নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই রকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি যেখানে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা হবে। যেখানে থাকবে না কোন পাপ পঙ্কিলতা।

ইসিয়াক

সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ একটি অপমৃত্যু এবং....

১১ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:০১



(১)
কানে ইয়ার ফোন গুজে গান শুনতে শুনতে কোচিং থেকে বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে বাড়ি ফিরছে তুষার। আজ কোচিং এ মাসিক টেস্টের ফলাফল বের হয়েছে। তুষার পেয়েছে সবকটি বিষয়েই সর্বোচ্চ নম্বর। ইমনকে কাত করা গেছে এই আনন্দে সে এখন বিভোর হয়ে আছে। ইমন তার ক্লাস এবং কোচিং মেট। ইমনের মা আন্টি দেখা হলেই কম কথা শোনায় না তাকে।
-বাব্বা, কতগুলো স্যারের কাছে তো পড়,সারাদিন তো বই নিয়েই পড়ে থাকতে দেখি। তোমার মায়ের তো তোমাকে নিয়ে অহংকারের শেষ নেই। কোচিং এসে দেখি ঠিকই ধরা খেয়েছো।আসলে মেধা থাকতে হয় বুঝেছো?আমার তো মনে হয় স্কুলে তোমার বাবার ক্ষমতার দাপটে তুমি প্রতি বার প্রথম স্থান দখল করো।সব বুঝি কিন্তু কিছু বলার নেই আমাদের হাত পা যে বাঁধা।দেখেছো কোচিং তার প্রমান।আমার ছেলেই যে তোমার থেকে বেস্ট কোচিং এ না আসলে এ সত্যটা কোনদিনও জানতে পারতাম না। ইত্যাদি ইত্যাদি
রিকশা ভাড়া বাঁচাতে হেঁটে বাড়ি ফিরছে তুষার সামনে একটা সাউন্ড বক্স কিনবে বলে টাকা গোছাচ্ছে সে। চলতি পথে হঠাৎ বেশ ভীড় দেখে কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেল তুষার। কিসের জন্য এত জটলা কে জানে । যদিও বাসা থেকে নিষেধ আছে এসব ভীড় ভাট্টা,উটকে ঝামেলা এড়িয়ে চলার তবুও কি মনে করে সে এগিয়ে যায়।
এত লোকের ভীড়ে ভালো মত কিছু দেখতে না পেলেও একটা কান থেকে এয়ার ফোন সরিয়ে কোন রকম লোক মুখে শুনে যা বুঝলো তার মর্মার্থ হলো এইটা একটা ইভ টিজিং কেস।উপস্থিত অনেকই কম বেশি মজা নিচ্ছে। নানা তীর্যক মন্তব্য করছে কেউ কেউ আবার যে মেয়েটিকে নিয়ে এ ঘটনা সেই মেয়েটিএক পাশে দাড়িয়ে উচ্চ স্বরে কথা বলছে । নিজেই তার হেনস্তা হবার বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই সবাই মেয়েটির প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল সেটা বোঝাই যাচ্ছে । তার একপাশে দোষী ছেলেটিকে সবাই ঘিরে আছে।ভীড়ের চাপে মুখটা ঠিক দেখা যাচ্ছে না ছেলেটার। কেউ কেউ বলছে এই ছেলেটা ইভ টিজিং দলে ছিল তাই একে ধরা হয়েছে আসলে এ মূল হোতা নয়। আসল দোষী সুযোগ বুঝে পালিয়েছে।
হঠাৎ তুষারের কি মনে হলো আগে পিছে কিছু না ভেবে ফট করে বলে বলল,
-আরে এই সব জানোয়ারদের মেরে ভেঙে দেওয়া উচিত। সব গুলো এক।ধোলাই দিলে আর এসব করার সাহস পাবে না। রাস্তা ঘাটে যা খুশি তাই করে এরা।কোন বাছ বিচার নেই, ঘরে মা বোন নেই মনে হয় এদের ? শালারা।
যারা এতক্ষণ ধরে ছেলেটিকে নানা কথায় আর অশ্রাব্য ভাষায় আঘাত করছিল হঠাৎ তুষারের কথা কানে যেতে তাদের কারও কারও মনে হলো তাই তো দু চার ঘা বসিয়ে শিক্ষা দিলে বেশ হয়?ফটাফট আসল অপরাধীর নাম ঠিকানা সুড়সুড় করে বের করে দিবে বাছাধন ।
বলা নেই কওয়া নেই অমনি একজন মার শুরু করতে অনেকেই হুজুগে হাত চালালো তার সাথে ।শুরু হয়ে গেল গণপিটুনি।
পথ চলতি আরও কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক স্বপ্রনোদিত হয়ে তাতে অংশ নিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে। প্রবাহমান ঘটনার আকষ্মিকতায় এবং ছেলেটার করুণ আর্তনাদ কানে যেতে তুষার বেশ বিব্রত হল তার মনে হলো বড় একটা ভুল হয়ে গেছে তার। ততক্ষণে জনতার আদালতে দোষী ছেলেটি রক্তাক্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে তুমুল মার খাচ্ছে ।অমানবিক দৃশ্য। মার চলছেই বিরামহীন । ছেলেটি তবুও প্রতিবাদ করছে এবং সমানে মুখ চালাচ্ছে। হুমকিও দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো।ছেলেটি পাগল নাকি!
তুষার একবার ভাবলো সে বাঁধা দিবে কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। ঘটনা দ্রুত অন্য দিকে মোড় নিয়েছে ততক্ষনে এবং সেই সাথে তুষারও বুঝতে পারলো এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। তাড়াতাড়ি সেও বাড়ির পথ ধরলো। কিন্তু মনের মধ্যে একটা ব্যপার খচ খচ করতেই লাগলো।
(২)
রাতের খাবারের জন্য ডাইনিং টেবিল সবাই বসে গেছে। এ সময়টা তুষারদের বাড়ির সবাই একসাথে খেতে বসে। সে সময় টিভি দেখা, সারাদিনের নানা ঘটনার আলোচনা পর্যালোচনার সাথে সাথে খাওয়া দাওয়া পর্ব চলতে থাকে নিত্য অভ্যাসে। এর মধ্যে তুষারের মায়ের সেল ফোনে ফোন আসে। কে একজন গণপিটুনিতে মারা গেছে নাকি। ছেলেটি তুষারের মায়ের ছোটবেলার বান্ধবীর।
