নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অভিসন্ধি

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:৩২



(১)
স্নিগ্ধার বিয়ে হয়ে গেছে আজ সাতদিন হয়ে গেল। সাত দিন অথচ আমার কাছে সাত বছর মনে হচ্ছে।ওকে ছাড়া কিছুতেই সময় কাটতে চাচ্ছে না।ঘটনাটা বুকের ভিতর এক ধরনের চাপ ব্যথা হয়ে চেপে বসে আছে ।শত চেষ্টা স্বত্ত্বেও স্নিগ্ধাকে কিছুতেই ভুলতে পারছি না।ঘুরে ফিরে ওর কথাই কেবল মনে পড়ছে।
আসলে স্নিগ্ধা আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে যাবে বা আমার জীবনে এমন কিছু একটা ঘটবে এ ব্যপারটা আমি মন থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
এত ভালো বাসতো মেয়েটা আমাকে অথচ! হঠাৎ ই কি থেকে কি হয়ে গেল! একেবারেই বিনা কারণে দুম করে বিয়ে করে বসলো অন্য একজনকে।নিজেকে গুছিয়ে নিতে চাওয়ার জন্য এত বড় মূল্য দিতে হবে আমাকে, সেটা কখনও ভাবিনি।এজন্যই বলে বুঝি মেয়েদের মন বোঝা দেবতারও অসাধ্য। কখন যে কি করে বসে।

নিজেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাতে গত রাতে নিজেই নিজের কাছে অতীত ভুলে যাবো বলে কঠোর শপথ করেছি।আর তাই আজ সকাল থেকে আমি মোবাইলে রাখা স্নিগ্ধার ছবিগুলো এক এক করে ডিলিট করা শুরু করেছি।শুধু ছবি না ওর মেসেজগুলোও এক এক করে ডিলিট করছি।আসলেই মন থেকে আমি ওকে ভুলে যেতে চাই। যদিও আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই।সব সম্পর্কের অবসান হয়েছে ইতিমধ্যে ।
এখন সুস্থ ভাবে বাঁচতে হলে, ওর স্মৃতি ওর কথা, যে কোন মূল্যে ভুলে যেতে হবে আমাকে। অনেক হয়েছে আর না।যে গেছে সে গেছে।অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে আমাকে।
একজন বেইমানের জন্য কেন খামোখা আমি আমার জীবন মূল্যবান সময় নষ্ট করবো? তবে মুখে বলা যত সহজ আদৌ কি তত সহজ ব্যাপারটা?এত সহজে কি ভোলা যায়?

তবুও চেষ্টায় আছি। দুপুরের মুখে আজ বেশ কদিন পরে অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ার নিলাম।পছন্দের পারফিউম ব্যবহার করলাম।এ ক'দিনে দাড়ি গোঁফ বিশ্রী আকার ধারণ করেছে। সেগুলো পরিষ্কার করবার তাগাদা অনুভব করলাম।পছন্দের গান বাজালাম জোর ভলিউমে।আসলে গান শুনলে মনটা হালকা হয়।অন্য রকম ফিলিংস আসে।আগে কেন বুদ্ধিটা আসে নি কে জানে।গানের সুর ও শব্দে বাইরের কারো যেন বিরক্তি না লাগে তাই জানালাটা আটকে দেবো ভাবছি।অবশ্য বড় আপা ইতিমধ্যে একবার বকা দিয়ে গেছে।বলে গেছে এত জোরে গান শোনে না-কি রাস্তার বখাটেরা। আরও বলল আমি নাকি চামড়া পুরু গন্ডার ইত্যাদি ইত্যাদি।
বড় আপার কথায় আমি কিছু মনে করি না। উনি আমাদের মাথার উপর একমাত্র ছায়া।মা বাবা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাবার পর উনি আমাদের সযত্নে আগলে রেখেছেন।আমাদের সমস্ত ভালো মন্দ দেখা শোনা তিনিই করেন। সেক্ষেত্রে তিনি আমাদের শাসন করতেই পারেন।

