নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুবর্ণ জয়ন্তীতে রবীন্দ্র-ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-পরিকল্পনার ইতিহাস:-

০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১:১৫

সুবর্ণ জয়ন্তীতে রবীন্দ্র-ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-পরিকল্পনার ইতিহাস:-
রইসউদ্দিন
সুবর্ণ জয়ন্তীতে রবীন্দ্র-ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-পরিকল্পনার ইতিহাস:-রইসউদ্দিন গায়েন(সঙ্গীত শিক্ষক,রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়,পোর্টব্লয়ার,আন্দামান)
প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-রচিত একটি স্মরণীয় কবিতার দুটি লাইন উল্লেখ ক’রে আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনার কথা শোনাব। ‘কেউ কথা রাখেনি,কেউ কথা রাখেনি— তেত্রিশ বছর কাটলো,কেউ কথা রাখেনি।‌’ ২০১৩,নবেম্বরের পাক্ষিক সময় প্রায় অতিক্রান্ত। অতুলস্মৃতি সমিতির শ্রী বারীণ সেন,শ্রী রঞ্জন পোদ্দার প্রমুখ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শ্রী প্রবীর ভট্টাচার্য,বর্তমানে যিনি বাংলা সাহিত্য’-র শিক্ষক,বিদ্যালয়ের উপ-প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতি সুনীতা চক্রবর্তীর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সুবর্ণ জয়ন্তীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র রবীন্দ্র-ভিত্তিক বিষয়সমূহ মঞ্চস্থ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বলা বাহুল্য,রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়েই তো রবীন্দ্রনাথের বহুমুখী প্রতিভার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তই থাকা উচিত। এই স্বাভাবিক কারণে আমিও প্রবল উৎসাহ প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু আমার একার পক্ষে এই গুরু-দায়িত্ব পালন করা কঠিন জেনেই তাঁরা বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পী পাঠিয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমার জন্য এই কাজ অনেক গৌরবের ছিল ব’লে আমি অনেক অর্থের বিনিময়ে রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে কাবুলিওয়ালার নাট্যরূপ,ডাকঘর নাটকের চলচ্চিত্র---নৃত্যনাট্য শ্যামা,চিত্রাঙ্গদা,চন্ডালিকা শাপমোচন এবং গীতিনাট্য মায়ার খেলা,কালমৃগয়া ইত্যাদি ছাড়াও রবীন্দ্র ঋতুরঙ্গ-র অনেক কমপ্যাক্ট ডিস্ক সংগ্রহ করি। এ সবই আমার নিজের প্রচেষ্টায় কোলকাতা থেকে ক্যুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংগ্রহ করি। দু’একজন শিক্ষক স্বেচ্ছায় এগিয়ে এলেন এই কাজে। ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্য-নির্দেশনায় এলেন শ্রী বিধানচন্দ্র ভট্টাচার্য। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করলো এই মহোৎসবের প্রস্তুতিপর্বে। ভিডিও-চিত্র অনুসরণ করলেও উপযুক্ত নৃত্য-নির্দেশিকার অভাবে মঞ্চস্থ করার জন্য নৃত্যানুষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গরূপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ‘সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব কমিটি’-র বিশিষ্ট প্রতিনিধি শ্রী প্রবীর ভট্টাচার্য-র আন্তরিক আহ্বান ও প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহযোগী সঙ্গীত শিল্পীরা কেউ কথা রাখে নি। উপ-প্রধানাচার্য কোনও নির্বাচিত সঙ্গীত শিল্পীকে আহবান জানানোর প্রতিশ্রুতি পালন করেন নি। আমি আমার অসহায় অবস্থা প্রকাশ করায় শ্রী প্রবীর ভট্টাচার্য শ্রীমতি ডালিয়া ব্যানার্জীকে শ্যামা নৃত্যনাট্য পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন।তিনি সানন্দে তা’ গ্রহণ করলেও উপ-প্রধান শিক্ষিকা তাঁর মত পরিবর্তন করেন।শ্রীমতি ব্যানার্জীর প্রতি অপ্রিয় মন্তব্য করায় তিনি ভগ্ন-হৃদয়ে বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। উপ-প্রধানাচার্য হিন্দিভাষী এবং রবীন্দ্র-বিদ্বেষী হওয়ার জন্য রবীন্দ্র-ভিত্তিক অনুষ্ঠানের গুরূত্ব দিতে চাইলেন না। জানা গেল তিনি বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিজের বশে রেখে রবীন্দ্র বিদ্যালয়ের এই মহোৎসবে ‘রিমিক্স ব্রেকড্যান্স’ করাবেন।আর তাতেই নাকি উপস্থিত মুখ্য অতিথি শিক্ষা-সচীব সুশ্রী রীনা রায় বাঙালাভাষী হলেও খুশি করা যাবে এবং এটাই হবে বর্তমান লক্ষ্য। ব্রেকড্যান্সের সাথে কিছু বাংলা আধুনিক নাচ রেখে দিলে রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়ের নামে দোষারোপ করতে পারবে না।বাংলা দু’একটা হলেই হল,তা’ সে ব্রেক ড্যান্স হোক,আর ব্যালে-ডিস্কো যাই হোক না কেন।স্টাফ মিটিং-এ তাঁর কথায়: ‘এ কোই রবীন্দ্রনাথ কা তেওহার নেহী হ্যায়,এ সব স্কুল কা তেওহার হ্যায়---ইসলিয়ে রবীন্দ্রনাথ কা কোই মরা মরা গানা নেহি হোনী চাহিয়ে,হামকো চমক্-ধমক্ নাচ-গানা মাঙ্গতা হ্যায়,আজ কে জামানে কা আদমী এহী মাংতা হ্যায়---বোলিয়ে সব টিচারস,মেরী বাত সহী হ্যায় য়া নেহী,আপলোগোকা বাত হম সুননা চাহতী হ্যায়।বাহার সে কোই টীচার আ-কে হামারা স্কুল মে সিখায়েগী হামকো পসন্দ নেহী হ্যায়---বোলিয়ে আপলোগোকো ক্যা খ্যায়াল হ্যায়?’...প্রশ্ন শুনেই ইংরেজি মাধ্যমের সব টিচার সমস্বরে বলে উঠলেন—ম্যাডাম,আপ বিলকুল সহী বোলি হ্যায়,আপকা বাতসে হামলোগ সহমত হ্যায়,আপ জ্যায়সে চাহতি হ্যায় ওহি হোগা।‌’...অবাক হতে হয় যে রবীন্দ্র বাংলা মাধ্যমের কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকার মুখে কোনও কথা ছিল না। রবীন্দ্র-অবমাননার এমন চরম লজ্জাকর দৃশ্য আমি কখনও দেখিনি। সহিষ্ণুতার সীমা অতিক্রম করায়,আমি সেই মিটিং-এ পরিবেশিত চা-পান না করেই আমি বেরিয়ে এসেছিলাম।আমার দু’চোখ তখন অশ্রুসিক্ত।লজ্জায় চোখ মুখ ঢাকার আগে আমার দু’জন প্রিয় ছাত্র দেখে ফেললো---করুণ স্বরে জিজ্ঞেস করলো: ‘স্যার,আপনি কাঁদছেন কেন? নিরূত্তর দেখে তারাও নিরাশ হল। আমি তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আমার সঙ্গীতকক্ষে প্রবেশ করি।ছুটির ঘন্টা বাজতে তখন মিনিট কয়েক বাকি।তখনও আমার জন্য বসে ছিল ছোট্ট-শিশুরা।কেউ গাইবে রবীন্দ্রনাথের গান,কেউ পাঠ করবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা।তাদের শুধু এটুকু বলেই বিদায় দিলাম: ‘কবিগুরুর আশীর্বাদ ঝরে পড়ুক তোমাদের মনের অঙ্গনে। কবির সেই কবিতাটি কি তোমাদের মনে পড়ে না? ‘ছোট হবার সাহস কি আর আছে!/তাই তো এমন বুড়ো হয়েই মরি!’ উপ-প্রধানাচার্যা’-র বিকৃত ভাবনার প্রকাশ ঘটল প্রস্তুতির অন্তিম পর্বে। আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই,হিন্দিভাষী কতকগুলি সঙ্গীত-শিক্ষককে হাজির করিয়ে হিন্দি গানের মহড়া চালাতে লাগলেন। স্বেচ্ছাচারিতার এমন নগ্ন প্রকাশ আমার অসহিষ্ণুতার কারণ হয়ে উঠল।তাই বাংলা বিভাগের রতনচন্দ্র দে,এস.কে মুখোপাধ্যায় ও আমি উপপ্রধানাচার্যা’-র কাছে জানতে চাই এই বলে: ‘সুবর্ণ জয়ন্তীর এই অনুষ্ঠান কেমন হবে,কী কী নাচ-গান-কবিতা-বক্তব্য ইত্যাদি থাকবে?বাংলা এবং ইরেজি ভাষায় আমাদের যে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার কথা ছিল,তার কী হবে?’... ইত্যাদি। অশ্রাব্য উচ্চারণে তিনি আমাকে লক্ষ্য করেই বললেন,এ মিউজিক টীচার হ্যায়? ম্যায় তো ইনকা বাপ কা ভী বাপ বনকে দিখাউঙ্গী ক্যায়সে প্রোগ্রাম করনা হ্যায়।