন: প্রিয় ব্লগার আপনার এই মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য কি দিবো তাই নিয়ে অনেক ভেবেছি। শুধু এটুকু বলবো এমন ভালোবাসা স্নেহ পেলে আমি আপ্লুত হয়ে পড়ি। আমি আসলে পাঠকের জন্যই লিখি। তাদের ভালোবাসা আমার চলার পথের পাথেয়।

শুভকামনা রইলো ।
ভালো থাকুন সবসময়।

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:২০

হাবিব বলেছেন: মজিদেরা সব সমাজেই আছে। তাদেরকে সবাই ঘৃণা মিশ্রিত ভয় করে। ওরা সেটাকে সম্মান ভাবে

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৩৬

ইসিয়াক বলেছেন: ঠিক তাই প্রিয় ব্লগার। এই ধরণের লোকগুলো নিজের স্বার্থে এমন কোন কাজ নেই যা তারা করে না। লোভীর লোভী বলা যায়।


৪| ০২ রা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চন্দনা ভুল মানুষের খপ্পরে পরে করুন পরিণতির শিকার। মর্মান্তিক ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৩৮

ইসিয়াক বলেছেন:

আমাদের আশেপাশে অনেক চন্দনাই এভাবে ঠোক্কর খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কষ্টের জীবন কাটাচ্ছে নিজের সামান্য ভুলের জন্য।

অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি।

ভালো থাকুন।

৫| ০২ রা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:০৬

ভুয়া মফিজ বলেছেন: গল্প ভালো হইছে। ভেরি গুড! আইজ থিকা কবিতা লেখা বন!!! :-B

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৩৯

ইসিয়াক বলেছেন: হা হা হা ..........কবিতা লেখা বন্ধ।


গল্প দিয়েছি আরেকটা। শুভকামনা রইলো।

৬| ০২ রা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: গল্প লিখতে লিখতে কি কবিতার কথা ভুলে গেছেন?
গল্প কবিতা দুটাকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন না কেন?

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৪১

ইসিয়াক বলেছেন: আপনিই তো একদিন বলেছিলেন এতো এতো কবিতা লিখে কি হবে? তাই আর কবিতা লিখি না।

৭| ০২ রা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৪৬

মাসউদুর রহমান রাজন বলেছেন: ইসিয়াক ভাই, খুব সুন্দর গল্প। কপি কইরা রাইখা দিলাম। এই গল্প দিয়া ভবিষ্যতে কিছু করার আশা থাকলো। যদি করি অবশ্যই আপনার অনুমতি সাপেক্ষেই করমু।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৪৪

ইসিয়াক বলেছেন: আমি সামান্য মানুষ। লেখা পড়াও জানি সামান্য। আমার লেখা আপনার ভালো লেগেছে আমার লেখা গল্প দিয়ে ভবিষ্যতে কিছু করার আশা করছেন এর জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন। অনুমতি দেওয়া রইলো ।

শুভকামনা রইলো।

৮| ০২ রা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:৩৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে।‌
শুভেচ্ছা প্রিয় ইসিয়াক ভাইকে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৪৬

ইসিয়াক বলেছেন:
ফাঁকিবাজি মন্তব্য।
মন্তব্যে মাইনাস।


তবে শুভকামনা রইলো। B-)

৯| ০৩ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কোথায়?
মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?
শুধু অফ লাইনে থেকে কে কি মন্তব্য করেছে, সেটা দেখে গেলে চলবে!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৫১

ইসিয়াক বলেছেন: ভীষণ ব্যস্ত। এখন সবগুলো মন্তব্যের উত্তর দিয়ে দিয়েছি।


শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.