পাল্লা ভেজাবো বলে জানালায় এসেছি এমন সময় ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম।
স্নিগ্ধা! আরে! এ এখানে কি করছে?
মেয়েটা সত্যি স্নিগ্ধা!!
সাথে একজন অচেনা লোক।ঠিক অচেনা নয়, ইনাকে আমি চিনি।মেসেঞ্জারে স্নিগ্ধার পাঠানো ছবি থেকে জেনেছি ওটা ওর জামাই ।
কি কান্ড! কি কান্ড!! ক্রিমিনালটা আর স্নিগ্ধা সত্যি সত্যি আমাদের বাড়ির দিকেই এগিয়ে আসছে।হাতে আবার কয়েকটা মিষ্টির প্যাকেটও আছে।
বেয়াদবটার ভাব দেখে মনে হচ্ছে শ্বশুর বাড়ি আসতেছে।মন চাইছে পেছন থেকে গিয়ে একটা কষে লাথি লাগাই।অনেক কষ্টে রাগ দমন করলাম। যা হবার হয়ে গেছে ও মেয়ে এখন আর আমার না। কি দরকার ফালতু ঝামেলা বাড়িয়ে।
তবে লাল শাড়ীতে স্নিগ্ধাকে অপূর্ব লাগছে এটা মানতেই হবে। আমি তাকিয়ে আছি।
আহ! শুধু ও যদি আমার হতো! কিন্তু সেটা আর সম্ভব নয় কখনই।এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়?
স্নিগ্ধার সাথে আমার সম্পর্ক বাসার সবাই জানলেও ওর বিয়ের ব্যাপারটা মনে হয় কেউ জানে না।আমিও আগ বাড়িয়ে কিছু জানাই নি।যতদূর জানি দেখতে এসে বিয়ে হয়েছে ওর....অনন্ত ও তাই জানিয়েছিল।ছোট খাটো আয়োজন ছিল না-কি।

সে যাক! আমার সাথে যা হয়েছে তা হয়েছে। নতুন করে স্নিগ্ধা আমাদের বাড়িতে কি করতে হাজির হলো কে জানে?কোন কারণ তো খুঁজে পাচ্ছি না। না-কি????
চকিতে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা পড়লো যেন।আমি তৎপর হলাম। এ বাড়িতে স্নিগ্ধা জামাই নিয়ে ঢুকলে আমি শেষ।মান সম্মান সব ডুববে।তুলি, নিতু, বড় আপা আর অন্য লোকজন? তারা কি আমাকে কথা শোনাতে ছেড়ে দেবে?
বিয়ের পর মেয়েরা এতোটা বেহায়া হতে পারে আমার জানা ছিল না।একদম জামাই নিয়ে এক্স বয়ফ্রেন্ডের বাড়ি এসে হাজির। থাক না বাবা তোর জামাই নিয়ে সুখে!গন্ডা গন্ডা আন্ডা বাচ্চায় ঘর ভরিয়ে ফেল গে যা আমার কিছু যায় আসে না। খামোখা খামোখা এমুখো আবার কেন আসতে হলো তোদের? ঢং করার জায়গা পায় নি।বিরক্তিকর!
নাহ!ওকে যে করে হোক ফেরাতে হবে কিন্তু আমি পৌঁছে যাবার আগেই নিতু দরজা খুলে স্নিগ্ধাকে স্বাগত জানালো।ঢংগী গলায় বলল
-ওমা স্নিগ্ধা আপু৷ কতদিন পর।একি! তোমার সাথে এটা কে? নতুন জামাই? কবে বিয়ে করলে? তবে ভালো করেছো বিয়ে করে।বয়সতো আর কমছে না কি বল?তোমার বরটা কিন্তু ভীষণ কিউট!!!! আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে। কি হ্যান্ডসাম!
আসুন আসুন দুলহা ভাই ভিতরে আসুন।
স্নিগ্ধার জামাই এর ভাবসাব সুবিধার ঠেকলো না। সে হা করে নিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।
বাসায় ঢুকতে ঢুকতে স্নিগ্ধাও আহ্লাদী সুরে নিতুকে বলল
-একদম ঠিক বলেছিস নিতু তবে আমার জামাই এর দিকে একদম নজর দিবি না ভালো হবে না কিন্তু ...