তুষারের বাবা মা অনেক উদ্বেগ উৎকন্ঠা নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যেতেই চ্যানেল পরিবর্তন করে করে তুষার টিভি দেখতে থাকে।আজ পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করছে না । গেম খেললে মন্দ হতো না কেন জানি গেম খেলতেও ইচ্ছে করছে না তুষারের । কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে মনের ভিতর।কেন এরকম হচ্ছে সে ঠিক বুঝতে পারছে না। বর্তমানে সে বাসায় একা।ছোট বোনটি দাদা দাদীর সাথে বেড়াতে গেছে আজ সকালে । কিছুক্ষণের ভিতর তুষারের চোখ আটকে যায় একটি খবরে।
গণপিটুনিতে এক কিশোরের মৃত্যুর খবর। কোচিং ফেরত ঘটনার কথা মনে এলো তুষারের। মৃত ছেলেটি কি সেই ছেলেটি? কেন জানি মনে হচ্ছে সেই ছেলেটাই।
ইশশ! সে যদি মারের কথা না তুলতো তাহলে হয়তো......তুষার আফসোস করে।
কিন্তু মারধোর কি এত বেশি হয়েছিল নাকি?কে জানে? মরে যেতে পারে সে রকম তো মনে হয়নি তখন।তবে রক্তাক্ত ছিল। তুষার মাথা থেকে চিন্তাটা দুর করতে চাইলো।এসব নিয়ে আর ভাববে না সে কিন্তু. ….....ঠিক সে সময় অন্য একটা চ্যানেলের খবরে মৃতের মুখটা দেখালো।মুখ দেখে না চিনলেও জামাটি তার চেনা মনে হলো। আর ঘটনাস্থলও মিলে যাচ্ছে। কয়েকটা চ্যানেল ঘুরিয়ে একই খবর দেখে ও শুনে এটি যে সেই ছেলে বুঝতে আর বাকি রইলো না তার।
অকস্মাৎ তুষারের গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। নিজেকে অপরাধী মনে হলো তার। সে আধ খাওয়া ভাতের প্লেট ছেড়ে উঠে দাড়ালো।
সব চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। শহরে আজ ইভ টিজিং এর অজুহাতে গণপিটুনিতে এক কিশোরের মৃত্যু। তুষারের মাথার ভিতর ঘুরে উঠল।হায় হায় নিছক মজার ছলে সে একটা জীবন নিয়ে নিল। একি করলো সে?তার অনুতাপ হতে লাগলো।
এদিকে তুষারের বাবা মা অনেক রাতে বাড়ি ফিরল। তখনও তুষার জেগে। তারা আফসোস করে কত কি যে বলছিল, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবটা শুনলো তুষার। কি হয়েছিল, কীভাবে হলো? ইত্যাদি।
ছেলেটির নাম কাজল বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।আর চ্যানেলের খবরে দেখানো ছেলেটিই এই ছেলেই।সব শুনতে শুনতে বারবার ঢোক গিলল তুষার। নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে নানা ভাবনায় বিবেকের দংশনে সারারাত এক মুহুর্তও ঘুমাতে পারলো না সে। এত বড় অন্যায় কিভাবে করলো সে?এই ঘটনার দায় সে কিছুতেই অস্বীকার করতে পারে না।
তার কোমল মন ক্ষত বিক্ষত হতে লাগলো বিবেকের নানা দংশনে। কোন যুক্তিতেই নিজেকে সে ক্ষমা করতে পারলো না।
সকালে তাকে ভীষণ বিপর্যস্ত অবস্থায় প্রথম খেয়াল করে জোবাইদা বেগম।তিনি অবাক হয়ে লক্ষ করেন তাঁর প্রাণপ্রিয় ছেলের চোখগুলো রক্ত লাল, চুল এলোমেলো। চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে। কি হয়েছে ওর?
তিনি সস্নেহে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,
- কি রে কি হয়েছে তোর? এমন দেখাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
- মা আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
- কি ভুল? কিসের ভুল? কি অন্যায়?
সে গতকালের ঘটনার সবটা জানায় মাকে। জোবাইদা বেগম প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেন। নিজের কানকে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না । তাদের ছেলে কীভাবে এত বড় ভুল করলো? কিছুটা বাদে নিজেকে সামলে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা দিতে দিতে বারবার বলতে থাকেন
- কিছু হবে না বাপ আমার, সব ঠিক হয়ে যাবে,একটুও চিন্তা করিস না । তুই শুধু একটু শান্ত হ। তোর বাবা সব সামলে নেবে।কিছু হবে না।
জামাল তরফদারের কানে কথাটা যেতে দেরি হয় না। তিনি প্রথমে ধৈর্য ধরে সবটুকু শুনে গম্ভীর হয়ে যান। অনেক ক্ষণ পরে বলেন,
-তুষার অবশ্যই এক্ষেত্রে অপরাধী। অপরাধ সে যত ছোট হোক মাত্রার হোক সেটা অপরাধ।আর যে কোন অপরাধ লুকানো সেটা পাপ। ওকে এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।ওকে ছেলেটির বাবা মায়ের কাছে নিয়ে যেতে হবে আমাদের। ওরাই ঠিক করবে তুষারকে তারাএই অপরাধের জন্য কি সাজা দেবে।আজ যদি আমরা ওর অপরাধ গোপন করি তাতে পরবর্তীতে ও আরও বড় অপরাধ করতে উৎসাহিত বোধ করবে।এখন তো তাও বিবেকের দংশনে পুড়ছে আর তখন এই বিবেকবোধও জাগ্রত হবে না আর। অকালেই ওর বিবেকের অপমৃত্যু হবে।
আমি আমার ছেলের বিবেকবোধের অপমৃত্য দেখতে চাই না ।জোবাইদা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন । এক নিমেষে কোথা থেকে কি হয়ে গেল। তুষারও কাঁদছে।...
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