‌’ আমার স্বর্গীয় পিতার নামে অশ্রাব্য ভাষায় এমন চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আমার ভিতরের মানুষটা আর সহ্য করতে পারে নি---তাই আমার অপ্রতিরোধ্য কন্ঠ থেকে বেরিয়ে এল প্রতিবাদের ভাষা:- ‘আপনি এই চেয়ারের উপযুক্ত নন্।রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার ক্ষেত্রে এমন বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন ও বিবেকবিহীন ব্যক্তিত্ব’-র স্থান হওয়া কখনই উচিত নয়।... সকালের প্রার্থনা-মঞ্চও আপনার অশ্রাব্য গালিগালাজ আর চিৎকার চেঁচামেচিতে ছাত্রছাত্রীরা অস্থির হয়ে ওঠে,শব্দদূষণের শিকার হয়,অসুস্থ হয়ে পড়ে।ছাত্রছাত্রীদের চুলের মুঠি ধরে টানাটানি করা.দুহাতে চড়-থাপ্পড় মারা এই বিদ্যালয়ের নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা।এই অমানবিক ঘটনা ঘটতে দেখেও সরকারি চাকরীর মোহে কোনও শিক্ষক মুখ খোলেন না।তাঁরা শুধু নীরব দর্শক।রবীন্দ্রনাথের স্কুলে শুধু নয়, কোনও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে এই অমানবিক ঘটনা ঘটতে দেওয়া যায় না।প্রয়োজনে আমি একাই মাননীয় উপ-রাজ্যপাল মহোদয়ের হস্তক্ষেপ করার জন্য শুধু অনুরোধ নয়,সবিনয় প্রার্থনা জানাবো। রবীন্দ্রনাথের গান,কবিতা,নাটক যদি কারও কাছে নিন্দিত হয়ে থাকে,তা’ হ’লে আমি এবং আমার ছাত্রছাত্রীরা অংশ গ্রহণ করবে না---এ আমার শেষ সিদ্ধান্ত।‌’ আমি দৃপ্তকন্ঠে এসব কথা বলেই বাইরে বেরিয়ে এলাম।মানসিকভাবে আমি আহত হওয়ায় উপ-প্রধানাচার্যা’-র কাছে অর্ধ-দিবস আকস্মিক অবকাশের জন্য ছুটি মঞ্জুর করার আবেদন জানালাম।কিন্তু আবেদন মঞ্জুর হল না।ইত্যবসরে ‘প্রাক্তনী সংসদ’-সদস্যবৃন্দ কারও মুখে খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন ঘটনা কী তা’ জানার জন্য।আমার কাছে জানতে চাওয়া হলে আমি তা’ সঙ্গত কারণেই প্রকাশ করতে চাই নি।রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়ে প্রাক্তনী সদস্যরা আজ আমাদের অতিথির মতো---অতীত-জীবনের বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বিদ্যালয়কে ঘিরেই।আজ এই দুর্ঘটনার কথা বললে তাঁরা মর্মাহত হবেন। তাই আমি চাই নি কোনও কিছু প্রকাশ করতে। তাঁদের মধ্যে শ্রদ্ধেয় শ্রী পি.সি.লোধ মহাশয়ের সহানুভূতিপূর্ণ কথায় আমি যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেলাম। সব যন্ত্রণা ভুলে আমি এই মহোৎসবে সক্রিয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলাম। ৬ই ডিসেম্বরের প্রাত:কালীন সভা সফল হ’ল,সার্থক হ’ল।মনে হল কত যুগের পরে যেন ফিরে পেলাম রবীন্দ্রনাথকে,রবীন্দ্রানুরাগী প্রিয়জনকে। ভেবেছিলাম ছ’ তারিখের সান্ধ্যানুষ্ঠানটাও কাটবে ভালো। কিন্তু প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে বাঁধা।মানবতার বন্ধু নেলসন্ মেনডেলা এই সুন্দর পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন।খবর পৌছতেই আনন্দ-সন্ধ্যার ছন্দপতন হ’ল। নৈশকালীন ভোজসভায় অংশগ্রহণ করতে হ’ল।সভা ভাঙার শেষে একটা আনন্দ-বিষাদঘন অনুভূতি সারাটা মন জুড়ে ছিল।রাতে ভাল ঘুম হ’ল না।পরদিন সকালে যথারীতি স্কুলে যেতে হ’ল।নাচ-গান-আবৃত্তি-বিতর্ক’-র প্রতিযোগিতা হ’ল বটে,তবে মুক্তমঞ্চে নয়, পদার্থ-বিজ্ঞানের বদ্ধ পরীক্ষাগারে।হঠাৎ দেখি রূদ্ধশ্বাসে স্কুল-পিওন একটি চিঠি হাতে আমার কাছে এসে বলল:- ‘আপনার জন্য এই অফিসিয়াল লেটার।‘ খাম খুলে দেখলাম সেদিনের রবীন্দ্র-প্রতিবাদ ও তার ফলাফলের নোটিশ ‘মেমোরান্ডাম’।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.