-নজর তো দিবোই সেই সঙ্গে বলবো, হাজার বার বলবো।দুলহা ভাইয়ু কিন্তু সত্যি হ্যান্ডসাম। লাভ ইউ দুলহা ভাই।

-আরে বলছি কি মন দিয়ে শোন, তুইও একটা ঝটপট বিয়ে করে ফেল।জানিস তো ওকে দেখার পর আমি আর দেরি করলাম না। যা কিউট দেখতে বল।দেরি করলে কে না কে আবার টানাটানি করে, যা যুগ পড়েছে ।আমার আবার কম্পিটিশন একেবারেই পছন্দ না।আর তাই যেদিন ওকে প্রথম দেখলাম টুপুস করেই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম।প্রথম দেখায় প্রেম যাকে বলে।বাড়িতে বললাম। তারপরের ঘটনাতো.... ।বিয়ে করে ভালো করেছি না বল?
- আগে যে প্রেমটা ছিল সেটার কি গতি হলো বলতো?
- আরে ধুস ওটা তো এমনি এমনি স্রেফ টাইম পাস। আর তাই যখন একে পেলাম ঝুপুস করে বিয়েটাও সেরে নিলাম।বুঝলি নিতু, শুধু মাথা মোটাটাই আমার দাম বুঝলো না। এখন অবশ্য হাত কামড়ে কোন লাভ নেই। যা হবার সব হয়ে গেছে।যাই বলিস আমি কিন্তু বিবাহিত জীবনে দারুণ সুখী।
বলেই আমার দিকে ফিরে চোখ মেরে স্নিগ্ধা বলল
- কি বলেন নেহাল ভাইয়ু বিয়েটা করে ভালো করেছি না?জামাই কেমন হলো বললেন না তো!

সব দেখে শুনে আমার মাথায় আগুন চড়ে গেল।এখানে আর দুমিনিট দাড়ালে খুনোখুনি বেঁধে যাবে। এরা সবগুলোই মিচকা বদমাশ।
এদিকে বড় আপাও কোথেকে যেন দৌড়ে এলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।স্নিগ্ধার জামাইটাও বেশ ঢঙ্গী সাথে সাথে পা ছুঁয়ে কদমবুচি সেরে নিলো। মনে হচ্ছে.. না থাক পরিস্হিতি অনুকুল নেই। যা করার পরে করবো।
এরপর চরম মাত্রায় আহ্লাদী নাটক শুরু হয়ে গেল। আদিখ্যেতার একটা সীমা থাকে। আমি সোজা রুমে ঢুকে দরজা দিয়ে দিলাম। পৃথিবীটাকে জঘন্য মনে হচ্ছে। সব কয়টা আমার শত্রু।
(২)
এক সময় স্নিগ্ধারা আর আমরা একই পাড়ায় থাকতাম।সেই থেকে ওর মা আর আমার মা বান্ধবী।আর সেই সুত্রে স্নিগ্ধাও আমার একটু বেশি বান্ধবী মানে প্রেমিকা ছিল আর কি। এই হলো আমাদের গল্প...