ছবিঃ গুগল থেকে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৩৩

ফেক রুধির বলেছেন: অনেক দিন পর সত্যিই খুব ভালো একটা গল্প পড়লাম। মনকে নাড়িয়ে দেবার মত। আর গল্পের শেষের ছোট্ট ম্যাসেজটা ও অসাধারণ প্রত্যেক বাবা মা ই যদি এই চিন্তা করতো যে সন্তানের বিবেকের অপ মৃত্যু দেখতে চাই না। সত্যিই সন্তানেরা ভালো মানুষ হয়ে উঠতো প্রতি নিয়ত।

১৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:২১

ইসিয়াক বলেছেন: ফেক রুধিআপনাকে আমার ব্লগে স্বাগতম।

গল্পটি ভালো লেগেছে এবং গল্পে ছোট্ট মেসেজটি আপনি ধরতে পেরেছেন জেনে সত্যি অনুপ্রাণিত হলাম।

শুভকামনা সতত।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।

১৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:২৪

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ বন্ধু। কর্মমুখর জীবনে সফলতা আসুক।

শুভ কামনা সবসময়।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:৪৫

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: খুব সুন্দর দাদা...
ধন্যবাদ...

১৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:২৫

ইসিয়াক বলেছেন: আপনার প্রতিও শুভেচ্ছা রইলো প্রিয় দাদা। ভালো থাকুন সবসময়।

৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৭:২২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে। অপমৃত্যু ঘটায় আর মুখে কিছু আনতে পারছিনা। তাতে আবার যেন বলেন না কমেন্টে ফাঁকি দিয়েছি। লিখতে থাকুন এভাবেই....

শুভেচ্ছা জানবেন।

২১ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৩১

ইসিয়াক বলেছেন: গল্পটা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো প্রিয় দাদা।


শুভেচ্ছা সহ শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.