একটু আগের ঘটনায় মেজাজ এত খারাপ হলো কি বলবো। আমার বাড়ির লোকগুলো এত হ্যাংলা কেন কে জানে! উফ।
স্নিগ্ধাকে একটা শিক্ষা দিতে পারলে মন শান্তি পেতো।আর যাই হোক এখন আমার আর ওর প্রতি ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই, বরং সেখানে ঘৃণা। এটা অবশ্য একটা ভালো দিক।
মনে হচ্ছে সোজা ওর মাথা বরাবর গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিলে তবেই শান্তি পাবো। কিন্তু পিস্তল তে নাই। অবশ্য ধুনোর গুড়ো আছে....খেলা হবে হা হা হা

সময় গড়িয়ে ততক্ষণে গল্প আর হা হা হি হি পর্ব শেষ।এবার খাওয়া দাওয়ার পালা।ততক্ষণে মেজাজ ঠান্ডা হতে দারুণ এক নীল নকশা সাজালাম।এখন শুধু ভাগ্নে রাতুলের সাহায্য দরকার।ওকে ম্যানেজ করতে অবশ্য খুব বেশি বেগ পেতে হল না।

যেহেতু গল্প গুজব খাওয়া দাওয়ার পর্ব সারতে একটু দেরিই হলো।স্নিগ্ধার জামাই বেচারা খেয়ে দেয়ে কুমড়োপটাশ হয়ে বসে আছে। নড়তে পারছে না দেখে বোঝা যাচ্ছে। রাতুল ওকে আরাম করে বিছানার গড়াগড়ি দেবার প্রস্তাব দিলো এবং সে টোপ গিলে ফেলল। লোকটা মনে হচ্ছে একটু বেশিই সহজসরল।

অবশ্য এত সহজে প্লান সাকসেসফুল হবে এটা ভাবি নাই।আমার একান্ত অনুগত ভাগ্নে রাতুলের সহযোগিতায় বিছানায় রাখা বালিশে আগে থেকে ধুনোর গুড়ো ছিটিয়ে রেখেছিলাম। রাতুল ওকে বিছানা দেখিয়ে দিলো এবং তারপর ওফ! যা হলো স্নিগ্ধার বরের.... এই ঘটনার পর স্নিগ্ধার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। তবে নিতু মনে হলো বেশি বিরক্ত হয়েছে।সে ন্যাকামি করে কান্না কাটি শুরু করলো।বড় আপা ও কম বকাবকি করলো না। তবে মনের শান্তি বলে একটা কথা আছে।আমার এ ক' দিনের সব রাগ ক্ষোভ নিমেষে দুর হলো সে আর না বললেও চলবে।
স্নিগ্ধারা চলে যাবার কিছুটা সময় পর নিতু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
-দাদা তোর এই কাজটা করা মোটেও ঠিক হয় নি।
- ঠিক হয় নি মানে?
- উনি আমাদের সন্মানিত অতিথি।
- অ।
বেশ বিরক্ত ই হলাম। নিতু হচ্ছে বড় আপার খাস চামচা।ওকে এখন কিছু বলা যাবে না। কৌশলে শাস্তি দিতে হবে।আমি উদাস হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
নিতু অবশ্য আমাকে লেজ কাটা শেয়ালের উপাধি দিলো।আমি ঠিক করেছি কোন অপমান আর গায়ে মাখবো না।
স্নিগ্ধা আজ হঠাৎ জামাই নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমার অবস্থান মারাত্মক নড়বড়ে করে দিয়ে গেছে।তবে প্রতিশোধটা কায়দা মত হয়েছে।এটাই যা শান্তি।
বেশ বুঝতে পারলাম বাড়ির পরিবেশ থমথমে। রাতুলকে দুষ্টুমির জন্য চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।
রাতে খেতে বসলে বড় আপা বেশ গম্ভীর হয়ে বললো
- তুই ওদের সাথে অমন না করলেও পারতি।তোর জন্য লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে । হাজার হলেও রূপালী আন্টি মায়ের বান্ধবী ছিল । ওর মেয়ে স্নিগ্ধাকে মা মেয়ের মত ভালোবাসতো। আর ওই ছেলেটাকে..
- মেয়ের মতো মেয়ে তো না। যদি তোমার মত করে ভাবতো তবে স্নিগ্ধা এত বড় বেইমানি করতো না।বুঝলাম না নিজের ভাইয়ের প্রতি তো তুমি যথেষ্ট কেয়ারলেস অথচ চেনা নেই জানা নেই ওই গোবর গণেশের জন্য এত দরদ উথলে উঠছে, কেন?
-বয়স বাড়লে মানুষের বুদ্ধি জ্ঞান বিবেচনা বোধ জাগ্রত হয়।আর তুই ঠিক তার উল্টো। মা মৃত্যুর আগে ঠিকই বলেছিল "আর কিছু না হোক নেহালকে দেখে রাখিস।ও বড় অবুঝ.।"
নিতু ফোঁড়ন কাটলো
- অবুঝ না ছাই।বেয়াদব।
- তোর এত জ্বলে কেন?
নিতু কি সব বিড়বিড় করতে লাগলো।
এরপর আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না।এমনিতে বড় আপা আর নিতুর আদিখ্যেতায় রাগে আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।
কিছুটা বাদে বড় আপা আবার বলল
-স্নিগ্ধার সাথে তোর ঠিক কি হয়েছিল রে?
-কি হবে? কিছু না।
-তাহলে মেয়েটাকে খামোখা কষ্ট দিচ্ছিস কেন?
- কষ্ট! আমি? যা জানো না তা নিয়ে কথা বলো না। দেখলাম তো সব..ডিজগাস্টিং
- তুই চিরকালই মাথা মোটাই রয়ে গেলি।
- বড় আপা, দেখ ওর ব্যাপারে আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।আমার বিরক্ত লাগছে। ওর কথা থাক।অন্য কথা বল। বেইমান একটা।

- তুই আসলেই একটা পাগল।
- আমি পাগল না তোমরা পাগল।আচ্ছা বলতে পারো পরের বাড়ির একটা বিবাহিত মেয়েকে নিয়ে তোমাদের কেন এত মাতামাতি করছো? ওর সাথে আমাদের কোন রক্তের সম্পর্ক আছে?আছে কোন দায়বদ্ধতা? তাহলে কেন ওর হাজব্যান্ডকে নিয়ে এত রং ঢং। কি জন্য এতো আদিখেত্যা ।ওর সাথে আমার কি সম্পর্ক ছিল তোমরা জানতে না।তারপরও ছি!
-তোর মাথাটা গেছে রে নেহাল।যাহোক স্নিগ্ধার সাথে সমস্যাটা তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ফেল। ও খুব ভালো মেয়ে।
- পরস্ত্রীর ব্যাপারে আমার কোন ইন্টারেস্ট নাই । আর তুমিও পারো? কি একটা অবস্থা! বড় আপু হয়ে হয়ে ছোট ভাইকে পরকীয়ার মদদ দিচ্ছো।
- আরে মাথা মোটা পরকীয়ায় মদদ দিচ্ছি না ওকে বিয়ে করে বাড়ি আনতে বলছি।
- মানে? তুমি জানো না কিছু? না কি না জানার ভান করছো?
- কি জানবো আমি?
-ওর বিয়ে হয়ে গেছে । ওর সাথে ওটা ওর জামাই ছিল। উফ আমি পাগল হয়ে যাবো।
বড় আপা এত জোরে হেসে উঠলো যে আমি চমকে গেলাম।
-গান্ডু!এই তোর বুদ্ধি! ফেকবুকে পাঠানো ছবিগুলো সব তোকে টিজ করার জন্য করেছে।
- তুমি কিভাবে জানো?
- আরে আসল বুদ্ধিটা তো আমারই।তুই তো সহজে বিয়েতে রাজী হবি না। পাগলের মত এক গো ধরে বসে আছিস৷ দারুণ জাঁকজমক করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবি। হাজার লোক খাওয়াবি কাওকে বাদ দিবি না।আরও কি কি।সেই উদ্দেশ্যে টাকা জমাচ্ছিস। আমাদের মত ছা পোষাদের জন্য এসব মানায় না।এসব গরীবের ঘোড়া রোগ। ফালতু বিলাসিতা এটা বুঝিস না। সঞ্চয়ী হ। এই সব শো অফ পরবর্তী জীবনে বোঝা হয়ে দাড়ায়।তোকে এসব বুঝতে হবে।মেয়েটা তোকে সুখে রাখবে। তোর বয়স কিন্তু বাড়ছে। থার্টি প্লাস।এটা মনে রাখবি।
- সার্টিফিকেটে ত সাতাশ।
- কোন কথা হবে না কালই তোর বিয়ে এবং স্নিগ্ধার সাথেই।
- এ্যা বললেই হলো ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে।
নিতু ফোড়ন কাটলো
-তুই কি ছুড়ি? হি হি
-নিতু!
বড়৷ আপা আবার বলল
- শোন নেহাল।যে ছেলেটা এসেছিল ও স্নিগ্ধার বান্ধবীর বড় ভাই।আমার চেনা।এদিকে তোর দুলাভাই এর বন্ধুর ছেলে।খুব ভদ্র ছেলে। বেচারা অভিনয়ের ট্রায়াল দিতে এসে।কি করলি বল তো। একটু তো মাথা খাটাবি মধ্যেখানে বেচারা শিহাব!কি একটা অবস্থা।দেখা হলে তুই নিজে গিয়ে ওকে সরি বলবি। ওকে আমি নিতুর জন্য সিলেক্ট করেছি।

-আপা তুমি কি শুরু করছো?
-তিন মাসের মধ্য তোদের দুই ভাই বোনকে বিয়ে দিয়ে আমি তোর দুলাভাই এর কাছে ফিরে যাবো।তোরা এখন যথেষ্ট বড় হয়েছিস। অতএব আমার দায়িত্ব শেষ করবার সময় হয়ে গেছে ।মা মারা যাবার পর থেকে ই এখানে পড়ে আছি তোর দুলা ভাই এর কথা তো একটু ভাববি না-কি!

মোবাইলে কল হচ্ছে...
-হ্যালো
ওপাশ থেকে স্নিগ্ধার চির চেনা গলা
-তুই আগের নাম্বারে আমাকে ব্লক করেছিস কেন?
- ইচ্ছে হলো তাই
- খুব পেকেছিস
- এত দিন পরে আমরা সাথে কথা বলছিস কোথায় একটু মিষ্টি করে কথা বলবি তা না কি সব । যাকগে যাক, আমার ইচ্ছে করেছে তাই যা ঠিক মনে হয়েছে তাই করেছি। তোর কোন সমস্য?
-স্নিগ্ধা তুই কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছিস।
- বাড়াবাড়ি আমি করছি না তুই? বাড়িতে গেলাম খুব ভাব নিলি।আমি এর প্রতিশোধ তুলবোই তুলবো। মনে রাখিস।
- বিয়ে করবি তো এত নাটক করবার কি ছিল। তোর কি লজ্জা সরম বলে কিছু নেই? আর ওই অজানা অচেনা ছেলেকে ছিহ!
-আগে বল বাড়িতে গেলাম তুই এরম কাজ করলি কেন? এই আমাকে ভালোবাসিস? আমার সম্মানটা কোথায় রইলো,বলতে পারিস?তুই একটা নির্দয় মানুষ ।
- ঠিক আছে ফোন রাখছি আমার কাজ আছে। -আগামীকাল সত্যি সত্যি বর পক্ষ আমাকে দেখতে আসবে।
-আবার?
-এবার সত্যি সত্যি আসছে। বিয়েটা হলেও হয়ে যেতে পারে। তখন যেন আবার কেঁদে বুক ভাসাস না।সব তো শুনলাম.. দয়া হলো তাই খবরটা জানিয়ে রাখলাম।

বড় আপা তাড়া দিয়ে বললেন
-আরে বোকা ছেলে মেয়েটা তোকে এত করে চাইছে আর তুই ওকে ঝুলিয়ে রেখেছিস? কেন!কিসের জন্য এত গো ধরে আছিস। আমি বলছি তোকে টাকা গুছাতেও হবে না অনুষ্ঠান করে হাজার লোক খাওয়াতে হবে না।
- আমার বন্ধুরা অনেক। তাছাড়া আমার অনেক দিনের ইচ্ছে।
- আরে বোকা ছেলে সবার জন্য সবকিছু নয়!
- কিন্তু স্নিগ্ধা বলল
- তুই কি দিন দিন গাধা জাতীয় প্রাণীতে পরিণত হচ্ছিস। আরে বুদ্ধু স্নিগ্ধার সেই ছেলে পক্ষ হচ্ছি আমরা। সব কথা ফাইনাল।আগামীকাল আমরা যাচ্ছি।
- আমার বন্ধু বান্ধব সামাজিক স্ট্যাটাস। এতো দিনের প্লান প্রোগ্রাম ।একটাই তো বিয়ে করবো জীবনে।একটু আনন্দ ফূর্তি করতে পারবো না? একটু সময় দাও না প্লিজ । ব্যাঙ্ক লোনটা খুব শীঘ্র ই পাস হবে।সত্যি বলছি।
- এবার কিন্তু মার খাবি নেহাল। সেলুনে যা। ভালো করে ফ্রেশ হবি।চুল দাড়িতে তোকে ভয়ংকর দেখাচ্ছে ।আগামীকাল তোর সাথে স্নিগ্ধার বিয়ে,এটাই ফাইনাল।আমি কোন কথা শুনতে চাই না তোর ও সব অযৌক্তিক প্লান সব ক্যানসেল।ওকে।

পরিশিষ্ট
আমাদের বিয়ে হয়েছে বছর দেড়েক হয়ে গেল।স্নিগ্ধা কোল জুড়ে দারুণ ফুটফুটে একটা বেবি এসেছে গতকাল। ওর নামও ঠিক হয়েছে অনেকগুলো তবে কিছুতেই মতের মিল হচ্ছে না দুজনের।......
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:০২

স্মৃতিভুক বলেছেন: ইসিয়াক, আপনি বেশ ভালো লেখেন।

এই গল্পটার শুরুটাও বেশ ছিল। পরবর্তীতে আবেগ, বর্ণনার বাহুল্য এবং অতিনাটকীয়তায় গল্পের ধারাবাহিকতা কিছুটা হলেও নষ্ট হয়েছে। একটুপর থেকে লাইন স্কিপ করে পড়ে গেছি, কারণ পরিসমাপ্তি অনুমেয় ছিল।

যাই হোক, আশাকরি কিছু মনে করেননি মন্তব্য পড়ে। ধন্যবাদ।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:৪৮

ইসিয়াক বলেছেন:








এটা একটা হালকা রম্য ধরনের গল্প লেখার চেষ্টা বলতে পারেন সেজন্য ইচ্ছে করেই নাটকীয় ভাব আনা হয়েছে।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
শুভেচ্ছা রইলো।

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:৫৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর হয়েছে গল্প

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:১৯

ইসিয়াক বলেছেন:





অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইলো।
শুভেচ্ছা সতত।

৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৩৩

অনামিকাসুলতানা বলেছেন: ভাল লেগেছে।

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২১

ইসিয়াক বলেছেন:







অনামিকাসুলতানা আপনাকে আমার ব্লগে স্বাগতম।
পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইলো।
ভালো থাকুন সব সময়।

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:০৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
বেশ হয়েছে।

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:০৮

ইসিয়াক বলেছেন:








ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকুন সবসময়।

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:১০

খায়রুল আহসান বলেছেন: একটু বাহুল্য এবং নাটকীয়তা থাকলেও, গল্পটা ভালোই লাগল। + +

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:২৬

ইসিয়াক বলেছেন:





অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।

শুভেচ্ছা সতত।
শুভ নববর্ষ।

৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:২০

ভুয়া মফিজ বলেছেন: নাটকীয়তার পরিমান অত্যাধিক। বড় করার জন্য গল্পটাকে টানাটানিও করেছেন অত্যাধিক। ডায়লগের ছড়াছড়িতে মনে হচ্ছে এটা কোন টিভি নাটকের স্ক্রীপ্ট!! সেই জন্যই লেখেন নাই তো!!!

তবে মোটের উপর প্লটটা ভালো। টিভি নাটক হলে দর্শকরা খাবে। ;)

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:১৫

ইসিয়াক বলেছেন:







হা হা হা ঠিক ধরে ফেলেছেন প্রিয় ব্লগার। টিভি নাটক ভেবেই লেখা । চরিত্র সূচী সীমিত। ন্যাকা ন্যাকা ডায়লগের আধিক্য। কম বাজেটের মধ্যে এই গল্পটি মধ্য মানের একটা নাটক হিসাবে কোন রকমে উতরে যায়। আজকাল পরিচালক/ প্রযোজকদের অতি মুনাফা লোভী চরিত্রের কারণে এখন টিভি নাটকের এমন দৈন্য দশা। নাটক লিখতে গেলেই আগে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। গল্প ইনডোর ব্যসিক হবে। চরিত্র সূচী ৫/৬ জনের বেশি বাড়ানো যাবে না। গল্প হাসির হতে হবে এক্ষেত্রে ভাড়ামো হলেও চলবে।ডায়লগ বস্তাপঁচা হলেও সমস্যা নেই। ইত্যাদি।
শুভেচ্ছা।
অঃ টঃ ইদানীং আমি ভীষণ ফাঁকি বাজ হয়ে গেছি। প্রতি মন্তব্যে আসতে দেরি হলো বলে দুঃখিত।


৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:০৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: কেন যেনো স্নিগ্ধা গল্পের নায়কের বাড়িতে আসার সাথে সাথেই গল্পের ইতি ঘটে গেছে অর্থাৎ শেষটা পাঠক হিসেবে বুঝতে পেরেছি। এখানটায় আরেকটু কাজ করলে গল্প হিসেবে জমতো বেশ।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:২৫

ইসিয়াক বলেছেন: গল্পটা প্রথমে অন্য ভাবে লেখা ছিল। একটু রম্যভাব আনতে গিয়ে সমস্যা হয়ে গেছে।
যাহোক আপনাদের মূল্যবান মতামত সব সময় আমার জন্য নতুন গল্প কবিতা লিখতে উৎসাহিত করে।
অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো।

৮| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: গল্পের নায়কের মাথায় কিছু সারমর্ম না রাখাতে গল্পকারকে ফাইন করা হলো। এমন একপেশে নাটুকেপনা করার জন্য হেহেহে :)
ওভারে অল গল্প ভালো লেগেছে।
পোস্টে লাইক।
শুভেচ্ছা প্রিয় ইসিয়াক ভাইকে।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:২০

ইসিয়াক বলেছেন:






জীবন মানেই তো নাটক হে হে হে

৯| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৪৭

অপু তানভীর বলেছেন: প্রথমে আমার মনে হচ্ছিলো যে একটা দুঃখের গল্প পড়তে যাচ্ছি তবে একটা জায়গায় এসেই আমার মনে হল যে বিয়ে টা আসলে হয় নি । এবং দেখাও গেল যে তাই ।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:২৩

ইসিয়াক বলেছেন:



গল্পটা প্রথমে দুঃখের ই ছিল। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো দুঃখ দুঃখ গল্প অনেক লেখা হলো।একটু হাসির কিছু হোক। :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.